বড়দিনের ষড়যন্ত্র

১৯০৯ সালের প্রথম বড়দিন ষড়যন্ত্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অংশ যা বিপ্লবীদের দ্বারা শুরু হয়েছিল: বছর শেষের ছুটির সময়, বাংলার গভর্নর তার বাসভবনে ভাইসরয়,কমান্ডার-ইন-চীফ এবং সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজধানীস্থ (কলকাতা) কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ১০ম জাট রেজিমেন্ট নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতবাদকে গ্রহণ করে, বিপ্লবীরা নাচঘর ধ্বংস করার সিধান্ত নেয় ঔপনিবেশিক সরকারের ধ্বংস হবার মুহূর্ত থেকে সুবিধা নেবার চেষ্টা করে। তার পূর্বসুরী অটো (উইলিয়াম অস্কারোভিচ) সঙ্গে তাল মিলিয়ে, যিনি লোকমান্য তীলকের বন্ধু ছিলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯১০ সালে, এম.আর্সেনেভ, রাশিয়ান কনসাল জেনারেল, সেন্ট পিটার্সবার্গে লিখেছিলেন এই মর্মে মনে হয় "এই দেশকে জাগানো জনমনের একটি সাধারণ ব্যাকুলতা হয়ে দেখা দিয়েছে এবং যার ফলে, বিপ্লবীরা তাদের হাতে ক্ষমতা নিতে একটি সুযোগ নিতে পারে।"[১] রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে ,"পুলিশ কিছুই সন্দেহ করেনি এবং এটা বলা মুশকিল যে যদি বিপ্লবীরা তাদের একজন কমরেডের দ্বারা,যে আসন্ন অভ্যুত্থান সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল,বিশ্বাসঘাতকতার শিকার না হতো তাহলে ফলাফল কি হত।"।[২]

দ্বিতীয় বড়দিনের চক্রান্ত ছিল জার্মান অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে্র সময় ব্রিটিশ ভারতের বাংলার বিপ্লব সূচনা করা। ১৯১৫ সালের বড়দিনের জন্য নির্ধারিত,পরিকল্পনাটি বাঙালি বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখার্জী নেতৃত্বে যুগান্তর দলের অধীনে ভাবা হয়েছিল, যা গদর পার্টির নির্দেশনায় বার্মা ও শ্যামদেশ রাজ্যে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে যুগপত বিদ্রোহ ও দক্ষিণ ভারতীয় শহর মাদ্রাজে ও ব্রিটিশ পেনাল কলোনি আন্দমান দীপপুঞ্জে জার্মানির আক্রমণের সাথে সমন্বিত করা। ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল ফোর্ট উইলিয়াম দখল করা, বাংলাকে বিছিন্ন করা ও রাজধানী কলকাতাকে দখল করা, যা সেই সময় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মুল কেন্দ্র ছিল। বড়দিনের চক্রান্ত ছিল যুদ্ধের সময় ভারত-ব্যাপী বিদ্রোহের একটি অংশ যা ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদী,জার্মানদের দ্বারা বার্লিনে প্রতিষ্ঠিত "ভারতের স্বাধীনতা কমিটি", উত্তর আমেরিকার গদর পার্টি, এবং জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যকার সমন্বিত প্রচেষ্টা।[৩] এই ষড়যন্ত্র ব্রিটিশরা, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জার্মান ও ভারতীয় ডাবল এজেন্টদের সহয়তায় বার্থ করে দিয়েছিল।

পটভূমি সম্পাদনা

১৯ শতকে ভারতীয় মধ্যবর্তী শ্রেণীর অগ্রসর, আঞ্চলিক শক্তিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পতনের ফলে,"ভারতীয়" পরিচিতির ব্যাপক প্রসার ঘটে।[৪] এর ফলে ১৯শতকের শেষ দশকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ব্যাপক জোয়ার ঘটে।[৫] এর গতি ১৮৮৫ সালে এ.ও. হিউম দ্বারা "ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস" এর প্রতিষ্ঠার ফলে ব্যাপকতা লাভ করে। কংগ্রেস রাজনৈতিক উদারীকরণ,বেশি স্বায়ত্তশাসন ও সামাজিক সংস্কারের দাবীর এক বিশাল মঞ্চে পরিণত হয়।[৬] কিন্তু, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রথমে বাংলায় এবং পরে পাঞ্জাবে ব্যাপক হিংসা এবং উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পরে।উল্লেখযো গ্য,একই রকম আন্দোলন মহারাষ্ট্র,মাদ্রাজ ও দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য অংশে ছরিয়ে পরে।[৬] রাজনৈতিক সন্ত্রাস বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলায় একটি সংগঠিত আকারে শুরু হয়। ১৯০২ সাল নাগাদ, কলকাতায় অনুশীলন সমিতির,যা কলকাতার ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, অধীনে তিনটি সংগঠন কাজ করছিল। এর মধ্যে ছিল মিত্রের নিজের দল, সরলা দেবীর নেতৃত্বে আরেকটি দল, অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে আরেকটি তৃতীয় দল- যিনি জঙ্গি জাতীয়তাবাদের শক্তিশালী প্রবক্তাদের মধ্যে একজন।[৭] ১৯০৫ নাগাদ, অরবিন্দ ঘোষ ও তার ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষের কাজের ফলে অনুশীলন সমিতি সারা বাংলা ব্যাপী ছরিয়ে পরে। ১৯০৫ সালের বিতর্কিত বঙ্গভঙ্গ একটি ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব রেখে যায় : এটি বাংলায় ভদ্রলোকদের সমাজে কঠিন জাতীয়তাবাদী অনুভূতি শুরু করে, বাংলার স্থানীয় শিক্ষিত রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং বীতরাগ তরুণদের মাঝে অনুশীলন সমিতির সমর্থনের ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। অনুশীলন সমিতির ঢাকা শাখার নেতৃত্বে ছিলেন পুলিন বিহারী দাশ যিনি পূর্ব বাংলা ও আসামে এর ব্যাপক প্রসার ঘটান।[৮] অরবিন্দ ঘোষবিপিনচন্দ্র পাল, একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, ১৯০৭ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা যুগান্তর(পরিবর্তন), এবং এর ইংরেজি সহযোগী বন্দে মাতরম্‌ শুর করেন। প্রাথমিক অংশগ্রহণকারীরা যারা পরবর্তিত উল্লেখযোগ্য নেতা হিসেবে আবির্ভূত হনঃ রাসবিহারী বসু,যতীন্দ্রনাথ মুখার্জী,যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়

অনুশীলন সমিতি,উল্লেখযোগ্যভাবে প্রথম দিক থেকে, বিদেশী আন্দোলন এবং বিদেশে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত সংযোগকারী হিসেবে রয়েছিল। ১৯০৭ সালে,বারীন্দ্রকুমার ঘোষ তার এক সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিস পাঠিয়েছিলে নিকোলাস সাফরান্সকির,যিনি পারিসে নির্বাসিত একজন রাশিয়ান বিপ্লবি,কাছ থেকে বোমা তৈরি শিখতে। প্যারিসে তখন উপস্থিত ছিলেম মাদাম কামা যিনি "প্যারিস ইন্ডিয়ান সোসাইটি" ও লন্ডনের "ইন্ডিয়া হাউস" এর সদস্যের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। ভি ডি সাভারকরের মাধ্যমে বোমা তৈরির ম্যানুয়ালটি পরে বিপুল সংখ্যক মুদ্রণের জন্য ভারত হাউজের প্রেসে চলে যায়। এই সময়ের মধ্যে, ডিসেম্বর ১৯০৭ সালে বাংলার বিপ্লবীরা বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার বহনকারি ট্রেনটি লাইনচ্যুত করে। অনুশীলন ,এই সময়ে, বিভিন্ন রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা ও তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্য ডাকাতিতে জরিয়ে পরে।[৯] তবে,এই সব ছিল অনুশীলনের জন্য প্রশংসাসূচক। ১৯০৮ সালে, দুই তরুণ সদস্যকে, ক্ষুদিরাম বসুপ্রফুল্ল চাকীমুজাফফরপুরে পাঠানো হয় সেখানকার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডি.এইচ. কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে। এই দুইজন একটি জুড়িগাড়িকে ভুলবশত কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে বোমা নিক্ষেপ করে,তাতে থাকা দুই ইংরেজ মহিলাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পরে ক্ষুদিরাম বসু পালানোর সময় ধরা পরে, অন্যদিকে চাকী আত্নহত্যা করে। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য,তখনকার সমিতির একজন সদস্য, নন্দলাল ব্যানার্জিকে, পুলিশ অফিসার যিনি ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করেছিলেন, গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ তদন্তের ফলে কলকাতার উপকণ্ঠ মানিকতলায় সংগঠনের আস্তানার হদিস পায় এবং একগাদা গ্রেফতারের ফলে, বিখ্যাত আলিপুর বোমা মামলা শুরু হয়।কিছু নেতৃত্বের ফাঁসি বা জেল হয়, অন্যান্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। অরবিন্দ ঘোষ জেল খাটার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তার ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

যতীন্দ্রনাথ মুখার্জি আলিপুর মামলার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের হাত থেকে পলাতে সক্ষম হন, এবং এই গোপন দিলের নেতৃত্ব নিজের হাতে নেন, যা পরবর্তীতে যুগান্তর দল নামে পরিচিত হয়। তিনি কলকাতায় এর কেন্দ্রীয় সগঠন ও এর বাংলা, বিহার, ওড়িশা এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটে থাকা শাখার মধ্যে পুনারায় সংযোগ স্থাপন করেন এবং আন্তগোপনকারী সদস্যদের জন্য সুন্দরবনে গোপন আস্থানা খুলেন।[১০] সমিতি অমরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, নরেন ভট্টাচার্য ও অন্যান্য তরুন নেতাদের সয়হতায় মুখার্জির প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে ঘুরে দারায়।তারক নাথ দাস সহ এর কিছু কনিষ্ঠ সদস্যরা বিদেশে সুযোগ প্রস্তুত করতে ভারত ত্যাগ করে।পরবর্তী দুই বছর ধরে, সংগঠনটি আপাতদৃষ্টিতে দুটি বিচ্ছিন্ন সংগঠন "শ্রমজীবী সমবায়" ও "হ্যারি এন্ড সন্স" এর নামের আড়ালে কাজ করতে থাকে।[১১] ১৯০৬ সাল থেকে, যতীন্দ্রনাথ মুখার্জি ১০ম জাট রেজিমেন্টের, যারা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম এ অবস্থান করছিল, সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চেষ্টা চালান। নরেন্দ্রনাথ এই সময়ের মধ্যে তহবিল সংগ্রহের ডাকাতি চালিয়ে যান। এই সময়ের মধ্যে, সংগঠনটি দ্বিতীয় বারের মত সমস্যার মুখমুখি হয় যখন বীরেন দত্ত গুপ্ত নামে যতীন মুখোপাধ্যায়ের একজন সহযোগী শামসুল আলম নামে একজন পুলিশ অফিসারকে, যিনি তাদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র মামালা তৈরি করছিলেন, হত্যা করে।এই হত্যার বিপরীতে গ্রেপ্তারের পরিনাম হল বিখ্যাত হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলা।

যুদ্ধপূর্ব ঘটনাবলী সম্পাদনা

হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে বন্দী থাকার সময়, কট্টর জাতীয়তাবাদীদের, যারা বারীন ঘোষের পূর্বে প্রদত্ত একটি ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত, নিয়ে দলের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র দল গঠিত হয়। এই দলটি অদূর ভবিষ্যতে অ্যাংলো-জার্মান যুদ্ধের সম্ভাবনার বুঝতে পেরেছিলো এবং এই সময়ের মধ্যে বিপ্লবীরা জার্মানদের সহায়তায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করতে চেষ্টা করেছিল।[১২] এই মামলার ফলে দলটি তাদের প্রয়োজনীয় দিকনেতৃত্বের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে এবং প্রথম দিকের বিপ্লবীদের প্রচেষ্টা, যা ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনকে নিছক ভীত সন্ত্রস্ত করা, থেকে দূরে সরে যায়। এই মামলা থেকে উদ্ভত ক্ষুদ্র দলটির গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও আকাঙ্খা ছিল, এই ক্ষুদ্র দলটির উপর ভিত্তি করে বাংলা ও ভারতের অন্যান্য অংশের সর্বত্র একটি সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। হাওড়া-শিবপুর মামলা চূড়ান্তভাবে প্রমাণের অভাবের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি ১৯১১ সালে মুক্তিপেয়ে, যতীন মুখোপাধ্যায় সব স্পষ্টত সহিংস কর্মকাণ্ড স্থগিত করেন। সরকারি চাকরিতে থেকে বরখাস্ত হয়ে, যতীন একটি ব্যবসা, বাংলায় রেল নেটওয়ার্ক জন্য ঠিকাদারী কাজ, শুরু করেন, যা তাকে বাংলার গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য,যা তিনি পরিকল্পনা করছিলেন, উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ১৯০৬ সালে,অনুশীলন সমিতির প্রথম দিকের সদস্য যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জী (নিরালম্ব স্বামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন) একটি সন্যাসী ছদ্মবেশে বাংলা ত্যাগ করে ইউনাইটেড প্রভিন্স হয়ে পাঞ্জাবে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। পাঞ্জাবে, নিরালম্ব সরদার অজিত সিং ও ভাই কিশেন সিং (ভগৎ সিং এর বাবা) সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।কিশেন সিং এর মাধ্যমে বাংলার বিপ্লবীরা লালা হর দয়ালের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন যিনি ১৯০৮ সালে ভারত সফর করছিলেন।[১৩] হর দয়াল নিজে ভি ডি সাভারকর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত "ইন্ডিয়া হাউস" এর সাথে যুক্ত ছিলেন; দয়াল গর্বিত ছিলেে যে ১৯১০ সাল নাগাদ, তিনি রাসবিহারী বসুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেতে পেরেছিলেন।[১৪] বোস যুগান্তরের একজন সদস্য ছিলেন যিনি দেরাদুনে ফরেস্ট ইনস্টিটিউটে কাজ করতেন, যিনি অক্টোবর ১৯১০ সাল থেকে, সম্ভবত যতীন মুখপধায় থেকে স্বাধীন ভাবে, ইউপি ও পাঞ্জাব প্রদেশে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।[১৫] ১৯১০ সালে মদন লাল ধিংড়ার হাতে, যিনি লন্ডন গ্রুপের একজন সদস্য ছিলেন, স্যার ডব্লিইউ এইচ কার্জন অয়েলির হত্যার ফলে " ইন্ডিয়া হাউস" বন্ধ হয়ে যায়। ইন্ডিয়া হাউসের পলায়নরত সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বীরেন চট্টোপাধ্যায়, যিনি জার্মানিতে পালিয়ে যান। প্যারিস ইন্ডিয়া সোসাইটিতে কিছুদিন কাজ করার পর হর দয়াল সান ফ্রান্সিস্কোতে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে, ভারতীয় ছাত্র ও শ্রমিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ জায়গা পেতে থাকে।তারকনাথ দাস যিনি, ১৯০৭  সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জন্য বাংলা ত্যাগ করেছিলেন, বিশিষ্ট ভারতীয় নেতাদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন একজন ছিলেন এবং শ্রী অরবিন্দ ও যতীন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতেন। ক্যালিফোর্নিয়াতে, হর দয়াল আগমনের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী  এবং পশ্চিম উপকূলের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনকারিদের  মধ্যে একটি সেতুবন্ধন রচিত হয়। তারানাথ দাস দ্বারা স্বাগত, হর দয়াল ভারত থেকে আগত প্রধানত অভিবাসী শ্রমিক কর্মীদের মাঝে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান সংগঠক হয়ে উঠেন, এবং গদর আন্দোলন গড়ে তুলেন।

এর মধ্যে যতীন ,১৯১২ সালে,নরেন ভট্টাচার্যের সহয়তায় কলকাতা সফররত জার্মানির যুবরাজের সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন এবং আশ্বস্ত হন যে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হবে।[১৬] একই বছরের অক্টোবরে, রাসবিহারী লাহোর পরিদর্শন করেন হর দয়াল গ্রুপের পক্ষ থেকে এবং বিপ্লবী সহিংসতার একটি প্রচারণা শুরু করতে যার আরম্ভটা হয় ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর হত্যা চেষ্টা দ্বারা। রাসবিহারী সহযোগী বসন্ত বিশ্বাস - অমরেন্দ্র চ্যাটার্জী দ্বারা প্রেরিত,যতীন মুখোপাধ্যায়ের অনুসারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। পবিত্র হিন্দু শহর বৃন্দাবনে তীর্থ যাত্রার সময় নিরালম্ব স্বামী যতীন মুখোপাধ্যায়কে উত্তর ভারতের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও অবহিত করেন। ১৯১৩ সালে বাংলায় ফিরে এসে,যতীন দামোদরের প্রায় বন্যা পীড়িত অঞ্চলে একটি বড় মাপে ত্রাণ আয়োজন শুরু করে। ১৯১২ সালের হার্ডিঞ্জ হত্যা চেষ্টার পর রাসবিহারী বসু বারাণসীতে আন্তগোপন করেন , কিন্তু ত্রান বিতরণ উপলক্ষে যতীণের সাথে যোগদান করেন। যতীন মুখোপাধ্যায় মানুষের সত্যিকারের নেতা স্বীকার করে, ১৯১৩ সালের শেষ নাগাদ বসু অনেকবার তার সাথে সাখাত করেন, ১৮৫৭ সালে আন্দোলনের ন্যায় সারা ভারত ব্যাপী আন্দোলনের সম্ভাবনা যাচাই করতে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

ফ্রান্স এর পক্ষে ব্রিটেনের যুদ্ধে প্রবেশের জবাবে, জার্মানি সক্রিয়ভাবে ব্রিটিশদের প্রচেষ্টা দুর্বল করার জন্য তার ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যকে দুর্বল কররা চেষ্টা শুরু করে।[১৭] জার্মানি যুদ্ধের আগে ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেচিল কারণ ভারত ব্রিটেনের জন্য একটি সম্ভাব্য দুর্বলতা হিসেবে দেখা গিয়েছিল। যুদ্ধের পূর্বেকার অবিলম্ব সময়ে, ভারতীয় জাতীয়তাবাদী জার্মানিকে ঘাঁটি এবং একটি সম্ভাব্য সমর্থন হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৯১৩ এর প্রথম দিকে, জার্মান এবং ব্রিটিশ দের মধ্যে আগত যুদ্ধের লক্ষন এবং সম্ভাব্য জার্মান সাহায্যের বিষয়ে বিপ্লবী প্রকাশনা প্রকাশ পেতে থাকে।[১৮] যুদ্ধের প্রথম মাসের দিকে, জার্মান সংবাদপত্রে ব্রিটিশদের হাতে ভারতীয়দের দুঃখ, সামাজিক সমস্যা ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ পেতে থাকে। ভারতীয়দের অবস্থা জার্মানদের যুদ্ধ কৌশলে স্থান করে নেয়। যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর থিওবল্ড ভন বেথম্যান-হলয়েগ ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সাহায্য করারা সিদ্ধান্ত নেন।[১৯] বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ভন ওপেনহেইম দ্বারা নতুন প্রতিষ্ঠিত " ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ফর দ্যা ইষ্ট" এর মাধ্যমে , জার্মানি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনার পরিকল্পনা করে।সি আর পিল্লাই দ্বারা বার্লিন কমিটি গঠনে ওপেনহেইম সাহায্য করেন। এর সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া হাউসের বীরেন চট্টোপাধ্যায়. নৈরাজ্যবাদী হওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হবার পর হর দয়াল সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। তিনি রাম চন্দ্র ভরদ্বাজের হাতে গদর পার্টির নেতৃত্ব ছেড়ে যান, এবং সুইজারল্যান্ড থেকে তিনি বার্লিন কমিটিকে সমর্থন করতে রাজি হন।ভারতীয় প্রতিনিধি এবং সান ফ্রান্সিসকোতে জার্মান কনসুলেটের কর্মীদের মাধ্যমে গদর পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বার্লিন কমিটি এবং উত্তর আমএরিকার মধ্যে বিবেচিত পরিকল্পনাকে তারা আর্থিক, অস্ত্র ও সামরিক উপদেষ্টার মাধ্যমে সাহায্য করতে রাজি হন যাতে তারা গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও প্রাচ্য থেকে গোপনে অস্ত্র ও সৈন্য ভারতে পাঠিয়ে১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এর  ন্যায় একটি বিদ্রোহ শুরু করতে পারে।[২০][২১][২২]

যুদ্ধ লেগে যাবার পর,যুগান্তর একটি আহূত মিটিংএ যতীন মুখার্জিকে সর্বাধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করে।কলকাতাস্থ জার্মান কনস্যুলেট এই সময়ে যতীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় যিনি, স্যার আশুতোষ দ্বারা উত্সাহিত হয়ে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্টার ডি. থাইবল্টের সাথে সাক্ষাৎ করেন। কনসাল জেনারেল বার্লিনে রিপোর্ট করেন যে, বাংলার বিপ্লবী সেল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং যুদ্ধে ব্রিটিশদের প্রচেষ্টা নষ্ট করার জন্য তাদের সক্রিয় সমর্থনের জন্য বিবেচনা করা যায়। আগস্টে যুগান্তর তহবিল ও অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সশস্ত্র ডাকাতি শুরু করে। ২৬শে আগস্ট, রোড্ডা & কোং, কলকাতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র দোকান, লুঠ করা হয়। লুঠকারিরা ১০ বাক্স অস্ত্র ও গোলাবারুদ, যার মধ্যে ৫০ টি মাউজার পিস্তল এবং ৪৬,০০০ রাউন্ড গুলি, নিয়ে পালিয়ে যায়।

গদর সম্পাদনা

যতীন এর চাচাত ভাই ধান গোপাল মুখার্জী, তখন ইউ সি বার্কলের ছাত্র, ইতিমধ্যে কিছু সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাটিয়ে ফেলেছেন। ১৯১৪ সালে যতীন,গদর পার্টির সাথে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে, সতেন্দ্র সেন নামে একজন অনুসারীকে সান ফ্রান্সিসকোতে পাঠিয়েছিলেন। বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের ও ওয়াশিংটনে জার্মান সামরিক অ্যাটাশে ফ্রাঞ্জ ভন পাপেনের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পনা, একটি বিশাল অস্ত্রচালান ক্রয় করে সমুদ্রপথে ভারত পাঠানো হবে, বাস্তবায়নের তথ্য নিয়ে সেন নভেম্বর ১৯১৪ সালে ভারতে ফিরে আসে।[২] এরই মধ্যে তিনি ক্রুপ(Krupp) এজেন্টদের মাধ্যমে $২০০,০০০ মূল্যের ছোট অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করে তা সান ডিয়াগো,জাভা, এবং বার্মার মাধ্যমে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অস্ত্রচালানে অন্তর্ভুক্ত ছিল স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময়কার ৪,০৪০ স্প্রিংফিল্ড রাইফেল, ২,৪০০ স্প্রিংফিল্ড কার্বাইন, ৪১০ হট্চকিস রিপিটিং রাইফেল, ৪,০০০,০০০ কার্তুজ, 500 কোল্ট রিভলবারের সাথে ১০০,০০০ কার্তুজে্‌ এবং গোলাবারুদ সহ ২৫০ মাউজার পিস্তল।[২৩] সেন যতীনের সাথে গদর পার্টির লিডার কার্তার সিং সারাভার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি ভারতে ফিরে এসেছেন ভারতীয় ভূগর্ভস্থ বিপ্লবীদের সঙ্গে প্রস্তাবিত বিদ্রোহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বয় সাধন করার জন্য. গদর পার্টির লোকেরা, যারা অধিকাংশ প্রবাসী পাঞ্জাবি ছিলেন,ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিপাহীদের বিদ্রহে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করার জন্য কলকাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে থাকেন এবং উত্তর ভারতের পাঞ্জাবের সেনা ছাউনি গুলতে সশস্ত্র বিদ্রহের জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন।সর্বাধিনায়ক যতীন্দ্রনাথ মুখার্জির দায়িত্ব ছিল ভারতের পূর্বে বাংলায় ভারতীয় সেনাদের বিপ্লবে অনুপ্রাণিত করে সমন্বয় করে। উত্তর ভারতের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করতেন রাশ বিহারি যুক্ত প্রদেশ থেকে, এবং তাকে সহয়তা করতেন বিষ্ণু গণেশ পিংলে, আরেকজন গদর দলের সদস্য যিনি ১৯১৪ সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন, ও বেনারস থেকে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল (ঢাকা অনুশীলন সমিতির সদস্য)।[২৪] বসু সমন্বয় সাধন করতেন যতীনের সাথে, যিনি বাংলার বিদ্রহে নিজে নেতৃত্ব দেবার কথা ছিল।[২৫] বিদ্রোহ ১৯১৫ এর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকের জন্য নির্ধারিত ছিল, যা শুরু হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব শাখা থেকে এবং পরবর্তীতে বাংলা শাখায়। বাংলার শাখা পরের দিন হাওড়া স্টেশনে পাঞ্জাব মেলের প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করারা কথা ছিল যা পাঞ্জাবে বিদ্রোহ হলে বাতিল হবার কথা ছিল, এবং অবিলম্বে বিদ্রোহ করার কথা ছিল। সিঙ্গাপুর ও রেঙ্গুনে অবস্থিত ইউনিট গুলো রাশ বিহারির পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিন্তু, বিদ্রোহের জন্য রাসবিহারীর পরিকল্পনা ভেস্তে যায় যখন,১৯১৫এর ফেব্রুয়ারিতে, পাপেনের অস্ত্র পাঠানোর আগে, পাঞ্জাবে ফুটন্ত ঘটনাবলীতে, গাদার পার্টি অকালে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯১৫ এর জন্য নির্ধারিত, ঘটনার তারিখ বিবরন ও স্থান শেষ মুহূর্তে নিযুক্ত বিপ্লবী কির্পাল সিং, যে ছিল পুলিশের চর, এর মাধ্যমে পাঞ্জাব পুলিশের সিআইডির কাছে চলে যায়। অনুপ্রবেশের অনুবাধন করে, বেপরোয়া রাসবিহারী বিপ্লবের দিন ১৯ তারিকে এগিয়ে আনে, কিন্তু অসচেতনতার ফলে কির্পাল সিং ঠিক সময়মত পুলিশকে জানাতে সক্ষম হয়।[২৬] পাঞ্জাবে বিদ্রোহ ১৯ তারিকে দমন করা হয়, এবং পরবর্তীতে সারা উত্তাওর ভারত জুড়ে দ্যা দমন করা হয়। সিঙ্গাপুর গ্যারিসন প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করতে সক্ষম হয় এবং ছয় দিন পর দমন হবার পূর্ব পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারে। পাঞ্জাব ও মধ্য প্রদেশে গাদার দলের সদস্যের ধরে ধরে গনগ্রেফতার করা হয়। ষড়যন্ত্রের প্রধা নেতাদের, যাদের মধ্যে ছিল কার্তার সিং, পিংলে, পণ্ডিত কাশি রাম, ভগবান সিং জ্ঞানি ও অন্যান্য দের গ্রেফতার করা হয়। রাসবিহারী বসু লাহোর থেকে পালাতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ এর মে'তে জাপানে পালিয়ে যান। অন্যান্য নেতারা, যাদের মধ্যে ছিল জ্ঞানী প্রিতম সিং ধিলন, স্বামী সত্যেন্দ্র পুরী এবং অন্যান্যরা থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান।[২৭] যতীন মুখোপাধ্যায় এবং বাংলার বাদ বাকি বিদ্রোহীরা আত্মগোপনে চলে যান।

১৯১৫ এর শরত কাল সম্পাদনা

ব্যর্থ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের পরমুহুর্তে, ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলন ধ্বংস করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেয়া হয়। ক্রমবর্ধমান পুলিশ প্রতিরোধের মুখমুখি হয়ে, যুগান্তরের সদস্যরা সিধান্ত নেয় যে যতীণকে কুনো নিরাপদ স্থানে আন্তগোপন করেতে হবে। উড়িষ্যা উপকূলের বালেশ্বর একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল কারণ তা জার্মানি প্রদত্ত অস্ত্র অবতরনের নির্দিষ্ট স্থানের কাছাকাছি ছিল যেখানে। যতীন মুখোপাধ্যায়ের নিকট তথ্য আদান প্রদান সহজতর করার জন্য, "ইউনিভার্সাল এম্পোরিয়াম" নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলা হয়,"হ্যারি এন্ড সন্স" কলকাতার একটি শাখা হিসাবে, যাতে করে বিদেশে অবস্থানরত বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়। যতীন বালেশ্বর থেকে ৩০ মাইল দূরে ময়ুরভঞ্জ রাজ্যের কাপ্তিপদ গ্রামে নিজের গোপন আস্তানা সরিয়ে নেন। এই সময়ের মধ্যে, পাপেন,যুক্তরাস্ট্রে বার্লিন কমিটির স্বঘোষিত দূত চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তীর সহয়তায়,ব্রিটিশ এজেন্টদের ধোঁকা দেবার জন্য মেক্সিক্যান গৃহযুদ্ধের যুদ্ধরত বিভিন্ন পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহের সফল আড়ালে, স্কুনার "অ্যানি লারসেন" করে অস্ত্রের প্রথম চালানের আয়োজন করেন। একটি বিশদ প্রতারণার আড়ালে, স্কুনারটি মার্চ ১৯১৫ সালে সান ডিয়াগো ছেড়ে যায়, মেক্সিকোর উপকূলে সক্করো দ্বীপের নিকট তেল বাহী জাহাজ এসএস ম্যাভেরিকের সাথে মিলিত হতে। ম্যাভেরিক ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়াতে যাত্রা করছিল। অসফল সমন্বয়ের কারণে জাহাজ দুইটি সক্করো দ্বীপের নিকট মিলিত হতে পারে নি।ম্যাভেরিকের জন্য এক মাস অপেক্ষা করারা পর, অ্যানি লারসেন সান ডিয়াগোতে ফিরে আসে কিন্তু পুনঃরায় সক্করো দ্বীপে ফিরে যাওয়ার আদেশ পায়. ম্যাভেরিক, মেরামত কাজের জন্য বন্দরে বসে থাকার দরুন, এক মাস পর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছায়। স্কুনারকে না খুঁজে পেয়ে সে প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রা শুরে করে এই আসায় যে হাওয়াই দ্বীপের নিকট তাকে ধরতে পারবে। উদ্ধত বাতাসের কারণে অ্যানি লারসেনের দ্বিতীয় যাত্রাও ব্যর্থ হয়। কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর হোকিউয়াম, ওয়াশিংটনে ফিরে আসলে অ্যানি লারসেনের মালামাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টম, যারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছিল, দ্বারা জন্দ হয়।[২৮][২৯] ম্যাভেরিক ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রা শুরু করে, কিন্তু ক্যাপ্টেনের কাছে জার্মানদের কাছে অস্ত্র না থাকার তথ্য পৌঁছে দেবার কুনো ব্যবস্থা ছিল না, শুধুমাত্র বিপ্লবী সাহিত্যের একগাদা কাগজ ও কিছু সংখ্যক ভারতীয় বিপ্লবী ছাড়া।[৩০] এপ্রিল ১৯১৫ সালে, অ্যানি লারসেনের ব্যর্থতার খবর না জেনে, পাপেন, অ্যামেরিকাস্থ ক্রুপ(Krupp) এজেন্ট হান্স টাউসচারের মাধ্যমে, অস্ত্রের দ্বিতীয় চালানের ব্যবস্থা করেছিলেন যার মধ্যে ছিল ৭,৩০০ টি স্প্রিংফিল্ড রাইফেল, ১,৯৩০ টি পিস্তল, ১০ টি গ্যাঁটলিন মেশিনগান এবং প্রায় ৩,০০০,০০০ কার্তুজ।[৩১] অস্ত্রগুলো মধ্য জুনে হল্যান্ড অ্যামেরিকান বাষ্পচালিত জাহাজ এসএস ডিজেম্বার দ্বারা ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়ার সুরাবায়াতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।

বড়দিনের চক্রান্ত সম্পাদনা

থাইল্যান্ড ও বার্মায় জার্মান প্রতিনিধি ছিলেন এমিল ও থিওডর হ্যাল্ফরিচ-যারা জার্মান অর্থমন্ত্রী কার্ল হ্যাল্ফরিচের ভাই ছিলেন। জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী নামক একজন যুগান্তরের সদস্যের মাধ্যমে মার্চ ১৯১৫ সালে হ্যাল্ফরিচ ভাইয়েরা যতীনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন।[৩২] এপ্রিলে যতীন জিতেন্দ্রনাথ ও নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে, যিনি ততদিনে তার প্রধান সহচারী হয়ে উঠছিলেন, বাটাভিয়াতে পাঠান। জার্মান কনসালের মাধ্যমে নরেন্দ্রনাথ হ্যাল্ফরিচ ভাইদের সাথে বাটাভিয়াতে দেখা করেছিলেন এবং অস্ত্রসহ ম্যাভেরিকের প্রত্যাশিত আগমনের সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়েছিল। এই দুইজনের উপর দায়িত্ব ছিল ম্যাভেরিকের আগমনের পর তাকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নিয়ে যাওয়া। এপ্রিল ১৯১৫ সালে বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নির্দেশনা এসেছিল জার্মানদের সাথে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য নিয়ে চুক্তি করা নিয়ে। যদিও অস্ত্রগুলো গদর দলের জন্য আনা হচ্ছিলো, বার্লিন কমিটি পরিকল্পনার পরিবর্তন করেন, অস্ত্রগুলো ভারতের পূর্ব উপকূলে, চট্টগ্রামের উপকূলে হাতিয়ায় সুন্দরবনের রাইমঙ্গলে এবং উড়িষ্যা উপকূলের বালেশ্বরে খালাশ করার সিধান্ত নিয়েছিলেন প্রথম দিকের পরিকল্পনা অনুযায়ী করাচির বদলে।[৩৩] বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে অস্ত্রগুলো যতীনের দলের সংগ্রহ করার কথা ছিল। এর জন্য অশ্বিনীকুমারকে রাইমঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল ম্যাভিরিককে স্বাগত জানার জন্য।[৩৪] যুগান্তর হ্যাল্ফরিচ ভাইদের কাছ থেকে কলকাতার হ্যারি এন্ড সন্সের মাধ্যমে তহবিলও (ধারণা করা হয় ৩৩,০০০ টাকা, ১৯১৫ সালের জুন ও আগস্ট মাসের মধ্যে) পেয়েছিলেন।[৩৫]

বাংলা সম্পাদনা

১৯১৫ সালের বড়দিনের দিনকে বিপ্লবের তারিখ বলে স্থির করা হয়েছিল।[৩৬] যতীন হিসেব করেছিলেন যে তিনি কলকাতাস্থ ১৪ রাজপুত রেজিমেন্টের সাথে জয় লাভ করবেন এবং বালেশ্বরে মাদ্রাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাংলার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন।

বার্মা সম্পাদনা

কলকাতা দখল করতে বাংলার দলকে যথেষ্ট সময় দিতে ও বিদ্রোহ দমনেও উদ্দেশ্য সৈন্য সমাগমনে বাধা দিতে, নিরপেক্ষ থাইল্যান্ডে থেকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে বার্মায় বিদ্রোহের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[৩৭][৩৮] ১৯১৪ সালের অক্টোবরের প্রথম দিকে সিয়াম-বার্মা প্ল্যান গদর দলের দ্বারা শুরু হয়েছিল এবং জানুয়ারি ১৯১৫ নাগাদ শেষ হয়েছিল। গদর দলের চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাখার সদস্যরা, যাদের মধ্যে আত্মা রাম, ঠ্যাকার সিং, সাংহাই থেকে বান্তা সিং এবং সান ফ্রান্সসিস্ক থেকে সান্তখ ও ভগবান সিং ছিল, থাইল্যান্ডে অবস্থিত বার্মা মিলিটারি পুলিশে, যাদের বেশির ভাগ সদস্য পাঞ্জাবি শিখমুসলমান ছিল, অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল। ১৯১৫ সালের প্রথম দিকে আন্তা রাম বাংলা ও পাঞ্জাব ভ্রমণ করেন এবং যুগান্তর সহ গোপন বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন।[৩৯][৪০] ভারতীয়দের প্রশিক্ষণ উদ্দেশ্য হেরম্বলালা ও শিকাগোস্থ জার্মান কনসাল জার্মান চর জর্জ পল বোহেম, হেনরি স্কাল্ট, এবং আলবার্ট ওহেডকে ম্যানিলা হয়ে সিয়ামে পাঠিয়েছিলেন। দুটি দলকে অভিযানে পাঠানোর দায়িত্ব নিয়ে সান্তখ সিং সাংহাই ফিরে আসেন, যার একটির ইউনান হয়ে ভারত সীমান্তে এবং আরেকটির আপার বার্মায় অনুপ্রবেশ করে সেখানে বিপ্লবীদের সাথে মিশে যাবার কথা ছিল।[৪১] ম্যানিলাতে জার্মানরা ম্যানিলা বন্দরে আশ্রিত একটি স্কুনারের সাহায্যে সাচসেনসুয়েভিয়া  নামক দুটি জার্মান জাহাজের অস্ত্রের চালান সিয়ামে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। তবে, মার্কিন কাস্টমস এই প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিল।এরমধ্যে, থাইল্যান্ডস্থ জার্মান কনসাল রেমির সাহায্যে, গদর দল তাদের চীনকানাডা থেকে আগত সদস্যদের জন্য থাই-বার্মা সীমান্তে প্রশিক্ষন শিবির স্থাপন করে। সাংহাইের জার্মান কনসাল জেনারেল,নিপিং, সাউটৌউস্থ একজন নরওয়েজীয় এজেন্টের মাধ্যমে অস্ত্র পাচারের আয়োজন করা ছাড়াও পিকিং দূতাবাসের গার্ডের তিনজন কর্মকর্তা প্রেরণ করেছিলেন প্রশিক্ষনের জন্য।[৪২]

আন্দামান সম্পাদনা

একই সময়ে বাংলায় যতীনের দলের আক্রমণের সময় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পেনাল কলোনিতে জার্মান আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটি করার কথা ছিল পূর্ব ভারত থেকে থেকে উত্থাপিত একটি জার্মান স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর যার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি করে তাদের দ্বারা একটি অভিযাত্রিক বাহিনী তৈরি করবে যারা ভারতীয় উপকূলকে হামলা করবে। এই পরিকল্পনাটি প্রস্তাব করেছিলন বাতাভিয়াস্থ জার্মান আবাদকারি ভিন্সসেন্ট ক্রাফট, যিনি ফ্রান্সে যুদ্ধে আহত হয়ে ছিলেন। ইন্ডিয়া কমিটির সাথে আলোচনা করার পর বৈদেশিক দফতর এই পরিকল্পনাটি অনুমোদন করেছিলেন, এবং ১৯১৫ সালের বড়দিনকে আক্রমণের দিন ঠিক করে সাবেক নৌ-কর্মকর্তা ভন মুলের অধিনায়কত্বে ১০০ দলের একটি জার্মান বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। নিপিং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অস্ত্র পাঠানোরও পরিকল্পনা করেছিলেন।তবে, ভিন্সসেন্ট ক্রাফট ছিল একজন ডাবল এজেন্ট যে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে জার্মান প্ল্যান ফাঁস করে দিয়েছিল। তার ভুয়া প্লানও ব্যাকেটের কাছে "অরেন" ফাঁস করে দেয় , কিন্তু পর পর ইন্দো-জার্মান পরিকল্পনার ব্যার্থতার দরুন, নিপিং ও বার্লিন কমিটির পরামর্শে এই আক্রমণের পরিকল্পনা ত্যাগ করা হয়েছিল।[৪৩]

চরম সীমা সম্পাদনা

কিছু সংখ্যক সুত্র হতে বড়দিনের ষড়যন্ত্র অবশেষে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ম্যাভেরিকের চালানের বিবরণ ও যুগান্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য "অরেন" ছন্দনামক একজন বাল্টিক-জার্মান ডাবল এজেন্ট দ্বারা বাটাভিয়াস্থ ব্রিটিশ কনসাল ব্যাকেটের নিকট ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ম্যাভেরিককে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের কাছে সতর্কতা পাঠানো হয়েছিল। বাতাভিয়াস্থ জার্মান আবাদকারি ভিন্সসেন্ট ক্রাফট ছিল আরেকটি তথ্য ফাঁস কারি সূত্র, যে ধরা পরার পর সাংহাই থেকে অস্ত্র চালানের তথ্য ব্রিটিশ চর দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ক্রাফটকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছে বাংলার উপকূলের মানচিত্র পাওয়া গিয়েছিল এবং তিনি অস্ত্র খালাসের সম্ভাব্য স্থানের তথ্য দিতে রাজী হয়েছিলেন।[৪৪] ব্রিটিশ কৃর্তপক্ষের নিকট তথ্য পৌছার পর,তারা পুলিশকে সচেতন করে দিয়েছিল, বিশেষ করে গঙ্গীয় বদ্বীপের অঞ্ছল সমূহের, এবং নোয়াখালী-চিটাগাং থেকে ওড়িশা পর্যন্ত সমুদ্র যোগাযোগকারী উপকূল বন্ধ করে দিয়েছিল। হ্যারী এন্ড সন্সে হানা ও অনুসন্ধান করার পর পুলিশ একটি সুত্র পায় যা তাদের কাপ্তিপদ গ্রামে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরীর সাথে যতীন অবস্থান করছিলেন এবং পুলিশ গোয়েন্দা দফতরের একটি ইউনিটকে সেখান পাঠানো হয়েছিল।

যতীন মুখার্জির মৃত্যু সম্পাদনা

যতীনকে অবহিত করা হয়েছিল এবং তাকে গোপনস্থান ত্যাগ করার অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু নিরেন ও যতিশকে সাথে নিয়ে যাবার কারণে তার পলানোর সময় কিছু ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল, ততোক্ষণে কলকাতা ও বালেশ্বর থেকে শীর্ষ ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী, ময়ূরভঞ্জ রাজ্যের চান্দিবাল থেকে সৈন্য বাহিনী সাহায্য সহ পৌঁছে গিয়েছিল। যতীন ও তার সাথীরা ময়ূরভঞ্জের জঙ্গল ও পাহাড় দিয়ে দুই দিন হাঁটার পর বালেশ্বরে রেলস্টেশন পৌঁছেছিলেন।

পুলিশ পলায়নরত পাঁচটি "দস্যুর" উপর পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যার ফলে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও তাদের ধরার চেষ্টা করেছিল।কিছু অনিয়মিত সংঘর্ষ ছাড়াও, জঙ্গল এবং মুষলধারে বৃষ্টিতে জলাভৃমির মধ্য দিয়ে চলার পর বিপ্লবীরা ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বালশ্বরের চাশাখন্দের একটি টিলার উপর লতাগুল্মের জঙ্গল মধ্যে একটি সহসাকৃত পরিখায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। চিত্তপ্রিয় ও তার সাথীরা, যখন তারা পিছনে সুরক্ষা দিচ্ছিল, যতীনকে তাদের ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছিল। তবে যতীন তাদের ত্যাগ করতে অস্বীকার করে।

সরকারি বাহিনী তাদের উপর এক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিল।মাউজার বন্দুকে সজ্জিত বিপ্লবী বাহিনী এবং আধুনিক রাইফেলে সজ্জিত বিশাল সংখ্যক পুলিশ ও সৈন্যবাহিনীর মধ্যে ৭৫ মিনিট ব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এটি সরকারেদিকে অলিপিবদ্ধ সংখ্যক হতাহতের মধ্যে শেষ হয়েছিল; বিপ্লবীদের দিক থেকে, চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী মারা যায়, যতীন এবং যতিশ গুরুতর আহত হয়, এবং পরে তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেল মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নিরেনকে বন্দী করা হয়। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে বালেশ্বর হাসপাতালে পুলিশের গুলিতে বাঘা যতীনকে হত্যা করা হয়।

সিয়াম বার্মা পরিকল্পনা সম্পাদনা

এই সময়ের মধ্যে থাই পুলিশের হাইকমান্ড, যারা মূলত ব্রিটিশ ছিল, বার্মা উপবিপ্লবের পরিকল্পনা আবিষ্কার করে ফেলেন, এবং ভারতীয় পুলিশের একজন ভারতীয় চর পরিকল্পনায় অনুপ্রবেশ করে অস্ট্রীয় উপরাষ্ট্রদূত দ্বারা সব বিবরণ প্রকাশ করে ফেলে। থাইল্যান্ড, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ ছিল, ব্রিটেন ও ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। ২১শে জুলাই, সদ্য আগত ব্রিটিশ মন্ত্রী হার্বার্ট ডেরিং থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ দেবায়ংশের কাছে ভারতীয় চর দ্বারা চিহ্নিত গদর দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করেন, পরিণামে আগস্টে নেতৃস্থানীয় গদর সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। গদর দলের ছয় সদস্য বার্মাতে শুধুমাত্র একটিবারের জন্য আক্রমণ করতে পেরেছিল, যাদের বন্দী করা হয়েছিল এবং পরে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।[৪৫]

পাদটিকা সম্পাদনা

  1. ^Mukherjee|2010|p=160})
  2. ^Majumdar|1975|p=281}) উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Majumdar" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  3. Hopkirk 2001, পৃ. 179
  4. Mitra 2006, পৃ. 63
  5. Desai 2005, পৃ. 30
  6. Yadav 1992, পৃ. 6
  7. Sen 2006, পৃ. 148
  8. Popplewell 1995, পৃ. 104
  9. Roy 1997, পৃ. 5
  10. M. N. Roy's Memoirs p3
  11. Roy 1997, পৃ. 6
  12. Roy 1997, পৃ. 7
  13. Roy 1997, পৃ. 8
  14. Desai 2005, পৃ. 320
  15. Popplewell 1995, পৃ. 167
  16. Terrorism in Bengal, Compiled and Edited by A.K. Samanta, Government of West Bengal, 1995, Vol.
  17. Hughes 2002, পৃ. 450
  18. Hughes 2002, পৃ. 452
  19. Hoover 1985, পৃ. 251
  20. Strachan 2001, পৃ. 798
  21. Hoover 1985, পৃ. 252
  22. Brown 1948, পৃ. 300
  23. Fraser 1977, পৃ. 261
  24. Gupta 1997, পৃ. 12
  25. Radhan 2002, পৃ. 247
  26. Strachan 2001, পৃ. 796
  27. Gupta 1997, পৃ. 3
  28. Hoover 1985, পৃ. 256
  29. Hopkirk 2002, পৃ. 183
  30. Fraser 1977, পৃ. 263
  31. Roy 1997, পৃ. 11
  32. Strachan 2001, পৃ. 800
  33. Portrait of a Bengali Revolutionary": A Rejoinder.
  34. Fraser 1977, পৃ. 264
  35. Hopkirk 2001, পৃ. 189
  36. Majumdar 1971, পৃ. 382
  37. Strachan 2001, পৃ. 802
  38. Deepak 1999, পৃ. 442
  39. Puri 1980, পৃ. 60
  40. Deepak 1999, পৃ. 443
  41. Fraser 1977, পৃ. 266
  42. Fraser 1977, পৃ. 265
  43. Hopkirk 2001, পৃ. 182
  44. [[#CITEREF|]]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • The Hindu Conspiracy, 1914-1917 
  • Germany and Indian Revolution, 1914-18 
  • Defying Death: Nationalist Revolutionism in India, 1897-1938. 
  • The Hindu Conspiracy in California, 1913-1918 
  • On Secret Service East of Constantinople, ২০০১ 
  • Militant Nationalism in India, ১৯৬৬ 
  • History of the Freedom Movement in India, ১৯৭১ 
  • History of the Freedom Movement in India, ১৯৭৫ .
  • Les racines intellectuelles du mouvement d'indépendance de l'Inde (1893-1918), ২০১০ 
  • Intelligence and Imperial Defence: British Intelligence and the Defence of the Indian Empire 1904-1924, ১৯৯৫ 
  • Revolutionary Organization: A Study of the Ghadar Movement 
  • The First World War, ২০০১