জন্মের পর থেকে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি [] কালের পূর্বের সময়টাকে শৈশব বলে। পিয়াজেট থিওরী অব কজিট্যাটিভ ডিভেলপমেন্ট[] অনুসারে শৈশব কালের দুটি পর্ব রয়েছে। একটি হল প্রাক কর্মক্ষম পর্ব এবং অন্যটি হল কর্মক্ষম পর্ব। ডিভেলপমেন্টাল সাইকোলজি অনুসারে শৈশবকালকে হাঁটা শিক্ষার সময়, খেলার সময়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধিকাল সময়ে ভাগ করা হয়েছে। শৈশবকালের ধারণাটি ১৭শ থেকে ১৮শ শতাব্দিতে উদ্ভব হয় বিশেষত দার্শনিক জন লক ( John Locke ) এর শিক্ষা বিষয়ক মত্ববাদে।[] এর আগে শৈশবকালকে বড়দের অসম্পূর্ণ সংস্করণ হিসাবে দেখা হত।

শৈশবের বয়স পরিসীমা

সম্পাদনা

শৈশবকালের নিদ্দিষ্ট কোন বয়স পরিসীমা নেই। সাধারণত জন্মের পর থেকে শৈশবকাল শুরু হয় এবং বয়ঃসন্ধিকা্লে শেষ হয়। বিশ্বের অনেক দেশে শৈশবকালের একটি বয়স সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে যা অতিক্রম করার পর তারা পূর্নবয়স্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এই বয়স সীমা বিভিন্ন দেশভেদে ১৫-২১ বছরের মধ্য কিন্তু অধিকাংশ দেশে তা ১৮ বছর ।

শৈশব উত্তরণের বিভিন্ন পর্যায়

সম্পাদনা

শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়

সম্পাদনা
 
শিশুরা ভাওলিন বাজাচ্ছে

শৈশবের গোড়ার দিকে শিশুরা কথা বলতে এবং স্বাধীনভাবে হাঁটতে শুরু করে। National Association for the Education of Young Children এর মতে শৈশবের প্রাথমিক পর্যায় ৮ বছর বয়স পর্যন্ত। এই পর্যায়ে শিশুরা দেখে , পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জিনিস শিখে থাকে। বড়রা পরামর্শ এবং সাহায্য করে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এর ফলে বড়দের এবং শিশুদের মধ্য মায়ার বন্ধন গড়ে ওঠে। এই পর্যায়ে শিশুরা সমাজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে থাকে।

শৈশবের মধ্যবর্তী পর্যায়

সম্পাদনা
 
ম্যাডাগ্যাস্কার শিশুরা

সাত থেকে আট বছর বয়সে শৈশবের মধ্যবর্তী পর্যায় শুরু হয়ে বয়ঃসন্ধিকালের পূর্ব মুহূর্তে শেষ হয়। এই সময়ে শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করে ফলে তারা মানসিক এবং সামাজিক ভাবে উন্নতি লাভ করে। শিশুরা এই সময়ে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে এবং নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করে । যার ফলে তারা আরও স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র হয়ে গড়ে ওঠে।

বয়ঃসন্ধিকাল

সম্পাদনা
 
ভারতের কিশোররা

বয়ঃসন্ধিকাল শৈশবকাল থেকে সম্পূর্ণ তবে বেশিরভাগ সমাজে কৈশোরকে শৈশবের একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ তারা এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক

ইতিহাস

সম্পাদনা

ফিলিপ এরিজ ফরাসি ঐতিহাসিক বলেন শৈশবকাল প্রাকৃতিক বিষয় নয় বরং সমাজের সৃষ্টি। এই কথাটি কানিংহামও তার বই " ইনভেনশন অব চাইল্ডহোড(২০০৬)"-তে উল্লেখ করেছেন।

 
Playing Children, by Song Dynasty Chinese artist Su Hanchen, c. 1150 AD.

১৬০০ শতাব্দির দিকে ইউরোপে শৈশব ধারণাটি উত্থান হয়। তখন থেকে বড়রা ছোটদের নিষ্পাপ ভাবতে শুরু করে এবং প্রয়োজনে তাদের রক্ষা এবং সাহায্য করতে শুরু করে। শিশুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবতর্নে ইংরেজ দার্শনিক জন লক বিশেষ অবদান রাখে। তার থিওরী টেবুলা রাসাতে তিনি শিশুদের মস্তিককে খালি সেলেট হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এই মত্ববাদ মতে শিশুদের মস্তিক ফাঁকা থাকে ফলে তাদের বাবা-মা কে শিশুদেরকে ভালভাবে লালন পালন করতে হয়। পুঁজিবাদী সমাজের গোড়ার দিকে ডাচ রিপাবলিকের কিছু দেশ এবং ইংল্যান্ড পরিবার নিয়ে একটি ভাবার্দশের জন্ম দেয় যেটি শিশুদের কীভাবে লালন পালন করতে হবে তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।

 
The Age of Innocence c.1785/8. Reynolds emphasized the natural grace of children in his paintings

শিশুদের প্রতি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি শুরু হয় চৈতন্য ও রোমান্টিক যুগের সময়। জাঁ জ্যাক রুশো তার বিখ্যাত বই  Emile: or, On Education শিশুদের প্রতি কীভাবে ব্যবহার/আচারণ করতে হবে তা প্রনয়ন করেন। জন লক ও ১৭০০ শতাব্দির অন্যান্য চিন্তাবিদের মত রুশো বলেন, শৈশব হচ্ছে সাবালকত্বের বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করার আগের একটি ক্ষণস্থায়ী সময়।[] স্যার জসুয়া রেনল্ডস তার বিশাল চিত্রকর্মের মধ্য শিশুদের প্রতি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি কিরূপ হবে তা তুলে ধরেন। ১৭৮৮ সালে তার আঁকা দ্যা এজ অব ইনোসেন্স চিত্র যা শিশুদের স্বাভাবিকতা ও সরলতা তুলে ধরে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

শিল্প বিপ্লবের শুরুতে শিশু শ্রম ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।[] এ সময় গরিব পরিবারের শিশুদের কাজ করা ছিল বাধ্যতামূলক। এ সময় বিশেষত শিশুদের খনি ও রাসায়নিক কারখানায় কাজ করানো হত। শিল্প বিপ্লবের শুরুতে শিশুরা অল্প পারিশ্রমিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করত।

বর্তমানে শিশু শ্রমের বিরদ্ধে আইন তার সূত্রপাত ১৯০০ শতাব্দির দিকে। ১৯০০ শতাব্দির শেষার্ধে ইউরোপ জুড়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হলে শিশুরা কর্মক্ষেত্র ছেড়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। ১৯০০ শতাব্দিতে শিশুদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে খেলনা বানানো শুরু হয়।

শিশু অধিকার[]

সম্পাদনা

বড়দের মত ছোটদের ও আইনি অধিকার রয়েছে। জাতিসংঘ শিশুদের জন্য প্রনয়ন করেছেন শিশু অধিকার সনদ বা Convention on the Rights of the Child ( CRC )[]। এই সনদে ১৮ বছরের নিচে সব মানবসন্তানকে শিশু বলা হবে, যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ শিশু অধিকার সনদ অনুসারে শিশুদের অধিকারগুলোর মধ্য অন্যতম হলঃ-

  • বেঁচে থাকার অধিকার ।
  • পিতামাতার সাথে বসবাসের অধিকার ।
  • মত প্রকাশের অধিকার ।
  • শিশুর চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো।
  • শিশুর সংঘবদ্ধ ও সমাবেশের অধিকার ।
  • মর্যাদা ও সুনামের অধিকার ।
  • চিকিৎসার অধিকার।
  • সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার।
  • শিক্ষা লাভের অধিকার।
  • বিনোদনের অধিকার।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র 

সম্পাদনা
  1. "বয়ঃসন্ধি" 
  2. "Piaget's theory of cognitive development" 
  3. "Eddy, Matthew Daniel (2010" 
  4. David Cohen, The development of play (2006) p 20 
  5. "Child_labour" 
  6. "Rights under the Convention on the Rights of the Child"UNICEF (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১০-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩ 
  7. "UNICEF Home" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