অসীম

গাণিতিক ধারনা

অসীম (ইংরেজি: Infinity) হলো যা সীমাহীন বা অন্তহীন, অনন্ত। গণিতে অসীম হলো সীমাহীন কোনো সংখ্যা যা যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে বড়। এটি প্রায়শই অসীম প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

পরস্পরের বিপরীতে অবস্থিত আয়নাগুলোর মধ্যে স্থির আলোর প্রতিফলনের কারণে, মনে হচ্ছে তাদের ভিতরে সীমাহীন স্থান আছে এবং তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

প্রাচীনকালে, গ্রিক গণিতে অসীমের দার্শনিক রূপ প্রদানের জন্য গ্রিক দার্শনিকগণ বিস্তর আলোচনা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ১৭ শতকের দিকে, গণিতবিদগণ অসীম প্রতীক[] এবং অসীম ক্যালকুলাস ধারণার বিকাশ সাধন করেন। গণিতবিদগণ অসীম সিরিজ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন এবং কোনো কোনো গণিতবিদ যেমন: লো'পিটাল এবং বার্নোলি অসীম সংখ্যক ক্ষুদ্রবস্তুর ধারণা বিবেচনা করেন এবং অসীম বস্তু গণনায় অসীম প্রক্রিয়া ধারণার উন্মেষ ঘটান।[] যেহেতু, গণিতবিদগণ ক্যালকুলাসের ভিত্তি তৈরিতে তৎপর ছিলেন, কিন্তু এটি অস্পষ্ট যে, অসীমকে একটি সংখ্যা বা মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে কিনা এবং যদি তাই হয় তবে এটি কীভাবে করা যেতে পারে।[] ১৯ শতকের শেষ দিকে জর্জ ক্যান্টর অসীম সেট এবং অসীম সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেন এবং দার্শনিক তত্ত্ব থেকে অসীমকে সুস্পষ্ট গাণিতিক ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীম ধারণার পথ নির্দেশ করেন এবং দেখান যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীমের আকার বিভিন্ন রকম।[][] উদাহরণস্বরূপ: যদি একটি তলে অবস্থিত একটি রেখাকে তার সমস্ত বিন্দুর সেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে তাদের অসীম সংখ্যা (অর্থাৎ, রেখার অঙ্কবাচকতা) সবচেয়ে বড় পূর্ণসংখ্যার চেয়েও বড়।[] এর ফলে, অসীমকে একটি গাণিতিক ধারণা হিসেবে প্রকাশ করা, অসীম গাণিতিক বস্তু অধ্যয়ন করা, অন্য গাণিতিক ধারণার মতোই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধারণা ব্যবহার করা যায়। অসীমতার পুরোনো দার্শনিক ধারণাকে পরিমার্জিত করে এবং প্রসারিত করে, বিশেষত বিভিন্ন আকারের অসীমের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। জার্মেলো-ফ্রাংকেলের সেট তত্ত্বের স্বতঃসিদ্ধসমূহের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক গণিতের বিকাশ সাধিত হয়েছে। মূলত, এই স্বতঃসিদ্ধগুলো হলো অসীমতার স্বতঃসিদ্ধতা, যা অসীম সেটের বিদ্যমানতা সিদ্ধ করে।[] অসীমতার গাণিতিক ধারণা এবং অসীম সেটের স্বতঃসিদ্ধতা আধুনিক গণিতের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। এমনকি, কম্বিনেট্রিক্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীমতার ধারণা ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: ফার্মার শেষ উপপাদ্যের ওয়াইলেসের প্রমাণে বিশাল আকারের অসীম সেটের ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে।[]

পদার্থবিজ্ঞান এবং বিশ্ব তত্ত্বে, মহাবিশ্ব স্থানিকভাবে অসীম কী না- তা বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন।

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাচীনকালের গণিতবিদগণ বিভিন্ন প্রকারের অসীম সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আধুনিক গণিতবিদগণ গাণিতিক বিষয়বস্তু হিসেবে অসীমকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত এবং এর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন ঠিক সেভাবে প্রাচীন ভারতীয় এবং প্রাচীন গ্রিসের গণিতবিদগণ অসীমকে সংজ্ঞায়িত ও বিশ্লেষণ করেননি। বরং, প্রাচীনকালের গণিতবিদগণ অসীমকে দার্শনিক ধারণা রূপে ব্যাখ্যা করেন।

প্রাচীন গ্রিস

সম্পাদনা

প্রাচীন গ্রিসের প্রাক-সক্রেটিসীয় দার্শনিক আনাক্সিমান্দ্রোস (খ্রিস্টপূর্ব ৬১০ - খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৬) সর্বপ্রথম অসীমের ধারণা ব্যাখ্যা করেন, এমন লিপিবদ্ধ ইতিহাস পাওয়া গেছে। তিনি অ্যাপিরন শব্দটি ব্যবহার করেন, যার অর্থ "সীমাহীন", "অনন্ত", এবং সম্ভবত "অসীম" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে।[]

অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০) সম্ভাব্য অসীমকে প্রকৃত অসীম থেকে আলাদা করেন, যেটিকে তিনি অসম্ভব বলে গণ্য করতেন এবং বিভিন্ন প্যারাডক্সের কারণে এটি উৎপন্ন হয়েছে বলে মনে করতেন।[] এমন বিতর্ক প্রচলিত যে, এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যের ফলে মনে করা হয়, হেলেনিস্টিক গ্রিকদের "অসীমের প্রতি ভীতি ছিল"।[] উদাহরণস্বরূপ, ইউক্লিড (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ) বলেননি যে, মৌলিক সংখ্যা অসীম। বরং, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, "মৌলিক সংখ্যা, কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মৌলিক সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি।[] এটিও প্রচলিত রয়েছে যে, মৌলিক সংখ্যার অসীমতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে, ইউক্লিড "অসীমের প্রতি ভীতি কাটিয়ে উঠেন"।[১০]

জিনোর প্যারাডক্স: একিলিস এবং কচ্ছপ

সম্পাদনা

এলিয়ার জিনো (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫ - খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০) অসীম বিষয়ক কোনো ধারণা ব্যক্ত করেননি। বরং তার প্যারাডক্স"[১১], বিশেষ করে "অ্যাকিলিস এবং কচ্ছপ", একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা, তৎকালীন অসীম বিষয়ক জনপ্রিয় ধারণার অপর্যাপ্ততাকে স্পষ্ট করে। দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন যে, এসব প্যারাডক্স "অপরিমেয়ভাবে সূক্ষ্ম এবং গভীর চিন্তাপূর্ণ।"[১২] প্যারাডক্সটি এরকম, অ্যাকিলিস এবং একটি কচ্ছপের মধ্যে একটি দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। শর্ত হলো কচ্ছপ কিছুটা এগিয়ে থেকে দৌড় শুরু করবে।

  • ধাপ #১: প্রতিযোগিতায় অ্যাকিলিস যখন কচ্ছপের দৌড় শুরুর বিন্দুতে ছুটে যায়, তখন কচ্ছপ কিছু পথ এগিয়ে থাকে।
  • ধাপ #২: অ্যাকিলিস, কচ্ছপের ধাপ #১ এর শেষে যেখানে ছিল সেখানে পৌছায় তখন কচ্ছপ আরও এগিয়ে যায়।
  • ধাপ #৩: অ্যাকিলিস অগ্রসর হয়ে যেখানে কচ্ছপের ধাপ #২ এর শেষ সে অবস্থানে পৌছায়, তখন কচ্ছপ আরও এগিয়ে যায়।
  • ধাপ #৪: অ্যাকিলিস কচ্ছপের ধাপ #৩ এর শেষ যেখানে ছিল সেখানে পৌছায় তখন কচ্ছপ তার থেকে আরও পথ এগিয়ে যায়।

ইত্যাদি।

স্পষ্টতই দেখা যায় যে, অ্যাকিলিস কখনই কচ্ছপকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না, যেহেতু সে যতই ধাপ অতিক্রম করুক না কেন, কচ্ছপটি তার থেকে এগিয়ে থাকে।

জিনো অসীম বিন্দু বা অসীম সম্পর্কে কোনো ধারণা প্রদান করেননি। ইলিয়াটিক্স স্কুলের সদস্য, জিনো মনে করতেন গতি হলো মায়া বা বিভ্রম। তিনি মনে করতেন, অ্যাকিলিস আদৌ দৌড়ে কচ্ছপকে অতিক্রম করতে পারবে না। পরবর্তী চিন্তাবিদগণ, এই সমাধানটিকে অগ্রহণযোগ্য মনে করেন, এই প্যারাডক্সের অন্যান্য দুর্বলতা খুঁজে পেতে দুই সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করেছেন। অবশেষে, ফরাসি গণিতবিদ অগাস্টিন লুই কোশি ১৮২১ সালে, এই প্যারাডক্সের একটি সন্তোষজনক সমাধান প্রদান করেন এবং প্রমাণ করেন যে, 0 < x < 1,[১৩]   তিনি বলেন, ধরুন, অ্যাকিলিস প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার বেগে ছুটছে, কচ্ছপটি প্রতি সেকেন্ডে ০.১ মিটার বেগে হাঁটছে এবং কচ্ছপ ১০০ মিটার এগিয়ে থেকে দৌড় শুরু করে। কোশির প্যাটার্ন অনুযায়ী, কচ্ছপের গতি a = ১০ সেকেন্ড এবং অ্যাকিলিসের গতি x = ০.০১। অ্যাকিলিস, কচ্ছপকে অতিক্রম করতে পারে। এতে অ্যাকিলিসের সময় লাগে:  

প্রাচীন ভারত

সম্পাদনা

প্রাচীন ভারতের জৈন গণিতবিদ সূর্য প্রজ্ঞাপ্তি (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ - ৩য় অব্দ) সমস্ত স্বাভাবিক সংখ্যাকে তিনটি সেটে শ্রেণিবিন্যাস করেন: গণনাযোগ্য, অগণনাযোগ্য এবং অসীম। এই তিন প্রকারকে আরো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়:[১৪]

  • গণনাযোগ্য: সর্বনিম্ন, মধ্যবর্তী এবং সর্বোচ্চ,
  • অগণনাযোগ্য: প্রায় অগণনাযোগ্য, প্রকৃত অগণনাযোগ্য এবং অসংখ্য অগণনাযোগ্য,
  • অসীম: প্রায় অসীম, প্রকৃত অসীম এবং অসীম সংখ্যক অসীম।

সপ্তদশ শতক

সম্পাদনা

১৭ শতকে, ইউরোপীয় গণিতবিদগণ পদ্ধতিগতভাবে অসীম সংখ্যা এবং অসীম অভিব্যক্তি ব্যবহার শুরু করেন। ১৬৫৫ সালে, গণিতবিদ জন ওয়ালিস তাঁর ডে সেকশনিবাস কনিসিস বইয়ে সর্বপ্রথম অসীম সংখ্যক সংখ্যা বুঝাতে অসীম প্রতীক   ব্যবহার করেন।[১৫] তিনি   অর্ডারে প্রস্থ বরাবর ইনফিনিটেসিমাল সংখ্যক ভাগ করে কোনো আকৃতির ক্ষেত্রফল নির্ণয়ে এটি ব্যবহার করেন।[১৬] এছাড়া, ১৬৫৫ সালে রচিত অ্যারিথমেটিকা ইনফিনিটোরাম-এ, তিনি কতগুলো পদ বা গুণনীয়ক লিখেন এবং তারপর অসীম সিরিজ, অসীম সংখ্যক গুণফল এবং অসীম সংখ্যক ভগ্নাংশ প্রকাশ করেন, যেমন: "&c.", "১, ৬, ১২, ১৮, ২৪, &c.[১৭]

১৬৯৯ সালে, আইজ্যাক নিউটন, লাতিন ভাষায় লেখা তাঁর বই ডে অ্যানালাইসি পার একুশনেস নিউমেরো তেরমিনোরাম ইনফিনিতাস-এ অসীম সংখ্যক পদের সমীকরণ ব্যাখ্যা করেন।[১৮]

গণিতে অসীম

সম্পাদনা

১৯৩০ সালে জার্মান গণিতবিদ হের্মান ওয়াইল আধুনিক গণিতে অসীমকে দার্শনিক বিষয় হিসেবে প্রথম ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেছেন:

গণিত হল অসীম বিষয়ক বিজ্ঞান।

[১৯]

অসীম প্রতীক

সম্পাদনা

গণিতে, অসীম রাশির ধারণা প্রকাশের জন্য অসীম প্রতীক   ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই প্রতীককে লেমনিসক্যাট বলা হয়। এই প্রতীকটি ইউনিকোডে U+221E ∞ INFINITY (∞)[২০] এবং ল্যাটেক (LaTeX) ভাষায় \infty রূপে এনকোডিং করা হয়েছে।[২১]

১৬৫৫ সালে, গণিতবিদ জন ওয়ালিস সর্বপ্রথম গণিতে অসীম প্রতীকটি ব্যবহার করেন।[২২][২৩] এর প্রথম প্রচলনের পর হতেই এটি গণিতের বাইরে আধুনিক রহস্যবিদ্যা[২৪] এবং সাহিত্যের প্রতীকবিদ্যায়ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[২৫]

ক্যালকুলাস

সম্পাদনা

জার্মান গণিতজ্ঞ এবং ইনফিনিটেসটিম্যাল ক্যালকুলাসের সহযোগী উদ্ভাবক গটফ্রিড লাইবনিৎজ, অসীম সংখ্যা এবং গণিতে তাদের ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা ও বিস্তারিত বর্ণনা করেন। লাইবনিৎজের মতে, সম প্রকৃতির না হলেও অসীম সংখ্যা এবং অসীম রাশি উভয়ের আদর্শ সত্তা রয়েছে। অবিচ্ছিন্নতার নীতি অনুযায়ী, এরা একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।[২৬][২৭]

রিয়েল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে অসীম ধারণা

সম্পাদনা

রিয়েল অ্যানালাইসিসে অসীম প্রতীককে অসীম বা ইনফিনিটি বলা হয় এবং অসীম সীমা প্রকাশে এটি ব্যবহৃত হয়।[২৮] নোটেশন   বুঝায় যে, চলক   এর মান অসীম মাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং   বুঝায় যে, চলক   এর মান অসীম মাত্রায় হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ: যদি   এর প্রতিটি মানের জন্য   for every  ,[২৯] তাহলে-

  •   বুঝায় যে, ফাংশন   এর মান   থেকে   এর মধ্যে নেই এর কোনো সসীম সীমা নেই।
  •   বুঝায় যে, ফাংশন   এর মান অসীম।
  •   বুঝায় যে, ফাংশন   সকল মান সসীম এবং   এর সমান।

অসীম ধারার সাহায্যেও অসীম ধারণা প্রকাশ করা যায়। যেমন:

  •   বুঝায় যে, (কনভার্জেন্ট সিরিজে) অসীম ধারার যোগফল বাস্তব সংখ্যা বা মান   এর দিকে অভিসারী হয়।
  •   বুঝায় যে, অসীম সিরিজের যোগফল সঠিকভাবে অসীমে বিবর্তিত হয়, এই অর্থে যে আংশিক যোগফল সীমা ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। (ডাইভার্জেন্ট সিরিজ)[৩০]

অধিকন্তু, একটি সীমাকে সংজ্ঞায়িত করার পাশাপাশি, বর্ধিত বাস্তব সংখ্যা পদ্ধতিতে অসীমকে একটি মান হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বাস্তব সংখ্যার টপোলজিক্যাল স্পেস বা জ্যামিতিক সমতলে ধনাত্মক অসীম   এবং ঋণাত্মক অসীম  , বাস্তব সংখ্যার পরিধি বুঝাতে দুটি বিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এই ধারণার অন্য নাম কম্পেকটিফিক্যাশন। এই দুটিতে বীজগাণিতিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত করলে বা বীজগণিতীয় রাশি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলে এক্সটেন্ডেড রিয়েল নাম্বার সংখ্যারেখা পাওয়া যায়।[৩১] বীজগাণিতিকভাবে ধনাত্মক অসীম ( ) ও ঋণাত্মক অসীম ( )কে একই তলে একটি বিন্দু ধরে নেওয়া হলে, বাস্তব সংখ্য়ার ওয়ান-পয়েন্ট কম্পেকটিফিক্যাশন রেখা বা ধারণা পাওয়া যায়। একে গণিতের ভাষায় রিয়েল প্রজেক্টিভ লাইন বা রেখা বলা হয়।[৩২] অভিক্ষেপ জ্যামিতি হলো অসীম সংখ্যক সরল রেখার সমতলীয় জ্যামিতি, যেখানে একটি ত্রিমাত্রিক সমতলে ও স্থানিক পর্যায়ে বা ডাইমেনশনে অসীম সংখ্যক বিন্দুর সমন্বয়ে অসীম রেখাহাইপার অসীম সরলরেখাকে‌‌ উপস্থাপন করা হয়।[৩৩]

কমপ্লেক্স অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে অসীম

সম্পাদনা
 
স্টেরিওগ্রাফিক প্রজেকশনে জটিল সমতলকে একটি গোলকের উপরে "মোড়ানো" যেতে পারে, গোলকের উপরের শীর্ষবিন্দুটি অসীমের সাথে সম্পর্কিত। এই গোলকটিকে বলা হয় রিম্যান স্পিয়ার বা রিম্যান গোলক

কমপ্লেক্স অ্যানালাইসিস বা জটিল সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে অসীম প্রতীক ( )-কেই অসীম বলা হয়, এটা দিয়ে বুঝানো হয় যে, অনির্দিষ্ট সংখ্যক অসীম সীমা  দ্বারা বুঝানো হয় যে,   of   এর ম্যাগনিটুড একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। জটিল সংখ্যার টপোলজিক্যাল স্পেস বা জ্যামিতিক সমতলে অসীম বিন্দু ( ) যুক্ত করা যেতে পারে, যাকে বলা হয় ওয়ান-পয়েন্ট কম্পেক্টিফিক্যাশন। যখন এটি করা হয়, তখন একটি এক-মাত্রিক কমপ্লেক্স বা জটিল ম্যানিফোল্ড তৈরি হয়, যার নাম রিম্যান সারফেস। আর রিম্যান সারফেসের বর্ধিত রূপকে এক্সটেন্ডেড জটিল সমতল বা রিম্যান গোলক বলা হয়।[৩৪] বর্ধিত বাস্তব সংখ্যার জন্য উপরে দেওয়া অনুরূপ গাণিতিক ক্রিয়াকলাপগুলিও সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, প্রতীকরূপে এটার কোনো পার্থক্য নেই। তবে, একটি ব্যতিক্রম ধারণা হতে পারে, অসীম নিজে নিজে যোগ হতে পারে না। অন্য়দিকে, জটিল সংখ্যার অসীম ধারণা শূন্য দ্বারা ভাগ ধারণাকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ কোনো অশূন্য জটিল সংখ্যা   এর ক্ষেত্রে,  । এই প্রসঙ্গে, রিম্যান গোলকের শীর্ষবিন্দুর মান   হলে মেরোমরফিক ফাংশনগুলোকে রিম্যান গোলকে উপস্থাপন করা যায়। অসীম বিন্দুর ক্ষেত্রে জটিল সংখ্যাভিত্তিক কোনো ফাংশনের মান অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। এইরকম ফাংশনের অন্যতম উদাহরণ হলো মরবিউস ট্রান্সফরমেশন ফাংশনগুলো।

ননস্ট্যান্ডার্ড অ্যানালাইসিস

সম্পাদনা
 
হাইপাররিয়েল সংখ্যা রেখায় শূন্যসন্নিকর্ষী (ইনফিনটেসিমাল) (ε) এবং অসীম (ω) (1/ε = ω/1)

আইজ্যাক নিউটন এবং গটফ্রিড লাইবনিজ তাদের অসীম ক্যালকুলাসের মূল ধারণা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইনফিনিটেসিমাল পরিমাণ ব্যবহার করেন। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে দেখা যায় যে, আধুনিক বিভিন্ন যৌক্তিক সিস্টেমের আলোকে বিবেচনার ক্ষেত্রে নিউটন এবং লাইবনিজের এই ধারণা আধুনিক অসীম বিশ্লেষণ এবং ননস্ট্যান্ডার্ড অ্যানালাইসিসে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গণিতবিদগণ ব্যাখ্যা করেন যে, ইনফিনিটেসিমালগুলো বিপরীতমুখী এবং তাদের ইনভার্সগুলোর মান অসীম। এই ধারণা অনুসারে অসীমগুলো হলো একটি হাইপাররিয়েল ক্ষেত্রের অংশ; ক্যান্টোরিয়ান ট্রান্সফিনাইটের মতো তাদের মধ্যে কোন সমতা নেই। উদাহরণস্বরূপ: এই অর্থে যদি H একটি অসীম সংখ্যা হয়, তবে H + H = 2H এবং H + 1 হলো স্বতন্ত্র অসীম সংখ্যা। ‌‌ননস্ট্যান্ডার্ড ক্যালকুলাসে এই পদ্ধতিটি কেইসলার (১৯৮৬) কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছে।[৩৫]

সেট তত্ত্ব

সম্পাদনা
 
একটি অসীম সেট এবং তার প্রকৃত উপসেটের মধ্যে এক থেকে এক সমরূপতা

গণিতবিদ গেয়র্গ কান্টর তাঁর সেট তত্ত্বে ট্রান্সফিনিট নাম্বার ধারণার ভিত্তিতে দুই ধরনের অসীমের কথা উল্লেখ করেছেন- অর্ডিনাল অসীম এবং কার্ডিনাল অসীম। এই পদ্ধতিতে, অঙ্কবাচক সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেটের প্রথম ট্রান্সফিনিট কার্ডিনাল হল আলেফ-নাল (ℵ0)। পরিমাণগত অসীমের এই আধুনিক গাণিতিক ধারণাটি ১৯ শতকের শেষের দিকে সংগ্রহ বা সেটের ধারণার আলোকে ক্যান্টর, গটলব ফ্রেজ, রিচার্ড ডেডেকিন্ড এবং অন্যান্য গণিতবিদদের কাজ থেকে বিকশিত হয়েছে।[৩৬]

ডেডেকিন্ডের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- সেটের আকারের তুলনা করার জন্য একের সাথে-এক সমরূপতা ধারণাকে একটি মান হিসেবে গ্রহণ করা এবং গ্যালিলিওর তত্ত্ব (মূলত ইউক্লিড প্রথম ব্যাখ্যা করেন) প্রত্যাখ্যান করা যে, পূর্ণ তার অংশের আকারের সমান হতে পারে না। (তবে, গ্যালিলিওর প্যারাডক্সে, গ্যালিলিও উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাগুলোর সাথে ধনাত্মক পূর্ণবর্গসংখ্যার উপসেটের সাথে তুলনা করা যায় না। কারণ, উভয়ই অসীম সেট।) একটি অসীম সেটকে সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যেটির আকার কমপক্ষে এর একটি প্রকৃত অংশের সমান; অসীমতার এই ধারণাটিকে ডেডেকিন্ড অসীম বলা হয়।

ক্যান্টর দুই ধরনের অসীম সংখ্যাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন: ক্রমবাচক সংখ্যা এবং কার্ডিনাল সংখ্যা

অবিচ্ছিন্নতার কার্ডিন্যালিটি

সম্পাদনা

ক্যান্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিজাল্টের মধ্যে একটি হলো- অবিচ্ছিন্নতার কার্ডিনালিটি  , স্বাভাবিক সংখ্যা  -এর থেকে বৃহত্তর: অর্থাৎ, স্বাভাবিক সংখ্যা N থেকে অধিক সংখ্যক বাস্তব সংখ্যা R রয়েছে। ক্যান্টর সূত্রাকারে তা দেখিয়েছেন যে,  [৩৭]

অবিচ্ছিন্নতার উপপাদ্য অনুসারে, বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতা এবং স্বাভাবিক সংখ্যার অঙ্কবাচকতার মধ্যে কোনো অঙ্কবাচক সংখ্যা নেই। অর্থাৎ,  

এই হাইপোথিসিসটি ব্যাপকভাবে গৃহীত জারমেলো-ফ্রেঙ্কেল সেট তত্ত্বের আলোকে এমনকি পছন্দের স্বতঃসিদ্ধতার আলোকে প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত করা যায় না।[৩৮]

জ্যামিতি

সম্পাদনা

১৯ শতকের শেষ অবধি, জ্যামিতিতে অসীম খুব কমই আলোচিত হয়েছে, এমন প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে যা কোনো সীমা ছাড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি রেখা যাকে বর্তমানে রেখাংশ বলা হয়, এই শর্তে যে কেউ এটিকে যতদূর চায় ততদূর প্রসারিত করতে পারে; কিন্তু এটাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করতে চাইলে তা জ্যামিতিতে প্রশ্নাতীত ধারণা মনে করা হত। একইভাবে, একটি রেখাকে সাধারণত অসীমভাবে অনেকগুলো বিন্দু দিয়ে গঠিত বলে পূর্বে মনে করা হত না, তবে এটি এমন একটি অবস্থান যেখানে একটি বিন্দু স্থাপন করা যেতে পারে। এমনকি, যদি অসীমভাবে অনেক সম্ভাব্য স্থান থাকে, তবে একটি রেখায় শুধুমাত্র কতিপয় সীমিত সংখ্যক বিন্দু স্থাপন করা যেতে পারে। পূর্বের গণিতবিদগণ মনে করতেন, ‍‍‍‍‍"একটি বিন্দুর লোকাস বা অবস্থান কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে" (একবচনে)। অন্যদিকে, আধুনিক গণিতবিদগণ সাধারণত বলেন, " একটি রেখা হলো বহু বিন্দুর একটি সেট যার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে" (বহুবচনে)।

প্রকৃত অসীমের সাথে সম্পর্কিত গাণিতিক ধারণার বিরল ব্যতিক্রমগুলোর মধ্যে একটি হল প্রোজেক্টিভ জ্যামিতি, যেখানে ইউক্লিডীয় সমতলে অসীমসংখ্যক বিন্দু যুক্ত করে পরিপ্রেক্ষিত বা পারস্পেক্টিভ প্রভাব মডেলিং বা তৈরি করা হয়। যেখানে দেখা যায় যে, সমান্তরাল রেখাগুলো পরষ্পরকে অসীম বিন্দুতে ছেদ করছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রজেক্টিভ সমতলে, দুটি স্বতন্ত্র রেখা ঠিক একটি বিন্দুতে ছেদ করে, অন্য়দিকে, সমান্তরাল সরলরেখার ক্ষেত্রে অসীম বিন্দু ছাড়া এদের অন্য কোনো ছেদ বিন্দু থাকে না।

সেট তত্ত্ব ব্যবহৃত হওয়ার আগে গণিতে মনে করা হতো, বিন্দু এবং রেখা উভয়ই স্বতন্ত্র সত্তা এবং একটি রেখায় বিন্দুগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। তবে, এই ধারণা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে, সর্বজনীন সেট তত্ত্ব অনুসারে বিবেচনা করা হয় যে, একটি রেখা হলো অসংখ্য বিন্দুর একটি সেট, একটি বিন্দু হলো ঐ রেখারই অংশ।

যাহোক, আধুনিক গণিতে, রেখা হলো অসীম বিন্দুর একটি সেট।

অসীম মাত্রা

সম্পাদনা

ধ্রুপদী জ্যামিতিতে যে ভেক্টর তল রয়েছে তার সর্বদা একটি সসীম মাত্রা থাকে, সাধারণত দুই বা তিনটি। যাহোক, এটি একটি ভেক্টর স্থানের বিমূর্ত সংজ্ঞা দ্বারা বিবেচিত নয়, বরং অসীম মাত্রার ভেক্টর স্থানও বিবেচনা করা যেতে পারে। সাধারণত, এটি ফাংশনাল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়, যেখানে ফাংশন স্পেসগুলো সাধারণত অসীম মাত্রার ভেক্টর স্পেস। টপোলজিতে, কিছু আকৃতি অসীম মাত্রার টপোলজিকাল স্পেস তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, এটি পুনরাবৃত্তি করা লুপ স্পেসগুলির ক্ষেত্রে।

ফ্রাক্টাল

সম্পাদনা

একটি ফ্র্যাক্টাল অবজেক্টের গঠন তার বিবর্ধনে পুনরাবৃত্তি করা যায়। ফ্র্যাক্টালগুলোকে তাদের গঠন বিকৃত না করে অনির্দিষ্টভাবে বড় এবং মসৃণ করা যেতে পারে; তাদের অসীম পরিধি রয়েছে এবং তাদের অসীম বা সসীম ক্ষেত্রফল থাকতে পারে। অসীম পরিধি এবং সসীম ক্ষেত্রফল সহ এমন একটি ফ্র্যাক্টাল বক্ররেখা হল কচ স্নোফ্লেক

অসীম ব্যতীত গণিত

সম্পাদনা

১৮৭০ এবং ১৮৮০ এর দশকে লিওপোল্ড ক্রোনেকার অসীমতার ধারণা এবং তার সমসাময়িক গণিতবিদরা কীভাবে এটি ব্যবহার করতেন তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। গণিতের দর্শনে এই সংশয়বাদ সসীমতা নামে বিকশিত হয়। এটি গঠনবাদ এবং অন্তর্দৃষ্টিমূলক সাধারণ দার্শনিক এবং গাণিতিক মতবাদে গাণিতিক দর্শনের একটি চরম রূপও বটে।[৩৯]

পদার্থবিদ্যা

সম্পাদনা

পদার্থবিজ্ঞানে অসীম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সাধারণত ধারাবাহিক বা কন্টিনিউয়াস পরিমাপে বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করা হয় এবং বিচ্ছিন্ন পরিমাপে স্বাভাবিক সংখ্যা ব্যবহৃত হয় (যেমন: সাধারণ গণনায়)। অসীম বস্তুর ধারণা যেমন, অসীম সমপ্রবাহ তরঙ্গ ধারণা পদার্থবিজ্ঞানে প্রচলিত রয়েছে, কিন্তু তা উৎপন্ন করার কোনো পরীক্ষামূলক উপায় এখনো পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি।

বিশ্বতত্ত্ব

সম্পাদনা

১৫৭৬ সালে থমাস ডিগস সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন যে, এই মহাবিশ্ব অসীম।[৪০] এর ৮ বছর পরে ১৫৮৪ সালে ইতালীয় দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ জর্দানো ব্রুনো তাঁর বই অন দ্যা ইনফিনিট ইউনিভার্স অ্যান্ড ওয়ার্ল্ডে-এ অসীম মহাবিশ্বের কথা উল্লেখ করেন এবং আরো বলেছেন যে: ""অসংখ্য সূর্যের অস্তিত্ব রয়েছে; অসংখ্য পৃথিবী এই সূর্যের চারপাশে এমনভাবে ঘোরে যেভাবে সাতটি গ্রহ আমাদের সূর্যের চারপাশে ঘোরে। জীবন্ত প্রাণীরা এই পৃথিবীতে বাস করে।[৪১]

বিশ্বতত্ত্ববিদগণ দীর্ঘদিন ধরে আবিস্কার করার চেষ্টা করেছেন যে, আমাদের ভৌত মহাবিশ্ব অসীম কি না: অসীম সংখ্য়ক তারা আছে কি? মহাবিশ্বের আয়তন কি অসীম? মহাবিশ্ব কি চিরকাল ধরে প্রসারিত হচ্ছে? এগুলো এখনও পর্যন্ত বিশ্বতত্ত্বের অনির্ণেয় প্রশ্ন। যৌক্তিকভাবে, অসীম হওয়ার প্রশ্ন থেকে সীমানা থাকার প্রশ্ন আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীতে দ্বিমাত্রিক স্থান বা তল সসীম তবুও এর কোনো প্রান্ত নেই। পৃথিবীর বক্রতার সাপেক্ষে একটি সরল রেখা বরাবর কেউ ভ্রমণ করলে, যে জায়গা থেকে ভ্রমণ শুরু করবে শেষ পর্যন্ত সে জায়গায় ফিরে আসবে। নীতিগতভাবে, মহাবিশ্বের অন্তত, একই রকম টপোলজি থাকতে পারে। যদি তাই হয়, মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে একটি সরল রেখা বরাবর দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ করার পর কোনো ব্যক্তি যে বিন্দু থেকে ভ্রমণ শুরু করবে, অবশেষে, সে বিন্দুতেই ফিরে আসবে।[৪২] মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণের বর্ণালীতে মাল্টিপোল মোমেন্টামের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বক্রতা পরিমাপ করা যেতে পারে। আজ অবধি, উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ অ্যানাইসোট্রপি প্রোব (WMAP) মহাকাশযান দ্বারা রেকর্ডকৃত বিকিরণ নিদর্শনগুলোর বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, মহাবিশ্বের একটি সমতল টপোলজি রয়েছে। এটি একটি অসীম ভৌত মহাবিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।[৪৩][৪৪]

যুক্তিবিদ্যায়

সম্পাদনা

যুক্তিবিদ্যায়, একটি অসীম রিগ্রেস আর্গুমেন্ট হল "একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক ধরনের যুক্তিতে দেখা যায় যে, একটি থিসিস ত্রুটিপূর্ণ কারণ এটি একটি অসীম প্রকারের ধারা বা সিরিজ তৈরি করে— যখন হয় (ফর্ম A) এই ধরনের কোনো সিরিজ বিদ্যমান থাকে না বা (ফর্ম B) এটি বিদ্যমান থাকত, তখন থিসিসের ভূমিকার (যেমন: ন্যায্যতার) অভাব হবে যা এটি পালন করার কথা।"[৪৫]

কম্পিউটিং

সম্পাদনা

কম্পিউটার বিজ্ঞানে, আইইইই ফ্লোটিং-পয়েন্ট আদর্শ (IEEE 754) ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অসীম মান এবং অনির্দিষ্ট মানও ব্যাখ্যা করে। মূলত, এগুলো পাটিগণিতীয় ওভারফ্লো, শূন্য দ্বারা ভাগ এবং অন্যান্য ব্যতিক্রমী ক্রিয়াকলাপের ফলাফলের ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৪৬]

কম্পিউটার বিজ্ঞানের কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন: জাভা (প্রোগ্রামিং ভাষা) ও J[৪৭] প্রোগ্রামারকে ভাষা ধ্রুবক হিসেবে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অসীম মান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়।[৪৮] এগুলো বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ, অন্য সব মানের তুলনায় যথাক্রমে এগুলো কত বড় বা কত ছোট তা জানা যায়। ডেটা সর্টিং, সার্চিং, বা উইন্ডোয়িং করার ক্ষেত্রে জড়িত অ্যালগরিদমগুলোতে এগুলো সেন্টিনল ভ্যালু হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

