সুরাবায়া
সুরাবায়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী শহর ও সামুদ্রিক বন্দর। ভৌগোলিকভাবে এটি ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণভাগে জাভা দ্বীপের উত্তর-পূর্ব উপকূলে মাস নদীর মোহনাতে অবস্থিত। এটি জাকার্তার পরে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। সুরাবায়া মূল শহরে ৩ লক্ষের বেশি অধিবাসী এবং বৃহত্তর সুরাবায়া মহানগর এলাকাতে ১ কোটির বেশি লোক বাস করে।
সুরাবায়া সুরোবোয়ো | |
---|---|
শহর | |
![]() উপরের বা দিক থেকে দক্ষিণাবর্তীভাবে: সুরাবায়া চিডিয়াখানা-র সুরা এবং বায়া ভাস্কর্য, সুরামাডু সেতু, বীরদের স্মৃতিস্থম্ভ, তুন্জুঙান প্লাজা. | |
ডাকনাম: দ্য সিটি অব হিরোজ | |
নীতিবাক্য: স্পার্কলীং সুরাবায়া | |
![]() পূর্ব জাভাতে সুরাবায়ার অবস্থান | |
ইন্দোনেশিয়াতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৭°১৫′৫৫″ দক্ষিণ ১১২°৪৪′৩৩″ পূর্ব / ৭.২৬৫২৮° দক্ষিণ ১১২.৭৪২৫০° পূর্ব | |
দেশ | ইন্দোনেশিয়া |
প্রদেশ | পূর্ব জাভা |
Settled | ৩১শে মে, ১২৯৩ |
সরকার | |
• নগরপাল | ত্রি রিস্মাহারিনি (PDI-P) |
• উপ-নগরপাল | উইষনু সাকতি বুয়ানা |
আয়তন | |
• শহর | ৩৭৪.৭৮ বর্গকিমি (১৪৪.৭০ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১,৮০৫.০৮ বর্গকিমি (৬৯৬.৯৫ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৫ মিটার (১৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১২ [১]) | |
• শহর | ৩১,১৪,৭০০ |
• জনঘনত্ব | ৮,৩০০/বর্গকিমি (২২,০০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৫৬,২২,২৫৯ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ৩,১০০/বর্গকিমি (৮,১০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | WIB (ইউটিসি+৭) |
এলাকা কোড | +৬২ ৩১ |
যানবাহন নিবন্ধন | L |
ওয়েবসাইট | surabaya.go.id |
সুরাবায়া ১৪শ শতক থেকেই পূর্ব জাভা দ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এটি জাভা দ্বীপের নগরীগুলিকে সংযুক্তকারী মহাসড়ক ও রেলপথ ব্যবস্থার একটি প্রান্তসীমায় অবস্থিত। এখান থেকে রপ্তানিকৃত প্রধান দ্রব্য হল চিনি। এছাড়া তামাক, কফি, ভুট্টা, পশুর চামড়া ও তাপিওকাও রপ্তানি করা হয়। জাহাজনির্মাণ, যন্ত্রপাতি নির্মাণ, বস্ত্র, কাচ ও ধাতব সামগ্রী নির্মাণসহ খাদ্য ও খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম) প্রক্রিয়াজাতকরণ সুরাবায়ার প্রধান কিছু শিল্প। সুরাবায়ার বৃহৎ পোতাশ্রয়টি সমুদ্রবাঁধ দিয়ে সুরক্ষিত এবং এখানে অনেকগুলি ভাসমান জেটি, জাহাজঘাট ও গুদাম আছে। নিকটস্থ মাদুরা দ্বীপ দ্বারা সুরক্ষিত রোডস্টেড নামের একটি উন্মুক্ত পোতাশ্রয়ে জাহাজ ভিড়তে পারে। শহরে ইন্দোনেশিয়ার ২য় প্রাচীনতম আয়েরলাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৪), পেত্রা খ্রিস্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৫) এবং সুরাবায়া প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট (১৯৬০) নামের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটিটি অবস্থিত।
ওলন্দাজরা ১৮শ শতকে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুরাবায়া ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌ-ঘাঁটি ছিল। বিশ্বযুদ্ধের সময় পোতাশ্রয়ের বহু স্থাপনার ক্ষতি হয়। ১৯৪২ সালে জাপানিরা শহরটি দখল করে নেয় এবং এর দুই বছর মিত্রশক্তি শহরটি নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধশেষে ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদীরা শহরটি ছিনিয়ে নেওয়ার পরে ওলন্দাজরা সাময়িকভাবে এটি পুনরায় করায়ত্ত করে। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে (১৯৪৫-১৯৪৯) শহরটির আবারও ক্ষয়ক্ষতি হয়। যুদ্ধশেষে এটিকে স্বাধীন ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সুরাবায়ার যুদ্ধের গুরুত্বের কারণে এটি "বীরের শহর" নামেও পরিচিত। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ-র জন্মস্থান হিসাবেও সুরাবায়া পরিচিত।
নামকরণসম্পাদনা
