বাগেরহাট জেলা

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের একটি জেলা
(Bagerhat District থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বাগেরহাট বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত। উপজেলার সংখ্যা বিবেচনায় বাগেরহাট বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[]

বাগেরহাট জেলা
জেলা
উপরে থেকে: ষাট গম্বুজ মসজিদ, সিঙ্গাইর মসজিদ, মোংলা বন্দর, করমজল পয়েন্ট সুন্দরবন, বাগেরহাট জাদুঘর
বাংলাদেশে বাগেরহাট জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে বাগেরহাট জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৪০′০″ উত্তর ৮৯°৪৮′০″ পূর্ব / ২২.৬৬৬৬৭° উত্তর ৮৯.৮০০০০° পূর্ব / 22.66667; 89.80000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
প্রতিষ্ঠা২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
সরকার
 • জেলা প্রশাসকমোঃ খালিদ হোসেন
আয়তন
 • মোট৩,৯৫৯.১১ বর্গকিমি (১,৫২৮.৬২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (১৯৯১)
 • মোট১৫,১৫,৮১৫
 • জনঘনত্ব৩৮০/বর্গকিমি (৯৯০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৪.৬২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৯০০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৪০ ০১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

নামকরণের পটভূমি

সম্পাদনা

বাগেরহাটের নাম কে কবে দিয়েছিলেন তা গবেষণা সাপেক্ষ হলেও আজ তা নিরূপন করা দুঃসাধ্য। কারো কারো মতে বাগেরহাটের নিকটবর্তী সুন্দরবন থাকায় এলাকাটিতে বাঘের উপদ্রব ছিল, এ জন্যে এ এলাকার নাম হয়ত ‘‘বাঘেরহাট’’ হয়েছিল এবং ক্রমান্বয়ে তা বাগেরহাট-এ রূপান্তরিত হয়েছে। মতান্তরে হযরত খান জাহান আলী এর প্রতিষ্ঠিত ‘‘খলিফাত-ই-আবাদ’’ এর বিখ্যাত ‘‘বাগ’’ অর্থ বাগান, এ অঞ্চলে এতই সমৃদ্ধি লাভ করে যে, তা থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগের আবাদ তথা ‘‘ বাগেরহাট’’। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হচ্ছে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীর উত্তর দিকের হাড়িখালী থেকে বর্তমান নাগের বাজার পর্যন্ত যে লম্বা বাঁক অবস্থিত, পূর্বে সে বাঁকের পুরাতন বাজার এলাকায় একটি হাট বসত। আর এ হাটের নামে এ স্থানটির নাম হলো বাঁকেরহাট। কালক্রমে বাঁকেরহাট পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগেরহাট নামে।

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

বাগেরহাট জেলার উত্তরে গোপালগঞ্জ জেলানড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পিরোজপুর জেলাবরগুনা জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা। ২২°৩২’ থেকে ২২°৫৬’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২’ থেকে ৮৯°৪৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বাগেরহাট জেলার অবস্থান। এ জেলার আয়তন ৩৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার; তারমধ্যে ১৮৩৪.৭৪ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল, ৪০৫.৩ বর্গকিলোমিটার জলাশয় এবং অবশিষ্টাংশ নিম্ন-সমভূমি। বাগেরহাট জেলা সদরের অধিকাংশ ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে এবং শহরের বর্ধিত অংশ ভৈরবের দক্ষিণ প্রবাহ দড়াটানার পশ্চিম তীরে অবস্থিত।বঙ্গবসাগরেের উত্তরে এটি অবস্থিত।

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

পৌরসভা ০৩ টি, গ্রামেরসংখ্যা ১,০৪৭ টি। বাগেরহাট জেলা মোট ৯ টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হলো:

ইতিহাস

সম্পাদনা

বাগেরহাটে প্রথম বসতি স্থাপন করে অনার্য শ্রেণীর মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল হতে আসা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় আলপাইন প্রভৃতি। এ অঞ্চলে অনার্য প্রভাবের বড় নিদর্শন হল পৌন্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায়। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রামপাল উপজেলায় এ সম্প্রদায়ের লোক বেশি বাস করে। পৌন্ড্র শব্দের অপভ্রংশ পুড়া বা পোদ। পৌন্ড্র শব্দটি দ্রাবিড় শব্দজাত যার অর্থ ইক্ষু। অনার্য শ্রেণীভূক্ত নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ ও বাগেরহাটে প্রচুর বাস করে। এদের পূর্ব নাম চন্ডাল। এরা বরেন্দ্র অঞ্চল হতে এসে এখানে বসবাস শুরু করে। এ ছাড়া বাগেরহাটে এক শ্রেণীর মৎস্য শিকারী বা জেলে বসবাস করে যাদের আদি পুরুষ নিগ্রোবটু(নিগ্রয়েড) । এরা ভারত উপমহাদেশের আদিমতম অধিবাসী। খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া হতে এ অঞ্চলে আর্য তথা আদি নর্কিভ বা ইন্ডিভদের আগমণ ঘটে। আর্য-অনার্যের শোণিত ধারাই এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ।বস্ত্ত পূজারী অনার্যগণ কৌমধর্ম (টাইবাল ধর্ম) অনুসরণ করতো। শক্তি পূজারী আর্যরা নিয়ে আসে বৈদিক ধর্ম। সূর্য ও অগ্নি ছিল তাদের অন্যতম উপাস্য। আর্য ও অনার্য উভয় ধর্মের আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতির মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুধর্ম। বাগেরহাটের অতি প্রাচীন স্থান পানিঘাটে প্রাপ্ত কষ্টি পাথরের অষ্টাদশ ভূজা দেবীমূর্তি, মরগা খালের তীরে খানজাহান আলী এর পাথর ভর্তি জাহাজ ভিড়বার স্থান জাহাজঘাটায় মাটিতে গ্রোথিত পাথরে উৎকীর্ণ অষ্টাদশ ভূজা মহিষ মর্দিনী দেবীমূর্তি, চিতলমারী উপজেলাধীন খরমখালি গ্রামে প্রাপ্ত কৃষ্ণ প্রস্তরের বিষ্ণু মূর্তি ইত্যাদি নিদর্শন এখানে হিন্দু সভ্যতা বিকাশের পরিচয় বহন করে। ১৪৫০ খ্রিঃ খানজাহান আলী খাঞ্জেলী দীঘি খনন করান। এ সময় অনন্য সাধারণ ধ্যাণী বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে বৌদ্ধ পুরোহিত বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো পাল আমলে নির্মিত ঐ বৌদ্ধমূর্তিটি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে সংস্থাপন করেন। এটা এ অঞ্চলে বৌদ্ধ প্রভাবের পরিচয় বহন করে।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

বাগেরহাট জেলার মানুষ প্রধানত কৃষি নির্ভর। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল ও সুপারি জন্মে। ধান, মাছ ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির প্রধান উৎস। সুন্দরবন উপকূলের কিছু মানুষ মধু ও গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

শিক্ষাতথ্য

সম্পাদনা

বাগেরহাট জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৪.৬২%। প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ১০৯০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮২টি, নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০টি,কলেজিয়েট ০৬টি, মহাবিদ্যালয় ৩৩টি, মাদ্রাসা ২৪৫টি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কারিগরী কলেজ-০১টি, পিটিআই-০১টি, ভিটিআই-০১টি, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-০৪টি, কৃষি ও প্রযুক্তি কলেজ ০১টি, যুবপ্রশিক্ষন কেন্দ্র-০১টি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ০১টি, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল-০১টি, মেরিণ ইনস্টিটিউট-০১টি, শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ০১টি, সরকারি শিশুসদন-০২টি, আইন কলেজ-০১টি, টেক্সটাইল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট- ০১টি।

স্বাস্থ্যতথ্য

সম্পাদনা

বাগেরহাট জেলায় হাসপাতাল ১১টি, শয্যাসংখ্যা ৪১৫টি, (সদর হাসপাতাল-২৫০শয্যা, ০৩টি ৫০শয্যা, ৫টি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট, মাতৃসদন কেন্দ্র ১০ শয্যাবিশিষ্ট), ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬২টি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৯%, নলকূপের সংখ্যা ২০,০৫২টি, গভীর নলকূপ ৫,১৯৯টি (সচল-৫,১৪৩টি, অকেজো-৫৬টি), অ-গভীর নলকূপ ১৪,৮৫৩টি (সচল-১২,৯৩০টি, অকেজো-১,৯২৩টি), পিএসএফ ১৮৫৮টি (সচল-১৫০৮টি, অকেজো-৩৫০টি), ভিএসএসটি ১২২৮টি (সচল-১০৫০টি, অকেজো-১৭৮টি), এসএসটি ২,৬১৯টি (সচল-২৪৬৪টি, অকেজো-১৫৫টি), রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ৮৮টি, স্যানিটেশন কভারেজ ১০টি।

কৃষিতথ্য

সম্পাদনা

মোট জমির পরিমাণ ১,৭৪,৮২৪হেক্টর। আবাদী ১,৫৬,৩৮৮হেক্টর (ফসলীজমি ১,৩৩,৮৯৮ হেক্টর, ফলবাগান ২২,৪৯০হেক্টর), অনাবাদী/পতিত ৮,৯৭৮হেক্টর, স্থায়ীজলাবদ্ধজমি ৯,৪৫৮হেক্টর।প্রধান উৎপন্ন ফসল: ধান, পাট, পান, কলা, নারিকেল, সুপারি, ডাল, আলু, তরমুজ, আখ ও শাকসবজি। এ অঞ্চল চিংড়ি মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

শিল্পতথ্য

সম্পাদনা

সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ০৪টি, এলপিজি প্লান্ট ০২টি, ক্ষুদ্র শিল্প ৫৪২টি, কুটির শিল্প ২,৩০২টি, বিসিক শিল্পনগরী ০১টি।

  1. পানগুছি নদী
  2. পশুর নদী
  3. হরিণঘাটা নদী
  4. মধুমতি নদী
  5. দড়াটানা নদী
  6. মোংলা নদী
  7. বগুড়া নদী
  8. বলেশ্বর নদী
  9. ভাংগ্রা নদী
  10. গোসাইরখালী নদী

চিত্তাকর্ষক স্থান

সম্পাদনা

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা

সম্পাদনা
  1. মসজিদের শহর
  2. ষাট গম্বুজ মসজিদ
  3. খান জাহানের সমাধি
  4. কোদলা মঠ
  5. রেজা খোদা মসজিদ
  6. জিন্দা পীর মসজিদ
  7. ঠান্ডা পীর মসজিদ
  8. সিংগাইর মসজিদ
  9. বিবি বেগনী মসজিদ
  10. চুনাখোলা মসজিদ
  11. নয়গম্বুজ মসজিদ
  12. সিংগার মসজিদ
  13. এক গম্বুজ জামে মসজিদ, বাগেরহাট
  14. পীর আলীর সমাধি
  15. মুনিগঞ্জ শিবমন্দির, বাগেরহাট।
  16. শ্রী শ্রী গঞ্জেশ্বরী কালী মন্দির, বাগেরহাট।
  17. রণবিজয়পুর মসজিদ
  18. দশ গম্বুজ মসজিদ
  19. কুটিবাড়ি,জমিদারবাড়ি,মোড়েলগঞ্জ।
  20. বড় আজিনা
  21. ছয় গুম্বজ মসজিদ, বৈটপুর
  22. খান জাহানের নির্মিত প্রাচীন রাস্তা
  23. বড়বাড়িয়া মুন্সীবাড়ি প্রাচীন মসজিদ,চিতলমারী,বাগেরহাট

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

সম্পাদনা
  1. সুন্দরবন
  2. ঢাংমারী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  3. মাঝের চর, শরণখোলা
  4. চাঁদপাই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  5. দুধমুখী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  6. সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
  7. দুবলার চর
  8. কটকা সমুদ্র সৈকত
  9. টাইগার পয়েন্ট

দীঘি/ জলাশয়

সম্পাদনা
  1. ঘোড়া দীঘি
  2. ঠাকুর দীঘি
  3. পচা দীঘি
  4. কোদাল ধোয়া দীঘি
  5. ঝলমলিয়া দীঘি

অন্যান্য

সম্পাদনা
  1. মংলা বন্দর
  2. খান জাহান আলী বিমানবন্দর
  3. সুন্দরবন রিসোর্ট, বারাকপুর
  4. চন্দ্রমহল, রনজিতপুর।
  5. বাগেরহাট জাদুঘর
  6. ওয়ান্ডার কিংডম
  7. বাগেরহাট পৌর পার্ক
  8. শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়াম
  9. রুপা চৌধুরী পৌর পার্ক
  10. ডিসি পার্ক, যাত্রাপুর

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা

শিক্ষাবিদ

সম্পাদনা

কবি ও সাহিত্যিক

সম্পাদনা

খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা

সম্পাদনা

রাজনীতিবিদ

সম্পাদনা

খেলোয়াড়

সম্পাদনা

অন্যান্য

সম্পাদনা

সংসদীয় আসন

সম্পাদনা

মিডিয়া

সম্পাদনা

সংবাদপত্র

সম্পাদনা
  • দক্ষিণ বাংলা
  • উত্তাল
  • দক্ষিণ কণ্ঠ
  • বাগেরহাট দর্পন
  • বাগেরহাট বার্তা
  • দূত
  • সাপ্তাহিক খানজাহান
  • নোনাজল

লোক সংস্কৃতি

সম্পাদনা

মেলা

  • খানজাহান আলী (রঃ) মাজারের ওরস
  • দুবলার চরের রাস মেলা
  • রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মেলা
  • যাত্রাপুরের রথের মেলা
  • তালেশ্বরের রথের মেলা
  • মঘিয়ার মেলা
  • কালাচাঁদ ফকিরের মেলা
  • কালখেরবেড়ের মেলা
  • চাঁদপাই এর মেলা
  • বাণিজ্য মেলা
  • বৈশাখী মেলা
  • ভৈরব নদের নৌকা বাইচ
  • মধুমতী নদীর নৌকা বাইচ

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা