মেঘনা বিভাগ
মেঘনা বিভাগ বাংলাদেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের প্রস্তাবিত একটি প্রশাসনিক বিভাগ। মেঘনা বিভাগ হলে এর সদরদপ্তর হবে কুমিল্লা শহর।[২] প্রস্তাবিত এই বিভাগ কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর এবং লক্ষ্মীপুর নিয়ে গঠিত হবে।[৩][৪][৫][৬] এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের মোট ১২,৮৪৮.৫৩ কিমি২ (৪,৯৬০.৮৫ মা২)[৭] এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানে জনসংখ্যা ছিল ১,৬৭,০৮,০০০ জন।[৮][৯]
মেঘনা বিভাগ সমতট – রোসানবাদ [১] | |
---|---|
প্রস্তাবিত বিভাগ | |
![]() প্রস্তাবিত মেঘনা বিভাগ | |
দেশ | ![]() |
আসন | কুমিল্লা |
আয়তন | |
• মোট | ১২,৮৪৮.৫৩ বর্গকিমি (৪,৯৬০.৮৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৬৭,০৮,০০০ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | BD-B |
১৯৮৯ সালে বৃহত্তর কুমিল্লার কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরসহ ছয়টি জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি শুরু হয়।[১০] চট্টগ্রাম বিভাগকে ভেঙে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে পৃথক বিভাগ করা যায় কি না, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নির্দেশনা দেন।[১০]
নামকরণে মতপার্থক্য
প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অঞ্চলকে বর্ণনা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন:
ভৌগোলিক শব্দসমূহ:
- ময়নামতি: ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুমিল্লা অঞ্চলের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ময়নামতির নামানুসারে বিভাগের নাম “ময়নামতি” করার ঘোষণা দেওয়া হয়।[১১] তবে এই নামকরণের বিরুদ্ধে কুমিল্লা শহরে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।[১২]
- সমতট: একটি প্রাচীন রাজ্য ছিল। বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চল এবং বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল সমতট রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ভৌগোলিকভাবে প্রস্তাবিত বিভাগটি দুটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক অঞ্চল দ্বারা গঠিত - বৃহত্তর কুমিল্লা এবং বৃহত্তর নোয়াখালী।
- বৃহত্তর কুমিল্লা: ১৭৯০ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা বঙ্গের একটি জেলা ত্রিপুরা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়[১৩] এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে কুমিল্লা নামে নামকরণ করা হয়।[১৪] এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের অংশবিশেষ অন্তর্গত ছিল যা ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
- বৃহত্তর নোয়াখালী; নোয়াখালীর প্রাচীন নাম ভুলুয়া। নোয়াখালী জেলাটি ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এতে লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর অংশবিশেষ অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
- রোসানবাদ; মুঘল আমলে সুবাহ বাংলার এ এলাকা রোসানবাদ এলাকা নামে সুপরিচিত ছিল।
- ত্রিপুরা; প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগটি ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইতিহাস
প্রস্তাবিত মেঘনা বিভাগ অর্থাৎ বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল সমতট নামক প্রাচীন রাজ্যের অধীনে ছিল। এখানে কুমিল্লা পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৯০ সালে ও সিটি কর্পোরেশন হয় ২০১১ সালে।
২০২১ সালের ২১ অক্টোবর মেঘনা নদীর নামে বিভাগ হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।[১৫] তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিকারের সভায় পদ্মা বিভাগ ও মেঘনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।[১৬][১৭]
প্রশাসনিক জেলা
এই বিভাগটি ছয়টি জেলা এবং ৫৯টি উপজেলা (উপজেলা) নিয়ে গঠিত হবে।
নাম | রাজধানী | আয়তন(কিঃমি২) | জনসংখ্যা ১৯৯১ আদমশুমারি |
জনসংখ্যা ২০০১ আদমশুমারি |
আদমশুমারি ২০১১ আদমশুমারি (প্রাথমিক তথ্য) |
---|---|---|---|---|---|
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ১,৯২৭.১১ | ২১,৪১,৭৪৫ | ২৩,৯৮,২৫৪ | ২৮,০৮,০০০ |
কুমিল্লা জেলা | কুমিল্লা | ৩,০৮৫.১৭ | ৪০,৩২,৬৬৬ | ৪৫,৯৫,৫৩৯ | ৫৩,০৪,০০০ |
চাঁদপুর জেলা | চাঁদপুর | ১,৭০৪.০৬ | ২০,৩২,৪৪৯ | ২২,৭১,২২৯ | ২৩,৯৩,০০০ |
লক্ষ্মীপুর জেলা | লক্ষ্মীপুর | ১,৪৪০.৩৯ | ১৩,১২,৩৩৭ | ১৪,৮৯,৯০১ | ১৭,২৯,১৮৮ |
নোয়াখালী জেলা | মাইজদী | ৪,২০২.৮৭ | ২২,১৭,১৩৪ | ২৫,৭৭,২৪৪ | ৩১,০৮,০৮৩ |
ফেনী জেলা | ফেনী | ৯৯০.৩৬ | ১০,৯৬,৭৪৫ | ১২,৪০,৩৮৪ | ১৪,৩৭,৩৭১ |
মোট | ১৩,৩৪৯.৯৬ | ১,২৮,৩৩,০৭৬ | ১,৪৫,৭২,৫৫১ | ১,৬৭,০৮,০০০ |
তথ্যসূত্র
- ↑ Gumming, J. G. (১৮৯৯)। Survey and settlement of the Roshanbad estate in the districts of Tippera and Noakhali, 1892–99।
- ↑ "কুমিল্লা বিভাগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি"। prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৪।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৮।
- ↑ ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনে কাজ শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর। Prothom Alo। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Mymensingh to become new division"। The Daily Star। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "3 new divisions to be formed"। The Independent। Dhaka। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "চট্টগ্রাম বিভাগ"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ http://www.observerbd.com/2015/10/30/118019.php
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ হক, গাজীউল (২৭ মার্চ ২০১৫)। "কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে ময়নামতি"। প্রথম আলো। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
- ↑ মোল্লা, মহিউদ্দিন (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "ময়নামতি না কুমিল্লা!"। কুমিল্লা: বাংলা ট্রিবিউন। ১৯ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
- ↑ Bengal District Gazetteer, Tipperah District – 1933
- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "কুমিল্লা জেলা"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "'পদ্মা' ও 'মেঘনা' বিভাগ গঠন স্থগিত"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ "পদ্মা ও মেঘনা বিভাগ করার প্রস্তাব স্থগিত"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ "পদ্মা ও মেঘনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত স্থগিত"। banglanews24.com। ২৭ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২২।