রৌমারী উপজেলা
রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি মুক্তাঞ্চল উপজেলা হিসেবে খ্যাত। কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ডের সাথে এই উপজেলাটির কোনো সংযোগ সড়ক নেই, শুধু জল ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এই উপজেলাটি জামালপুর জেলার খুবই সন্নিকটে এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো।
রৌমারী | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে রৌমারী উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৩′৪৩″ উত্তর ৮৯°৫১′০″ পূর্ব / ২৫.৫৬১৯৪° উত্তর ৮৯.৮৫০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | কুড়িগ্রাম জেলা |
উপজেলা | ১৯৮৩ |
আসন | কুড়িগ্রাম-৪ |
আয়তন | |
• মোট | ১৯৭.৮০ বর্গকিমি (৭৬.৩৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,০৩,৯৪৯ |
• জনঘনত্ব | ১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৬৪০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৪৯ ৭৯ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাকুড়িগ্রাম জেলার দক্ষিণাংশে ২৫°২৭´ থেকে ২৫°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৫´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে রৌমারি উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার উত্তরে উলিপুর উপজেলা ও ভারতের আসাম, দক্ষিণে চর রাজিবপুর উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম. পশ্চিমে চর রাজিবপুর উপজেলা, চিলমারী উপজেলা ও উলিপুর উপজেলা।
নামকরণ
সম্পাদনাধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে রুই মাছ পাওয়া যেত, এ কারণে এ অঞ্চলটি 'রুইমারী' নামে পরিচিত ছিল; যা কালক্রমে রৌমারী নামে রুপান্তরিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আয়তন
সম্পাদনারৌমারী উপজেলার মোট আয়তন ১৯৭ বর্গ কিলোমিটার।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের প্রাক্কালে আসামের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গোয়ালপাড়া জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রৌমারী সীমান্তের নিকট বড়াইবাড়ি নামক স্থানে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মানকাচরের আবদুল কাশেম মিয়া পাকিস্তান কেল্লা প্রতিষ্ঠা করেন এবং স্থানীয় যুবকদের সংঘবদ্ধ করে একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করেন। এই স্থানে একটি বিশাল মঞ্চ স্থাপন করে সাত দিন ধরে ঐ উঁচু মঞ্চে উঠে মওলানা ভাসানী লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনারংপুর জেলার অধীনে রৌমারী থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় কোনো পৌরসভা নাই ও ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম রৌমারী থানার আওতাধীন।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ সালের আদশুমারী অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২,০৩,৯৪৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৯৯,৪৫৬ জন ও মহিলা ১,০৪,৪৯৩ জন।[২] ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচন অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার।[৩]
শিক্ষা
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী রৌমারী উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৩%। এ উপজেলায় ৮টি কলেজ, ২টি কারিগরি কলেজ, ২৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি আলিম মাদ্রাসা ও ১৩টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা- কলেজ
- রৌমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪)
- রৌমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫)
- যাদুর চর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৯)
- যাদুর চর মডেল কলেজ (১৯৯৯)
- চর শৌলমারী ডিগ্রী কলেজ(১৯৯৫)
- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ,পাখিউড়া(২০১১)
- চর শৌলমারী আদর্শ মহিলা কলেজ(২০১৩)
উচ্চ বিদ্যালয়
সম্পাদনা- টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৪১)
- টাপুর চর বি.জি উচ্চ বিদ্যালয়
- যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬)
- রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮)
- চর শৌলমারী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৭০)
- শৌলমারী এম আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৬)
- চর শৌলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- কাজাইকাটা জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়
- সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- ফুলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়
- প্রাথমিক বিদ্যালয়
- নতুন বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৬৮)
- রৌমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮)
- চাকতাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২)
- মির্জাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৬)
- চর শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয
- মাদ্রাসা
- দক্ষিণ টাপুরচর দারুচ্ছুন্নাহ এল এইচ দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮৫)
- নূরপুর রহমানিয়া দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা (১৯৭২)
- ফুলুয়ার চর জুনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩৩)
- রৌমারী কেরামতিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩৭)
- জাফরগঞ্জ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা
স্বাস্থ্য
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় ১টি সরকারি হাসপাতাল, ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ২টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অর্থনীতি
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৫,৫৫৫ হেক্টর। এ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৭%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ৬.৪০%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.৫৭%, চাকরি ৩.২৫%, নির্মাণ ০.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৭.৩০%। ভূমিমালিক ৫৫.০৫%, ভূমিহীন ৪৪.৯৫%। শহরে ৪৫.৩৪% এবং গ্রামে ৫৬.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় ৬৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৪৮৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৩০ নটিক্যাল মাইল নদীপথ রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ধর্মীয় উপাসনালয়
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় ৩৪৫টি মসজিদ, ৫টি মন্দির রয়েছে ও কোনো গির্জা নাই।[৪]
- রৌমারী জামে মসজিদ।
- থানা জামে মসজিদ।
- ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদ (প্রতিষ্ঠিত ১৮৮২)।
নদ-নদী
সম্পাদনারৌমারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদী, হলহলি নদী, সোনাভরি নদী, জিঞ্জিরাম নদী। এছাড়াও এ উপজেলায় অনেক বিল রয়েছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিল হল নটান বিল, ইছাকুড়ি বিল, ভেড়ামারী বিল, আলীর ডোবা, মাদাইডাঙ্কার বিল, বাউশমারীর বিল, দেওকুড়া বিল। ধারণা করা হয়, এ উপজেলায় অনেক চর রয়েছে যার মধ্যে থেকে এ অঞ্চলটি জেগে উঠেছে।[৫]
হাটবাজার
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় ১৯টি হাটবাজার রয়েছে ও ২টি মেলা হয়ে থাকে।[৬]
- উল্লেখযোগ্য হাটবাজার
- রৌমারী হাট বাজার
- বাইটকামারী হাট বাজার
- কর্তিমারী হাট বাজার
- চর শৌলমারী হাট বাজার
- দাঁতভাঙ্গা হাট বাজার
- সায়েদাবাদ হাট বাজার
- আমবাড়ি হাট বাজার
- শিমুলতলী হাট বাজার
- পাখিউড়া হাট বাজার
- টাপুরচর হাট বাজার
- শেখের হাট বাজার
- চুলিয়ার চর হাট বাজার
- সোনাপুর হাট বাজার
- বড়াইকান্দি হাট বাজার
- কাজাইকাটা গাছবাড়ী হাট বাজার
- গোয়ালগ্রাম হাট বাজার
- খেওয়ার চর হাট বাজার
- কাজাইকাটা লাউবাড়ী হাট বাজার
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সেক্টর কামান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, উইং কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান এবং আরও অনেকে পর্যায়ক্রমে এখান থেকে ১১নং সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা করেন। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং এখান থেকে চিলমারী, উলিপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হতো। রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল বলা হয় কারণ পাক হানাদাররা এ অঞ্চলে আসতে সাহস পায়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনারৌমারী উপজেলায় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:[৭][৮]
- বড়াইবাড়ী স্মৃতিসৌধ
- রৌমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
- তুরা স্থলবন্দর
- সোনাভরি নদী
- চাঁন্দমারী পর্যটন কেন্দ্র
- মশার ঘোপ নীলকুঠি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- নুরুল ইসলাম (পাপু মিয়া) – ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গণ পরিষদের সদস্য।
- মোহাম্মদ সিরাজুল হক – অধ্যক্ষ ও সাবেক সংসদ সদস্য।
- গোলাম হোসেন – রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য ।
- রোস্তম আলী দেওয়ান – ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক।
- জাকির হোসেন – রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জনপ্রতিনিধি
সম্পাদনা- উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান | |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান | সামসুল দোহা |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান | মোছাঃ মাহমুদা আক্তার স্মৃতি |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা | নাহিদ খান |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "এক নজরে রৌমারী"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "এক নজরে রৌমারী"। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "রৌমারীতে চেয়ারম্যান হলেন শালু"। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "মসজিদ"। ২০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "নদ-নদী - রৌমারী উপজেলা"। www.rowmari.kurigram.gov.bd। ৮ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "হাট-বাজারের তালিকা"। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "দর্শনীয় স্থান"। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ https://bn.m.wikivoyage.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A7%8C%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80_%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাবাংলাদেশ বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |