জেড ফোর্স (বাংলাদেশ)

জেড ফোর্স (ইংরেজি: Z Force) ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক ব্রিগেড। এটির তুরা ব্রিগেড নামেও পরিচিতি আছে। ব্রিগেডটি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার এর অনুমোদন সাপেক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের অধীনে গঠিত হয়। ৭ জুলাই, ১৯৭১ ব্রিগেডটি গঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম, ৩য় এবং ৮ম ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে। এটাই ছিল তৎকালীন স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রথম একটি সম্পূর্ণ ব্রিগেড। [১]

জেড ফোর্স
সক্রিয়৭ই জুলাই, ১৯৭১ - ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
দেশ বাংলাদেশ
আনুগত্যঅস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার
ধরনব্রিগেড
গ্যারিসন/সদরদপ্তরতেলদহ/তেলঢালা, তুরা
কমান্ডার
ব্রিগেড কমান্ডারজিয়াউর রহমান

পটভূমি সম্পাদনা

২৫শে মার্চ (১৯৭১) রাতের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় হামলার পর বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বাঙালী সেনা কর্মকর্তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং তাদের সীমিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু দ্রুত বাঙালী সামরিক কর্মকর্তারা অনুভব করে এভাবে অ-পরিকল্পিত আক্রমণ ও প্রতিরোধ শত্রুদের বড় ধরনের কোন চাপে ফেলতে পারবেনা, সুতরাং তারা সম্পূর্ণ দেশকে কিছু সেক্টর এ ভাগ করে সুসংহত ভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।

এমন পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের জন্যে, বিশেষকরে সম্মুখ যুদ্ধের জন্যে কিছু ব্রিগেড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্রপাত সম্পাদনা

৮, থিয়েটার রোড, কলকাতায় অনুষ্ঠিত 'সেক্টর কমান্ডার' সভায়  মুক্তিবাহিনীর প্রথম ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমান পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন[২] এবং তৎকালীন সময়ে উপস্থিত সদস্যের মধ্যে তিনি সবচাইতে সিনিয়র হওয়ায় ব্রিগেডটির দায়িত্ব পান।

যদিও বৈঠক শেষে  সিদ্ধান্ত অনুসারে ব্রিগেড গঠন করা হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী প্রধান এমএজি ওসমানী ১৩ই জুন ১৯৭১ মেজর মঈনুল হোসেনকে সিদ্ধান্ত অবহিত করেন।[৩] কিন্তু বাংলাদেশ সরকার গেজেট এর জন্য, ফোর্সটি ৭ জুলাই ১৯৭১ গঠিত হিসাবে পরিচিত হয়।

ব্রিগেডটির সদর দপ্তর ছিল তুরা এর তেলঢালা, ভারত।[৪]

গঠন এবং প্রশিক্ষণ সম্পাদনা

জেড ফোর্স তাদের প্রশিক্ষণ শিবির এর জন্যে প্রাথমিক ভাবে মেঘালয়ের দুর্গম এলাকা তুরা বাছাই করে এবং বিভিন্ন বয়সের ও পেশাজীবী মানুষের মাঝের স্বাধীনতার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও প্রগাঢ় চেতনা দ্রুত একত্রিত এক ব্রিগেড এ রূপ নেয়। [৫]

প্রাথমিক অবস্থা সম্পাদনা

  • ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়ন যশোর সেনানিবাস হতে সেনাসদস্যরা মেজর হাফিজ এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে প্রচন্ড লড়াইয়ের পর মেজর হাফিজসহ মাত্র ৫০ জন জোয়ান ও অফিসার সীমান্ত অতিক্রমে সক্ষম হন।
  • ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ৩য় ব্যাটালিয়নও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল।
  • ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ৮ম ব্যাটালিয়ন ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও সীমিত শক্তির।

জেড ফোর্স এই ১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, এবং প্রাথমিক অবস্থা বিবেচনায় এনে দ্রুত সুশৃঙ্খল ও সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার প্রতি জোর দেওয়া হয়।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পাদনা

বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী প্রধান কার্যালয় পরিস্থিতি বিবেচনায় মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়নে ৬০০ যুবক ও মেজর শরীফুল হক (ডালিম)কে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩য় ব্যাটালিয়নে আরও ৫০০ যুবককে তুরার জেড ফোর্স-এর জন্য যোগাড় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। [৬] মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ সীমান্তবর্তী খুলনা-কুষ্টিয়া যুব শিবির থেকে ৬০০ যুবক বাছাই করেন এবং এর ফলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়নের শক্তি ৮০০ জোয়ানে পৌছায়। জেড ফোর্সে একত্রিত হবার মুহূর্তে মেজর শরীফুল হক (ডালিম) আরও ৫০০ সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩য় ব্যাটালিয়নকে বর্ধিত করে।

দায়িত্ব বন্টন সম্পাদনা

  • মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরীকে দেওয়া হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়ন এর দায়িত্ব ও উপযুক্ত ব্যাটালিয়নে রূপ দেবার।
  • মেজর শাফায়াত জামিলকে দেওয়া হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩য় ব্যাটালিয়ন এর দায়িত্ব ও সংঙ্গবদ্ধ করার।
  • ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৮ম ব্যাটালিয়ন এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এ জে এম আমিনুল হক

ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে রূপ নেয় জেড ফোর্স যা ছিল বাংলাদেশ সামরিক অন্যতম নির্ভীক এক ব্রিগেড। [৬]

ব্রিগেড এর কাঠামো সম্পাদনা

  • ব্রিগেড কমান্ডার - মেজর জিয়াউর রহমান
  • ব্রিগেড মেজর - ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ
  • ডি-কিউ কর্মকর্তা - ক্যাপ্টেন সাদেক
  • সংকেত কর্মকর্তা - ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম
  • ব্রিগেড মেডিকেল অফিসার - আব্দুল হাই মিয়া

১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সম্পাদনা

৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সম্পাদনা

  • কমান্ডিং অফিসার - মেজর শাফায়াত জামিল
  • সেকেন্ড-ইন-কমান্ড - ক্যাপ্টেন মহসিন
  • এ কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন
  • বি কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আকবর হোসেন
  • সি কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহসিনুদ্দিন আহমেদ
  • ডি কোম্পানি কমান্ডার - লেফটেন্যান্ট এস আই বি নুরুন্নবী খান
  • মেডিকেল অফিসার - ওয়াসিউদ্দিন
  • এছাড়াও লেফটেন্যান্ট মনজুর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট ফজলে হোসেন এই ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সম্পাদনা

এছাড়াও লেফটেন্যান্ট ইমাদুল হক, লেফটেন্যান্ট ওলিউল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট মুনিবুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কে এম আবু বাকের এই ব্যাটালিয়নে ছিলেন।

২য় ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি সম্পাদনা

প্রধান অভিযান সম্পাদনা

কামালপুর সীমান্ত ফাঁড়ি আক্রমণ সম্পাদনা

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এবং জামালপুর হয়ে ময়মনসিংহ সড়ক সংযোগে কামালপুর ছিল অন্যতম শক্ত সীমান্ত ফাঁড়ি। সেখানে ছিল গোলা-নিরোধী ছাদ বিশিষ্ট কংক্রিট বাংকার/পরিখা যেগুলি প্রতিটি গভীর নালার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সাহায্য বিনিময়ে সক্ষম, নিরাপত্তার বেষ্টনী হিসাবে ছিল স্ব-নিয়ন্ত্রিত ফাঁদ ও ভূমিবিস্ফোরক এবং অন্ধকারের সময় পাকিস্তানের সৈন্যরা একেবারে ভিতরের নিরাপদ স্তরে ঢুকে যেত। [৭]

১৯৭১ সালের ৩১শে জুলাই দিবাগত রাত্রে (১লা অগাস্ট রাত) জিয়াউর রহমান এর নির্দেশ মোতাবেক মেজর মইনুল হোসেন এর নেতৃত্বে উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে ডেল্টা এবং ব্রাভো শত্রুপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেজর মইন এতো দ্রুত এমন মিশনে রাজী ছিলেন না, তার মতে কামালপুরের মত যথেষ্ট শক্তিশালী পাকিস্তানি ঘাটিতে সেটপিস যুদ্ধের মাধ্যমে আক্রমণ করার সক্ষমতা জেড ফোর্সের বা তার ব্যাটালিয়নের নেই।মেজর মইনের প্ল্যান ছিলো হিট অ্যান্ড রান গেরিলা পদ্ধতিতে পাকিস্তান ফোর্সকে দুর্বল এবং নাজেহাল করা। কিন্তু জিয়া সিদ্ধান্ত পাল্টালেন না যার মূল কারণ ছিল হাইকমান্ডের নির্দেশ এবং ঘাঁটিটির স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব।

আক্রমণ থেকে প্রত্যক্ষভাবে জয় না পেলেও এই আক্রমণে ২০০ এর অধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং তাদের মনোবলের উপর ছিল বড় ধরনের ধাক্কা একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে ছিল উৎসাহের প্রতীক।

এটি এতই শক্তিশালী ঘাঁটি, যে এই ঘাঁটিতে এরপর সর্বমোট ৪ বার নিয়মিত বাহিনী পর্যায়ে সরাসরি সেটপিস যুদ্ধ হয়েছে-

  • ৩১ জুলাই
  • ২২ অক্টোবর
  • ১৪ নভেম্বর
  • ২৪ নভেম্বর
  • ৪ ডিসেম্বর

হিট অ্যান্ড রান হয়েছে মোট ২০ বার! প্রথম গেরিলা হিট টি হয়েছিলো ১২ জুন।
বীর উত্তম থেকে বীর প্রতীক মিলিয়ে সর্বমোট ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা সাহসিকতা পদক পেয়েছেন কেবল কামালপুর যুদ্ধের জন্যই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এমন উদাহরণ আর একটিও নেই।

নকশি সীমান্ত ফাঁড়ি আক্রমণ সম্পাদনা

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশি সীমান্ত ফাঁড়ি ছিল পাকিস্তানের একটি শক্ত ঘাঁটি। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এটি জেড ফোর্স এর আক্রমণ তালিকায় নেওয়া হয়। আক্রমণে ছিল ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদের আলফা কোম্পানি আর লেঃ মোদাসেরের ডেল্টা কোম্পানি। সুবেদার হাকিমের ইপিআর কোম্পানিটি ছিল কাট অফ পার্টি হিসেবে। ফায়ারিং কভার দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর আমিনুল হক। আর ফাঁড়ির পাশে শালবনে ফরোওয়ার্ড এরিয়া অ্যাসেম্বলী থেকে জিয়া ওয়ারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে যুদ্ধ কোঅর্ডিনেট করছিলেন।

৩রা আগস্ট ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে আলফা কোম্পানীর প্রধান ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ চৌধুরী ও ডেল্টা কোম্পানির প্রধান লেফটেন্যান্ট মোদাসসের হোসেন সাহসী দুই কোম্পানী নিয়ে দ্রুততার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর উপর। অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের যথেষ্ট অভাব থাকলেও অসামান্য দৃঢ়তার সাথে ঘাঁটির ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পাকিস্তানি হানাদারদের প্রচণ্ড মর্টার আক্রমণের মাঝেও ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং আশ্রয়ের জন্যে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায় (পরবর্তীতে যদিও তারা পালানোর সময় সাথে নিয়ে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাইন দ্বারা মুক্তিবাহিনী ও জেড ফোর্স এর দখল এর উপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল)।

যুদ্ধে মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আমিন আহত হলে ব্রাভো কোম্পানি মনোবল হারায়। মোট ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে শহীদ হন। ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলে মেজর আমিনুল হক ২ জন এনসিও আর জেসিওকে সংগে নিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে হেভি মেশিনগানের ফায়ারিং এর ভেতর তাকে উদ্ধার করেন।

ঘাসিপুর এর যুদ্ধ সম্পাদনা

১০ই সেপ্টেম্বর, ঘাসিপুরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ১ম ব্যাটিলিয়ন ডেল্টা ফোর্স শক্ত অবস্থানে আসে যা ছিল কামালপুর সীমান্ত ফাঁড়ির খুবই নিকটবর্তী একটি সংবেদনশীল অবস্থান। খাদ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য বিভিন্ন সুবিধার জন্যে ঘাসিপুর ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেজন্যে জেড ফোর্স এর ঘাসিপুরের শক্ত অবস্থান কামালপুর ঘাঁটির জন্যে দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল।

কামালপুর ঘাঁটি সুরক্ষিত রাখার জন্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর তথা জেড ফোর্স এর প্রতিরক্ষার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। অসামান্য দৃঢ়তার ও সাহসিকতার মুখে পাকিস্তানের এ আক্রমণ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয় এবং যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার করে নিয়ে তারা পিছু হতে যায়। এ যুদ্ধে রেজিমেন্ট এর ল্যান্স নায়েক ইউসুফ এবং সুবেদার মোজাম্মেল শহিদ হন।

অন্যান্য অভিযানসমূহ সম্পাদনা

এছাড়াও বাহাদুরাবাদ যুদ্ধ, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, চিলমারী উভচর অভিযান, হাজীপাড়া, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট,টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলাই চা-বাগান, ধামাই চা-বাগান, জকিগঞ্জ, আলি-ময়দান, এমসি কলেজ, ভানুগাছ, কানাইঘাট, বয়মপুর, ফুলতলা চা-বাগান, সাগরনালা চা-বাগান, লাতু, বড়লেখা প্রভৃতি যুদ্ধ জেড ফোর্সের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।[৮]কে ফোর্স এস ফোর্স জেড ফোর্স - মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি; পৃষ্ঠা ১০-১১</ref>

প্রতিরক্ষা মুক্ত জোন সম্পাদনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের স্বাধীনকৃত অঞ্চল সমূহকে নিরাপদ রাখা ছিল জেড ফোর্সের অন্যতম প্রধান কাজ। এর অংশ হিসাবে জেড ফোর্স অনেক অঞ্চল স্বাধীন এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে তোলে।

রৌমারীর প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

কুড়িগ্রামের রৌমারী স্বাধীন হয় আগস্টের শেষের দিকে। জেড ফোর্সের দখলের পর জিয়াউর রহমান ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর লেফটেন্যান্ট এস আই বি নুরুন্নবি খানকে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার এর পক্ষে প্রশাসনিক ভাবে সাজানোর দায়িত্ব দেন। শাফায়াত জামিলকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভবিষ্যতে যেকোনো আক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবি খান দায়িত্ব পাবার সাথে সাথে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্যে প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে। ২৭ আগস্ট, ১৯৭১ তিনি বেশ কিছু কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করে (একটি হাসপাতালও ছিল এর মধ্যে) এবং এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান দ্বারা গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের কোন স্বাধীনকৃত স্থানে প্রথম প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা।[৯]

এনবিসি "দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার" নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে যেখানে রৌমারীর স্বাধীন ভূমির উল্লেখ ছিল।[১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "যুদ্ধের দিনপঞ্জিঃ ১৯৭১ সালের সংঘটিত ঘটনাবলীর কালক্রম"ফ্রিডম ইন দ্যা এয়ার (ইংরেজি ভাষায়)। দ্যা ডেইলি স্টার। মার্চ ২৬, ২০১৪। এপ্রিল ১০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৫ 
  2. Document for showing The Bangladesh Gazette announcing the promotion of Ziaur Rahman to Lieutenant General in the book A Legacy of Blood by Anthony Mascarenhas
  3. মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) (২০১৩-০৩-০১)। এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য স্বাধীনতার প্রথম দশক (১৯৭১-১৯৮১)। মাওলা ব্রাদার্স। আইএসবিএন 984-410-175-1 
  4. মাহমুদ উর রাসিদ (২৩ মার্চ ২০০৮)। "সেক্টর এন্ড আর্মড ফোর্সেস অব লিবারেশন ওয়ার ১৯৭১"স্টার ক্যাম্পাস। দ্যা ডেইলি স্টার। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১৫ 
  5. "সেক্টর এন্ড আর্মড ফোর্সেস অব দ্যা লিবারেশন ওয়ার ১৯৭১" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্যা ডেইলি স্টার। মার্চ ২৩, ২০০৮। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. http://www.liberationwarbangladesh.org › ... কে ফোর্স এস ফোর্স জেড ফোর্স - মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি
  7. "সিগনিফিকেন্স অব আর্মড ফোর্সেস ডে"। ডেইলিস্টার আর্কাইভ। ২০০৯-১১-২৩। ২০১৪-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-১৯ 
  8. http://www.liberationwarbangladesh.org › ... একাত্তরের উত্তর রণাঙ্গন - এম. হামিদুল্লাহ খান, TJ, SH, BP,; পৃষ্ঠা ১১১~১২০, ১৪১~১৪৮, ২৫৬~২৭৪
  9. কর্নেল শাফায়াত জামিল (১৯৯৮)। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর। সাহিত্য প্রকাশ। 
  10. "দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার"। প্রথম আলো। ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা