হাজারা

আফগানিস্তানের হাজারাজাত পার্বত্য অঞ্চলের একটি জাতিগত গোষ্ঠী

হাজারা (ফার্সি: هزاره) মধ্য আফগানিস্তানের হাজারাজাত পার্বত্য অঞ্চলের একটি জাতিগত গোষ্ঠী। এই জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হাজারাগি। এটি দারি ভাষার একটি প্রকারভেদ,[১১][১২][১৩] যা আফগানিস্তানের দুটি সরকারি ভাষার অন্যতম।

হাজারা
هزاره
১৮৮০ সালে জন বার্কের তোলা আলোকচিত্রে বেসুদি হাজারা সম্প্রদায়ের প্রধানেরা, দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের সময়, সম্ভবত আফগানিস্তানের কাবুল কিংবা এর আশেপাশে কোনো জায়গায়।
মোট জনসংখ্যা
আনুমানিক ৭-৮ মিলিয়ন[১]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
 আফগানিস্তান২৮,৪১,০০০ (৯%)[২]
 পাকিস্তান৯,০০,০০০। প্রায় ৪০,০০০ আফগান বংশোদ্ভুত হাজারা জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে বাস করে (২০০৫)[৩][৪]
 ইরান৫,০০,০০০[৫]
 ইউরোপ১,৩০,০০০[৬]
 অস্ট্রেলিয়া১৮,০০০ (২০১৪)[৭]
 কানাডা৪,৩০০[৮]
 ইন্দোনেশিয়া৩,৮০০[৯]
ভাষা
দারি (হাজারাগি) (ফার্সি ভাষার পূর্বাঞ্চলীয় প্রভেদ)
ধর্ম
শিয়া (দ্বাদশবাদি এবং ইসমাইলি); সুন্নি সংখ্যালঘু (দেখুন আইমাক হাজারা)[১০]
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
আইমাক জনগোষ্ঠী

হাজারা জনগোষ্ঠী আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগত গোষ্ঠী।[১৩][১৪][১৫][১৬] এছাড়াও প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত। পাকিস্তানে প্রায় ৬,৫০,০০০-৯,০০,০০০ হাজারা জনগোষ্ঠী বাস করে।[১৭] পাকিস্তানের মূলত কোয়েটা অঞ্চলে এই জনগোষ্ঠীর বসবাস।

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

১৬শ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর তাঁর আত্মজীবনীতে হাজারা নামটির উল্লেখ করেন। তিনি কাবুলিস্তানের পশ্চিম, গজনির উত্তরে ও ঘোর প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে হাজারিস্তান নামে একটি জনবহুল স্থানের উল্লেখ করেন।[১৮]

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী হাজারা শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে আগত, যার অর্থ "হাজার" (hezār هزار)। ধারণা করা হয় এটি চেঙ্গিজ খানের সময়ে ১,০০০ সৈন্যের সামরিক এককের মঙ্গোলীয় শব্দ "মিং" (ming বা minggan)-এর অনুবাদ হতে পারে।[১৯][২০][২১] সময়ের সাথে সাথে, হাজারা শব্দটি বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নির্দেশ করে।[১৩] তবে হাজারা জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে স্থানীয়ভাবে "আজরা" (āzra, آزره বা azra ازره) বলে পরিচয় দেয়।

উৎস সম্পাদনা

 
১৪৩০ সালে অঙ্কিত পারস্য ক্ষুদ্রচিত্রে মাহমুদ গাজান ও তাঁর ভাই খোদাবন্দ
 
১৮৭৯ সালের একটি চিত্রে দাইজাঙ্গি হাজারা

হাজারাদের আদি নিদর্শন সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তুর্ক এবং মঙ্গোলদের হাজারা জাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। হাজারাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য,[২২] মুখের হাড়ের গঠন এবং তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা মঙ্গোলীয়মধ্য এশিয়ার তুর্ক জাতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হাজারাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তাদের আংশিক মঙ্গোলিয় বংশধর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২৩] স্থানীয় ইরানি জনসংখ্যার সঙ্গে আক্রমণকারী মঙ্গোল এবং তুর্ক-মঙ্গোল মিশ্রিত হয়ে একটি স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, নিকুদার মঙ্গোলরা বর্তমান আফগানিস্তান অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়ে বসবাস শুরু করে। ইলখানাততিমুরিদ জাতির সাথে মধ্য এশিয়া থেকে অন্যান্য মঙ্গোলদের মতো চাগতাই মঙ্গোলের একটি দল হাজারাজাত অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে এবং স্থানীয়দের সাথে মিলিত হয়ে একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী গঠন করে।

ইতিহাস সম্পাদনা

ধারণা করা হয় আফগানিস্তানে হাজারারা অস্তিত্ব লাভ করে ১২২১ সালে বামিয়ান অধিগ্রহণের মাধ্যমে। ১৬শ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট বাবরের বইয়ে হাজারাদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর হাজারাদের উল্লেখ করেন সাফাভি রাজবংশের বাদশাহ আব্বাসের দরবারের ঐতিহাসিকেরা। ধারণা করা হয়, সাফাভি রাজবংশের সময়ে ১৬শ শতাব্দীর শেষভাগে কিংবা ১৭শ শতাব্দীর শুরুর দিকে হাজারারা শিয়া মতাদর্শ গ্রহণ করে।[২৪][২৫]

১৮শ শতকে আহমদ শাহ দুররানি অন্যান্য উপজাতিদের সাথে হাজারাদেরও সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন।[২৬] কারো কারো মতে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে হাজারাদের হেলমান্দকান্দাহারের আর্ঘান্দাব অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

১৯শ শতাব্দী সম্পাদনা

দোস্ত মুহাম্মদ খান দ্বিতীয় দফায় সিংহাসনে বসার পর হাজারাজাত অঞ্চলের হাজারারা প্রথমবারের মতো করের আওতাভুক্ত হয়। যদিও এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশই ১৯ শতকের মাঝামাঝিতে আবদুর রহমান খানের বিজয় পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত ছিল।

১৮৮০ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ সমাপ্ত হলে ও গন্দমাক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, আবদুর রহমান খান হাজারাজাত ও কাফিরিস্তান নিজের আয়ত্তে আনার জন্য মনঃপুত করেন। তার অভিযানে স্থানীয় হাজারারা বাঁধা প্রদান করলে তার সেনাবাহিনী ব্যাপক নৃশংসতা চালায়। হাজারাজাতের দক্ষিণ অংশ তার শাসন মেনে নেওয়ায় নৃশংসতার হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু অবশিষ্ট হাজারাজাত তার চাচা শের আলি খানকে সমর্থন দেয়। একে ১৮৮৮-১৮৯৩ হাজারা বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে আবদুর রহমান খান বিদ্রোহী উপজাতি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।[২৪] আবদুর রহমান শেখ আলি হাজারা গোষ্ঠীর নেতা সৈয়দ জাফরকে আটক করে মাজার-ই-শরিফে বন্দি করে রাখেন। আবদুর রহমান খানের অভিযান হাজারাদের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনে। হাজারা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০% মারা যায় অথবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়।[২৭]

২০শ শতাব্দী সম্পাদনা

 
রাজা মুহাম্মদ নাদির শাহর হত্যাকারী আব্দুল খালিক হাজারা

১৯০১ সালে আবদুর রহমানের বংশধর হাবিবউল্লাহ খান বাস্তুচ্যুতদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। কিন্তু আবদুর রহমানের সময়েই আফগান প্রশাসন ও হাজারাদের মধ্যকার সম্পর্কে গভীর ফাটল দেখা যায়। হাজারারা ২০শ শতাব্দীর প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে প্রচণ্ড সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতে থাকে। ১৯৩৩ সালে আফগান বাদশাহ মুহাম্মদ নাদির শাহ হাজারা সম্প্রদায়ের আবদুল খালিক নামক একজনের হাতে নিহত হন। আফগান সরকার পরবর্তীতে তাকে ও তার পরিবারের অনেক নিরপরাধ সদস্যদের গ্রেফতার করে ও ফাঁসি দেয়।[২৮]

হাজারাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা ও বিদ্রোহ চলতে থাকে। বিশেষ করে ১৯৪৫-৪৬ সালে মুহাম্মদ জহির শাহর আমলে হাজারাদের ওপর আরোপিত বিশেষ করের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। একই সময়ে যাযাবর সম্প্রদায় "কুচি" সরকারের কর অব্যাহতি পাওয়ার সাথে সাথে বিশেষ অর্থ সাহায্যও লাভ করত।[২৪] বিদ্রোহীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ধরে হত্যা করতে শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্রোহ দমাতে সৈন্য প্রেরণ করে এবং পরবর্তীতে কর তুলে নেয়।

 
সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় হিজবে-ওয়াহদাত পার্টির নেতা আব্দুল আলি মাজারি

সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের মতো হাজারাজাতে খুব একটা যুদ্ধ হয় নি। যদিও হাজারা রাজনৈতিক দলগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। কোয়েটা ভিত্তিক রাজনৈতিক দল তানজাইম-ই নাসল-ই নাও-ই হাজারা এবং ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী ও হাজারাজাতের ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বিভাজন দ্রখা দেয়। [২৪] ১৯৭৯ এর মধ্যে ইসলামপন্থী হাজারা গোষ্ঠী সোভিয়েত সমর্থিত আফগান সরকারের থেকে হাজারাজাতকে মুক্ত করে এবং পরবর্তীতে ধর্মনিরপেক্ষদের থেকে সম্পূর্ণ হাজারাজাতের অধিকার নিয়ে নেয়। ১৯৮৪ সালের মধ্যে নিরপেক্ষ গোষ্ঠী ইসলামপন্থীদের কাছে সমস্ত শক্তি হারায়।

 
বামিয়ান উপত্যকায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান-বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি

১৯৮৯ সালে সোভিয়েতের পতনের পর, ইসলামি গোষ্ঠীগুলো তাদের রাজনৈতিক আবেদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে এবং হাজারা জাতীয়তাবাদের দিকে দৃষ্টি দেয়।[২৪] এর মাধ্যমে হাজারা বিদ্রোহীদের (হারাকাত-ই ইসলামি বাদে) সংগঠন হিজবে-ওয়াহদাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯২ সালে কাবুলের রাজবংশের পতন হলে হারাকাত-ই ইসলামি বুরহানউদ্দিন রব্বানীর সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয় অপরদিকে হিজবে-ওয়াহদাত বিরোধী পক্ষে সমর্থন দেয়। তালিবানরা ১৯৯৫ সালে নেতা আব্দুল আলি মাজারিকে ধরে হত্যা করে এবং হিজবে-ওয়াহদাতকে কাবুল থেকে বিতারিত করে। ১৯৯৬ সালে তালিবানরা কাবুল দখল করলে হাজারারা নতুন শত্রুর বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সে যোগ দেয়। কিন্তু প্রবল প্রতিরোধ তৈরি করা সত্ত্বেও ১৯৯৮ সালে তালিবানদের কাছে হাজারাজাতের পতন ঘটে। তালিবানরা হাজারাজাতকে বাকি বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখে এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণও বামিয়ান, ঘোর, ওয়ারদকদায়কুন্দিতে প্রবেশ করতে দেয়নি।[২৯]

যদিও হাজারারা সোভিয়েত-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল, তারপরও কিছু হাজারা সমাজতান্ত্রিক সরকারে যোগ দেয় ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। হাজারা সম্প্রদায়ের সুলতান আলি কিশতমান্দ ১৯৮১-১৯৯০ সাল পর্যন্ত (১৯৮৮ সালের কয়েকদিন ছাড়া) আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।[৩০] তেমনি বাঘলান প্রদেশের ইসমাইলি হাজারারা সমাজতান্ত্রিক সরকার ও তাদের পীর সৈয়দ জাফর নাদেরির নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র সমর্থিত আধা-সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে।[৩১]

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে এই সময়ের মধ্যে দখলকারী পশতু তালিবানদের দ্বারা হাজারারা প্রচণ্ড নির্যাতন এবং গণহত্যা-লুটতরাজের শিকার হয়।[৩২] হাজারাজাতের পাশাপাশি তালিবান নিয়ন্ত্রিত সমস্ত জেলাতেই এই ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন সংঘটিত হয়। বিশেষত ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরিফ দখল করে প্রায় ৮,০০০ সাধারণ মানুষকে হত্যার পর তালিবানরা সরাসরি হাজারাদের আক্রমণ করার ঘোষণা দেয়।

২১শ শতাব্দী সম্পাদনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর, ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনাবাহিনী।আফগানিস্তান আক্রমণ করে।

বর্তমানে হাজারারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। হিজবে ওয়াহদাত পার্টির মোহাম্মদ মোহাকিক ২০০৪ সালের আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং করিম খলিলি আফগানিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও গভর্নর হাজারা সম্প্রদায়ের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সিমা সামার, হাবিবা সারাবি, সারওয়ার দানিশ, সৈয়দ হুসেইন আনোয়ারি, আবদুল হক শাফাক, সৈয়দ আনোয়ার রহমতি, কোরবান আলি ওরুজগনি প্রমুখ। দায়কুন্দি প্রদেশের নিলি শহরের মেয়র আজরা জাফরি আফগানিস্তানের প্রথম নারী মেয়র। আফগানিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৫% হলো নৃতাত্ত্বিক হাজারা।[৩৩]

আফগানিস্তান পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ, তবুও বিগত আফগান সরকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হাজারাজাত অঞ্চলের উন্নয়ন খুব একটা করেনি। ২০০১ সালে তালিবানের উত্থানের পর আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ সাহায্য আসে এবং ২০১২ আগস্ট থেকে আফগানিস্তানে বেশ কিছু বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়। সম্পূর্ণ আফগানিস্তানে প্রায় ৫০০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, যার সামান্য অংশ হাজারাজাতে পড়ে। আবার বামিয়ান প্রদেশের বন্দে-আমির আফগানিস্তানের প্রথম জাতীয় উদ্যান। কাবুল থেকে বামিয়ানে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ করা হয়, এছাড়া বামিয়ান, দায়কুন্দি ও অন্যান্য প্রদেশে নতুন পুলিশ স্টেশন, সরকারি দপ্তর, হাসপাতাল ও স্কুল নির্মিত হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রথম স্কি রিসোর্টও বামিয়ানে স্থাপন করা হয়েছে।[৩৪][৩৫]

কুচি উপজাতিদের (আফগান যাযাবর যারা মৌসুমের ওপর নির্ভর করে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াত করে) গ্রীষ্মকালে হাজারাজাতের মধ্যে দিয়ে যাতায়াতের অনুমতিকে বৈষম্যের নিদর্শন মনে করা হয়। ধারণা করা হয় কুচিদের হাজারাজাতের তৃণভূমি ব্যবহারের অনুমতি দানের এই প্রথা শুরু হয় আবদুর রাজ্জাক খানের সময় থেকে।[৩৬] পার্বত্য হাজারাজাতে বসবাসকারী হাজারারা লম্বা ও রুক্ষ শীতকালে এই অঞ্চলে বিদ্যমান সামান্য তৃণভূমির ওপর নির্ভর করে। ২০০৭ সালে কুচিরা গবাদি পশু চড়াতে হাজারাজাতে অরবেশ করলে হাজারাদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে এবং উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোক অ্যাসল্ট রাইফেলের গুলিতে নিহত হন। কেন্দ্রীয় সরকার এমনকি রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের হস্তক্ষেপের পরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে। ২০১২ সালে জুলাইয়ে উরুজগান প্রদেশে এক হাজারা পুলিশ কমান্ডার দুইজন স্থানীয় হাজারার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ৯ জন সাধারণ পশতুনকে হত্যা করে। এ ঘটনাটি কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত করছে।[৩৬]

শান্তি জিরগার পর রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের সাথে তালিবানদের চুক্তি স্বাক্ষর তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সংখ্যালঘুদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। সম্মিলিতভাবে আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬৫% গঠন করা তাজিক, উজবেক ও হাজারারা তালিবান আমলের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কথা স্মরণ করে তালিবানদের পুনরায় ক্ষমতায় আসতে বাধা প্রদান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।[৩৭]

জিনতত্ত্ব সম্পাদনা

জিনিতাত্ত্বিকভাবে হাজারারা পশ্চিম ইউরেশীয়পূর্ব ইউরেশীয় জাতির মিশ্রণ।[৩৮][৩৯][৪০] গবেষণায় পাওয়া গেছে যে তাদের এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক ক্রোমোজোম পূর্ব এশীয় পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে আবার পিসিএ তাদের পূর্ব এশীয় ও ককেশাস/মধ্যপ্রাচ্য/ইউরোপের মাঝখানে নির্দেশ করে।[৪১] জিনতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায় আফগানিস্তানের হাজারারা উজবেকদের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত যেখানে উভয় জাতিই আফগানিস্তানের তাজিকপশতুনদের সাথে বেশ কম সম্পর্কযুক্ত।[৪১] তুর্কমঙ্গোলদের মাঝে পিতৃতাত্ত্বিক ও মাতৃতাত্ত্বিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৪২]

পূর্ব এশিয়ার পুরুষ ও নারী পূর্বপুরুষের বিষয়টি জিনতাত্ত্বিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। হাজারাদের পিতার ক্রোমোজোম মঙ্গোলদের সাথে ও কাজাখদের মতো তুর্ক জাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[৪৩] পূর্ব এশীয় মাতৃ হ্যাপ্লোগ্রুপ (এমটিডিএনএ) প্রায় ৩৫% ধারণ করে। যা আবার সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা। এ থেকে ধারণা করা হয় তুর্কি ও মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীরা পূর্ব এশীয় মহিলাদের সাথে মিলিত হয়।[৪৪] হাজারাদের অ-পূর্ব এশীয় মাতৃডিএনএ এমটিডিএনএ এর পরিমাণ প্রায় ৬৫%, যার অধিকাংশ পশ্চিম ইউরেশীয় ও কিছু পরিমাণ দক্ষিণ এশীয়।[৪৫]

পাকিস্তানি হাজারাদের মধ্যে প্রাপ্ত সবচেয়ে সাধারণ পৈতৃক হ্যাপ্লোগ্রুপ হলো হ্যাপ্লোগ্রুপ সি-এম২১৭ প্রায় ৪০% (১০/২৫) এবং হ্যাপ্লোগ্রুপ ও৩ ৮% (২/২৫), উভয়টিই পূর্ব এশীয় ও সাইবেরিয়ান বংশোদ্ভুত।[৪৬]

আফগানিস্তানের পিতৃতান্ত্রিক ওয়াই-ডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপের উপর পরীক্ষা চালিয়ে জানা যায় সবচেয়ে সাধারণ হ্যাপ্লোগ্রুপ হলো যথাক্রমে আর১এ, সি-এম২১৭, জে২-এম১৭২ ও এল-এম২০। হাজারারা প্রধানত হ্যাপ্লোগ্রুপ সি-এম২১৭ এর অন্তর্ভুক্ত, যা পূর্ব এশিয়া ও সাইবেরিয়ান জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। আবার কিছু হাজারাদের হ্যাপ্লোগ্রুপ আর১এ১এ-এম১৭, ই১বি১বি১-এম৩৫, এল-এম২০ ও এইচ-এম৬৯, যা তাজিক, পশতুন ও ভারতীয়দের মধ্যে সাধারণ। আরেক গবেষণা থেকে দেখা যায় এই জনগোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশের হ্যাপ্লোগ্রুপ বি-এম৬০, যা সাধারণত পূর্ব আফ্রিকায় পাওয়া যায়।[৪৭] হাজারাদের উপর পরিচালিত অন্য আরেকটি এমটিডিএনএ গবেষণায় ৭.৫% মাত্রায় এমটিডিএনএ হ্যাপ্লোগ্রুপ এল পাওয়া যায়, যা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।[৪৮]

অতি সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা যায়, উইঘুররা হাজারাদের সাথে বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ। আবার উভয় জাতি পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু জাতির সাথে সম্পর্কিত। গবেষণায় পাকিস্তান ও ভারতের অন্যান্য জাতি হাজারাদের পূর্বপুরুষ হওয়ার সামান্য সম্ভাবনা প্রকাশ করে।[৪৯]

ভৌগোলিক অবস্থান সম্পাদনা

 
আফগানিস্তানের নৃ-ভাষাতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য

হাজারাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মধ্য আফগানিস্তানে বসবাস করে, তবে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও এরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বসবাস করে। বর্তমানে বহু হাজারা কাজের জন্য প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী হাজারারা আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ, তবে কিছু কিছু সূত্র মতে তারা জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।[১৩][৫০] তবে এ তথ্য প্রমাণে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় না। অধ্যাপক লুইস ডুপ্রি-এর মতে ১৯৭০ এর দশকে হাজারাদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০,০০০।[৫১]

দেশান্তর সম্পাদনা

হাজারাদের মৌসুমি ও ঐতিহাসিক দেশান্তরের প্রতি লক্ষ্য রেখে আলেসান্দ্রো মনসুতি তার সাম্প্রতিক নৃতত্ত্ব সম্পর্কিত বইয়ে বলেন যে[৫২] অভিবাসন হাজারাদের জীবনযাত্রার ঐতিহ্যবাহী অংশ, যা যুদ্ধ প্রভৃতি জরুরি অবস্থা ভিন্ন এই স্বাভাবিক ব্যবস্থা কখনোই ব্যাহত হয় নি।[৫৩] তবে আফগানিস্তানের কয়েক দশকব্যাপী স্থায়ী যুদ্ধ এবং পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে অনেক হাজারা তাদের দেশ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ যেমন সুইডেন এবং ডেনমার্কে চলে যায়। কেউ কেউ এই দেশগুলোতে শিক্ষার্থী হিসেবে যায়, কিন্তু অধিকাংশ সময় মানব চোরাচালানকারীদের মাধ্যমে অবৈধ পথে এসব দেশে যাতায়াত করে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রেই এতে প্রাণহানি ঘটে। ২০০১ সালের পর থেকে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র উপকূল।থেকে নৌকায় করে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর সময় সমুদ্রে প্রায় ১,০০০ মানুষ মারা গেছে।[৫৪] এদের মধ্যে হাজারারাও ছিল, বিশেষ করে সাঁতার না জানা নারী ও শিশু। এছাড়াও ২০০১ সালে একটি নরওয়েজীয় মালবাহী জাহাজ এমভি টাম্পা একটি শরণার্থীবাহী নৌকা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করে যাদের অধিকাংশ ছিল হাজারা। পরবর্তীকালে শরণার্থীদের নাউরুতে পাঠানো হয়।[৫৫] যদিও নিউজিল্যান্ড কিছু শরণার্থী গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিল কিন্তু অধিকাংশদেরই শুধু থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

পাকিস্তানে হাজারা সম্পাদনা

 
পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে জেনারেল মুসা খান হাজারা। তিনি ১৯৬০-৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

উনিশ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের সময়, হাজারারা পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরের কয়লা খনি, রাস্তা নির্মাণ ও অন্যান্য কায়িক কর্মকাণ্ডে শীতকালীন শ্রমজীবী হিসেবে কাজ করত। পাকিস্তান অঞ্চলে হাজারাদের অবস্থানের প্রথম দলিল পাওয়া যায় ১৮৩৫ সালে কোয়েটার ব্রডফুটস স্যাপারস কোম্পানিতে। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করে। কিছু হাজারা সিন্ধু প্রদেশে কৃষিজমিতে এবং সুক্কুর বাঁধ নির্মাণেও কাজ করেছিল। হাজারাদের প্রখ্যাত রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হায়দার আলি কারমাল জঘরি হাজারা জনগণের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে লেখেন। তার বই হাজারাহা ওয়া হাজারাজাত বাস্তান দার আইনা-ই-তারিখ ১৯৯২ সালে কোয়েটা থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালে কোয়েটা থেকেই আজিজ তুঘান হাজারা নামক আরেকজনের বই তারিখ মিলি হাজারা প্রকাশিত হয়।

পাকিস্তানের বেশিরভাগ হাজারারা বর্তমানে বেলুচিস্তানের কোয়েটা শহরে বাস করে। বিশেষত হাজারা টাউন ও মেহর আবাদ হাজারা অধ্যুষিত এলাকা। হাজারাদের বিশেষ গোষ্ঠী সরদার মূলত পাকিস্তানি। আফগানিস্তানের হাজারাদের তুলনায় পাকিস্তানি হাজারাদের মধ্যে সাক্ষরতার হার বেশি এবং কোয়েটার স্থানীয় সমাজ ব্যবস্থায় হাজারাদের অংশগ্রহণও তুলনামূলক বেশি। সাইরা বাতুল নামক জনৈক হাজারা নারী ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অন্যতম প্রথম মহিলা পাইলট। এছাড়াও অন্যান্য হাজারাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কাজী মোহাম্মদ ইসা, জেনারেল মুসা খান হাজারা, যিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন, এয়ার মার্শাল শরবত আলী চাঙ্গেজি, হুসেইন আলি ইউসুফি, হাজারা ডেমোক্রেটিক পার্টির খুন হওয়া চেয়ারম্যান,[৫৬] সৈয়দ নাসির আলি শাহ, কোয়েটার এমএনএ এবং তার বাবা হাজী সাঈদ হোসেন হাজারা, জিয়াউল হক যুগের একজন সিনেটর এবং মজলিসে শুরার একজন সদস্য।

তা সত্ত্বেও, হাজারারা প্রায়ই লস্কর-ই-জাংভির মতো অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী দ্বারা আক্রান্ত হয়। "অধিকার কর্মীদের মতে, ১৯৯৯ সাল থেকে প্রায় ৮০০-১,০০০ এর মতো হাজারা জঙ্গিদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন এবং এই হার দ্রুত বেড়ে চলেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে জানুয়াই থেকে কোয়েটা ও এর আশেপাশের অঞ্চলে প্রায় চারশ হাজারাকে হত্যা করা হয়েছে।"[৫৪] এই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হলো হাজারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক দল। এই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন আব্দুল খালিক হাজারা[৫৭][৫৮]

ইরানে হাজারা সম্পাদনা

আফগানিস্তানে বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে হাজারারা ইরানে স্থানান্তরিত হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ইরানে হাজারাদের জনসংখ্যা প্রায় ৫,০০,০০০ জন, যাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ ইরানে তাদের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটিয়েছে।

তবে ইরানে তাদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১১ সালের মার্চে ইউরেশিয়া দৈনিক মনিটর-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানে হাজারা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ইরান সরকারের সঙ্গে তাদের সম্বন্ধে সমঝোতা করতে ও আফগানিস্তানে প্রত্যাবাসন প্রতিরোধ করতে মঙ্গোলিয়াকে অনুরোধ করে।[৫৯]

সংস্কৃতি সম্পাদনা

 
আফগানিস্তানের গাজনিতে তাজিকপশতু মেয়েদের সাথে ঐতিহ্যবাহী লাল হিজাব হাজারা মেয়েরা

হাজারাজাতের বাইরের হাজারারা বর্তমানে তাদের বসবাসকারী শহরগুলির সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। আফগানিস্তানে তাজিক ও পশতুনদের মতোই অনেক ক্ষেত্রে তারা পশতু ও পারস্য সংস্কৃতির সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে হাজারারা উঁচু জমিতে কৃষিকাজ করে। হাজারাজাতে বসতি স্থাপনকারী হাজারাদের অনেকে তাদের নিজস্ব প্রথা ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে, যার মধ্যে কয়েকটি আফগান তাজিকদের তুলনায় মধ্য এশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, "ডাম্বুরা" নামক একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য হাজারা সঙ্গীতশিল্পীরা বিখ্যাত। ডাম্বুরা হাজারাদের বীণাজাতীয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, যা মধ্য এশিয়ার তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তান প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। হাজারারা তাঁঁবুর পরিবর্তে ঘরে বসবাস করে। তবে আইমাক হাজারারা ঘরের বদলে তাঁবুতে বাস করতে পছন্দ করে।[৬০]

ভাষা সম্পাদনা

হাজারাজাতে (হাজারিস্তান) বসবাসকারী হাজারা জনগোষ্ঠী আফগানিস্তানের হাজারাগি ভাষায় কথা বলে।[১৩][৬১] এই ভাষার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শব্দ মঙ্গোলীয় তুর্কীয় প্রভৃতি আলতায়িক ভাষাগোষ্ঠী থেকে ধার করা।[৫১][৬২][৬৩] দারি ও হাজারাগির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো উচ্চারণ এবং হাজারাগি ভাষার বিপুল পরিমাণ ধার করা শব্দ।[১২][১৩] তবে পার্থক্য সত্ত্বেও, হাজারাগি ভাষা দারি ভাষার সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ,[১১] যা আবার আফগানিস্তানের সরকারি ভাষার অন্যতম।

তবে কাবুলমাজার-ই-শরিফ প্রভৃতি বড় শহরে বাসকারী হাজারারা হাজারাগি ভাষার পরিবর্তে প্রমিত দারি ভাষা (সাধারণত কাবুলি বা Kābolī) বা দারির অন্যান্য আঞ্চলিক রূপ (যেমন হেরাতের পশ্চিমাঞ্চলের খোরাসানি Khorasani উপভাষা) ব্যবহার করে।

ধর্ম সম্পাদনা

 
২০০৮ সালে কাবুলের জামেক মসজিদ নির্মাণকালে তোলা ছবি। এটি আফগানিস্তানের বৃহত্তম শিয়া মসজিদটি।[৬৪]

হাজারারা প্রধানত শিয়া মুসলমান, যাদের বেশিরভাগই দ্বাদশবাদি[৬৫] ও কিছু ইসমাইলি সম্প্রদায়ের।[১০] অধিকাংশ আফগানরা সুন্নি মুসলিম হওয়ায় হাজারাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।[১৩] সম্ভবত ১৬শ শতাব্দির শুরুর দিকে সাফাভি রাজবংশের সূচনালগ্নে হাজারারা শিয়া মুসলিমে রূপান্তরিত হয়।[৬৬] তবুও হাজারাদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক সুন্নি মতাদর্শী রয়েছে, বিশেষত আইমাক হাজারারা সুন্নি।[১০] সুন্নি হাজারা অ-হাজারা উপজাতিদের (যেমন তিমুরি) সাথে সংযুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে ইসমাইলি হাজারারা ধর্মীয় বিশ্বাস ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অন্য হাজারাদের থেকে পৃথক থাকে।

গোত্র সম্পাদনা

বিভিন্ন গোত্রের সমন্বয়ে হাজারা সম্প্রদায় গঠিত। তার মধ্যে দাইজাঙ্গি গোত্র বৃহত্তম। হাজারা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫৭.২% দাইজাঙ্গি গোত্রের। যদিও সাম্প্রতিককালে বিশেষত আফগান রাজ্যে হাজারাদের অন্তর্ভুক্তির পর তারা অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর সাথে সংযোগ হারায়। সেই সাথে বিভিন্ন গোষ্ঠী নাম যেমন শেখ আলি, জঘোরি, গজনিচি, মুহাম্মদ খাজা, বেহসুদ, উরুজগানি, দাইকুন্দি, দাইজাঙ্গিতুর্কমানি প্রভৃতি বিলুপ্তির পথে। এছাড়াও সার্কেশমি, কোলোখেশগি, দাই মিরদাদি, ওয়াজিরগি প্রভৃতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীও রয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পারওয়ান, বামিয়ান, গজনি, ও মাইদান ওয়ারদাক প্রভৃতি বিভিন্ন এলাকা থেকে মূল হাজারাজাত শহর থেকে কাবুল ও আফগানিস্তানের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে।

খেলাধুলা সম্পাদনা

 
অলিম্পিক তায়কোয়ান্দোতে দুইবার ব্রোঞ্জজয়ী রোহুল্লা নিকপাই

অনেক হাজারা বিভিন্ন খেলাধুলার সাথে জড়িত। রোহুল্লা নিকপাই ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে তায়কোয়ান্দোতে স্পেনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জুয়ান আন্তোনিও রামোসকে প্লে-অফ ফাইনালে ৪-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ব্রোঞ্জ জেতেন। এটি ছিল আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রথম অলিম্পিক পদক। এরপর তিনি ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে আফগানিস্তানের হয়ে দ্বিতীয় অলিম্পিক পদক জেতেন। আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ ফারিবা রাজায়ি ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকে জুডোতে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপেই বাদ পড়ে যান।

অন্যান্য বিখ্যাত হাজারা ক্রীড়াবিদ হলেন সৈয়দ আবদুল জলিল ওয়াইজ (ব্যাডমিন্টন) এবং আলি হাজারা (ফুটবল)। সৈয়দ আবদুল জলিল ওয়াইজ ছিলেন এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। প্রতিযোগিতায় তিনি ইরাকের বিপক্ষে ১৫-১৩, ১৫-১ ব্যবধানে প্রথম জয় পান। ২০০৫ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন এবং মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে জয়লাভ করেন। হামিদ রহিমি আফগানিস্তানের উদীয়মান বক্সার যিনি বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করছেন। আফগানিস্তানের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জহিব ইসলাম আমিরীও হাজারা বংশোদ্ভূত।[৬৭]

পাকিস্তানি হাজারা বংশোদ্ভূত সাবেক অলিম্পিক বক্সার সৈয়দ আবরার হোসেন শাহ পাকিস্তান স্পোর্টস বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অলিম্পিকে তিনবার পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জেতেন। পাকিস্তান থেকে কয়েকজন হাজারাও বিভিন্ন খেলাধুলা বিশেষ করে বক্সিং, ফুটবল এবং ফিল্ড হকিতে শেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন এবং অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফুটবল খেলোয়াড় কাইয়ুম চাঙ্গেজি একজন হাজারা ছিলেন। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল দলের অধিনায়ক রজব আলি হাজারা[৬৮] এবং অন্য তরুণ খেলোয়াড়েরা পাকিস্তানের খেলাধুলায় হাজারাদের প্রতিনিধিত্ব করছে।

গ্যালারি সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র ও টীকা সম্পাদনা

  1. James B. Minahan (১০ ফেব্রু ২০১৪)। Ethnic Groups of North, East, and Central Asia: An Encyclopedia। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 99। আইএসবিএন 978-1-61069-018-8Due to a lack of census statistics, estimates of the total Hazara population range from five million to more than eight million. 
  2. "Afghanistan"cia.gov। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  3. Census of Afghans in Pakistan 2005, UNHCR Statistical Summary Report (retrieved August 14, 2016)
  4. Yusuf, Imran (৫ অক্টোবর ২০১১)। "Who are the Hazara?"Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  5. Smyth, Phillip (৩ জুন ২০১৪)। "Iran's Afghan Shiite Fighters in Syria"। The Washington Institute for Near East Policy। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৭ 
  6. "Austria holds refugee talks as young Hazaras flee persecution to make 'dangerous' journey to Europe – ABC News (Australian Broadcasting Corporation)"mobile.abc.net.au। ২০১৬-০২-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-১৯ 
  7. Nowell, Laurie (২০১৪-০৭-১৬)। "The Hazaras of Dandenong"The Age। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-১৯ 
  8. The population of people with descent from Afghanistan in Canada is 48,090. Hazara make up an estimated 20% of the population of Afghanistan depending to the source. The Hazara population in Canada is estimated from these two figures. Ethnic origins, 2006 counts, for Canada ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে
  9. Afghan Hazaras' new life in Indonesia: Asylum-seeker community in West Java is large enough to easily man an eight-team Afghan football league, Al Jazeera, ২১ মার্চ ২০১৪, সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৬ 
  10. The Afghans, Their History and Culture, Religion ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে
  11. "Attitudes towards Hazaragi"। পৃষ্ঠা 1–2। সংগ্রহের তারিখ জুন ৫, ২০১৪ 
  12. Schurmann, Franz (১৯৬২)। The Mongols of Afghanistan: An Ethnography of the Moghôls and Related Peoples of Afghanistan। Mouton। পৃষ্ঠা 17। ওসিএলসি 401634 
  13.   |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  14. "Afghanistan: 31,822,848 (July 2014 est.) @ 9% (2014)"The World FactbookCentral Intelligence Agency। সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৫ 
  15. Hyder, Kamal (নভেম্বর ১২, ২০১১)। "Hazara community finds safe haven in Peshawar"। Al Jazeera English। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১২, ২০১১ 
  16. "COUNTRY PROFILE: AFGHANISTAN" (পিডিএফ)Library of Congress Country Studies। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১৭ 
  17. Malik Ayub Sumbal। http://thediplomat.com/2013/07/the-plight-of-the-hazaras-in-pakistan/। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১৭  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  18. Babur, Z. M. (১৯৮৭)। Babur-nama। পৃষ্ঠা 300, 207, 214, 218, 221, 251–53। 
  19. Schurmann, H. F. (১৯৬২)। The Mon-gols of Afghanistan: An Ethnography of the Moghôls and Related Peoples of Afghanistan। La Haye। পৃষ্ঠা 115। 
  20. Poladi, Hassan (১৯৮৯)। The Hazâras। Stockton। পৃষ্ঠা 22।  অজানা প্যারামিটার |শিরোনাম-সংযোগ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  21. Mousavi, Sayed Askar (১৯৯৮)। The Hazaras of Afghanistan। Richmond। পৃষ্ঠা 23–25।  অজানা প্যারামিটার |শিরোনাম-সংযোগ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  22. Blunden, Jane (২০১৪)। Mongolia। Bradt Travel Guides। পৃষ্ঠা 68। আইএসবিএন 978-1-84162-416-7 
  23. Hartl, Daniel L.; Jones, Elizabeth W. (২০০৯)। Genetics: Analysis of Genes and Genomes। পৃষ্ঠা 262। আইএসবিএন 978-0-7637-5868-4 
  24. "HAZĀRA: ii. HISTORY"Alessandro Monsutti (Online সংস্করণ)। United States: Encyclopædia Iranica। ডিসেম্বর ১৫, ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২ 
  25. Sarabi, Humayun (২০০৫)। "Politics and Modern History of Hazara" [Sectarian Politics in Afghanistan]। Fletcher School of Law and Diplomacy। ২০১১-০৯-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-০২ 
  26. "Ahmad Shah and the Durrani Empire"Library of Congress Country Studies on Afghanistan। ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৫ 
  27. دلجو, عباس (২০১৪)। تاریخ باستانی هزاره ها। کابل: انتشارات امیری। আইএসবিএন 978-9936801509 
  28. Runion, Meredith L. (২০১৭)। The History of Afghanistan, 2nd edition। ABC-CLIO-LLC। পৃষ্ঠা 124। আইএসবিএন 978-1-61069-778-1 
  29. Rashid, Ahmed (মার্চ ১, ২০০১)। Taliban: Militant Islam, Oil and Fundamentalism in Central Asia (Paperback সংস্করণ)। New Haven, CT: Yale University Press। আইএসবিএন 978-0-300-08902-8 
  30. Fida Yunas, S. (২০০৮)। Pg 33. Sultan Ali Kishtmand had remained Prime Minister of Afghanistan from 10 January 1981 to 26 May 1990, with a brief break of about nine months, when Dr Hassan Sharq replaced him from 20 June 1988 to ...। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  31. Williams, Brian Glyn (২০১১-০৯-২২)। Afghanistan Declassified: A Guide to America's Longest War – Brian Glyn Williams – Google Booksআইএসবিএন 978-0-8122-0615-9। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  32. Human Rights Watch (ফেব্রুয়ারি ২০০১)। "Afghanistan: massacres of Hazaras"। hrw.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৭, ২০০৭ 
  33. "Many Karzai rivals find way to Parliament"। Pajhwok.com। ২০১১-০১-২২। ২০১২-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  34. "(27 February 2012) Afghanistan set to host second national ski race. wanderlust.co.uk"Wanderlust.co.uk। ৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭ 
  35. Levinson, Charles (6 March 2012). Since Skiing Came to Afghanistan, It Has Been Pretty Much All Downhill. wsj.com
  36. Afghan nomad clashes raise fears of ethnic strife[অকার্যকর সংযোগ]
  37. "Afghan Overture to Taliban Aggravates Ethnic Tensions". The New York Times, 27 June 2010.
  38. "Genghis Khan a Prolific Lover, DNA Data Implies"। News.nationalgeographic.com। ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০০৩। 
  39. *"The Hazara Tribes in Afghanistan" in (1959) Collection of papers presented: International Symposium on History of Eastern and Western Cultural Contacts (1957: Tokyo and Kyoto) Japanese National Commission for Unesco, Tokyo, p. 61 ওসিএলসি ৯২৪০৩০১
  40. Jochelson, Waldemar (1928) Peoples of Asiatic Russia American Museum of Natural History, New York, p. 33, ওসিএলসি ১৮৭৪৬৬৮৯৩, also available in microfiche edition
  41. Haber, M; Platt, DE; Ashrafian Bonab, M; ও অন্যান্য (২০১২)। "Afghanistan's Ethnic Groups Share a Y-Chromosomal Heritage Structured by Historical Events"PLoS ONE7 (3): e34288। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0034288পিএমআইডি 22470552পিএমসি 3314501  
  42. Rosenberg, Noah A.; ও অন্যান্য (ডিসেম্বর ২০০২)। "Genetic Structure of Human Populations"। Science। New Series। 298 (5602): 2381–85। ডিওআই:10.1126/science.1078311পিএমআইডি 12493913 
  43. Adnan, Atif; Rakha, Allah; Kasim, Kadirya; Noor, Anam; Nazir, Shahid; Hadi, Sibte; Pang, Hao (মে ২০১৯)। "Genetic characterization of Y-chromosomal STRs in Hazara ethnic group of Pakistan and confirmation of DYS448 null allele"। International Journal of Legal Medicine133 (3): 789–793। আইএসএসএন 1437-1596ডিওআই:10.1007/s00414-018-1962-xপিএমআইডি 30377775 
  44. Quintana-Murci, L; Chaix, R; Wells, RS; ও অন্যান্য (মে ২০০৪)। "Where West Meets East: The Complex mtDNA Landscape of the Southwest and Central Asian Corridor"The American Journal of Human Genetics74 (5): 827–45। ডিওআই:10.1086/383236পিএমআইডি 15077202পিএমসি 1181978  
  45. Quintana-Murci, L; Chaix, R; Wells, RS; ও অন্যান্য (মে ২০০৪)। "Figure 1: Where west meets east: the complex mtDNA landscape of the southwest and Central Asian corridor"Am. J. Hum. Genet.74 (5): 827–45। ডিওআই:10.1086/383236পিএমআইডি 15077202পিএমসি 1181978  
  46. Sengupta, S; Zhivotovsky, LA; King, R; ও অন্যান্য (২০১৩-০৮-১২)। "Table 3: Complete Data Set of Y-Chromosomal HGs, Numbers of Repeats at 10 Microsatellite Loci, and Descriptions of Populations"The American Journal of Human Genetics78 (2): 202–21। ডিওআই:10.1086/499411পিএমআইডি 16400607পিএমসি 1380230  
  47. Haber, Marc; Platt, Daniel E.; Bonab, Maziar Ashrafian; Youhanna, Sonia C.; Soria-Hernanz, David F.; Martínez-Cruz, Begoña; Douaihy, Bouchra; Ghassibe-Sabbagh, Michella; Rafatpanah, Hoshang; Ghanbari, Mohsen; Whale, John; Balanovsky, Oleg; Wells, R. Spencer; Comas, David; Tyler-Smith, Chris; Zalloua, Pierre A.; Consortium, The Genographic (২৮ মার্চ ২০১২)। "Afghanistan's Ethnic Groups Share a Y-Chromosomal Heritage Structured by Historical Events"PLOS ONE7 (3): e34288। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0034288পিএমআইডি 22470552পিএমসি 3314501  
  48. John William Whale. Mitochondrial DNA Analysis of Four Ethnic Groups of Afghanistan. http://eprints.port.ac.uk/9862/1/John_Whale_MPhil_Thesis_2012.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে
  49. Xu, Shuhua; Wang, Sijia; Tang, Kun; Guan, Yaqun; Khan, Asifullah; Li, Jing; Zhang, Xi; Wang, Xiaoji; Tian, Lei (২০১৭-১০-০১)। "Genetic History of Xinjiang's Uyghurs Suggests Bronze Age Multiple-Way Contacts in Eurasia"। Molecular Biology and Evolution34 (10): 2572–2582। আইএসএসএন 0737-4038ডিওআই:10.1093/molbev/msx177 
  50. Larson, Marisa (জুন ১৭, ২০০৮)। "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। মার্চ ২, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১২ 
  51. "AFGHANISTAN iv. Ethnography"L. Dupree (Online সংস্করণ)। Encyclopædia Iranica। ডিসেম্বর ১৫, ১৯৮৩। 
  52. Monsutti, Alessandro (২০০৫)। War and migration: Social networks and economic strategies of the Hazaras of Afghanistan। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-97508-7 
  53. Monsutti, Alessandro (২০০৫)। War and migration: Social networks and economic strategies of the Hazaras of Afghanistan (English ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-97508-7 
  54. Bigg, Matthew (২০১২-১০-২৫)। "Insight: Pakistani death squads spur desperate voyage to Australia"Reuters। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  55. Australia ships out Afghan refugees BBC News.
  56. "Hussain Ali Yousafi, chairman of the Hazara Democratic Party'", BBC News, 26 January 2009
  57. "Balochistan's Hazaras speak out — Qurat ul ain Siddiqui interviews Secretary-General of the Hazara Democratic Party, Abdul Khaliq Hazara"Dawn.com। ২০০৯-০৫-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  58. "List of Political parties"। Hazarapress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  59. McDermott, Roger। "For the last 20 years Hazara elements have appealed for Mongolian sanctuary and support to prevent Iranian forced repatriation to Afghanistan"The Jamestown Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  60. Latham, Robert Gordon (১৮৫৯)। Eastern and northern Asia Europe। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-০৮ 
  61. Mongols of Afghanistan: An Ethnography of the Moghôls and Related Peoples of Afghanistan Mouton, The Hague, Netherlands, page 17, ওসিএলসি ৪০১৬৩৪
  62. Malistani, A. H. Tariq and Gehring, Roman (compilers) (1993) Farhang-i ibtidal-i milli-i Hazarah : bi-inzimam-i tarjamah bih Farsi-i Ingilisi = Hazaragi – Dari/Persian- English: a preliminary glossary A. H. Tariq Malistani, Quetta, ওসিএলসি ৩৩৮১৪৮১৪
  63. Farhadi, A. G. Ravan (1955). Le persan parlé en Afghanistan: Grammaire du kâboli accompagnée d'un recuil de quatrains populaires de la région de Kâbol. Paris.
  64. Hashimi, Zar (২০১০-০৬-২২)। "Masjid Jame, Kabul | Flickr – Photo Sharing!"। Flickr। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  65. 1911 Encyclopædia Britannica – Hazara (Race)
  66. Dorronsoro, Gilles (২০০৫)। Revolution unending: Afghanistan, 1979 to the present, By Gilles Dorronsoro, pg.44আইএসবিএন 978-1-85065-703-3। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-৩০ 
  67. "Islam Amiri Hazara – Afghan national football team captain and Fans "player of the year""Hazara.net। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ মে ২৫, ২০১৪ 
  68. "Rajab Ali Hazara to lead under 16 Pakistan Football team as captain"। www.hazara.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-১৮ 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা