বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহ
১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচলনায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সমগ্র ভূখণ্ডকে ১১টি যুদ্ধক্ষেত্র বা সেক্টরে ভাগ করা হয়।
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে। চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করত পাকিস্তানি সামরিক অফিসারদের বন্দি ও হত্যা করলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহের অব্যবহিত পর চট্টগ্রামের ইপিআর-এর বাঙালি অফিসার ও জওয়ানরা অস্ত্র তুলে নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। পরবর্তী কয়েক দিনে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বাঙালি সেনা, ইপিআর ও পুলিশ সদস্যরা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনাতে আক্রমণ পরিচালনা করে। প্রত্যুত্তরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায়। যেমন, বাঙালি সেনাদের আয়ত্তাধীন চট্টগ্রামের কালুরঘাট, যেখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল, তা আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হটিয়ে দেয় পাকবাহিনী। এভাবে সীমানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন মুক্ত স্থানেে আক্রমণ চালিয়ে দখল করে নেয় পাকবাহিনী। ফলে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচানো তাগিদে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদের একটি অংশ সেনা সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিলে মুক্তিবাহিনীর বহর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ভারতের সীমান্ত পার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এসে ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। এতে একদিকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সেনারা মারা পড়ছিল, অন্যদিকে পাকিস্তানিদের অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদপাতি কেড়ে করা সম্ভব হচ্ছিল।
কিন্তু ইতোমধ্যেই মুক্তিবাহিনীর অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে এ রকম বিচ্ছিন্ন আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণের মধ্য দিয়ে সুশিক্ষিত ও সুসজ্জিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পতন ঘটানো সম্ভবপর হবে না। তাই তারা সংগঠিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমত, দেশটিকে বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে সামরিক নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করা এবং, সর্বোপরি, যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরূদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা। স্থলভাগের আক্রমণ ছাড়াও পরবর্তীকালে নৌ আক্রমণের জন্য একটি ইউনিট গঠন করা হয়। আরো পরে বিমান আক্রমণের জন্য একটি ইউনিট গঠন করা হয়।
সেক্টর গঠন
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাতে বলা হয়ঃ
"সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হল যে প্রধান সেনাপতি অফিসারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন। সেনা কমান্ডকে সমন্বিত করে কঠোর শৃংখলার মধ্যে আনতে হবে। বাংলাদেশ বাহিনীতে প্রশিক্ষণার্থীদের বাছাইপর্বে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।"
আর এভাবে সুসংগঠিত সেনা কমান্ডের শুরু হয়।[১]
এরপর জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনা করে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীন যুদ্ধ-অঞ্চল (সেক্টর) গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং এই লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে সমন্বয় সভা আয়োজনের জন্য কর্নেল ওসমানীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়।[১]
এরপর ১০ থেকে ১৭ জুলাই কলকাতায় সেক্টর কমান্ডারদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সেই সম্মেলনে বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হবে, কে কোন সেক্টরের কমান্ডার হবেন, কয়টা ব্রিগেড তৈরি হবে, ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১১ জুলাই মুজিবনগরে উচ্চপদস্থ ও সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধাঞ্চল ও যুদ্ধকৌশল সম্মন্ধে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে কর্নেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী কে জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দেয়া হয় এবং সর্বজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসাবে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। লেঃ কর্নেল আবদুর রব সেনা প্রধান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার উপ-প্রধান এবং মেজর এ আর চৌধুরী অতিরিক্ত উপ-প্রধান নিযুক্ত হন।[২] এই সম্মেলনে বাংলাদেশের সমস্ত যুদ্ধাঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার। ১০ম সেক্টরটি সর্বাধিনায়কের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এই সেক্টরের অধীনে ছিলো নৌ কমান্ডো বাহিনী এবং সর্বাধিনায়কের বিশেষ বাহিনী। [৩]
সেক্টর ও উপসেক্টরসমূহের তালিকা
সম্পাদনাসুষ্ঠুভাবে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে প্রতিটি সেক্টরকে কয়েকটি করে উপ-সেক্টরে ভাগ করা হয়। নিচের ছকে সেক্টর এবং উপ-সেক্টরগুলোর বিবরণ দেয়া হলো। সেক্টর কমান্ডারেরা নিজ নিজ সেক্টরে মুক্তি যোদ্ধাদের সংগঠিত করতেন, তাদের থাকা-খাওয়ার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে, তাদের এলাকায় আক্রমণের পরিকল্পনা করতেন। তাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা হতো:
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সেক্টরসমূহ[৩] | |||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সেক্টর | বিস্তৃতি | সদরদপ্তর | কমান্ডার | দায়িত্বকাল | সাবসেক্টর | সাবসেক্টর কমান্ডার | |||||||||||||||
১ | চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত | হরিণা | মেজর জিয়াউর রহমান | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ২৫ জুন, ১৯৭১ | রিশিমুখ | ক্যাপ্টেন শামসুল ইসলাম | |||||||||||||||
ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম | ২৮ জুন, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | শ্রীনগর | ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান,
ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান | ||||||||||||||||||
মানুঘাট | ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান | ||||||||||||||||||||
তাবালছড়ি | সার্জেন্ট আলি হোসেন | ||||||||||||||||||||
দিমাগিরি | আর্মি সার্জেন্ট, নাম: অজ্ঞাত | ||||||||||||||||||||
২ | নোয়াখালী জেলা, কুমিল্লা জেলার আখাউড়া - ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং ফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ | মেলাঘর | মেজর খালেদ মোশাররফ | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ | গঙ্গাসাগর, আখাউড়া এবং কসবা | মাহবুব,
লেফটেন্যান্ট ফারুক এবং লেফটেন্যান্ট হুমায়ুন কবির | |||||||||||||||
মেজর এ.টি.এম. হায়দার | ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | ||||||||||||||||||||
মন্দাভব | ক্যাপ্টেন গফর | ||||||||||||||||||||
সালদা-নদী | মাহমুদ হাসান | ||||||||||||||||||||
মতিনগর | লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম | ||||||||||||||||||||
নির্ভয়পুর | ক্যাপ্টেন আকবর,
লেফটেন্যান্ট মাহবুব | ||||||||||||||||||||
রাজনগর | ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম,
ক্যাপ্টেন শহীদ, লেফটেন্যান্ট ইমামুজ্জামান | ||||||||||||||||||||
৩ | সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ | কলাগাছি | মেজর কে এম শফিউল্লাহ | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ২১ জুলাই, ১৯৭১ | আশ্রমবাড়ি | ক্যাপ্টেন আজিজ, ক্যাপ্টেন ইজাজ | |||||||||||||||
মেজর এ.এন.এম. নূরুজ্জামান | ২৩ জুলাই, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | বাঘাইবাড়ি | ক্যাপ্টেন আজিজ, ক্যাপ্টেন ইজাজ | ||||||||||||||||||
হাতকাটা | ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান | ||||||||||||||||||||
সিমলা | ক্যাপ্টেন মতিন | ||||||||||||||||||||
পঞ্চবাটি | ক্যাপ্টেন নাসিম | ||||||||||||||||||||
মনতালা | ক্যাপ্টেন এম এস এ ভূঁইয়া | ||||||||||||||||||||
বিজয়নগর | ক্যাপ্টেন এম এস এ ভূঁইয়া | ||||||||||||||||||||
কালাচ্ছরা | লেফটেন্যান্ট মজুমদার | ||||||||||||||||||||
কলকলিয়া | লেফটেন্যান্ট গোলাম হেলাল মোর্শেদ | ||||||||||||||||||||
বামুতিয়া | লেফটেন্যান্ট সাঈদ | ||||||||||||||||||||
৪ | সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত | নাসিমপুর | মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | জালালপুর | মাহবুবুর রব সাদী | |||||||||||||||
বাড়াপুঞ্জি | ক্যাপ্টেন এ রব | ||||||||||||||||||||
আমলাসিদ | লেফটেন্যান্ট জহির | ||||||||||||||||||||
কুকিতাল | ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের,
ক্যাপ্টেন শরিফুল হক | ||||||||||||||||||||
কৈলাস শহর | লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামান | ||||||||||||||||||||
কামালপুর | ক্যাপ্টেন এনাম | ||||||||||||||||||||
৫ | সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল | বাঁশতলা | মেজর মীর শওকত আলী | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | মুক্তাপুর | সার্জেন্ট নাজির হোসেন,
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড | |||||||||||||||
ডাউকি | সার্জেন্ট মেজর বি আর চৌধুরী | ||||||||||||||||||||
শিলা | ক্যাপ্টেন হেলাল | ||||||||||||||||||||
ভোলাগঞ্জ | লেফটেন্যান্ট তাহের উদ্দিন আখঞ্জী | ||||||||||||||||||||
বালাট | সার্জেন্ট গনি,
ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এবং এনামুল হক চৌধুরী | ||||||||||||||||||||
বারাচ্ছড়া | ক্যাপ্টেন মুসলিম উদ্দিন | ||||||||||||||||||||
৬ | সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা | বুড়ি মাড়ি | উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | ভজনপুর | ক্যাপ্টেন নজরুল,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সদরুদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার | |||||||||||||||
পাটগ্রাম | প্রথমদিকে ই পি আর এর জুনিয়র কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় এবং পরে
ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান দায়িত্ব নেন | ||||||||||||||||||||
সাহেবগঞ্জ | ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দীন | ||||||||||||||||||||
মোগলহাট | ক্যাপ্টেন দেলোয়ার | ||||||||||||||||||||
চাউলাহাটি | ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল | ||||||||||||||||||||
৭ | দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা | তরঙ্গপুর | মেজর নাজমুল হক
*দুর্ঘটনায় নিহত |
১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ | মালন | প্রথমদিকে ই পি আর এর জুনিয়র কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় এবং পরে
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির দায়িত্ব নেন | |||||||||||||||
তপন | মেজর নাজমুল হক | ||||||||||||||||||||
মেহেদিপুর | সুবেদার ইলিয়াস,
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির | ||||||||||||||||||||
মেজর কাজী নূরুজ্জামান | ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | হামজাপুর | ক্যাপ্টেন ইদ্রিস | ||||||||||||||||||
বৃহত্তম পাবনা- | মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (বকুল) ও মুক্তিযোদ্ধা মো:নুরুজ্জামান বিশ্বাস (মুজিব বাহিনী) | ||||||||||||||||||||
শেখপাড়া | ক্যাপ্টেন রশিদ | ||||||||||||||||||||
ঠোকরাবাড়ি | সুবেদার মুয়াজ্জেম | ||||||||||||||||||||
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম | |||||||||||||||||||||
লালগোলা | ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী | ||||||||||||||||||||
৮ | সমগ্র কুষ্টিয়া, মাগুরা জেলা, ঝিনাইদহ জেলা ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ | বেনাপোল | মেজর আবু ওসমান চৌধুরী | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ১৭ জুলাই, ১৯৭১ | বয়ড়া | ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা | |||||||||||||||
মেজর এম. এ. মঞ্জুর | ১৪ আগস্ট, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | হাকিমপুর | ক্যাপ্টেন সফিউল্লাহ | ||||||||||||||||||
ভোমরা | ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন,
ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন | ||||||||||||||||||||
লালবাজার | ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী | ||||||||||||||||||||
বনপুর | ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমান | ||||||||||||||||||||
বেনাপোল | ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম,
ক্যাপ্টেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী | ||||||||||||||||||||
শিকারপুর | ক্যাপ্টেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী,
লেফটেন্যান্ট জাহাঙ্গীর | ||||||||||||||||||||
৯ | দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা | হাসনাবাদ | মেজর এম এ জলিল | ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ হতে ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ | তাকি |
| |||||||||||||||
হিঞ্জালগঞ্জ | |||||||||||||||||||||
মেজর জয়নুল আবেদীন | ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | শমসেরনগর | অজ্ঞাত | ||||||||||||||||||
১০ | কোনো আঞ্চলিক সীমানা নেই। ৫১৫ জন নৌবাহিনীর কমান্ডো অধীনস্হ। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত | প্রযোজ্য নয় | প্রযোজ্য নয় | প্রযোজ্য নয় | নেই | প্রযোজ্য নয় | |||||||||||||||
১১ | কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থেকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল | মহেন্দ্রগঞ্জ | মেজর জিয়াউর রহমান | ২৬ জুন, ১৯৭১ হতে ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ | মানকাচর | স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদুল্লাহ খান | |||||||||||||||
মেজর আবু তাহের | ১০ অক্টোবর, ১৯৭১ হতে ২ নভেম্বর, ১৯৭১ | ||||||||||||||||||||
স্কোয়াড্ৰণ লিডাৱ এম হামিদুল্লাহ খান | ২ নভেম্বর, ১৯৭১ হতে ৬ই এপ্ৰিল, ১৯৭২ | ||||||||||||||||||||
মাহেন্দ্রগঞ্জ | মেজর আবু তাহের; লেফটেন্যান্ট মান্নান | ||||||||||||||||||||
পুরাখাসিয়া | লেফটেন্যান্ট হাশেম | ||||||||||||||||||||
ধালু | লেফটেন্যান্ট তাহের;
লেফটেন্যান্ট কামাল | ||||||||||||||||||||
রংগ্রা | মতিউর রহমান | ||||||||||||||||||||
শিভাবাড়ি | ই পি আর এর জুনিয়র কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় | ||||||||||||||||||||
বাগমারা | ই পি আর এর জুনিয়র কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় | ||||||||||||||||||||
মাহেশখোলা | ই পি আর এর জনৈক সদস্য | ||||||||||||||||||||
-- | -- | -- | |||||||||||||||||||
ব্রিগেড ফোর্সগুলোর তালিকা
সম্পাদনাকর্নেল আতাউল গনি ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেন। যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের অদ্যাংশ দিয়ে। যা এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স[৪] নামে পরিচিত।
ফোর্সের নাম | অধিনায়ক | ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নং | কমান্ডিং অফিসার |
---|---|---|---|
'জেড' ফোর্স[৫] | মেজর জিয়াউর রহমান | ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ |
৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর শাফায়াত জামিল | ||
৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর এ জে এম আমিনুল হক | ||
২য় ফিল্ড আর্টিলারী ব্যাটারী | মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ | ||
'কে' ফোর্স | মেজর খালেদ মোশাররফ | ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | ক্যাপ্টেন এম এ গাফফার হালদার |
৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ আইনুদ্দিন | ||
১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী (১০ অক্টোবর - ২৩ অক্টোবর)
এবং ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম (২৪ অক্টোবর - ১৬ ডিসেম্বর) | ||
১ম ফিল্ড আর্টিলারী ব্যাটারী | ক্যাপ্টেন আবদুল আজিজ পাশা | ||
'এস' ফোর্স
(১৯৭১ এর অক্টোবর মাসে গঠিত) |
মেজর কে এম সফিউল্লাহ | ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী |
১১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট | মেজর আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম |
নৌ-বাহিনী
সম্পাদনাকর্নেল ওসমানী ভারতীয় বাহিনীর পরামর্শে ১৯৭১ সালের জুন মাসে একটি নৌ ইউনিট গঠন করেন। এটি ছিল একটি কম্যান্ডো ইউনিট। প্রথমে এর দায়িত্বে ছিলেন চীফ পেটি অফিসার রহমতুল্লাহ। পরে এর নেতৃত্বে দেয়া হয় বিমানবাহিনী কর্মকর্তা আহমেদ রেজাকে। বিশেষ গোপনীয়তার সঙ্গে এই মুক্তিবাহিনীর এই নৌ ইউনিট সংগঠিত করা হয়েছিল।[৬]
বিমান বাহিনী
সম্পাদনা১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান বাহিনীর সৈনিকেরা ওতপ্ৰোতভাবে জড়িত ছিলেন এবং স্থল যুদ্ধের প্ৰস্তুতি ও পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের জুলাইয়ে সেক্টর অধিনায়কদের সম্মেলনের সময় বিমান বাহিনী গঠন নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। কারণ সেই সময় তা সম্ভবপর এবং যুক্তি সংগত ছিলনা। ফলে আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্তে পৌছায়নি প্ৰবাসী সরকার। কিন্ত যুদ্ধের শুরু থেকেই বেশ কিছু বিমান বাহিনীর কৰ্মকৰ্তা ও সদস্য সক্ৰিয় ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার ও স্কোয়াড্ৰন লিডার এম হামিদুল্লাহ্ খান ছিলেন যথাক্রমে ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক। এছাড়াও জেড ফোৰ্সে আশরাফ, রউফ, লিয়াকত প্ৰমুখও যুদ্ধ ময়দানে বিভিন্ন গুরুত্বপূৰ্ণ পদে দায়িত্বরত ছিলেন। [৪] অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে গঠিত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। শুরুতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জনবল ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষত্যাগী বাঙালি কর্মকর্তা ও বিমানসেনারা।[৪] সে সময় ভারতে আশ্ৰয় নিয়ে যুদ্ধ সমাপ্ত পৰ্যন্ত থেকে যাওয়া বেশ কিছু বিমান কৰ্মকৰ্তা ছিলেন; যেমন বদরুল আলম, এ কে খন্দকার, সুলতান মাহমুদ, পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাবেক পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সাত্তার, সাবেক পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সরফুদ্দিন এবং সাবেক কৃষিবিভাগের পাইলট ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে ২/৩ জনের দাবি অনুযায়ী "বাংলাদেশ বিমান বাহিনী" নাম করণ করা হয় এবং তাঁদের প্ৰশিক্ষণ দেয়া হয়। মূলত তাঁরাই ভারত থেকে তাঁরাই বাংলাদেশে উড়ে এসে বিভিন্ন দুঃসাহসিক অভিযান চালান। এই অপারেশন তাঁরাই কিলো ফ্লাইট নাম দেন। ভারত উপহার হিসেবে কিলো ফ্লাইটের সাফল্যর জন্য ছোট তিনটি পুরাতন বিমান দেয় - একটি ডাকোটা ডিসি-৩ পরিবহন বিমান, একটি ডি.এইচ.সি-৩ টুইন অটার পর্যবেক্ষণ বিমান ও একটি ঔষধ নিক্ষেপের কাজে ব্যবহৃত অ্যালুয়েট থ্রি হেলিকপ্টার। [৫] ডিমাপুরের একটি পরিত্যক্ত রানওয়েতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর টেকনিশিয়ানরা উপহার পাওয়া বিমানগুলো রূপান্তর ও আক্রমণ উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু করেন। ডাকোটা বিমানটিকে ৫০০ পাউন্ড বোমা বহনের উপযোগী করে তোলা হয়। টুইন অটারটির প্রতি পাখার নিচে ৭টি করে রকেট যুক্ত করা হয়। পাশাপাশি এটি ১০টি ২৫ পাউন্ড ওজনের বোমাও বহন করতে পারত যা একটি দরজা দিয়ে হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হত। আর অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের সামনে একটি .৩০৩ ব্রাউনিং মেশিন গান এবং দুই পাইলন থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপের ব্যবস্থা করা হয়। এই ছোট বাহিনীকে কিলো ফ্লাইট নামকরণ করা হয়। স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে কিলো ফ্লাইটের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়।[৬][৭]
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে।[৮] ওইদিন ক্যাপ্টেন আকরাম কর্তৃক পরিচালিত আক্রমণে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপো ধ্বংস হয়ে যায়।[৯] ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিমান বাহিনী মৌলভীবাজারে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যারাকে হামলা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পাকিস্তানিদের ঘাঁটিতে অনেকগুলো আক্রমণ পরিচালনা করে। [৯]
১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে সরকারি ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ হোসেন তওফিক ইমাম (২০০৪)। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১। আগামী প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-401-783-1।
- ↑ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: ১৭ কোটি মানুষের গর্ব
- ↑ ক খ সেক্টরসমূহের তালিকা
- ↑ শামসুল হুদা চৌধুরী। একাত্তরের রণাঙ্গন। আহমদ পাবলিশিং হাউজ। আইএসবিএন 978-98-41107-06-2।
- ↑ "Z Force organogram"। Pdfcast.org। ২০১২-০৭-১২। ২০১৩-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ একাত্তরের স্মৃতিচারণ, আহমেদ রেজা, শব্দশৈলী প্রকাশনী, ২০০৯, ঢাকা। পৃ. ১২১-১৩৭]