যেসব প্রোগ্রামিং ভাষায় বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান নেই, কিন্তু রিলেশনাল অপারেটরদের ওভারলোড করার সুযোগ দেয়, একজন প্রোগ্রামারের পক্ষে বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান তৈরি করা সম্ভব। যেসব ভাষা প্রোগ্রামের প্রাথমিক অবস্থা থেকে এই ধরনের মানগুলোতে স্পষ্ট অ্যাক্সেস প্রদান করে না, কিন্তু ফ্লোটিং-পয়েন্ট ডেটা টাইপ প্রয়োগ করে, অসীম মানগুলো এখানে কিছু ক্রিয়াকলাপের ফলাফল হিসাবে অ্যাক্সেসযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।

প্রোগ্রামিং-এ, অসীম লুপ' হল এমন একটি লুপ যার প্রস্থান অবস্থা কখন থামে না, এইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি কার্যকর করা হয়।

শিল্পকলায়, গেইমে এবং কগনিটিভ সায়েন্সে

সম্পাদনা

পরিপ্রেক্ষিত শিল্পকর্মে ভ্যানিশিং বিন্দুর ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয় অংকন করা হয়। এটি মোটামুটিভাবে অসীম গাণিতিক বিন্দু ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পর্যবেক্ষক থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থিত বলে মনে হয়। এই ধারণার মাধ্যমে শিল্পীরা যেসব শিল্পকর্ম তৈরি করেন, সেগুলো বাস্তবিকভাবে, স্থান, দূরত্ব ও আকৃতি প্রকাশ করে।[৪৯] এই ধারণা প্রয়োগ করে শিল্পকর্ম তৈরি করার জন্য এম. সি. এশ্যর খুবই প্রখ্যাত।

অসীম দাবা নামে দাবা খেলার একটি প্রকারভেদ রয়েছে।[৫০] কগনিটিভ বিজ্ঞানী জর্জ লেকফ গণিতে এবং বিজ্ঞানে অসীম ধারণাকে মেটাফোর বা রূপক হিসেবে বিবেচনা করেন। এই দৃষ্টিকোণটি অসীমের মৌলিক রূপক (BMI)-এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে, যার অন্য নাম চিরক্রমবর্ধমান ধারা: <১,২,৩,.......>।[৫১]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Allen, Donald (2003). "The History of Infinity" (PDF). Texas A&M Mathematics. Retrieved Nov 15, 2019.
  2. Jesseph, Douglas Michael (Spring–Summer 1998). "Leibniz on the Foundations of the Calculus: The Question of the Reality of Infinitesimal Magnitudes". Perspectives on Science. 6 (1&2): 6–40. doi:10.1162/posc_a_00543. ISSN 1063-6145. OCLC 42413222. S2CID 118227996. Archived from the original on 11 January 2012. Retrieved 1 November 2019 – via Project MUSE.
  3. ] Gowers, Timothy; Barrow-Green, June (2008). The Princeton companion to mathematics. Imre Leader, Princeton University. Princeton: Princeton University Press. ISBN 978-1-4008-3039-8. OCLC 659590835.
  4. Maddox 2002, pp. 113–117
  5. 5] McLarty, Colin (15 January 2014) [September 2010]. "What Does it Take to Prove Fermat's Last Theorem? Grothendieck and the Logic of Number Theory". The Bulletin of Symbolic Logic. 16 (3): 359–377. doi:10.2178/bsl/1286284558. S2CID 13475845 – via Cambridge University Press.
  6. Allen, Donald (2003). "The History of Infinity" (PDF). Texas A&M Mathematics. Retrieved Nov 15, 2019.
  7. Aristotle. Physics. Translated by Hardie, R. P.; Gaye, R. K. The Internet Classics Archive. Book 3, Chapters 5–8.
  8. Goodman, Nicolas D. (1981). Richman, F. (ed.). "Reflections on Bishop's philosophy of mathematics". Constructive Mathematics. Lecture Notes in Mathematics. Lecture Notes in Mathematics. Springer. 873: 135–145. doi:10.1007/BFb0090732. ISBN 978-3-540-10850-4.
  9. "Sarton, George (March 1928). "The Thirteen Books of Euclid's Elements. Thomas L. Heath , Heiberg". Isis. 10 (1): 60–62. doi:10.1086/346308. ISSN 0021-1753 – via The University of Chicago Press Journals.
  10. Hutten, Ernest Hirschlaff (1962). The origins of science; an inquiry into the foundations of Western thought. Internet Archive. London, Allen and Unwin. pp. 1–241. ISBN 978-0-04-946007-2. Retrieved 2020-01-09.
  11. Zeno's Paradoxes". Stanford University. October 15, 2010. Retrieved April 3, 2017.
  12. Russell, Bertrand (1996) [1903], The Principles of Mathematics, New York: Norton, ISBN 978-0-393-31404-5, OCLC 247299160
  13. Cauchy, Augustin-Louis (1821). Cours d'Analyse de l'École Royale Polytechnique. Libraires du Roi & de la Bibliothèque du Roi. p. 124. Retrieved October 12, 2019.
  14. Ian Stewart (2017). Infinity: a Very Short Introduction. Oxford University Press. p. 117. ISBN 978-0-19-875523-4. Archived from the original on April 3, 2017.
  15. Cajori, Florian (2007). A History of Mathematical Notations. Vol. 1. Cosimo, Inc. p. 214. ISBN 9781602066854.
  16. Cajori, Florian (1993) [1928 & 1929], A History of Mathematical Notations (Two Volumes Bound as One), Dover, ISBN 978-0-486-67766-8
  17. "Cajori, Florian (1993) [1928 & 1929], A History of Mathematical Notations (Two Volumes Bound as One), Dover, ISBN 978-0-486-67766-8
  18. Grattan-Guinness, Ivor (2005). Landmark Writings in Western Mathematics 1640-1940. Elsevier. p. 62. ISBN 978-0-08-045744-4. Archived from the original on 2016-06-03. Extract of p. 62
  19. Weyl, Hermann (২০১২), Peter Pesic, সম্পাদক, Levels of Infinity / Selected Writings on Mathematics and Philosophy, Dover, পৃষ্ঠা 17, আইএসবিএন 978-0-486-48903-2 
  20. AG, Compart. "Unicode Character "∞" (U+221E)". Compart.com. Retrieved 2019-11-15.
  21. "List of LaTeX mathematical symbols - OeisWiki". oeis.org. Retrieved 2019-11-15.
  22. Scott, Joseph Frederick (1981), The mathematical work of John Wallis, D.D., F.R.S., (1616–1703) (2 ed.), American Mathematical Society, p. 24, ISBN 978-0-8284-0314-6, archived from the original on 2016-05-09
  23. Martin-Löf, Per (1990), "Mathematics of infinity", COLOG-88 (Tallinn, 1988), Lecture Notes in Computer Science, vol. 417, Berlin: Springer, pp. 146–197, doi:10.1007/3-540-52335-9_54, ISBN 978-3-540-52335-2, MR 1064143
  24. O'Flaherty, Wendy Doniger (1986), Dreams, Illusion, and Other Realities, University of Chicago Press, p. 243, ISBN 978-0-226-61855-5, archived from the original on 2016-06-29
  25. Toker, Leona (1989), Nabokov: The Mystery of Literary Structures, Cornell University Press, p. 159, ISBN 978-0-8014-2211-9, archived from the original on 2016-05-09
  26. Bell, John Lane. "Continuity and Infinitesimals". In Zalta, Edward N. (ed.). Stanford Encyclopedia of Philosophy.
  27. Jesseph, Douglas Michael (Spring–Summer 1998). "Leibniz on the Foundations of the Calculus: The Question of the Reality of Infinitesimal Magnitudes". Perspectives on Science. 6 (1&2): 6–40. doi:10.1162/posc_a_00543. ISSN 1063-6145. OCLC 42413222. S2CID 118227996. Archived from the original on 11 January 2012. Retrieved 1 November 2019 – via Project MUSE.
  28. Taylor, Angus E. (1955), Advanced Calculus, Blaisdell Publishing Company
  29. These uses of infinity for integrals and series can be found in any standard calculus text, such as, Swokowski 1983, pp. 468–510
  30. "Properly Divergent Sequences - Mathonline"mathonline.wikidot.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৫ 
  31. Aliprantis, Charalambos D.; Burkinshaw, Owen (1998), Principles of Real Analysis (3rd ed.), San Diego, CA: Academic Press, Inc., p. 29, ISBN 978-0-12-050257-8, MR 1669668, archived from the original on 2015-05-15
  32. Gemignani, Michael C. (1990), Elementary Topology (2nd ed.), Dover, ISBN 978-0-486-66522-1
  33. Beutelspacher, Albrecht; Rosenbaum, Ute (1998), Projective Geometry / from foundations to applications, Cambridge University Press, p. 27, ISBN 978-0-521-48364-3
  34. Rao, Murali; Stetkær, Henrik (1991). Complex Analysis: An Invitation : a Concise Introduction to Complex Function Theory. World Scientific. p. 113. ISBN 9789810203757.
  35. Keisler, H. Jerome (1986), Elementary Calculus: An Approach Using Infinitesimals (2nd ed.)
  36. Allen, Donald (2003). "The History of Infinity" (PDF). Texas A&M Mathematics. Retrieved Nov 15, 2019.
  37. Dauben, Joseph (1993). "Georg Cantor and the Battle for Transfinite Set Theory" (PDF). 9th ACMS Conference Proceedings: 4.
  38. Cohen, Paul (1963), "The Independence of the Continuum Hypothesis", Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America, 50 (6): 1143–1148, Bibcode:1963PNAS...50.1143C, doi:10.1073/pnas.50.6.1143, PMC 221287, PMID 16578557
  39. Kline, Morris (1972), Mathematical Thought from Ancient to Modern Times, New York: Oxford University Press, pp. 1197–1198, ISBN 978-0-19-506135-2
  40. Gribbin, John (২০০৯)। In search of the multiverse : parallel worlds, hidden dimensions, and the ultimate quest for the frontiers of reality। Hoboken, N.J.: Wiley। আইএসবিএন 978-0-470-61352-8ওসিএলসি 658117198 
  41. "Brake, Mark (2013). Alien Life Imagined: Communicating the Science and Culture of Astrobiology. Physics Today. Vol. 67 (illustrated ed.). Cambridge University Press. p. 63. Bibcode:2014PhT....67f..49S. doi:10.1063/PT.3.2420. ISBN 978-0-521-49129-7. Extract of p. 63
  42. Koupelis, Theo; Kuhn, Karl F. (2007). In Quest of the Universe (illustrated ed.). Jones & Bartlett Learning. p. 553. ISBN 978-0-7637-4387-1. Extract of p. 553
  43. "Will the Universe expand forever?". NASA. 24 January 2014. Archived from the original on 1 June 2012. Retrieved 16 March 2015.
  44. "Our universe is Flat". FermiLab/SLAC. 7 April 2015. Archived from the original on 10 April 2015.
  45. Cambridge Dictionary of Philosophy, Second Edition, p. 429
  46. "Infinity and NaN (The GNU C Library)". www.gnu.org. Retrieved 2021-03-15.
  47. Stokes, Roger (July 2012). "19.2.1". Learning J. Archived from the original on 25 March 2012. Retrieved 6 September 2012.
  48. Gosling, James; et al. (27 July 2012). "4.2.3.". The Java Language Specification (Java SE 7 ed.). California: Oracle America, Inc. Archived from the original on 9 June 2012. Retrieved 6 September 2012.
  49. Kline, Morris (১৯৮৫)। Mathematics for the nonmathematician । Courier Dover Publications। পৃষ্ঠা 229আইএসবিএন 978-0-486-24823-3 , Section 10-7, p. 229 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৫-১৬ তারিখে
  50. Infinite chess at the Chess Variant Pages Archived 2017-04-02 at the Wayback Machine An infinite chess scheme.
  51. "Archived copy" (PDF). Archived from the original (PDF) on 2020-02-26. Retrieved 2021-03-25.

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা