বয়ানুল কুরআন

আশরাফ আলী থানভী বিরচিত তাফসির গ্রন্থ

বয়ানুল কুরআন (উর্দু: بیان القرآن‎‎) ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত আশরাফ আলী থানভী (১৮৬৩-১৯৪৩) বিরচিত বড় তিন খণ্ডে সমাপ্ত কুরআনের একটি তাফসির বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ। উর্দু ভাষায় রচিত এ গ্রন্থটি গায়রে আলেমদের দিকে লক্ষ্য রেখে লেখা হয়।[][][][][][][][][]

বয়ানুল কুরআন
মূল উর্দু বয়ানুল কুরআনের প্রচ্ছদ
লেখকআশরাফ আলী থানভী
মূল শিরোনামبیان القرآن
দেশব্রিটিশ ভারত
মুক্তির সংখ্যা
৩ খন্ড
ধরনতাফসীর
প্রকাশিত১৯৬২
প্রকাশকমাকতাবে রহমানিয়্যা, এমদাদিয়া লাইব্রেরি
মিডিয়া ধরন
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৯৩১

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

আশরাফ আলী থানভী এই কিতাবে প্রথমে কোরআন মাজীদের সহজ ও সাবলীল উর্দূ তরজমা করেছেন। এই তরজমাকে তিনি শাব্দিকতার কাছাকাছি রেখে সহজবোদ্ধ আকারে উপস্থাপন করেছেন। সেইসঙ্গে আয়াতসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বক্তব্যের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট করেছেন; কোথাও বর্ণনাভঙ্গিতে কোথাও ‘রবত‘ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে। ফিকহ সংশ্লিষ্ট আয়াতে তিনি কেবল হানাফী মাযহাবের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন আর নিতান্ত প্রয়োজনে অন্যকোনো মাযহাবের বক্তব্য উল্লেখ করেছেন হাশিয়ায়। কোনো আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্বসূরি মুফাসসিরগণের বিভিন্ন মত থাকলে তিনি কেবল অগ্রগণ্য বা রাজেহ মতকেই উল্লেখ করেছেন। তবে কোথাও কোথাও একাধিক মতও পেশ করেছেন।[১০]

কোরআনের তরজমা যেখানে কিছুটা ব্যাখ্যা নির্ভর কিংবা যে জায়গায় বক্তব্য একটু জটিল, অথবা স্বয়ং বিষয়বস্তুটিই গুরুত্বপূর্ণ সেখানে ‘ফা’ আলামত দিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। তবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াবলির উল্লেখ কিংবা কোনো ঘটনা-কাহিনী বা ফাযায়েল ও আনুষঙ্গিক মাসআলার প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে যান। ফলে কোরআনের মূল বক্তব্য স্পষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার সূত্রে জড়াতে হয়না।

এই তাফসীর যেহেতু প্রধানত গাইরে আলেম পাঠকদের উদ্দেশ্যে লেখা তাই প্রাসঙ্গিক ইলমী আলোচনা তিনি করেননি। তবে এর ভিতরেই একটি আরবী হাশিয়া লিখেছেন আলেম ও তালিবুল ইলমদের জন্য। সেখানে কঠিন আরবী শব্দের অর্থ, প্রয়োজনীয় শব্দ ও বাক্যবিশ্লেষণ, আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট, মক্কী-মাদানি প্রসঙ্গ, বিভিন্ন কেরাত, সূক্ষ্ম কোনো মাসআলা ও বালাগাত বা অলংকার শাস্ত্রীয় কোনো আলোচনা খুব সংক্ষেপে পেশ করেন।

এই হাশিয়া সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন যে,

তা আরবীতে লিখেছি এজন্য যাতে গাইরে আলেম পাঠকদের কষ্ট না হয়। কারণ ভাষা বুঝবে কিন্তু বিষয় বুঝবে না এটা পেরেশানীকর।

এই কিতাবের আরেকটি শিরোনাম হলো ‘মাসাইলুস সুলূক’।[][১১]

পটভূমি

সম্পাদনা

বয়ানুল কুরআন রচনার আগে বহু তাফসির গ্রন্থ বিদ্যমান ছিল। এই তাফসিরগুলোর সিংহভাগই সাধারণ মানুষের নিকট সহজে বোঝার মত ছিল না। এই বিষয়টি সামনে রেখে আশরাফ আলী থানভী সহজে কুরআনের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন, যার নাম দেন বয়ানুল কুরআন। গ্রন্থটি রচনার সময় ঐ অঞ্চলে মহামারী চলছিল। থানভী আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যেন এই গ্রন্থ রচনার পূর্বে তাঁর মৃত্যু না হয়। অবশেষে আড়াই বছর পর তিনি এই রচনার কাজ শেষ করেন।[১২]

মূল উর্দুতে বয়ানুল কুরআন ৩ খণ্ডে বিভক্ত।

অনুবাদ

সম্পাদনা

১৯৬২ সালে ‘তাফসিরে আশরাফী’ নামে এমদাদিয়া লাইব্রেরি থেকে এই বইটির প্রথম বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হয়।[১৩]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. Wani, Bilal Ahmad (জুন ২০১২)। "Tafsir-i-Bayan al-Quran: An Estimate" (পিডিএফ)University of Kashmir: 75–81। ২৮ জুন ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Rehana, Zia (১৯৮২)। "A critical study of Bayanul quran_the commentary of the quran by Maulana Ashraf Ali Thanvi with special refernce to the exegetical literature in urdu (PDF)"Department of Sunni Theology, Aligarh Muslim University 
  3. ১ থেকে ১০ খন্ড। "বয়ানুল কুরআন (বাংলা)"রকমারি 
  4. "তাফসির পরিচিতি: উপমহাদেশের লাখো আলেমের প্রিয় কিতাব তাফসীরে বয়ানুল কোরআন"ইসলাম টাইমস। ৩০ মে ২০১৯। 
  5. Wani, Bilal Ahmad (২০১৬-০১-২৯)। "Tafsi Bayan al-Quran of Maulana Ashraf 'Ali Thanwi: An Estimate"ASIAN JOURNAL OF MULTIDISCIPLINARY STUDIES (ইংরেজি ভাষায়)। 4 (2)। আইএসএসএন 2321-8819। ২০২০-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা – Shah-I-Hamadan Institute of Islamic Studies, University of Kashmir, Srinagar-এর মাধ্যমে। 
  6. Parvez, Mohammed (২০০৮)। অধ্যায় ৩, পৃষ্ঠা ৬৭—৬৯। "A STUDY OF THE SOGIO-REUGIOUS REFORMS OFMAULANAASHRAFALITHANVI"Aligarh Muslim University 
  7. "(PDF) SPECIFIC STUDY OF "BIYANUL QURAN" REGARDING CHARACTER BUILDING IN THE LIGHT OF SURAH AL- MUMINOON AND SURAH AL-MA'RIJ ‫سیرت‬ ‫تعمیر‬ ‫خصوصی‬ ‫کا‬ ‫ٓن‬ ‫القرا‬ ‫بیان‬ ‫میں‬ ‫روشنی‬ ‫کی‬ ‫سورۃالمعارج‬ ‫اور‬ ‫(سورۃالمومنون‬ )‫مطالعہ‬"ResearchGate (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৪ 
  8. Khatoon, Uzma (২০১৫)। Critical study of select Urdu Tafasir of 20th century (গবেষণাপত্র) (ইংরেজি ভাষায়)। Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 67–99। 
  9. Rashid, Burhan (২০১৮)। Impact of Tafsīr Rūḥ al-Maʻānī on Tafsīr Bayān al-Qur'ān (1. Auflage সংস্করণ)। Saarbrücken। আইএসবিএন 978-613-9-84319-0ওসিএলসি 1187807759 
  10. গবেষণা পত্র। "A critical study of Bayanul quran_the commentary of the quran by Maulana Ashraf Ali Thanvi with special refernce to the exegetical literature in urdu"আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় 
  11. "বিশ্বখ্যাত তাফসির: বয়ানুল কুরআন"ইসলাম প্রতিদিন। ৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. "আশরাফ আলী থানভী (রহ.) জীবন ও কর্ম - মাওলানা মাকসুদ আহমদ,ড. গোলাম মুহাম্মদ (রহ.)"www.rokomari.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-৩০ 
  13. সাখাওয়াত উল্লাহ। "বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদের ধারাক্রম"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২০ 

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা