অলি আহমেদ

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ (জন্ম:১৩ ই মার্চ ১৯৩৯) বীর বিক্রম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

কর্নেল অলি আহমেদ
Oli Ahmed , President - LDP.jpg
জন্ম১৩ মার্চ ১৯৩৯
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণমুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম
দাম্পত্য সঙ্গীমমতাজ বেগম

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

অলি আহমেদের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার চন্দনাইশে। তার বাবার নাম আমানত ছাফা এবং মায়ের নাম বদরুননেছা। তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।

কর্মজীবনসম্পাদনা

১৯৭১ সালে অলি আহমদ কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে অবসর নেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (বাংলাদেশ) এর প্রেসিডেন্ট।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাসম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল অলি আহমদের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে দুই ভাগে ছিলেন এবং সামনে ও পেছনে ছিল তাদের প্রতিরক্ষা। সম্ভাব্য যুদ্ধের সব ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করে অলি আহমদ পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে যান। তখন তিনি দেখতে পান, ফাঁকা রাস্তায় সীতাকুণ্ড থেকে তীব্র বেগে একটি জিপ আসছে। জিপে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম এবং অন্য একজন। তারা দুজন অলিকে জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের দেখে ফেলেছে। দুই মিনিট পর অলি ফাঁকা রাস্তায় দেখতে পান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি জিপ ও ট্রাকবহর আসছে এবং দুই শ গজ দূরে থেমে গুলি শুরু করে তারা। অলির ৫০ গজ দূরে মেশিনগান নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন দু-তিনজন সহযোদ্ধা। তার নির্দেশে তারা পাকিস্তানি বহরের একদম পেছনের গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। পাঁচ গজের মধ্যে এলএমজি নিয়ে পজিশনে ছিলেন তার আরেক যোদ্ধা। তিনি তাকে বলেন জিপ লক্ষ করে গুলি করতে। গজ বিশেক দূরে ছিল মর্টার দল। তারা মাঝের ট্রাক লক্ষ করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। তিনি নিজে রিকোয়েললেস রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবেলা করেন। আরআরের ছিল মাত্র দুটি গোলা। একটি আমগাছের ডালে লাগায় কোনো ক্ষতি হয়নি পাকিস্তানিদের। দ্বিতীয়টি সরাসরি আঘাত হানে ট্রাকে। খবর পেয়ে আরও পাকিস্তানি সেনা সেখানে আসে এবং যুদ্ধে যোগ দেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। অলি আহমদ দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কম পরিমাণ অস্ত্র এবং সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করেন। মু্ক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসীকতার জন্য তিনি 'বীর বিক্রম' উপাধীতে ভূষিত হন।

[২]

সেনাবাহিনীতে কর্মজীবনসম্পাদনা

রাজনীতিসম্পাদনা

জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি সেনাবাহিনীতে তার চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দান করেন। তখন তার আরো ৯ বছর চাকরি ছিল। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী হন। যমুনা সেতুর কাজ তার সময়েই শুরু হয়। দীর্ঘকাল বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.কিউ,এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন। অতি সম্প্রতি তিনি এ.কিউ,এম, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে মতবিরধের পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।

বইসম্পাদনা

  • রেভোলিউশন, মিলিটারি পারসোনেল অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব লিবারেশন ইন বাংলাদেশ (বাজেয়াপ্ত) : ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আদালতের এক রায়ে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। [৩]

পাদটীকাসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-১১-২০১২"। ২০১৫-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-০৯ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৭১। আইএসবিএন 9789849025375 
  3. "অলি আহমদের বই বাজেয়াপ্তের নির্দেশ"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৯