স্থানীয় বিশ্বাস যে, "সুরাবায়া"নামটির উৎপত্তি হয়েছে শব্দ "সুরা" বা, "সুরো"(হাঙর) এবং "বায়া" বা, "বোয়ো"(কুমির) থেকে, আঞ্চলিক লোককথা আনুসারে তারা এই অঞ্চলে "সর্বাধিক শক্তিধর ও ক্ষমতাবান" আখ্যা পাওয়ার জন্য একে অন্যের সাথে যুদ্ধ করেছিলো। এমন বলা হয় যে, প্রাণীদুটি এই শর্তে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় যে, হাঙর সমুদ্রে আর কুমির স্থলে তাদের সীমানা স্থির রাখবে। যদিও একদিন শিকার করতে হাঙর সাতরে সমুদ্রের মোহনায় ঢুকে পড়ে, যা কুমিরকে রাগান্বিত করে। হাঙর তর্ক করতে থাকে যে, যেহেতু নদী হল জলের গঠন তো এটা তার অঞ্চল, আর কুমির বলে যে, যেহেতু নদী স্থলের মধ্যে প্রবাহিত হয় সেহেতু এটা কুমিরের অধিকার। তখন সাঙ্ঘাতিক কামড়াকামড়ি লড়াই শুরু হয়ে যায়। অবশেষে কুমিরের কামড়ে ধরাশায়ী হয়ে হাঙর সমুদ্রে পালিয়ে যায়। কুমির মোহনার যে অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে সেই অঞ্চলে এখন এই শহর অবস্থিত।[২]
অন্য একটি সূত্র ইঙ্গিত করছে—কেদিরি সাম্রাজ্য-এর দ্বাবিংশ শতাব্দীর পাগল রাজা জায়াবায়া-এর এক ভবিষ্যতবাণী — তিনি একটি বিশালাকার সাদা হাঙর ও একটি দৈত্যাকার সাদা কুমিরের মধ্যে লড়াই এর ভবিষ্যৎদর্শন করেছিলেন, এই ভবিষ্যৎদর্শনকে ১২৯৩ সালের মঙ্গল সৈন্যবাহিনী এবং রাডেন উইজায়ার মাজাপাহিত সৈন্যবাহিনীর মধ্যে সংঘাত হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়।[৩] এখন প্রাণীদুটিকে শহরের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয় যেখানে তারা চক্রাকারে অবস্থান করে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে, ঠিক যেমন শহর চিডিয়াখানার প্রবেশদ্বারের ভাস্কর্যে দেখান আছে।
ভিন্ন আরও অনেক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়ঃ যেমন বলা হয় যে, সুরাবায়া শব্দের উৎপত্তি জাভানিজ ভাষায় "সুরা ইং বায়া" মানে হল "নির্ভিকভাবে বিপদের মোকাবিলা করা";[৩] অথবা 'সুর্ইয়া' যার মানে সূর্য, থেকে। কিছু লোক জায়াবায়ার সেই ভবিষ্যতবাণীকে ১৯৪৫ সালের বিদেশী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সুরাবায়ানদের মহান যুদ্ধকে সূচিত করে। আরেকটা উপকথাতে বলা আছে যে, দুই বীর এই শহরের রাজা হওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলো। তাদের নাম ছিল সুরা এবং বায়া। যদিও এই লোক-নামকরনগুলি শহরের লোকজন এবং শহরাধিপতিদের বিভ্রান্তিকর অত্যুসাহের ফসল এবং যাচাইযোগ্য নয়।
ইতিহাসসম্পাদনা
সুরাবায়ার সবচেয়ে পুরানো নথি পাওয়া যায় চাও রুকুয়ার লেখা ১২২৫ সালের বইতে যেখানে একে জুং-ইয়া-লু নামে উল্লেখ করা আছে[৪]। এটি সুরাবায়ার প্রাচীন নাম। মা হুয়ান তার ১৪৩৩ সালের বই ইয়িঙাই শেঙ্গলান-এ ঝেং হের ট্রেজার শিপ-এর পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের ভ্রমণ নথিভুক্ত করেছেন: "কুড়ি "লি" এর অধিককাল দক্ষিণ দিকে ভ্রমণের পর জাহাজ সুলুমায়ি -তে পৌছাল, যার বিদেশী নাম ছিল সুরাবায়া। মোহনাতে প্রবাহিত জল ছিল তাজা।"[৫]
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে, পূর্ববর্তী জাভার একটি সুলতানাত এবং প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি ছিল সুরাবায়া। এটা অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তশালি সুলতান আগুং-এর মাতারাম সুলতানাত-এর সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ১৬২৫ সালে অধিগৃহীত হয়। এটা ছিল মাতারামের সর্বাপেক্ষা হিংস্র অভিযানগুলির মধ্যে অন্যতম, যাতে সুরাবায়ার সুকাডানা এবং মাডুরা জোটকে বশীভূত এবং একে আধিগ্রহনের আগে শহরকে কব্জা করতে হত। এই বিজয়ের ফালে মাতারাম শুধুমাত্র বান্তেন এর সুলতানাত্ এবং বাতাফিয়ার ডাচ্ উপনিবেশিক অঞ্চল ছাড়া প্রায় সমগ্র জাভাকে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ক্রমপ্রশারমান ইস্ট ইন্ডিজ কোম্পানি ১৭৪৩ সালের নভেম্বর মাসে দুর্বল মাতারাম-এর কাছ থেকে শহরের আধিপত্য নিয়ে নেয়। সুরাবায়া ডাচ্ উপনিবেশিক সরকারের অধীনে একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং উপনিবেশ-এ সর্ববৃহত্তম নৌ ঘাঁটিতে পরিণত হয়। সুরাবায়াই ছিল উপনিবেশের বৃহত্তম শহর যা এর স্বাভাবিক পোতাশ্রয় দ্বারা সুরক্ষিত ছিল এবং জাভার আবাদী অর্থনীতির ও শিল্পের কেন্দ্রে পরিণত হয়।[৬] ১৯১৭ সালে, ইন্ডিজ সোশাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যাসোসিয়েশান দ্বারা পরিচালিত সুরাবায়ার পদাতিক এবং নৌ সেনাদের মধ্যে এক অভ্যুত্থান ঘটে যাকে কঠোরভাবে দমন করা হয় এবং বিদ্রোহীদের নির্মম শাস্তিতে দণ্ডিত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৪২ সালে জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল-এর ফলস্বরূপ এই শহরের দখল নেয় এবং ১৯৪৪ সালে এই শহর অ্যালাইসদের দ্বারা বোমাবিদ্ধস্ত হয়। তার পর এটা ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনালিস্টদের দ্বারা অধিগৃহীত হয়। যদিও জাপানের আত্মসমর্পণের পর নবনির্মিত দেশটি শীঘ্রই ডাচ্ উপনিবেশের তত্ত্বাবধায়ক, ব্রিটিশদের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে।
("রেড ব্রিজ")-এ জেম্বাতান মেরাহ-এর কাছে ১৯৪৫ সালের ৩০শে অক্টোবর একটি আকস্মিক গুলিতে ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার ম্যালাবাই-এর হত্যার পর ইন্দোনেশিয়ার আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলির একটি সুরাবায়ার যুদ্ধ শুরু হয়। অ্যালাইস শহর অভ্যন্তরস্ত প্রজাতন্ত্রিদলকে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত শর্ত দেয়, কিন্তু তারা অস্বীকার করলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ১০ই নভেম্বরের সেই যুদ্ধে সহস্রাধিক প্রানের বলিদান হয়, পরবর্তীকালে একে বীর দিবস (হারি পাহ্লাওয়ান) হিসাবে পালন করা হয়। বুঙ্ তোমো দ্বারা লাল-সাদা পতাকা উত্তোলনের ঘটনা (ইয়ামাতো হোটেলের ডাচ্ লাল-সাদা এবং নীল পতাকা নামিয়ে ইন্দোনেশিয়ার লাল-সাদা পতাকা উত্তোলন) -কেও এই শহরের আন্দোলনের এক বীরত্বপূর্ণ কীর্তি হিসাবে গণ্য করা হয়।
শহরাঞ্চলের গঠনসম্পাদনা
সুরাবায়ার চারপাশের রেজেন্সিগুলি হলঃ উত্তরপূর্বের লামোঙান্ রেজেন্সি, পশ্চিমের গ্রেসিক্ রেজেন্সি, উত্তরপশ্চিমের (মাডুরা দ্বীপের) বাংকালান রেজেন্সি, দক্ষিণের সিডোয়ার্য রেজেন্সি, এবং দক্ষিণপশ্চিমের মোজোকেরতো রেজেন্সি ও জোম্বাং রেজেন্সি। গ্রেসিক্, বাংকালান, মোজোকেরতো, সুরাবায়া, সিডোয়ার্য এবং লামঙান্কে নিয়ে একটি সম্প্রসারিত মেট্রোপলিটান অঞ্চল তৈরি হয়েছে যাকে বলা হয় জেরবাঙ্কেরতোসুসিলা
আদিওয়াংসা, ফিয়া এন্ড ফু, তামান বেফারলি, ত্রিলিউম এবং ওয়াটার প্লেস রেসিডেন্সি হল সুরাবায়ার গগনচুম্বী উচ্চতম অট্টালিকাগুলির মধ্যে পাঁচটি, যার সাথে আছে বি আর্ ই টাওয়ার, বি টাওয়ার এবং গ্রাহা পেনা.
সুরাবায়ার বহু মাল্টি লেভেল শপিং মলের জন্য সুরাবায়া ইন্দোনেশিয়ানদের কেনাকাটার একটা প্রধান লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর দুটি নৌবহরের একটি, পূর্ব নৌবহর সুরাবায়াতে অবস্থিত। এর জাহাজচালনার ঐতিয্যের একটি শক্তিশালী স্বাক্ষর হল সাবমেরিন মনুমেন্ট, যা একটি অবসরপ্রাপ্ত রাশিয়ান ডুবোজাহাজ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শহরের বহু অঞ্চল বর্ষার সময়ে বন্যাপ্রবন যার প্রধান কারণ হল আবর্জনাতে বন্ধ স্টর্ম ড্রেইন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। নদীর ব-দ্বীপ-এ অবস্থিতি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার কারণে সুরাবায়ায় বন্যার আশঙ্কা বেশি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০১১ সালের জুন মাসে, সুরাবায়া ইন্দোনেশিয়ার ২০ টি শহরের মধ্যে প্রথম হিসাবে আডিপুরা কেন্চানা পুরস্কার পায়। আজ সুরাবায়া খুবই পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ-সিঙ্গাপুর-এর আদলে কিছু প্রশস্থ ফুটপাত ও প্রমোদ-উদ্যান তৈরি করা হয়েছে।[৭]
আকর্ষণসম্পাদনা
সুরাবায়ার চিডিয়াখানা, ১৯১৬ সালে খোলে এবং পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রথম এখানেই বন্দী ওরাংওটাং এর সফল প্রজনন সম্ভব হয়। অন্যান্য আকর্ষণের জায়গাগুলি হলঃ
- সম্প্রতি নির্মিত ছেং হো মসজিদ চাইনিজ শৈলীর স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার প্রথম মসজিদ।
- গ্র্যান্ড মস্ক অব সুরাবায়া বা, আল-আকবর মসজিদ, পূর্ব জাভার সর্ববৃহৎ মসজিদ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- হিরোয়িক মনুমেন্ট (তুগু পাহ্লাওয়ান), ৪১ মিটার দীর্ঘ একটি স্মৃতিস্থম্ভ যা সুরাবায়ার প্রধান প্রতীক এবং আন্দোলনের বীরদের স্মৃতিরক্ষায় নির্মিত। একই জায়গাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিগুলি প্রদর্শন করার জন্য একটি জাদুঘরও আছে।
- হাউজ্ অব্ সাম্পুর্না ইন্দোনেশিয়ার ক্লোভ/লবঙ্গ (ক্রেতেক) সিগারেট নির্মাণশিল্পের প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি জাদুঘর যা ১৮৬৪ সালের ডাচ্ ঔপনিবেশিক দালানে আয়োজিত।[৮]
- জালেস্ফেফা জায়ামাহে মনুমেন্ট একটি বৃহৎ নৌসেনাপতি আদলের ভাস্কর্য যা ইন্দোনেশিয়ার নৌসেনাদের স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মিত।
- পু তান্তুলার মুসিউম্-এ প্রাচীন জাভানিজ হস্তশিল্পজাত বস্তুর বিরাট সম্ভার বর্তমান।
- মনুমেন কাপাল সেলাম সংক্ষেপে, মোন্কাসেল (ইংরেজিঃ Submarine Monument) [১]ঃ একটি সোভিয়েত নির্মিত ডুবোজাহাজ (নাম ক্রি পাসোপাতি (৪১০)), ১৯৫২ সালে প্রথম চালু করা হয়, যা ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৯০ সালে এর অবসরের আগ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর সেবায় নিয়জিত ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং তার পর থেকে পাসোপাতিকে একটি জাদুঘরের মত সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং শহরের কেন্দ্রে পর্যটন আকর্ষণের জন্য সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
- মুসিউম্ নাডাতুল উলামা একটি স্বাধীন ইসলামিক ধর্মীয় সংগঠন, নাডাতুল উলামা-এর সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সংস্থান কেন্দ্র।
- মুসিউম্ ব্যাঙ্ক ইন্দোনেশিয়া ১৯০৪ সালে নির্মিত পূর্বতন ডে জাভাসছে ব্যাঙ্ক-এ আয়োজিত একটি ব্যাঙ্ক জাদুঘর।
কেনাকাটাসম্পাদনা
সুরাবায়া ইন্দোনেশিয়ানদের কেনাকাটার একটা প্রধান লক্ষ্যস্থল এবং বিরাট বিরাট শপিং মলে ভরা যেমনঃ বি জি জাংশান্, চিপুত্রা ওয়ার্ল্ড সুরাবায়া, সিটি অব টুমরো, এম্পায়ার প্যালেস, গ্যালাক্সি মল, গ্র্যান্ড সিটি, জেম্বাতান মেরাহ প্লাজা, কাপাস ক্রাম্পুং প্লাজা, লেন্মার্ক, প্লাজা সুরাবায়া, প্লাজা তুন্জুঙান, রয়াল প্লাজা সুরাবায়া, সুপারমল পাকুওয়ন্ ইন্ডাহ, এবং সুরাবায়া টাউন স্কয়ার।
হাই-টেক মল, ডব্লিউ টি সি, প্লাজা মারিনা হল সুরাবায়ায় গ্যাজেট, কম্পিউটার আর মোবাইল কেনাকাটার প্রধান কেন্দ্র।
পশ্চিম সুরাবায়াতে, চিপুত্রা গ্রুপের চিপুত্রাল্যান্ড এবং গ্রাহা ফ্যামিলিতে রয়েছে বাসভবন, একটি এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, একটি গলফ মাঠ এবং একটি আরোহণ জিম।
পূর্ব সুরাবায়াতে, পাকুওয়ন্ গ্রুপের পাকুওয়ন্ সিটিতে আছে নিজস্ব উন্মুক্ত রান্নার স্থান যার নাম ফুড ফেস্টিভ্যাল, এবং এটি আরও অনেক সুযোগ সুবিধার উন্নতিসাধন করছে, যেমন ইস্ট কোস্ট সেন্টার।
প্রশাসনসম্পাদনা
সুরাবায়া ৩১টি জেলা(কেচামাতান) রয়েছে। ২০১০ সালের জনসংখ্যাসহ এদের নামের তালিকা নিচে দেয়া হলঃ[৯][১০]
|
|
|
জলবায়ুসম্পাদনা
সুরাবায়ার জলবায়ু আলাদা আলাদা আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু নিয়ে নিরক্ষীয় আর্দ্র ও শুষ্ক জলবায়ু প্রকৃতির। নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত শহরের আর্দ্র ঋতু চলে, আর বাকি পাঁচ মাস শুষ্ক ঋতু। অন্যান্য অনেক নিরক্ষীয় আর্দ্র ও শুষ্ক জলবায়ু অধ্যুষিত শহর ও অঞ্চলের থেকে ভিন্ন এই শহরের সর্বচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সমস্ত বছরব্যাপী খুবই স্থিতিশীল, গড় সর্বচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে এবং গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে।
সুরাবায়া-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
উৎস: .[১১] |
পরিবহনসম্পাদনা
সুরাবায়ার পরিবহন স্থল, সমুদ্র এবং বিমান পরিবহনের মাধ্যমে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক যাত্রায় সাহায্য করছে। শহরের অভ্যন্তরে প্রাথমিক যাতায়াত ব্যবস্থা হল মোটর যান, মোটরসাইকেল এবং ট্যাক্সি। কিছু পাব্লিক বাস পরিবহন রয়েছে। সুরাবায়া জাকার্তা এবং বালি-এর মধ্যে ভূতল পরিবহনের মাধ্যম-শহর। জাকার্তা এবং নিকটবর্তী প্রতিবেশী দ্বীপ মাডুরার মধ্যে আরেকটা বাস রুট রয়েছে।
সমুদ্রবন্দরসম্পাদনা
তান্জুং পেরাক শহরের প্রধান বন্দর এবং দেশের ব্যাস্ততম বন্দরগুলির একটি। এটা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ দশটি সর্বাধিক ব্যাস্ত জাহাজি পণ্যের বন্দরের একটি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যদিও বন্দরের বেশিরভাগ জাহাজি পণ্য সনাতন পদ্ধতিতে তদারকি করা হয়, তবে পৃথিবীব্যাপী দ্বিতীয় প্রজন্মের সর্বাধিক ১,০০০ টিউজ ক্ষমতার আধুনিক পণ্য জাহাজকেও ধারণ করতে সক্ষম। সম্প্রতি, পঞ্চম প্রজন্মের ১০,০০০ টিউজ ক্ষমতার জাহাজের জন্য বন্দরের ১৪ মিটার পর্যন্ত পঙ্কোদ্ধারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যা খুব সম্ভাবত ২০১৫ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে এবং সপ্তম প্রজন্মের ১৫,০০০ টিউজ ক্ষমতার জাহাজের জন্য বন্দরকে ১৬ মিটার গভীর, ২০০ মিটার চাওড়া করার কাজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে। বর্তমানে সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক জাহাজ নবম প্রজন্মের।[১২] অঞ্চলের অন্য একটি বন্দর সুরাবায়ার মধ্য শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরবর্তী গ্রেসিক্ শহরে অবস্থিত। ২০১৪ সালের মে মাসে তান্জুং পেরাক বন্দর-এর অংশ হিসাবে, দুটি শিপ টু শোর(এস টি এস) ক্রেন, পাঁচটি অটোমেটেড স্টকিং ক্রেন(এ এস সি), এবং একটি অটোমোটিভ টার্মিনাল ট্রাক্টর(এ টি টি) সহ নতুন তেলুক লামং গ্রিন সি পোর্ট, থেকে পরীক্ষামূলক জাহাজচালনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে নতুন এই বন্দরের সুবিধা আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহনে ব্যবহৃত হবে, যার পরিমাণ মনে করা হচ্ছে যে সপ্তাহ প্রতি ৭টি জাহাজ, আর যদি অতিরিক্ত ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে তো তা অন্তদেশিয় জাহাজ পরিবহনে ব্যবহার করা হতে পারে। নতুন সুবিধায় কাগজের কম ব্যবহার করা হবে এবং বন্দর এলাকাতে ধারক পরিবাহী গ্যাস ট্রাক ব্যবহৃত হবে।[১৩][১৪] ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে, ২৫০ মিটার জেটির ১৪টি পর্যন্ত এল ডব্লিউ এস আন্তর্জাতিক জাহাজ উপযোগী বিশালায়তন শুষ্ক বন্দর তৈরি করা হবে যার নির্মাণকার্য এক বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বন্দরে পরিবাহক এবং ৮ হেক্টর পণ্যাগার সহ সম্পূর্ণ দুটি একক "জাহাজ খালাসি ব্যবস্থা" থাকবে। শুষ্ক বিশালায়তন টার্মিনাল থাকবে ২৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে এবং ২,০০,০০,০০০ টনের ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৬ হেক্টর এলাকা, সহায়ক এলাকা হিসাবে থাকবে।[১৫]
বিমানবন্দরসম্পাদনা
জুয়ান্ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রী পরিবহনের হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় ব্যাস্ততম বিমানবন্দর। পশ্চিম এবং পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে যাতায়াতের জন্য এটা প্রসিদ্ধ। তাছাড়াও এটা অনেক বিমান সংস্থার চক্রকেন্দ্র বিমানবন্দর হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
রেলপথসম্পাদনা
শহরে বেশ কয়েকটি রেল স্টেশান আছে। তারা হল সুরাবায়া কোটা(সেমুত্ নামে বেশি পরিচিত), পাসার তুরি, এবং গুবেং। সুরাবায়ার প্রধান রেল স্টেশান হল পাসার তুরি স্টেশান। (ইন্দোনেশিয়ার প্রধান রেল অপারেটর), পি টি কেরেতা আপি দ্বারা চালিত আর্গো ব্রোমো আংগ্রেক্ সুরাবায়ার এই স্টেশান থেকে জাকার্তার গাম্বির স্টেশানকে সংযোজিত করে।
বাসসম্পাদনা
অন্তশহর যাতায়াতের জন্য কিছু অন্য পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রধান বাস টার্মিনাল হল পুরাবায়া (বুঙুরাসিহ নামেও পরিচিত, যে অঞ্চলে এটা অবস্থিত)।
অন্যান্যসম্পাদনা
তাছাড়া শহরের মধ্যে বিভিন্ন রুটে রয়েছে শাটেল ভ্যান বা, মিক্রলেত, সিটি বাস, রিকশা বা, বেচাক্, এবংকমুটার ট্রেন। সম্প্রতি সরকার আরো দুটি পরিবহন ব্যবস্থার পরিলল্পনা করেছেঃ ট্রাম এবং মোনোরেল যেগুলির সম্ভাব্যতার পরীক্ষা এখন চলছে।
সুরামাডু ব্রিজসম্পাদনা
সুরামাডু ব্রিজ টোল রাস্তা সুরাবায়া এবং মাডুরা প্রণালীর মাডুরা দ্বিপকে সংযোজিত করে। সুরামাডু সুরাবায়া-মাডুরা এর সংক্ষিপ্ত রূপ। সুরামাডু ব্রিজ থেকে পেরমাজু গ্রাম, কচাহ্ জেলা, বাংকালান, মাডুরা-এর মাডুরা আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর শহর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক নির্মিত হবে যাতে খরচ পড়বে আনুমানিক ৬০০ কোটি Rp (৭০ কোটি মার্কিন $)। এই ধারক বন্দরটি সুরাবায়ার মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই তান্জুং পেরাক বন্দর কে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।[১৬]
অর্থনীতিসম্পাদনা
শহরটি দেশের ব্যাস্ততম বন্দরগুলির মধ্যে একটি। এর প্রধান রপ্তানিকৃত পণ্যগুলি হল চিনি, তামাক, এবং কফি। এখানে একটি বৃহৎ জাহাজ নির্মাণস্থল এবং অসংখ্য বিশেষজ্ঞ জাহাজী বিদ্যালয় রয়েছে।
প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে, সুরাবায়ায় বহু অফিস এবং ব্যবসা কেন্দ্রকে স্থান দিয়েছে। সম্প্রতি বিদেশী শিল্পের প্রসার এবং সুরামাডু সেতুর কাজ শেষ হওয়া সুরাবায়ার অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে। বর্তমানে বিদেশী লোকেদের আকৃষ্ট করার জন্য সুরাবায়ায় বহু গগনচুম্বী অট্টালিকা যেমন, এপার্টমেন্ট, কন্ডমিনিয়াম এবং হোটেল তৈরি হচ্ছে।
সুরাবায়া পূর্ব জাভার প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর। সুযোগসুবিধায় সমৃদ্ধ এবং ভৌগোলিক সৌকর্যের কারণে সুরাবায়ার অর্থনৈতিক উৎকর্ষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপরিসংখ্যানসম্পাদনা
সুরাবায়া জাকারতার পর দ্বিতীয় সর্বাধিক জনাকীর্ণ শহর, ২০১০ সালের জনগণনা অনুযায়ী যার জনসংখ্যা ২৭,৬৫,৯০৮।[১৭] ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য বৃহৎ মেট্রোপলিস -এর মত অনেক বাসিন্দা শহরাঞ্চলের সীমানার বাইরে জেরবাঙ্কেরতোসুসিলা নামক মেট্রোপলিটান অঞ্চলে বাস করে। বহু শিল্পের অবস্থিতির কারণে শহর খুব বেশি নগরায়িত, এবং এর ফলে অনেক বস্তি এলাকার সৃষ্টি হয়েছে। একটি প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে সুরাবায়া সমগ্র ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার্তিদের আকৃষ্ট করেছে যারা তাদের নিজেদের নিজেদের সম্প্রদায় তৈরি করেছে।
জাতিসম্পাদনা
শহরের বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে আছে মালয়শিয়ান, চাইনিজ, ফিলিপিনো, ভারতীয়, আরব এবং ইউরোপীয়। জাভানিজ এবং স্থানীয় মাডুরিজ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন এলাকার লোক এই শহরে রয়েছেঃ সুন্ডা, মিনাংকাবাউ, বাতাক, বাঞ্জার, বালিনিজ, এবং বুগিজ।
সুরাবায়ার অধিকাংশ জনগণ খুচরা ব্যবসার কাজ করে, হয় মধ্য শহরের ব্যায়বহুল স্টোরগুলিতে অথবা, মেট্রোপলিস-এ অসংখ্য ছোট দোকান এবং স্টলে।
সুরাবায়া একটি পুরনো শহর যা সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত হয়েছে এবং এখন এর জনসংখ্যা বছর প্রতি ১.২ শতাংশ হারে বাড়ছে। সম্প্রতি বাসিন্দারা ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যশহর থেকে বেরিয়ে গিয়ে উপনগরী অঞ্চলের যে অঞ্চলগুলিতে গলফ মাঠ আছে এবং কঠোর সুরক্ষাপূর্ণ সেই এলাকাগুলিতে চলে যাচ্ছে।
ভাষাসম্পাদনা
অধিকাংশ নাগরিক জাভানিজ-এর একটি উপভাষা সুরোবোয়োয়ান ভাষাতে কথা বলে যা আরেকান উপভাষার একটি সাব-ডায়ালেক্ট। এই উপভাষার একটি বাঁধাধরা বিশিষ্ট হল সমতা এবং কথার স্পষ্টতা। মধ্য জাভার উপভাষার থেকে এতে রেজিস্ট্রি ব্যবহারের কড়াকড়ি কম। স্থানীয় মাধ্যম যেমন স্থানীয় দূরদর্শন শো, বেতার, ঐতিয্যগত নাটক (লুড্রুক) প্রভৃতিতে সুরাবায়া উপভাষাকে সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়।
ধর্মসম্পাদনা
সুরাবায়ার বেশিরভাগ নাগরিক ইসলাম ধর্ম মেনে চলে।[১৮] অন্যান্য ধর্মের মধ্যে আছেঃ খ্রিস্টান ধর্ম(রোমান ক্যাথলিক ধর্ম এবং প্রটেস্টান্ট ধর্ম), হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, কনফুসিয়ান ধর্ম, এবং ইহুদী ধর্ম।
- রোমান ক্যাথলিক ধর্ম
সুরাবায়ার রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিস এই শহরে অবস্থিত। সুরাবায়াতে বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় ১৫টি গির্জা রয়েছে। সুরাবায়া প্রাচীন গির্জাগুলির মধ্যে একটি হল ১৮১৫ সালে নির্মিত কেপানজেন্ চার্চ (গেরেজা কাতোলিক্ কেলাহিরান্ সান্তা পেরাওয়ান্ মারিয়া) যা সুরাবায়ার প্রাচীনতম গির্জা এবংইন্দোনেশিয়ার প্রাচীনতম গির্জাগুলির মধ্যে একটি। পলিসি ইস্তিমেওয়া ১৭ রোড-এ অবস্থিত হাতি কুডুস ইয়েসুস হল সুরাবায়ার ক্যাথেড্রাল।
সুরাবায়ার রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিস ১,৫০,০০০ জন সদস্য সংবলিত বৃহত্তম ডায়োসিসের একটি এবং ইন্দোনেশিয়ার দ্রুততম পরিবর্ধনশীল ডায়োসিসের একটি।
- প্রটেস্টান্ট ধর্ম
বেথানি ইন্দোনেশিয়ান চার্চঃ ২০০০ সালে চার্চ সেমিনার ইন্টারন্যাশনাল(এস পি জি আই) দ্বিগুণ দীর্ঘায়ীত করার সময় গ্রাহা বেথানি ঙিন্ডেন এটার উদ্বোধন করেন। এই জায়গায় ধর্মসভার ৩৫,০০০ সদস্যের সঙ্কুলান হয়।
- অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্ম
এই শহরে অবস্থিত অর্থোডক্স খ্রিস্টান কেন্দ্র সুরাবায়া ২০০৮ সালের ১৫ই অক্টোবর অর্থোডক্স পাদ্রী ফাদার ইয়োহানেজ ব্যাম্বাঙ চাহিও উইকাকসোনো-এর দ্বারা উদ্বোধিত হয়।[১৯] তাছাড়া এই শহরে দুটি অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায় রয়েছে এবং সেজন্য মাঝারি মেয়াদী কিন্ডারগার্ডেন, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রধান অর্থোডক্স গির্জা, সেন্ট নিকলাস-এর ভিত্তিও সুরাবায়াতে।[২০] ডিনোয়ো জেলাতে সেন্ট নিকলাস অর্থোডক্স চার্চ -এর পাশে ১২ই জানুয়ারি একটি নতুন অর্থোডক্স সম্প্রদায় কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়।[২১]
- ইহুদী ধর্ম
ইন্দোনেশিয়ার একমাত্র ইহুদী ধর্মস্থান সুরাবায়ায় অবস্থিত ছিল। এই ইহুদী ধর্মস্থানটি অবশ্য প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত প্রতিবাদ ও দাঙ্গাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শহরে একটি ইহুদী কবরস্থানও রয়েছে।[২২][২৩]
খেলাধুলাসম্পাদনা
শহরের একটি ফুটবল ক্লাব আছে যা সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ান সুপার লীগ-এ অংশগ্রহণ করেছিল, নাম পরসাবায়া। দুইবার ইন্দোনেশিয়ান প্রিমিয়ার ডিভিশান জয়লাভের কারণে পরসাবায়াকে ইন্দোনেশিয়ার সফলতম ফুটবল ক্লাবগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। এর ভক্তরা বোনেক (বোন্ডো নেকাত-এর সংক্ষিপ্ত রূপ)(মোটামুটি অর্থ দাড়ায় "মরতে সাহস কর") নামে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করে। বোনেক-রা ক্লাবের প্রতি তাদের শক্তিশালী আনুগত্যের জন্য পরিচিত এবং সুরাবায়ার নাগরিকদের বীরত্বের প্রতিনিধি হিসাবে পরিগণিত হয়।
সুরাবায়ায় গেলোরা বুঙ্ তোমো স্টেডিয়াম নামে একটি সর্বার্থসাধক স্টেডিয়াম আছে যা সাধারণত ফুটবল খেলার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং গেলোরা ১০ নভেম্বর স্টেডিয়াম-এর পরিবর্তে এখন পরসাবায়ার নতুন ঠিকানা।[২৪] ২০১২ সালের ২৩শে জুলাই, এই স্টেডিয়ামে পরসাবায়া ১৯২৭ এবং কুইনস্ পার্ক রেঞ্জার-এর মধ্যে একটি সম্প্রীতি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
শিক্ষাব্যবস্থাসম্পাদনা
সুরাবায়ায় ধর্মীয় এবং প্রযুক্তিগত বিশিষ্টতাসম্পন্ন বেশ কতক মুখ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু হলঃ
- ইন্দোনেশিয়ায় উনিফারসিটাস্ এয়ারলাঙ্গা (এয়ারলাঙ্গা ইউনিভারসিটি)কে গজাহ্ মাডা ইউনিভারসিটি, বান্ডুং ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এবং ইউনিভারসিটি অব ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি লক্ষণীয় শিক্ষা পরিসেবার উৎস হিসাব গণ্য করা হয়।
- ইন্সটিটুট্ তেক্নোলোগি সেপুলুহ্ নপেম্বের (সেপুলুহ্ নপেম্বের ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি),রোবোটিক্স এবং যন্ত্রনির্মাণবিদ্যায় অবদানের জন্য বিখ্যাত একটি সার্বজনীন প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান।
- উনিফারসিটাস্ নেগেরি সুরাবায়া (সুরাবায়ার প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়), গুণসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির জন্য উল্লেখযোগ্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখন এখানে অর্থনীতি, প্রজুক্তিবদ্যা এবং আইন বিষয়ে কিছু কার্যক্রম রয়েছে।
- আধি তামা ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি সুরাবায়া, প্রযুক্তিগত শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ একটি প্রতিষ্ঠান।
- হাঙ্ তুয়াহ্ ইউনিভারসিটি সুরাবায়া, জাহাজচালনা শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
- উনিফারসিটাস্ পেম্বাঙুনান ন্যাশনাল "ফেতেরান্" জাভা তিমুর
- ইন্সটিটুট্ সাইন্স তেরাপান্ ডান্ তেকনলগি সুরাবায়া, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ বিশেষজ্ঞ একটি প্রতিষ্ঠান।
- উনিফারসিটাস্ ক্রিস্তেন পেত্রা, ইন্দোনেশিয়ার একটি অগ্রগণ্য খ্রিস্টান বিশ্ববিদ্যালয়।
- উনিফারসিটাস্ পেলিতা হারাপান
- উনিফারসিটাস্ কাতোলিক্ উইদ্যা মান্ডালা, শিক্ষায় উৎকর্ষতার জন্য বিখ্যাত সুরাবায়ার একটি ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
- উনিফারসিটাস্ সুরাবায়া, সুরাবায়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যা আইন শিক্ষায় এর উৎকর্ষের জন্য পরিচিত।
- উনিফারসিটাস্ ভায়াংকারা, পূর্ব জাভায় ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর সাথে সংসৃষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
- উনিফারসিটাস্ উইজায়া কুসুমা সুরাবায়া, ১৯৮১ সালে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় যার পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার প্রথম এবং প্রাচীনতম বেসরকারি ডাক্তারি অনুষদ রয়েছে। ডাক্তারি অনুষদ ১৯৮৬ সালে সংস্থাপিত হয়।
- উইজায়া পুত্রা ইউনিভারসিটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সার্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়।
- উনিফারসিটাস্ চিপুত্রা, চিপুত্রা গ্রুপের দ্বারা ২০০৬ সালে সংস্থাপিত একটি বেসরকারি বাণিজ্য-ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়।
- ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট অব সুরাবায়া, সুরাবায়ায় অবস্থিত একটি টেকনিকাল ইন্সটিটিউট।
ভগিনী শহরসম্পাদনা
সুরাবায়ার ভগিনী শহরগুলি হলঃ:[২৫]
পাদটীকাসম্পাদনা
- ↑ "Dinas Kependudukan dan Catatan Sipil Kota Surabaya"। Dispendukcapil.surabaya.go.id। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৪।
- ↑ Irwan Rouf & Shenia Ananda। Rangkuman 100 Cerita Rakyat Indonesia dari Sabang sampai Merauke: Asal Usul Nama Kota Surabaya (Indonesian ভাষায়)। MediaKita। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 9786029003826। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ ক খ "Welcome to Surabaya City, East Java"। Surabaya Tourism, EastJava.com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ F. Hirth and W.W. Rockhill, Chau Ju-kua, St Petersburg, 1911
- ↑ Ma Huan Ying-yai Sheng-lan, The Overall Survey of Ocean Shore, translated by J.V.G. Mills, p. 90, 1970, Hakklut Society, reprint by White Lotus, 1997. আইএসবিএন ৯৭৪-৮৪৯৬-৭৮-৩.
- ↑ http://books.google.com.my/books?id=-oIyKT1MOA4C&pg=PA32&lpg=PA32&dq=southeast+asian+colonial+cities&source=bl&ots=HnvRHJ9_XC&sig=9WbhUlY_ubMRxO4LUcKScISgaEw&hl=en&sa=X&ei=fX-EVNKDMYKJuAShsIFo&ved=0CCMQ6AEwAjgU#v=onepage&q=southeast%20asian%20colonial%20cities&f=false
- ↑ "Surabaya, a miniature of Singapore"। সেপ্টেম্বর ৫, ২০১১।
- ↑ "House of Sampoerna website"। ২৮ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Surabaya City Regulation No. 5 2006" (পিডিএফ)। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৫।
- ↑ Biro Pusat Statistik, Jakarta, 2011.
- ↑ World Weather Information Service
- ↑ "Pertengahan 2015, Kapal Generasi Lima Sandar di Tanjung Perak"। নভেম্বর ১৬, ২০১৪।
- ↑ Miftahul Ulum। "Teluk Lamong Can Serve 7 International Ships"। ৮ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০১৪।
- ↑ "Pelindo III to start trial runs at Teluk Lamong port in May"। সংগ্রহের তারিখ মে ৮, ২০১৪।
- ↑ Titis Jati Permata (ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪)। "2015, Dermaga Curah Kering di Terminal Teluk Lamong Dibangun"।
- ↑ "Surabaya's hotel business boom "likely to continue""। The Jakarta Post। ২০১৩-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৪।
- ↑ "Gatra.Com"। Gatra.Com। ২০১০-০৮-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-০৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ International Religious Freedom Report 2002
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৫।
- ↑ "Orthodox Indonesia Church Parokia St. Nikolaos"। ৩ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৫।
- ↑ "New Orthodox Community in Indonesia"। ২৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৫।
- ↑ The Synagogue of Surabaya, Indonesia
- ↑ The Jews of Surabaya, by Jessica Champagne and Teuku Cut Mahmud Aziz.
- ↑ (ইন্দোনেশীয়) Detik Surabaya: Gelora Bung Tomo Diresmikan, Lalu Lintas Macet ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে
- ↑ "Kegiatan Kerjasama Kota Surabaya Dengan Mitra Di Luar Negeri" [Cooperation Activities of Surabaya with Partners Overseas] (পিডিএফ)। Surabaya City Government। ২০১৩-১২-১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-১৫।
- ↑ "Interactive City Directory: Surabaya, Indonesia"। Sister Cities International। ২০১৫-০২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-১৫।
- ↑ "International Exchange"। The International Council of Local Authorities for International Relations (CLAIR), Singapore। ২০১৬-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-১৫।
- ↑ "Sister Cities of Guangzhou"। Guangzhou Foreign Affairs Office। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০২-১৫।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- Official website
- উইকিভ্রমণ থেকে সুরাবায়া ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।
বিষয়শ্রেণীঃইন্দোনেশিয়ার শহর বিষয়শ্রেণীঃপূর্ব জাভার জনাকীর্ণ স্থান বিষয়শ্রেণীঃইন্দোনেশিয়ার জনাকীর্ণ সমুদ্রতীরবর্তী স্থান বিষয়শ্রেণীঃইন্দোনেশিয়ার রেজেন্সি রাজধানী বিষয়শ্রেণীঃইন্দোনেশিয়ার প্রাদেশিক রাজধানী