মুহাম্মদ মনসুর আলী
মোঃ মনসুর আলী (১৬ জানুয়ারি ১৯১৯ - ৩ নভেম্বর ১৯৭৫), একজন আইনজীবী, রাজনৈতিক, এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।[১] তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড (পিএনজি) ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হয়ে যশোর সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ নেন। তখন থেকেই তিনি ‘ক্যাপ্টেন মনসুর’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন না।[২][৩] ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ফলে নিহত চার জাতীয় নেতার মধ্যে তিনিও একজন। তার পুত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোঃ মনসুর আলী | |
---|---|
বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ আগস্ট ১৫, ১৯৭৫ – জানুয়ারি ২৬, ১৯৭৫ | |
রাষ্ট্রপতি | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
পূর্বসূরী | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
উত্তরসূরী | মশিউর রহমান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৬ জানুয়ারী ১৯১৯ সিরাজগঞ্জ জেলা |
মৃত্যু | ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৫৬)
মৃত্যুর কারণ | হত্যাকাণ্ড |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সালের পূর্বে) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ (১৯৭১ সালের পর) |
রাজনৈতিক দল | আওয়ামী লীগ |
সন্তান | মোহাম্মদ নাসিম ও মোহাম্মদ সেলিম |
ধর্ম | ইসলাম |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাজন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের 'কুড়িপাড়া'য় ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি।[৪] বাবার নাম হরফ আলী সরকার। পড়াশোনা শুরু করেন কাজিপুরের গান্ধাইল হাই স্কুলে৷ এরপর চলে আসেন সিরাজগঞ্জ বি.এল. হাইস্কুলে৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এখান থেকেই৷ এরপর চলে যান পাবনা৷ ভর্তি হন এডওয়ার্ড কলেজে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এই কলেজ থেকে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন ৷ এরপর ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ ১৯৪৫ সালে এখান থেকেই অর্থনীতিতে এম.এ এবং 'ল' পাস করেন৷ এল.এল.বি- তে প্রথম শ্রেণী লাভ তিনি।[১][৫] ১৯৫১ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন পাবনা জেলা আদালতে৷ আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যক্তি৷ পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাআলীগড় থেকে দেশে ফেরার পর তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সাথে৷১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি৷ ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজি-এর ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন৷ এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন৷
ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন৷ কলকাতা থেকে দেশে ফেরার পর স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, আব্দুর রব বগা মিঞা, জনাব আমিন উদ্দিন অ্যাডভোকেট প্রমুখের সাথে তার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে৷ ১৯৫১ সালে তিনি আওয়ামী-মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং পাবনা জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।[১][৬] জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে৷ আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন এবং দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি৷ শহরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এম. মনসুর আলী৷ ফলে গ্রেফতার করা হয় তাকে৷ পরবর্তীকালে মুক্ত হন৷
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ এ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি৷ এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মনসুর আলী ৷ আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়৷[৫] এরপর যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে যায়৷ ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় পূর্ববঙ্গ কোয়ালিশন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক, খাদ্য ও কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন তিনি৷[৩]
১৯৫৮ সালে দেশে জারি হয় সামরিক শাসন৷ তিনি নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন৷ কারা নির্যাতন ভোগের পর মুক্ত হন, ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে৷ বাঙালির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করেন৷ পাবনা-১ আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[৬]
স্বাধীনতা যুদ্ধ
সম্পাদনা২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে মনসুর আলী গ্রেফতার এড়াতে চলে যান সোবহানবাগ কালোনীতে। এখান থেকে তিনি কেরানীগঞ্জ হয়ে কুড়িপাড়া যান তার পরিবারের সাথে দেখা করতে৷ এরপর চলে যান ভারতে৷ আসামের মাইনকার চর হয়ে তিনি কলকাতা গমন করেন৷ ভারতে আশ্রয় নেয়া অন্য নেতাদের সাথে দেখা ও যোগাযোগ হয় তার৷ এরপর দলীয় হাই কমান্ডের অন্য নেতারা মিলে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গঠন করেন মুজিবনগর সরকার৷[৫] নতুন গঠিত সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি৷[৫] এবছরের মাঝামাঝি সময়ে তার পরিবারও কলকাতা গিয়ে পৌঁছে৷ তিনি সপরিবারে বসবাস করতে থাকেন পার্কসার্কাসের সিআইটি রোড়ের বাড়িতে৷ তার অফিস ছিল ৮নং থিয়েটার রোডে৷
স্বাধীনতা পরবর্তী ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭২-এর জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানি কারাগার থেকে দেশে ফিরে মন্ত্রী পরিষদ পুনর্গঠন করেন৷ এবার মনসুর আলী দায়িত্ব নেন প্রথমে যোগাযোগ ও পরে স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে৷ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ মেরামতে রাখেন ভূমিকা৷
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে মনসুর আলী পুনরায় পাবনা-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ এ বছর তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সদস্য নির্বাচিত হন৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল দলকে একত্রিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি চালু করেন৷ এ সময় ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন৷ ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাত্রিতে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে তাকে হত্যা করা হয়।[১] ঐ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে জেল হত্যা দিবস নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
সম্পাদনা- মোঃ মনসুর আলীর স্মরণে বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের নামকরণ তার স্মরণে করা হয়েছে।[৭]
- সিরাজগঞ্জের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ–শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে।
- তার নামানুসারে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ নামে ঢাকায় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
- শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ, পাবনা নামে পাবনায় একটি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
- তার নামানুসারে সিরাজগঞ্জের একটি রেল-স্টেশনের নাম শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন রাখা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "আলী, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-৩০।
- ↑ "মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী"। NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৬।
- ↑ ক খ Notebook (২০২১-০৫-০৬)। "এম মনসুর আলী - সালিম সাবরিন"। সংগ্রামের নোটবুক (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৬।
- ↑ "শুভ জন্মদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী"। www.jugantor.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৬।
- ↑ ক খ গ ঘ "মোহাম্মদ মনসুর আলী"। www.gunijan.org.bd। ১৯ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ "সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ মনসুর আলীর জন্মদিন আজ"। Bartabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৬।
- ↑ "রাবির ৮ ভবন ও স্টেডিয়ামের নাম অনুমোদন | শিক্ষাঙ্গন"। ittefaq। ২০১৯-০৮-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-৩০।
পূর্বসূরী: শেখ মুজিবুর রহমান |
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারি ২৬, ১৯৭৫ - আগস্ট ১৫, ১৯৭৫ |
উত্তরসূরী: মশিউর রহমান |
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |