সাফিল মিয়া

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

বীরউত্তম শহীদ সাফিল মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১ অক্টোবর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [১]

বীরউত্তম শহীদ সাফিল মিয়া
মৃত্যু১ অক্টোবর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

শহীদ সাফিল মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে। এই গ্রাম ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন। তার বাবার নাম আলতাব আলী এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে বিয়ে করেন সাফিল মিয়া। বাড়িতে কৃষিকাজ করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে মা-বাবা, ভাইবোন ও নবপরিণীতাকে রেখে যোগ দেন প্রতিরোধযুদ্ধে। পরে ভারতে গিয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। প্রথমদিকে কিছুদিন ২ নম্বর সেক্টরের অধীন সীমান্ত এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ করেন। এরপর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার অন্তর্গত সালদা নদী। ১৯৭১ সালে সালদা রেলস্টেশন ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান। সালদা স্টেশন পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ করত। ওই স্টেশনের পাশের নয়নপুরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি। সেখানে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি দল, অদূরে কুটি ও কসবা এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৩ বালুচ রেজিমেন্ট। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে নয়নপুর, সালদা রেলস্টেশন, কসবা, কুটিসহ বিভিন্ন স্থান আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সালেক চৌধুরী। এই দলে ছিলেন সাফিল মিয়া। তারা সালদা নদী অতিক্রম করে সালদা রেলস্টেশনের পশ্চিমে একটি গোডাউন-সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারাও আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা তীব্রভাবে সাফিল মিয়াদের দলের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। অন্যদিকে, নয়নপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর অপর দলের প্রচণ্ড আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। এরপর তারা পিছু হটে সালদা রেলস্টেশনের মূল ঘাঁটিতে অবস্থান নেয়। এতে সালদা রেলস্টেশনের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাশক্তি আরও বেড়ে যায়। নয়নপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা মূল দলের সঙ্গে একত্র হয়ে সাফিল মিয়াদের দলের ওপর প্রচণ্ড গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে তীব্র যুদ্ধ চলতে থাকে। ১ অক্টোবর সকাল নয়টার দিকে সাফিল মিয়াদের দলের গোলা শেষ হয়ে যায়। তখন তারা চরম বিপদে পড়েন। ক্রমে মুক্তিবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে। এক স্থানে সাফিল মিয়াসহ কয়েকজন অবস্থান নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করছিলেন। সাফিল মিয়ার অসাধারণ বীরত্ব ও রণকৌশলে মুক্তিবাহিনী চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। একপর্যায়ে এক দল পাকিস্তানি সেনা তাঁদের প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড গুলিবৃষ্টিতে তারা কেউ মাথা তুলতে পারছিলেন না। এমন সময় গুলি এসে লাগে সাফিল মিয়াসহ কয়েকজনের শরীরে। সাফিল মিয়া বুক ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। সেদিন শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সালদা রেলস্টেশন দখল করতে ব্যর্থ হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা পাশের মন্দভাগ এলাকায় পশ্চাদপসরণ করেন। এদিন যুদ্ধে সাফিল মিয়াসহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও অনেকে আহত হন। সহযোদ্ধারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করেন বাংলাদেশের মাটিতেই, কসবার কুল্লাপাথরে। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৫-১০-২০১১"। ২০২০-০৯-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৮ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৪২। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা