বদরে আলম মিরাটি

পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত

বদরে আলম মিরাটি (১৮৯৮ – ২৯ অক্টোবর ১৯৬৫) ছিলেন একজন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত। যুবক বয়সে আশরাফ আলী থানভীর বক্তৃতায় প্রভাবিত হয়ে তিনি ইসলামি শিক্ষা শুরু করেন। তার সংকলিত ফয়জুল বারী সহীহ বুখারীর অন্যতম প্রধান ব্যাখ্যাগ্রন্থ। তার আরও একটি জনপ্রিয় হাদিস গ্রন্থ তারজুমান আল সুন্নাহ। শেষ বয়সে তিনি মদিনার মসজিদে নববীতে হাদিস পাঠদান করেছেন। জান্নাতুল বাকিতে তার কবর রয়েছে।[][]


বদরে আলম মিরাটি
بدر عالم میرٹھی
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৮৯৮ ইং
মৃত্যু২৯ অক্টোবর ১৯৬৫(1965-10-29) (বয়স ৬৬–৬৭)
সমাধিস্থলজান্নাতুল বাকি
ধর্মইসলাম
পিতামাতা
  • তাহুর আলি (পিতা)
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহহাদিস, লেখালেখি, তাসাউফ
উল্লেখযোগ্য কাজ
  • ফয়জুল বারী
  • তারজুমান আল সুন্নাহ
যেখানের শিক্ষার্থী
শিক্ষক
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যআজিজুর রহমান উসমানি

বদরে আলম মিরাটি ১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[] ধারণা করা হয়, তার পৈতৃক নিবাস মিরাটে হওয়ার কারণে তার নামের শেষে মিরাটি যোগ করা হয়। তার পিতা হাজী তাহুর আলি একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কুরআন পাঠ শিখার মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তিনি এলাহাবাদের একটি ইংরেজি স্কুলেও বেশ কয়েকবছর পড়াশোনা করেন। এক জুমার দিন তিনি এলাহাবাদের একটি স্থানীয় মসজিদে ভ্রমণ করেন, যেখানে তিনি আশরাফ আলী থানভীর বক্তৃতা শ্রবণ করেন। যুবক বয়সে থানভীর এই বক্তৃতা তার উপর প্রভাব ফেলে, তখন তিনি ইংরেজি স্কুল ছেড়ে ইসলামি শিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা তার পিতাকে জানানোর পর, তার বাবা খলিল আহমদ সাহারানপুরিকে একটি চিঠি লিখেন। সাহারানপুরি তার পিতাকে অনুমতি দিতে বলেন।[]

পিতার অনুমতি পেয়ে বদরে আলম ১৯১২ সালে মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে ভর্তি হন। তিনি সাহারানপুরে ৬ বা ৮ বছর অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস (স্নাতক) সমাপ্ত করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য খলিল আহমদ সাহারানপুরি ও জাফর আহমদ উসমানি। ১৯১৯ সালে তিনি তিনি মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।[]

১৯২১ সালে আরও উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি সাহারানপুর থেকে দেওবন্দ চলে আসেন এবং দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। দেওবন্দে তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি, আজিজুর রহমান উসমানি, শাব্বির আহমদ উসমানি, আসগর হুসাইন দেওবন্দির মত আলেমদের অধীনে পুনরায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। পরের বছর তিনি দেওবন্দে শিক্ষক নিযুক্ত হন, ১৯২৭ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় আজিজুর রহমান উসমানির সাথে তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।[]

দারুল উলুম দেওবন্দের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্যের কারণে আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুদ্দিন ডাভেল চলে যান। তার সাথে বদরে আলম মিরাটি সহ অনেক সহকর্মী ও ছাত্র ডাভেলে চলে যান। বদরে আলম ডাভেলে প্রায় ১৭ বছর অধ্যাপনা করেন।[]

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির সহীহ বুখারীর দরসে অংশগ্রহণ করেন এবং তার পাঠ সমূহ লিপিবদ্ধ করেন। এই পাঠসমূহ লিপিবদ্ধ করে ১৯৩৮ সালে তিনি মিশরের কায়রো থেকে ৪ খন্ডে তার বিখ্যাত ফয়জুল বারী গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। বর্তমানে এটি সহীহ বুখারীর অন্যতম প্রধান ব্যাখ্যাগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। আল বদর আল সারি নামে তিনি গ্রন্থটির একটি টীকাও প্রকাশ করেন।[]

১৯৪৩ সালে নাদওয়াতুল মুসান্নিফীন কর্তৃক তাকে যুগের চ্যালেঞ্জ এবং চাহিদা মোতাবেক উর্দুতে একটি অনন্য হাদিস সংগ্রহ প্রকাশের জন্য নিযুক্ত করা হয়। তিনি ৪ খন্ডে তারজুমান আল সুন্নাহ নামে গ্রন্থটি লিখেন।[]

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং তান্দো আল্লাহইয়ারের দারুল উলুম আল ইসলামিয়ার সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী পাঁচ বছর পাকিস্তানে একটি ইসলামি সংবিধান প্রণয়ন সহ কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ শফি উসমানির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে মদিনায় চলে যান।[] মদিনার মসজিদে নববীতে তিনি হাদিসের শিক্ষকতা করেন।[]

জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি মদিনায় ইবাদত বন্দেগী, লেখালেখি ও জ্ঞান সাধনায় কাটান। ১৯৬৫ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন, তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।[]

প্রকাশনা

সম্পাদনা

তার রচিত বইসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • ফয়জুল বারী
  • তারজুমান আল সুন্নাহ[][]
  • আসমায়ে বদরীন
  • আল ইমাম আল মাহদি
  • খুলাসাহ জুবদাত আল মানাসিক
  • জাওয়াহির আল হিকাম
  • আল বদর আল সারি ইত্যাদি

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. রিজভী, সৈয়দ মেহবুব (১৯৮১)। History of Darul Uloom Deoband [দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস]। । এফ. কুরাইশি, মুরতাজ হুসাইন কর্তৃক অনূদিত। দেওবন্দ: ইদারায়ে এহতেমাম। পৃষ্ঠা ১০২–১০৩। ওসিএলসি 20222197 
  2. ٹاؤن, جامعہ علوم اسلامیہ بنوری। "مکاتیب حضرت مولانا بدرِ عالم میرٹھی رحمۃ اللہ علیہ بنام حضرت بنوری رحمۃ اللہ علیہ | جامعہ علوم اسلامیہ علامہ محمد یوسف بنوری ٹاؤن"www.banuri.edu.pk (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০২ 
  3. সাব্বির, ইউসুফ (৫ এপ্রিল ২০১৮)। "বদরে আলম মিরাটির সংক্ষিপ্ত জীবনী"ইসলামিক পোর্টাল ইউকে 
  4. মুহাম্মদ তৈয়ব, কারী (১৯৯৯)। ৫০ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বদেওবন্দ: মাকতাবা ফয়জুল কুরআন। পৃষ্ঠা ১৫৭–১৫৮। 
  5. Kamal, Mohd Arif (২০২০)। Ulema e Hind ki Bisween Sadi Nisf Awwal mein Khidmat e Hadith Tanquidi Mutala (PhD) (উর্দু ভাষায়)। India: Department of Sunni Theology, Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 171–173। 
  6. Adrawi, Asir (১৯৯৫)। Dabistan-i Deoband ki Ilmi Khidmaat (পিডিএফ) (উর্দু ভাষায়)। Deoband, UP, India: Darulmuaallifeen। পৃষ্ঠা 150–151। ওসিএলসি 47964786 

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • বুখারী, আকবর শাহ। মাওলানা বদরে আলম মিরাটির জীবন ও কর্ম (উর্দু ভাষায়)। পাকিস্তান: ইদারাতুল মাআরিফ। ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০২১ 
  • Ghani, Khwaja Abdul (১৯৭৯)। Allama Muhammad Anwar Shah Kashmiri: Un ke Mutasilin aur Talamzah ki Khidmat (পিডিএফ) (PhD) (উর্দু ভাষায়)। Jamshoro, Pakistan: University of Sindh। পৃষ্ঠা 132–152। ২০২২-১০-২৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৭ 
  • Khatoon, Aaisha (২০১৭)। Aazadi ke Baad Hindustan ki Khidmaat e Hadith (PhD) (urdu ভাষায়)। India: Department of Sunni Theology, Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 103–105। hdl:10603/364027। ২০২৩-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৪ 
  • Riyasathullah, Mohamed (২০১২)। Ahadees Kay Urdu Tarajim (PhD) (উর্দু ভাষায়)। India: Department of Arabic, University of Madras। পৃষ্ঠা 95–100। hdl:10603/295877। ২০২৩-১০-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৫