সীরাতুল মুস্তফা

মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি রচিত বই

সীরাতুল মুস্তফা (উর্দু: سیرت المصطفیٰ‎‎ ) হল পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি (১৯০১ — ১৯৭৪) রচিত ৪ খণ্ডে সমাপ্ত একটি সীরাত বা শেষ নবীর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ। মূলত উর্দুতে লেখা এ গ্রন্থটি আধুনিককালে রচিত অন্যতম জনপ্রিয় সীরাত গ্রন্থ।[][][][][][][][]

সীরাতুল মুস্তফা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বঙ্গানুবাদের প্রচ্ছদ
লেখকমুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি
মূল শিরোনামسیرت المصطفیٰ
অনুবাদক
প্রচ্ছদ শিল্পীজসিম উদ্দিন
দেশব্রিটিশ ভারত
ভাষাউর্দু (মূল)
মুক্তির সংখ্যা
৪ খণ্ড
বিষয়সীরাত
ধরনইসলামি
প্রকাশিত১৯৪৭ (প্রথম ৩ খণ্ড)
১৯৬৬ (শেষ খণ্ড)
প্রকাশক
প্রকাশনার তারিখ
ফেব্রুয়ারি ২০০৪ (বাংলা)
মিডিয়া ধরন
আইএসবিএন ৯৮৪-০৬-০১১৯-৯

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

এই গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্য হল সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবাদের উত্তম চরিত্র সম্পর্কে বর্ণনা। আরবিতে সীরাত সম্পর্কিত প্রায় সমস্ত গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। লেখক নবী মুহাম্মদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলীকে নতুনভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। পূর্ববর্তী সূত্রগুলো থেকে সনদের দিক থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনাগুলোকেই তিনি তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন।[]

এ গ্রন্থে নবী জীবনের উপর আরোপিত বিভিন্ন আপত্তির প্রামাণিক জবাব রয়েছে। লেখক দলিল ও যুক্তির আলোকে ইসলামে দাসপ্রথা এবং নবীর একাধিক বিয়ে নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন।[][১০] এছাড়া নবীর মিরাজসহ অন্যান্য অলৌকিক ঘটনা এবং ইসলামে জিহাদের বিদ্যমানতা ও আক্রমণাত্মক জিহাদের প্রামাণ্যতা নিয়ে পশ্চিমা প্রভাবিত মুসলিম পণ্ডিতদের সংশয়সমূহ অপনোদনের চেষ্টা করেছেন।[১০]

মূল উর্দুতে সীরাতুল মুস্তফা ৪ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে কোনও কোনও সংস্করণে একে ৩ খণ্ডে অথবা পরিপূর্ণ ১ খণ্ডে প্রকাশ করা হয়।[১১][১২]

সীরাতে মুস্তফার ১ম খণ্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠার সমন্বয়ে গঠিত, এর শুরতে সীরাতের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা হয়েছে। বাকী অংশে নবী মুহাম্মদের বংশ তালিকা, নবীর জন্মের পূর্বের ঘটনাবলী, নবীর শৈশবকাল এবং কৈশোর কাল থেকে মদিনায় হিজরতইহুদিদের সাথে চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[১৩]

দ্বিতীয় খণ্ড ২৫৫ পৃষ্ঠার সমন্বয়ে গঠিত, যা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে যুদ্ধ) এবং দাস প্রথার সমস্যাগুলি দিয়ে শুরু হয়। লেখক জিহাদের অর্থ, পরিস্থিতি এবং উদ্দেশ্য, গুণাবলী, ধরন এবং অন্যান্য প্রভাবকগুলির সাথে উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তারপরে তিনি দাসত্বের বিষয়টি গ্রহণ করেছেন এবং বিশদ বিবরণ বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় শিবলী নোমানীর ভুল অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বইয়ের বেশিরভাগ অংশে বদরউহুদের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[১৩]

বইটির তৃতীয় খণ্ডটি যুদ্ধসমূহের সাথে সম্পর্কিত এবং এতে ৫১৪ পৃষ্ঠা রয়েছে। এই খণ্ডটি ৫ম হিজরিতে সংঘটিত যুদ্ধ দিয়ে শুরু হয় এবং এরপরে খন্দকের যুদ্ধ, বনু কুরাইজা, বাইয়াতে রিদওয়ান এবং হুদাইবিয়ার সন্ধি, নবী পত্রে বর্ণিত বিভিন্ন দেশের রাজাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত, খায়বারের যুদ্ধ, ফাদাক বিজয়, মুতার যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, হুনাইনতাবূকের যুদ্ধ, প্রতিনিধি দলের বছর এবং বিদায় হজ্জ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনার পরে তিনি রাসূলের দেহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন এবং রাসূলের জীবন, খিলাফতের বিষয়, উত্তরাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। নবীর পোশাকের প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমা পোশাকের নিন্দা করেছেন। একটি দুই পৃষ্ঠার পরিশিষ্ট রয়েছে যাতে বহুভর্তৃকত্ব সংক্রান্ত আইনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।[১৩]

চতুর্থ খণ্ডটি ১৩৪ পৃষ্ঠার এবং এটি পূর্ববর্তী তিনটি খণ্ডের একটি উপসংহার এবং নবীর সাথে সম্পর্কিত অলৌকিক বিষয়গুলির একটি আলোচনাও বহন করে। এর মধ্যে অন্যান্য নবী দ্বারা প্রদত্ত নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী এবং নবীর অলৌকিক ঘটনার বিবরণ রয়েছে। লেখক যুক্তি দিয়েছেন যে এই অলৌকিক ঘটনাগুলি তাঁর নবুওয়াতকে প্রমাণিত করে এবং প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি অলৌকিক ঘটনার ধরন ও সংখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে কুরআনহাদিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা যা বহু লোক অনুসরণ করে। সর্বশেষ নবী আগমনের বিষয়ে তিনি অন্যান্য ঐশ্বরিক গ্রন্থ থেকে পূর্ববর্তী নবীগণের ভবিষ্যদ্বাণী উদ্ধৃত করেছেন। তারপরে নবীর বিশেষ গুণাবলী নিয়ে বইটি শেষ করেছেন।[১৩]

গ্রন্থের শুরুতে আশরাফ আলী থানভী লিখেছেন,

“যারা উর্দু জানে সবার এ গ্রন্থটি পড়া উচিত, এর সবচেয়ে উত্তম ও সহজতম উপকারিতা হবে এই যে, নিজ শ্রদ্ধাস্পদ পয়গাম্বর (সাঃ) এর প্রয়োজনীয় পরিচিতি অর্জিত হবে”

— [১৪]

এ সূত্রধর্মী গ্রন্থটি রচনায় লেখক কুরআনহাদিস গ্রন্থ সমূহকে মূল হিসেবে নিয়েছেন। হাদিস সমূহের মধ্যে বিশুদ্ধ হাদিসগুলোই সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অন্যান্য সূত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:

অনুবাদ

সম্পাদনা
বাংলা

বাংলা ভাষায় এ গ্রন্থটির একাধিক অনুবাদ হয়েছে। ৩ খণ্ডে এ গ্রন্থের সর্বপ্রথম অনুবাদ করেন বায়তুল মোকাররমের খতীব মাওলানা উবায়দুল হক। তার অনুদিত সংস্করণটি বর্তমানে পাওয়া যায় না।[] তারপর এ গ্রন্থের অনুবাদ করেন মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, যা প্রকাশ করে “মদীনা পাবলিকেশন্স”।[১৫] ২০০৪ সালে আরেকটি অনুবাদ প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এ সংস্করণের অনুবাদক কালাম আযাদ।[১৬]

ইংরেজি

ইংরেজিতেও এ গ্রন্থের একাধিক অনুবাদ হয়েছে। তার মধ্যে মুফতি মুহাম্মদ কাদওয়া ও মাওলানা মুহাম্মদ মোহুমেদী কর্তৃক অনুদিত সংস্করণটি বর্তমানে সহজলভ্য। এটি প্রকাশ করেছে জমজম পাবলিশার্স।[১৭][১৮]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. জাহান, ইব্রাত (২০১৩)। "Contribution of Darul Uloom Deoband to Seerah literature" (ইংরেজি ভাষায়)। অধ্যায় ৩, পারা ১.৪, পৃষ্ঠা ১৯-২১ ও ১২৩। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। 
  2. ডক্টর, আশরাফ (২০১৭)। "An Overview of the Sirah Literature"জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া (ইংরেজি ভাষায়): ১০ ও ২১,২২ পৃষ্ঠা – Sirah Convention-Cordoba-Linbro Park-এর মাধ্যমে। 
  3. শাহ, হাফেজ ফজলুল হক (১৯ ডিসেম্বর ২০১৯)। "সীরাত চর্চার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট"দৈনিক ইনকিলাব। ১১ অনুচ্ছেদ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  4. মারুফ, আবদুল্লাহ (১০ ডিসেম্বর ২০১৭)। "বাংলা ভাষায় কালজয়ী ৯ সীরাতগ্রন্থ"দৈনিক আমাদের সময়। অনুচ্ছেদ ৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. রাশেদ, রায়হান (২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "মহানবী (সা.)-এর জীবনীমূলক কোন গ্রন্থ পড়ব"দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৯ 
  6. রাশেদ, রায়হান (১০ নভেম্বর ২০১৯)। "'নবীজীবন' নিয়ে রচিত আলোচিত ১০ গ্রন্থ"দৈনিক সময়ের আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০২১ 
  7. খানম, খেহখাশান (২০১৮)। বিংশ শতাব্দীতে সীরাতের উপর রচিত উর্দু বইসমূহের একটি গবেষণা (উর্দু ভাষায়)। সুন্নি ধর্মতত্ত্ব বিভাগ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৮৭, ১৯২। 
  8. আহমদ, ইশতিয়াক (২০২০)। স্বাধীনতার পূর্বে উলামায়ে দেওবন্দের জীবনী সাহিত্য চর্চা নিয়ে একটি সমালোচনামূলক গবেষণা (গবেষণাপত্র)। ভারত: মাওলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৮৭—৯৫। hdl:10603/338413 
  9. রিজভি, সৈয়দ মাহবুব (১৯৮১)। "আরবাব-ই-এহতেমাম"। হিস্টোরি অব দ্য দার আল-উলুম দেওবন্দ (২য় খণ্ড) (পিডিএফ)। অধ্যাপক মুরতাজ হুসাইন এফ. কুরাইশী কর্তৃক অনূদিত। অনুচ্ছেদ ২, পৃষ্ঠা ৯৯, ১০০। ইদারা-ই-এহতেমাম, দারুল উলুম দেওবন্দ। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২০ 
  10. রহমান, ওলিউর (২০১৯-১১-০৭)। "এ যুগের সীরাত রচনা : সীরাতে মুস্তফা"ইসলাম টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 
  11. জাহিরুদ্দীন, মুহাম্মদ (১৯৭৪)। "মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি কি ইলমি খিদমাত আওর আহওয়াল ওয়া আছর"। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোর: পৃ. ১৭৯। 
  12. "সীরাতুল মুস্তফার সংক্ষেপিত সংস্করণ"www.meccabooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৫ 
  13. জাহান, ইব্রাত (২০১৩)। "Contribution of Darul Uloom Deoband to Seerah literature" (ইংরেজি ভাষায়)। অধ্যায় ১, পারা ১.৪, পৃষ্ঠা ১৯-২০। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। 
  14. থানভী, আশরাফ আলী (১৬ নভেম্বর ১৯৩৯)। "আশরাফ আলী থানভীর বরকতময় বাণী" (পিডিএফ)সীরাতুল মুস্তফা সাঃ 
  15. শাহ, হাফেজ ফজলুল হক। "সীরাত চর্চার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট"দৈনিক ইনকিলাব। ১১ অনুচ্ছেদ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 
  16. "ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সীরাত গ্রন্থ সমূহের তালিকা" (পিডিএফ)ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ৪ নভেম্বর ২০১৫। 
  17. "সীরাতুল মুস্তফা"আমাজন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২২ 
  18. "Seeratul Mustafa: Ml Idrees Kaandhelwi, Abridged English Edition"kitaabun.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২০ 

[][][][] []

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  1. Ahmad, Dr Munir; Khan, Dr Hafiz Waqas; Khattak, Hafeez Ullah (২০২২-০৬-২৫)। "الشيخ محمد إدريس الكاندهلوي–رحمه الله-ومنهجه في دراسة السيرة النبوية ﷺ (دراسة تحليلية وصفية لكتاب"سيرة مصطفى ﷺ) : Sheikh Muhammad Idris Al-Kandhlawi, and his method to study the biography of the Prophet (PBUH): (An analytical and descriptive study of the book "The Sirat-E-Mustafa ﷺ)"Al-Azhār (ইংরেজি ভাষায়)। 8 (1): 21–37। আইএসএসএন 2519-6707ডিওআই:10.46896/alazhr.v8i01.304 (নিষ্ক্রিয় ১ আগস্ট ২০২৩)। 
  2. "মহানবী (সা.)-এর জীবনীমূলক কোন গ্রন্থ পড়ব | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১ 
  3. শাহ, হাফেজ ফজলুল হক। "সীরাত চর্চার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১ 
  4. "বাংলা ভাষায় কালজয়ী ৯ সীরাতগ্রন্থ"AmaderShomoy। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০১ 
  5. Khatoon, Aaisha (২০১৭)। Aazadi ke Baad Hindustan ki Khidmaat e Hadith (PhD) (urdu ভাষায়)। India: Department of Sunni Theology, Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 176–177। hdl:10603/364027। ২০২৩-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৪