দেবীভাগবত পুরাণ

হিন্দু শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান পুরাণ-গ্রন্থ

দেবীভাগবত পুরাণ (সংস্কৃত: देवी भागवतपुराण, Devī Bhāgavatapurāṇa) বা শ্রীমদ্‌দেবীভাগবতম্‌ হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি হিন্দু পুরাণ[] ভারতে এই পুরাণটিকে মহাপুরাণ (প্রধান পুরাণ) মনে করা হয়। সকল সম্প্রদায়ের কাছেই দেবীভাগবত পুরাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাণগ্রন্থ।[]

মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা, কর্ণাটক, ভারত (১৩শ শতাব্দী)।
চন্দনকাঠের দূর্গা মূর্তি, মুর্শিদাবাদ থেকে প্রাপ্ত, বর্তমানে ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতায় রক্ষিত আছে

দেবীভাগবত পুরাণ সর্বমোট বারোটি ‘স্কন্দ’ (বিভাগ) ও ৩১৮টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।[] হিন্দুধর্মের শাক্ত সম্প্রদায়ে মহাশক্তিকে ব্রহ্মাণ্ডের আদি স্রষ্টা ও ব্রহ্ম (সর্বোচ্চ সত্য) মনে করা হয়। এই সম্প্রদায়ে দেবীমাহাত্ম্যম্‌দেবীভাগবত পুরাণ দুটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।[][][] দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে দেবীসত্ত্বাকে সকল জীবসত্ত্বার উৎস, সৃষ্টিকারিণী, পালনকারিণী ও ধ্বংসকারিণী এবং মোক্ষদাত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[][] হিন্দুধর্মের অন্যান্য সবকটি প্রধান পুরাণে মহাশক্তির উল্লেখ ও বন্দনা করা হলেও, এই গ্রন্থে তাকে আদি দৈবসত্ত্বা বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাকে কেন্দ্র করেই এই পুরাণের সকল বিষয় আবর্তিত হয়েছে।[][] এই পুরাণের মূলগত দর্শনটি অদ্বৈত বেদান্তের অনুরূপ। সেই সঙ্গে এতে মহাশক্তির ভক্তিমূলক উপাসনার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।[][১০][১১]

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে দেবী সরস্বতীকে (উপরের চিত্রে) সর্বোচ্চ মহাশক্তির সৃষ্টিশক্তির স্বরূপ ও ব্রহ্মার শক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১২]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে।[১৩] রামচন্দ্রন প্রমুখ অল্প কয়েকজন গবেষক মনে করেন, এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আগে রচিত।[১৩] যদিও এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অধিকাংশ গবেষকের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত হয়েছিল।[১৩][১৪] রাজেন্দ্র হাজরার মতে, এই গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় ১১শ বা ১২শ শতাব্দীতে রচিত হয়। অন্যদিকে ল্যালি বলেছেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শেষ দিকে এই গ্রন্থ আকার নিতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে পরিবর্ধিত হয়। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে এই গ্রন্থটির প্রথম সম্পূর্ণ পাঠের অস্তিত্ব ছিল।[১৩][১৫] ট্রেসি পিঞ্চম্যানের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ১০০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত হয়।[১৬]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের ৭ম স্কন্ধের দশটি অধ্যায়ের (৩১ থেকে ৪০) ৫০৭টি শ্লোক মহাভারত গ্রন্থের ভগবদ্গীতা অংশের মতো পৃথক গ্রন্থাকারেও পঠিত হয়।[১৭] এই অংশটির নাম দেবীগীতা[১৮] সি ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে, এই অংশটি হয় মূল গ্রন্থ রচনাকালেই রচিত হয়, নয়তো পরে রচিত হয়ে প্রক্ষিপ্ত আকারে এই পুরাণে সংযোজিত হয়।[১৮] তার মতে, এই অংশটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। এমনও হতে পারে, এটি তার পরে রচিত। কিন্তু খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীর আগেই এই অংশটি রচিত হয়।[১৮]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের ৯ম স্কন্ধে একাধিক শ্লোকে ‘মেচ্ছ’ (বর্বর) ও ‘যবন’ (বিদেশি) শব্দদুটি পাওয়া যায়।[১৯] এই শব্দদুটির মাধ্যমে সম্ভবত পার্বত্য আদিবাসীদের বোঝায়। কিন্তু হাজরা প্রমুখ গবেষকদের মতে, যে সব শ্লোকে ‘ম্লেচ্ছ’ কথাটির উল্লেখ আছে, সেই সব শ্লোকের বিস্তারিত বিবরণগুলি পাঠ করলে বোঝা যায়, সেই সব শ্লোকগুলির রচয়িতা ইসলাম ধর্ম ও ভারতে ইসলামের প্রসার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। প্রধান গবেষকদের মতে, ৯ম স্কন্ধের এই অংশগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় ১২শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়। এই অংশগুলি গ্রন্থের মূল অংশটির পরবর্তীকালে রচিত।[১৯]

দেবীভাগবত পুরাণ মহাশক্তি-কেন্দ্রিক কোনো প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র নয়। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থের অন্তর্গত দেবীমাহাত্ম্যম্‌ অংশে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতেই মহাশক্তিকে সর্বোচ্চ দৈবসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[২০][২১] ভারতের মথুরাবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকেই মহাশক্তি উপাসনা প্রচলিত ছিল।[২২][১৭] শাক্ত সম্প্রদায়ে দেবীমাহাত্ম্যম্‌দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থদুটি বিশেষ প্রভাবশালী। এই দুই গ্রন্থেই দেবীশক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও ভক্তিমূলক শক্তি-উপাসনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।[২৩]

সমগ্র পুরাণ সাহিত্য ও মহাভারত গ্রন্থের সঙ্গে এই পুরাণটিও প্রথামতে ব্যাসের রচনা। ‘দেবীভাগবত’ নামটি ‘দেবী’ ও ‘ভাগবত’ শব্দদুটির সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট। এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘দেবীশক্তির ভক্ত’। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে রচিত বৈদিক সাহিত্যেই ‘দেব’ ও ‘দেবী’ শব্দদুটি পাওয়া যায়। সেখানে ‘দেব’ শব্দটি পুংলিঙ্গ ও ‘দেবী’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ।[২৪] মনিয়ার উইলিয়ামস এই নামদুটির অর্থ করেছেন, “স্বর্গীয়, দিব্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্থিব সত্ত্বা, গৌরবোজ্জ্বল সত্ত্বা।”[২৫] ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত ‘দেবী’ লাতিন dea ও গ্রিক thea শব্দের অনুরূপ।[২৬] ‘ভাগবত’ শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরের ভক্ত’।[২৭]

বিন্যাস

সম্পাদনা

দেবীভাগবত পুরাণ ১২টি স্কন্ধে (ভাগ) ৩১৮টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।[]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের অধ্যায়সমূহ[২৮]
স্কন্ধ # ১০ ১১ ১২ মোট
অধ্যায় ২০ ১২ ৩০ ২৫ ৩৫ ৩১ ৪০ ২৪ ৫০ ১৩ ২৪ ১৪ ৩১৮

প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের শ্লোকসংখ্যা ১৮,০০০।[২৯] প্রকৃত গ্রন্থটির বিভিন পাঠান্তর পাওয়া যায়। পাঠগুলির শ্লোকসংখ্যা উক্ত সংখ্যার নিকটবর্তী।[১৮]

বিষয়বস্তু

সম্পাদনা

ফাউলস্টোন ও অ্যাবোটের মতে, দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের ধর্মতত্ত্বটি হল পুরাণ, অধিবিদ্যা ও ভক্তিবাদের একটি বিশ্বকোষতুল্য মিশ্রণ।[৩০] সি ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে, এই পুরাণকথা অন্যান্য পুরাণগ্রন্থে প্রাপ্ত পৌরাণিক কাহিনিরই অনুরূপ। এই কাহিনির মূল উপজীব্য বিষয় ভাল ও মন্দ এবং দেব ও দৈত্যের মধ্যে নিরন্তর সংগ্রামের কথা।[৩১] এই কিংবদন্তিগুলি মহাভারত ও অন্যান্য প্রাচীন হিন্দু পুরাণকথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।[৩২] যদিও এই পুরাণের কিংবদন্তিগুলির কেন্দ্রবিন্দু হলেন দেবীসত্ত্বা। এখানে দেবীভক্তির একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। এই গ্রন্থে দেবীকে চিরন্তন সত্য, ব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুর উৎস, সকল কিছুর চিরন্তন সমাপ্তি ‘নির্গুণ’ (নিরাকার) ও ‘সগুণ’ (সাকার), সর্বোচ্চ অপরিবর্তনীয় সত্য (পুরুষ), বিশিষ্ট পরিবর্তনশীল সত্য (প্রকৃতি) এবং প্রত্যেক জীবের অন্তরাত্মা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩২][৩৩][৩৪]

পুরাণকথা: ১ম থেকে ৬ষ্ঠ স্কন্ধ

সম্পাদনা
 
দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে বর্ণিত দেবীর একটি রূপ। এই পুরাণে দেবীর বহু রূপের বর্ণনা রয়েছে।[৩৫][৩৬]

রোচার বলেছেন, অন্যান্য প্রধান পুরাণগুলির মতো দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের প্রথম স্কন্ধেও পুরাণের রূপরেখা, বিষয়বস্তুর বিন্যাস এবং কীভাবে পৌরাণিক বন নৈমিষারণ্যে ঋষিসমাবেশে এই পুরাণ প্রথম কীর্তিত হয়, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।[] এই পুরাণ মতে, পরম সত্যের সকল রূপ প্রথম দিকে ছিল ‘নির্গুণ’ (নিরাকার, গুণের অতীত; এককথায়, সেই অবস্থায় পরম সত্য ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না)।[] যদিও এই পুরাণ অনুসারে, এই নির্গুণ সত্য ছিলেন একজন ‘ভগবতী’ (নারী)। তিনি তিনটি ‘শক্তি’র মাধ্যমে স্বরূপ প্রকাশ করেন। এই তিনটি শক্তি হল – সাত্ত্বিকী (সত্য, সৃষ্টিশীল কর্ম), রাজসী (উদ্যম, উদ্দেশ্যহীন কর্ম) ও তামসী (মায়া, ধ্বংসাত্মক কর্ম)।[]

দ্বিতীয় স্কন্ধটি ক্ষুদ্রাকার। এটি পৌরাণিক উপাখ্যানমূলক।[] রোচার বলেছেন, এই অংশে হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত গ্রন্থের চরিত্রদের অবতারণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের শেষাবধি যে প্রধান চরিত্রগুলিকে দেখা যাবে, তাদেরও পরিচিতি দান করা হয়েছে।[৩৭] তৃতীয় স্কন্ধে রয়েছে দেবী ও দেবীভক্তি-সংক্রান্ত আলোচনা। এই স্কন্ধেই দেবী কীভাবে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার শক্তি মহাসরস্বতী, পালনকর্তা বিষ্ণুর শক্তি মহালক্ষ্মী এবং ধ্বংসকর্তা শিবের শক্তি মহাকালীর সৃষ্টি করলেন, তা বর্ণিত হয়েছে।[৩৭][১২] তৃতীয় স্কন্ধে অপর হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ গ্রন্থের কয়েকটি কিংবদন্তিও উল্লিখিত হয়েছে।[৩৭]

চতুর্থ স্কন্ধে আরও কয়েকটি কিংবদন্তি উল্লিখিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণ ও শিবের কথোপকথনটিও। এই স্কন্ধে তান্ত্রিক বিষয় ও যোগধ্যানের বিষয়গুলিও আলোচিত হয়েছে।[৩৭] রোচার বলেছেন, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্কন্ধে পূর্ববর্তী কিংবদন্তিগুলির পরবর্তী অংশ বর্ণিত হয়েছে। এই দুই স্কন্ধের অর্ধেক অধ্যায়ে দেবীর শ্রেষ্ঠত্ব দেখানো হয়েছে। এখানে দেখা গিয়েছে, পুরুষ দেবতারা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন এবং তিনি নিজে যেহেতু মূর্তিমতী প্রজ্ঞা, সেহেতু সহজেই দেবতাদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন।[৩৮][৩৯] এই গ্রন্থে দেখা যাচ্ছে সকল পুরুষ দেবতারা দেবীর অধীনস্থ ও দেবীর উপর নির্ভরশীল।[৪০]

দর্শন: ৭ম থেকে ৯ম স্কন্ধ

সম্পাদনা
 
মহীশূর রাজবাড়ি চত্বরে অবস্থিত ভুবনেশ্বরী মন্দির। এই পুরাণের ৭ম স্কন্ধে ভুবনেশ্বরীকে সর্বোচ্চ দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৪১]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের সপ্তম স্কন্ধে বিষয়বস্তু অনেকটা দর্শনের দিকে বাঁক নিয়েছে। এই অংশে বেদের সারমর্মের শাক্ত ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে।[৪২] দেবীগীতা এই স্কন্ধেরই অন্তর্গত।[৪২][৪৩] দেবী ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনিই জগৎ সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্ম। এখানে অদ্বৈত মত অনুসরণ করে বলা হয়েছে যে, আধ্যাত্মিক মুক্তি তখনই লাভ করা যায় যখন ব্যক্তির নিজের আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের অভেদত্ব অনুধাবন করতে পারে।[৪২][৪৪] দেবীর মতে, নিজেকে জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজ আত্মার ধ্যানে রত হলে এই জ্ঞান অর্জন করা যায়।।[৪২][৩৩]

দেবীগীতা

সম্পাদনা

ভগবদ্গীতা গ্রন্থের মতো দেবীগীতা অংশটিও একটি সংক্ষিপ্ত দার্শনিক সন্দর্ভ।[৪৫] এই গ্রন্থে দিব্য নারীসত্ত্বাকে ব্রহ্মাণ্ডে শক্তিশালী ও স্নেহময়ী সৃষ্টিকর্ত্রী, পরিব্যাপ্তকারিণী ও রক্ষয়িত্রী রূপে চিত্রিত করা হয়েছে।[৪৬] ব্রাউন বলেছেন, দেবীগীতা গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে তিনি দয়াময়ী ও সুন্দরী বিশ্বজননী। তার নাম ভুবনেশ্বরী (অর্থাৎ, ভুবনের ঈশ্বরী)।[৪১][৪৫] এরপর ২য় থেকে ১০ অধ্যায় (পুরাণের ৩২শ থেকে ৪০শ অধ্যায়) পর্যন্ত ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন-সংক্রান্ত শিক্ষা দান করা হয়েছে।[৪৬] দেবীগীতা অংশের কিছু কিছু শ্লোক দেব্যুপনিষদ্‌ গ্রন্থের প্রায় অনুরূপ।[৪৭]

আত্মা ও দেবী

[আমার পবিত্র অক্ষর হ্রীঁ] সর্বোৎকর্ষ,[note ১]
নাম ও নামীর পার্থক্য,
সকল দ্বৈতবোধের ঊর্ধ্বে।
ইহা পূর্ণ,
অনন্ত সচ্চিদানন্দ
সেই সত্যকে ধ্যান করা উচিত,
চৈতন্যের জ্বলন্ত আলোকের মধ্যে।
সকল স্থান ও কাল পরিব্যাপ্তকারিণী দেবী রূপে
আমাতে মন নিবিষ্ট করে,
আত্মা ও ব্রহ্মের একত্ব
উপলব্ধির মাধ্যমে সহজেই আমাতে যুক্ত হওয়া যায়।

দেবীগীতা, লিন ফাউলস্টোন, স্টুয়ার্ট অ্যাবোটের অনুবাদ অনুসারে
দেবীভাগবত পুরাণ, ৭ম স্কন্ধ[৪৯]

দেবীগীতা প্রায়শই ভগবদ্গীতা থেকে উদ্ধৃতি দানের মাধ্যমে শাক্ত ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করেছে।[৪৬] এই গ্রন্থে দেবীকে বলা হয়েছে প্রত্যেক ব্যক্তিসত্ত্বার অন্তরস্থ “বিশ্বজনীন পরাশক্তি”। এই পরিভাষাটি হিন্দু দর্শনের সাংখ্য শাখা থেকে গৃহীত।[৪৬] এই গ্রন্থে অদ্বৈত বেদান্ত ধারণাগুলি গ্রহণ করা হয়েছে। অদ্বৈততত্ত্বের উপর এতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সকল দ্বৈতবোধকে এখানে ভ্রান্ত বলে প্রত্যেক জীবিত আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের একত্ব বোধকেই মুক্তির পথ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫০][৫১][৫২] যদিও ট্রেসি পিন্টম্যানের মতে, দেবীগীতা গ্রন্থে তান্ত্রিক ধারণায় দেবীকে চিত্রিত করা হয়েছে। এখানে দেবী একটি মাতৃসমা চরিত্র। যা আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্তের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ব্রহ্মের ধারণার থেকে অনেকটাই পৃথক।[৫৩]

দেবীগীতা গ্রন্থের ভক্তিতত্ত্বটি সম্ভবত ভগবদ্গীতা থেকে অনুপ্রাণিত। কৃষ্ণের প্রতি প্রেমপূর্ণ ভক্তির ধারণাটি ভাগবত পুরাণ গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই সকল গ্রন্থ একটি সাংখ্য দার্শনিক কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ভক্তির কথা আলোচনা করেছে।[৫৪][৫৫] এই গ্রন্থ মতে, ‘তামসিক ভক্তি’ হল এমন এক ভক্তি যেখানে ভক্ত ক্রুদ্ধ। তিনি অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য বা অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে দেবীপূজা করছেন।[৫৫] ‘রাজসিক ভক্তি’ হল সেই ধরনের ভক্তি, যেখানে ভক্ত অন্যের ক্ষতি করার জন্য দেবীপূজা করছেন না। তার পূজার উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত সুবিধা, খ্যাতি বা ঐশ্বর্য লাভ।[৫৪] ‘সাত্ত্বিক ভক্তি’ হল এমন এক ভক্তি যেখানে ভক্ত নিজের সুবিধা বা অন্যের ক্ষতি – কোনও কারণেই পূজা করছেন না। তার পূজার উদ্দেশ্য নিজেকে শুদ্ধ করা, পাপ মুক্ত হওয়া ও নিজের মুক্তির জন্য দেবীতে আত্মনিয়োগ করা।[৫৪]

ম্যাকড্যানিয়েল বলছেন যে, দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে ‘পরাভক্তি’কে ভক্তির সর্বোচ্চ স্তর বলা হয়েছে। এই স্তরে ভক্ত বর বা মুক্তি কিছুই চান না। তিনি দেবীকে ভালবাসেন বলে তাঁকে স্মরণ করে কাঁদেন। তিনি সর্বত্র দেবীর উপস্থিতি অনুভব করেন এবং সকল জীবিত সত্ত্বায় দেবীকে দেখেন। তিনি দেবীর ধারণা ও উপস্থিতিতে মগ্ন হয়ে থাকেন।[৫৪][৫৫]

উৎসব ও সংস্কৃতি

সম্পাদনা

রোচার বলেছেন, এই পুরাণের সপ্তম স্কন্ধে দেবী-সংক্রান্ত উৎসব, তীর্থ-সংক্রান্ত তথ্য এবং তাঁকে স্মরণ করার উপায় বর্ণিত হয়েছে।[৪২] এই স্কন্ধেই শিবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও স্কন্দের জন্মের বিবরণ সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।[৪২] এই স্কন্ধের শেষ দশটি অধ্যায় (৩১শ থেকে ৪০শ অধ্যায়) হল বিখ্যাত দার্শনিক সন্দর্ভ দেবীগীতা। এই অংশটি পৃথক গ্রন্থাকারেও প্রকাশিত হয়ে থাকে।[১৭] দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের অষ্টম স্কন্ধটিতে হিন্দু পৌরাণিক সাহিত্যের পঞ্চলক্ষণের একটি লক্ষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে পৃথিবী, গ্রহ ও নক্ষত্রের ভূগোল, সূর্য ও চন্দ্রের গতি এবং সময়ের ব্যাখ্যা ও হিন্দু পঞ্জিকা আলোচিত হয়েছে।[৫৬]

এই পুরাণের দীর্ঘতম অংশটি হল নবম স্কন্ধ। এটি গঠনভঙ্গিমা ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থের ‘প্রকৃতিখণ্ড’ অংশের অনুরূপ।[৫৭][৫৮] উভয় অংশই দেবী-কেন্দ্রিক এবং উভয় অংশেই দেবীতত্ত্ব আলোচিত হয়েছে। তবে উভয় অংশের মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে।[৫৭] ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থের ‘প্রকৃতিখণ্ডে’ অনেক শ্লোকে বিষ্ণুর বিভিন্ন নামের (অবতার) উল্লেখ করে তার স্তুতি করা হয়েছে। দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের নবম স্কন্ধে এই অংশগুলি সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিষ্ণুর নামের পরিবর্তে দেবীর নাম ব্যবহৃত হয়েছে।[৫৭]

দেবী, ব্রহ্মাণ্ড ও ধর্ম: দশম থেকে দ্বাদশ স্কন্ধ

সম্পাদনা

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের দশম স্কন্ধটি অন্যতম ক্ষুদ্রতম স্কন্ধ। এটিতে ‘মন্বন্তর’ এবং একটি প্রধান পুরাণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় লক্ষণগুলি সন্নিবেশিত হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক বিশ্বজনীন সময়চক্রে দেবী পূজিত হন। কারণ, তিনিই শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করেন।[৫৭][৫৯]

এই পুরাণের একাদশ স্কন্ধে আলোচিত হয়েছে ‘গ্রাম’ (গ্রাম, গোষ্ঠী) ও ‘দেশে’র (রাষ্ট্র) অন্তর্গত ব্যক্তির ‘সদাচার’ (গুণাবলি) ও ধর্ম[৫৭] এই অংশে শ্রুতির প্রশংসা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে শ্রুতিই প্রধান ধর্মগ্রন্থ। আরও বলা হয়েছে স্মৃতিপুরাণ গ্রন্থাবলিও সহায়ক ধর্মগ্রন্থ।[৫৭] এই অংশের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এখানে বলা হয়েছে যে, তন্ত্রও একটি সহায়ক ধর্মগ্রন্থ। তবে তন্ত্র যতক্ষণ বেদের বিরুদ্ধে না যাচ্ছে, তখক্ষণই তা সহায়ক।[৫৭] একাদশ স্কন্ধেই রুদ্রাক্ষ জপমালার উৎস, ললাটে ত্রিপুণ্ড্র নামক তিলক ধারণের মাহাত্ম্য, পাঁচ প্রকার সন্ধ্যাবন্দনা ও পাঁচ প্রকার যজ্ঞের বিবরণ দেওয়া হয়েছে।[৫৭]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের দ্বাদশ স্কন্ধে দেবীকে বেদজননী, ‘আদ্যাশক্তি’ (আদি পরমা শক্তি) ও গায়ত্রী মন্ত্রের সার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৬০] শ্লোকগুলিতে গায়ত্রী মন্ত্রের প্রত্যেকটি অক্ষর থেকে হিন্দু ধর্মীয় প্রথায় গুরুত্বপূর্ণ ১০০৮টি নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।[৬০] এই নামগুলি ঐতিহাসিক ঋষিগণ, দেবদেবী, সাংগীতিক ছন্দ, মুদ্রা ও দেবীর মাহাত্ম্যসূচক নাম।[৬০]

প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

ফাউলস্টন ও অ্যাবটের মতে, দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থের শ্লোকসমূহ ও ধারণাগুলি ঔপনিষদ্‌ ভিত্তির উপর স্থাপিত। এই গ্রন্থে অদ্বৈতবাদ এবং ব্রহ্মআত্মার একত্ব প্রতিপাদিত হয়েছে।[৬১][৪২] সি. ম্যাকেঞ্জি ব্রাউন ও অন্যান্য গবেষকের মতে, দেবীভাগবত পুরাণ আদি শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্ত শাখার দর্শন ও রূপকালঙ্কারগুলি ব্যবহার করেছে। যদিও এই ধারণাগুলি এই গ্রন্থে দেবীকে কেন্দ্র করে পুনঃসৃজিত হয়েছে।[৩০][৪৪] ট্রেসি পিঞ্চম্যানের মতে, এই গ্রন্থে দেবী শুধুমাত্র ব্রহ্ম-আত্মা নন, তিনি মায়া বা নিত্য-পরিবর্তনশীল জাগতিক সত্যও বটে।[৬২]

দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে দেবী হলেন একাধারে ‘অবিদ্যা’র (অজ্ঞানতা) মাধ্যমে আত্ম-বন্ধনের এবং ‘বিদ্যা’র (জ্ঞান) মাধ্যমে আত্ম-মোক্ষ লাভের কারণ।[৩০] এই গ্রন্থ অনুসারে, তিনি ব্রহ্ম নামে পরিচিত বৈদিক অধিবিদ্যামূলক সত্যের ধারণাটির অনুরূপ। অন্যদিকে তিনি মহাশক্তি, ব্রহ্মাণ্ডের চালিকাশক্তি, মহানায়িকা, গুপ্তশক্তি, শক্তি এবং সকলের অন্তরে নিহিত আনন্দ।[৬১][৬৩][৬৪] কিনসলের মতে, এই পুরাণে উল্লিখিত দেবীই হলেন সকল পদার্থ, ধরিত্রী মাতা, ব্রহ্মাণ্ড ও পরমাপ্রকৃতি।[৬৫] ব্রাউন বলেছেন, এই গ্রন্থে দেবীকে ‘ব্রহ্মাণ্ডের গর্ভাশয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তার সন্তানদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন, তাদের সত্য প্রকৃতি আবিষ্কার ও উপলব্ধি করতে সাহায্য করেন, তাদের ভ্রান্তি ক্ষমা করেন, যাঁরা তার সন্তানদের ভীতিপ্রদর্শন করেন, তাদের প্রতি ভয়ংকরী মূর্তি ধারণ করেন এবং তিনি সকল আত্মার বন্ধু হন।[৬৬]

সিনথিয়া হিউমস খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত দেবীমাহাত্ম্যম্‌ গ্রন্থে প্রদত্ত দেবীর বিবরণের সঙ্গে পরবর্তীকালে রচিত দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে প্রদত্ত দেবীর বিবরণের তুলনা করেছেন।[৬৭] হিউমস বলেছেন, উভয় গ্রন্থেই নারীশক্তিকে বন্দনা করা হয়েছে। তবে দুই গ্রন্থের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।[৬৭] দেবীমাহাত্ম্যম্‌ গ্রন্থে নারীর সম্পর্কে কোথাও নেতিবাচক কিছু বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, “সকল নারীই দেবীর অংশসম্ভূতা”।[৬৮] অপর দিকে দেবীভাগবত পুরাণ গ্রন্থে নারীর ধারণাটি জটিলতর।[৬৮] এই গ্রন্থে কয়েকটি শ্লোকে নারীর সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নারীর আচরণ “অবিমৃষ্যকারিতা, ভ্রান্ত, নিষ্ঠূর, অসৎ” হতে পারে। এই রকম আরও কিছু শ্লোক রয়েছে। এই পুরাণে নারীর বন্দনাও করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তার আচরণ “নায়িকাসুলভ, স্নেহশীল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, শক্তিশালী” হতে পারে। এই রকম শ্লোকও এই পুরাণে পাওয়া যায়।[৬৮]

জুন ম্যাকড্যানিয়েলের মতে, দেবীভাগবত পুরাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভক্তিমূলক শাক্ত ধর্মগ্রন্থ।[৫৪]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. ‘হ্রীঁ’ হল একটি তান্ত্রিক বীজমন্ত্র। এটির অর্থ (দুঃখ) হরণ করা’।[৪৮]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Dalal 2014, পৃ. 117।
  2. Rocher 1986, পৃ. 168।
  3. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 44-45, 129, 247-248 with notes 57-60।
  4. John Stratton Hawley ও Donna Marie Wulff 1998, পৃ. 6-14।
  5. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 183-188।
  6. David Kinsley 1988, পৃ. 133-139।
  7. Alf Hiltebeitel ও Kathleen M. Erndl 2000, পৃ. 24-36, 48 (RS Sherma)।
  8. K P Gietz 1992, পৃ. 330 with note 1809, 497 with note 2764।
  9. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 128-132।
  10. June McDaniel 2004, পৃ. 89-91, 159-161।
  11. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 142-144।
  12. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 49, 130, 134, 139।
  13. Rocher 1986, পৃ. 172।
  14. Alf Hiltebeitel ও Kathleen M. Erndl 2000, পৃ. 139, Quote: (...) portrayals of the Goddess in the later Devi Bhagavata (c. ninth century CE) bear crucial differences from those of the Goddess in the Devi Mahatmya.।
  15. P. G. Lalye (১৯৭৩)। Studies in Devī Bhāgavata। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 101–105। 
  16. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 128।
  17. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 1-4।
  18. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 4।
  19. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 166।
  20. Collins 1988, পৃ. 36।
  21. Rocher 1986, পৃ. 191-192।
  22. John Stratton Hawley ও Donna Marie Wulff 1998, পৃ. 2, 9-10, 26 with note 2।
  23. Philip Lutgendorf 2003, পৃ. 251-252।
  24. Klostermaier 2010, পৃ. 496।
  25. Klostermaier 2010, পৃ. 101-102, 492।
  26. John Stratton Hawley ও Donna Marie Wulff 1998, পৃ. 2।
  27. Lochtefeld 2002, পৃ. 94।
  28. Rocher 1986, পৃ. 168-170।
  29. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 73।
  30. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 75।
  31. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 5-6।
  32. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 6-10।
  33. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 131-138।
  34. Alf Hiltebeitel ও Kathleen M. Erndl 2000, পৃ. 24-31।
  35. Rocher 1986, পৃ. 168-172।
  36. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 183-184।
  37. Rocher 1986, পৃ. 169।
  38. Rocher 1986, পৃ. 169-170।
  39. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 201-216।
  40. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 73-74।
  41. Tracy Pintchman 2014, পৃ. 26-28।
  42. Rocher 1986, পৃ. 170।
  43. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 1-2, 85-98।
  44. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 12-17।
  45. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 179-198।
  46. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 1-3।
  47. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 25-26, 77 with note 26।
  48. hrIm, Sanskrit-English Dictionary, Koeln University, Germany (2012)
  49. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 74-75।
  50. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 1-3, 12-17।
  51. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 9, 34, 89-90, 131-138।
  52. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 15-16।
  53. Tracy Pintchman 2014, পৃ. 9-10।
  54. June McDaniel 2004, পৃ. 158-161।
  55. Cheever Mackenzie Brown 1998, পৃ. 23-25।
  56. Rocher 1986, পৃ. 170-171।
  57. Rocher 1986, পৃ. 171।
  58. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 160।
  59. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 133-134।
  60. Rocher 1986, পৃ. 171-172।
  61. Lynn Foulston ও Stuart Abbott 2009, পৃ. 75-76।
  62. Tracy Pintchman 2014, পৃ. 29-30।
  63. Tracy Pintchman 2015, পৃ. 128, 131-138।
  64. David Kinsley 1997, পৃ. 131-134।
  65. David Kinsley 1988, পৃ. 179-180।
  66. C Mackenzie Brown 1990, পৃ. 129-130।
  67. Alf Hiltebeitel ও Kathleen M. Erndl 2000, পৃ. 139-140 (Cynthia Humes)।
  68. Alf Hiltebeitel ও Kathleen M. Erndl 2000, পৃ. 139-142 (Cynthia Humes)।

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা