আরিফুর রহমান
আরিফুর রহমান (জন্ম: ৮ আগস্ট ১৯৮৪) একজন বাংলাদেশী-নরওয়েজীয় রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট, চিত্রকর এবং অ্যানিমেটর। তিনি কার্টুন ম্যাগাজিন টুনস ম্যাগ-এর প্রকাশক, এবং আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতা এবং প্রদর্শনীর আয়োজক।
আরিফুর রহমান | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | নরওয়েজীয় |
পেশা | কার্টুনিস্ট |
কর্মজীবন | ২০০৪-বর্তমান |
পরিচিতির কারণ | দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | রাজনৈতিক কার্টুন |
রাজনৈতিক দল | সমাজতান্ত্রিক বাম দল (নরওয়ে) |
ওয়েবসাইট | www |
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাআরিফুর রহমান ১৯৮৪ সালের ৮ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার টেটিয়ার কান্দা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার বাড়ি একই উপজেলার গাড়াদহ গ্রামে। জন্মের কয়েক বছর পর আরিফুর রহমানের বাবা অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আরিফুর রহমানের মা এবং ছোট বোনকে ত্যাগ করে অন্যত্র পাড়ি জমান।[১] এরপর মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি ফিরে আসেন। তার শৈশব কেঁটেছে অভাব-অনটন এবং দুর্বিষহ সময়ের মধ্য দিয়ে। এমনও দিন গেছে যে, একই জামা-কাপড় জোড়া তালি দিয়ে দুই বছর পার করেছেন। এমনকি গ্রামে থাকতে স্কুল থেকে আসার পর মামাদের ছাগল-ভেড়ার দেখাশোনাও করেছেন।[১] মায়ের অভাব অনটনের কারণে শাহজাদপুর সদরে বড় মামার বাড়িতে থেকে পঞ্চম শ্রেণী থেকে স্নাতক পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
তিনি একজন স্ব শিক্ষিত কার্টুনিস্ট এবং চিত্রশিল্পী, শৈশব থেকে ছবি আঁকা শুরু করেন।[২] ২০০৪ সালে তার আঁকা প্রথম কার্টুন দৈনিক যুগান্তরের রম্য ম্যাগাজিন বিচ্ছুতে প্রকাশিত হয়।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনা- ২০০১-০৫ আরিফুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
- ২০১২-১৩ সালে নরওয়ের লিল্লাহমেরের নানসেন একাডেমি থেকে সৃজনশীল চিত্রকলা অধ্যয়ন করেন।[৩]
- ২০১৪-১৬ সালে নরওয়ের অসলোর ক্রিস্টিয়ানিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন নিয়ে অধ্যয়ন করেন।[৪][৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআরিফুর রহমান ২০০৪ সালে শাহজাদপুর সরকারি কলেজে ছাত্রাবস্থায় কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, সম্পাদকীয়, বিদ্রূপাত্মক কার্টুন এবং কমিক্স অঙ্কন শুরু করেন। ২০০৪-২০০৭-এর সময় যুগান্তর, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক সমকাল, যায়যায়দিন, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক প্রথম আলোর মতো বিভিন্ন বাংলাদেশি সংবাদপত্রে তার কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ সালে, দৈনিক প্রথম আলো-এর সাময়িকী আলপিন কতৃর্ক আয়োজিত “পিন হান্ট” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় আরিফুর রহমান তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী হয়েছিলেন এবং ২০০৬ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। ২০০৭ সালে দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার বিজয়ী হয়েছিলেন। দুর্নীতি বিরোধী কার্টুনের জন্য রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য্য, এবং আহসান হাবিবের মতো কিংবদন্তি বাংলাদেশী কার্টুনিস্টদের দ্বারা তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ২০০৭ সালে প্রথম আলো তাকে প্রদায়ক কার্টুনিস্ট হিসাবে কার্টুন আঁকার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।
নরওয়েতে, তার কার্টুন বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয়েছিল, যেমন অ্যাকেরশুশ অ্যামতিদেন্সদে, ন্যি তিদ, সিন ওগ সেগন, সামতিদেন, আফটেনপস্টেন, ওস্টল্যান্ডপস্টেন, ওস্টল্যান্ডস-পোস্টেন, ব্ল্যাডেট ওয়েস্টার্নেন, আভিসা নর্ডল্যান্ড, গ্ল্যামডলেন, স্টাভানগার আফটেনব্যাড এবং নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মেলডিং টু স্তুরটিঙে।[৬]
প্রদর্শনী
সম্পাদনা২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, নরওয়ে, সুইডেন, মরক্কো, তুরস্ক, ইরান, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, নেদারল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের চল্লিশটির ও বেশি স্থানে তার চিত্রকর্ম এবং কার্টুন প্রদর্শিত হয়েছে।[৭][৮][৯][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫]
পুরস্কার
সম্পাদনা- ২০০৬: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় পুরস্কার।
- ২০০৬: আলপিন পিন হান্ট কার্টুন প্রতিযোগিতা প্রথম আলো, বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় পুরস্কার।
- ২০০৭: দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার।[১৬][১৭][১৮][১৯]
- ২০০৮: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতায় বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।
- ২০০৮: কার্টুনিস্ট রাইটস নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।
- ২০১১: ক্ষুদ্র অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ট্রাই (চেষ্টা) এর জন্য বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার।
- ২০১৫: জার্মানির ডয়েচে ভেলে থেকে টুনস ম্যাগ বাংলার জন্য জন্য বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম পুরস্কার।[২০][২১][২২]
- ২০১৫: নরওয়ের আর্টিস্ট ফেডারেশন কর্তৃক কার্টুনিস্ট পেড্রো মেমোরিয়াল গ্রান্ট।[২৩]
প্রকাশনা
সম্পাদনা২০০৯ সালে কার্টুনে মুক্তমত প্রকাশের লক্ষ্যে আরিফুর রহমান টুনস ম্যাগ কার্টুন সাময়িকী প্রকাশনার প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে প্রতিদিন রাজনৈতিক এবং রম্য কাটুন, কমিক্স, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সংবাদ এবং নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন দেশের কার্টুনিস্টরা সেখানে প্রদায়ক হিসেবে অবদান রেখে থাকেন। বর্তমানে মোট ছয়টি ভাষায় টুনস ম্যাগের সংকলন প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে টুনস ম্যাগের বাংলা সংস্করণ জার্মানির ডয়েচে ভেলে থেকে বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম পুরস্কার লাভ করে।[২০][২১][২২]
রাজনীতি
সম্পাদনাআরিফুর রহমান ২০১৮ সালে নরওয়ের স্থানীয় রাজনৈতিক দল সমাজতান্ত্রিক বাম দল (নরওয়ে) এর সদস্য হন এবং স্থানীয় দলীয় কমিটির ডেপুটি নির্বাচিত হন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ২০১৯ সালের ফ্রগন মিউনিসিপ্যালিটির নির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন।[২৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Welle (www.dw.com), Deutsche। "মায়ের অসহায়ত্ব তুলে ধরেছি কার্টুনে | DW | 09.03.2016"। DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২৪।
- ↑ "Arifur Rahman"। ICORN international cities of refuge network (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Arifur til Nansenskolen"। www.oblad.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ২০১২-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-০৫।
- ↑ "Kjemper for tankefrihet"। www.dagsavisen.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Arifur Rahman - Bjørnsonfestivalen 2015"। arkiv.bjornsonfestivalen.no। ২০১৯-০৬-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ Utenriksdepartementet (২০১৪-১২-১২)। "Meld. St. 10 (2014-2015)"। Regjeringen.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Bengali cartoonist shines in Scandinavia"। www.observerbd.com। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ Radio, Sveriges। "Världens satirtecknare lever farligt - P4 Östergötland"। sverigesradio.se (সুইডিশ ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ ক খ Madhukar, Jayanthi MadhukarJayanthi; Feb 27, Bangalore Mirror Bureau | Updated:; 2016; Ist, 21:01। "The feminist half"। Bangalore Mirror (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Správy RTVS"। rtvs.sk (স্লোভাক ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Pozvánka na výstavu - Správy - MZV MZV PORTAL"। www.mzv.sk। ২০১৯-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ Segraeus, Sara (২০১৪-১২-০৬)। ""Jag förstod inte vilka konsekvenser serien skulle få""। www.folkbladet.se। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ Torvik, Tonje Beate (২০১৪-০৮-২৮)। "Farlige tegninger"। Panorama HiMolde (নরওয়েজিয়ান বোকমাল ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ Sätre, Trond (২০১৭-০৬-১২)। "Politiske perspektiv • serienett.no"। serienett.no (নরওয়েজিয়ান বোকমাল ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Express Publications Indulge - Chennai dated Fri, 12 May 17"। epaper.newindianexpress.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "দ্য ডেইলি স্টার Web Edition Vol. 5 Num 1140"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "দ্য ডেইলি স্টার Web Edition Vol. 5 Num 1140"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "::: Star Insight :::"। www.thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "দ্য ডেইলি স্টার Web Edition Vol. 5 Num 1137"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ ক খ "People's Choice for Bengali - The Bobs - Best of Online Activism" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ ক খ "Drøbak-tegneren Arifur Rahman er nominert til «beste online aktivist»"। www.amta.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ২০১৫-০৪-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ ক খ "Drøbak-tegner Arifur Rahman kåret til beste aktivist på nett"। www.amta.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ২০১৫-০৫-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Fribytegner Rahman fra Drøbak er tildelt Tegneforbundets stipend"। www.amta.no (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ২০১৫-১০-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "Arifur Rahman runs for office"। CARTOONISTS RIGHTS NETWORK INTERNATIONAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-১৭। ২০১৯-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২০।