শহর

গ্রামের চেয়ে বড় কিন্তু বড় শহরের চেয়ে ছোট এমন মানব বসতি
(City থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শহর বলতে কোনো নির্দিষ্ট আকারের মানব বসতিকে বোঝায়। বিশ্বজুড়ে "শহর" বলতে বিভিন্নরকম বসতিকে বোঝায়, তবে এটি সাধারণত কোনো গ্রামের চাইতে বড় হয়। বৃহত্তর শহরকে নগর বলা হয়। শহরে লোকজন বসবাস করে ও কাজ করে, এতে অনেক ঘরবাড়ি, দোকানপাট, কার্যালয়, বিনোদনকেন্দ্র, ইত্যাদি থাকে।

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

"শহর" শব্দটি ফার্সি شهر (শহ্‌র্) থেকে গৃহীত, যা সংস্কৃত क्षत्र (ক্ষত্র) শব্দের সাথে সম্পর্কিত।

মহাদেশ ও দেশ অনুযায়ী সংজ্ঞা

সম্পাদনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিভাগ ইউরোস্ট্যাটের মতে শহর হল একটি পৌরবসতি[][]

  • যেটির আকার মধ্যম (জনসংখ্যা ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার)
  • যেটির একটি উচ্চ জনঘনত্ববিশিষ্ট পৌর অঞ্চল (Dense urban cluster) আছে (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৫০০ জনের বেশি), যেখানে বসতিটির ৫০%-এর কম অধিবাসী বাস করে
  • যেটির একটি মধ্য জনঘনত্ববিশিষ্ট পৌর অঞ্চল (Semi-dense urban cluster) আছে (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩০০ থেকে ১৫০০ জন)
  • যেটির একটি নিম্ন জনঘনত্ববিশিষ্ট গ্রামীণ অঞ্চল (Rural cluster) আছে (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩০০ জনের কম), যেখানে বসতিটির ৫০%-এর কম অধিবাসী বাস করে।

অর্থাৎ ইউরোপে শহর হল নগর ও গ্রামের মধ্যবর্তী একটি রূপ এবং মধ্যম আকারের একটি বসতি, যার জনঘনত্ব শহরের মতো বেশি নয়, আবার গ্রামের মতো কমও নয়, মাঝামাঝি প্রকৃতির। যদি ছোট শহরের উচ্চ জনঘনত্ববিশিষ্ট অঞ্চলটির জনসংখ্যা বেশি হয়, তবে তাকে উচ্চ-জনঘনত্বের শহর (Dense town) বলে। আর যদি মধ্য জনঘনত্ববিশিষ্ট অঞ্চলটির জনসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে সেটিকে মধ্য-জনঘনত্বের শহর (Semi-dense town) বলে।

জার্মানি

সম্পাদনা

জার্মান ভাষায় শহরকে Stadt (প্রতিবর্ণী: শ্‌টাট্) এবং গ্রামকে Dorf (প্রতিবর্ণী: ডোর্ফ়্) বলা হয়। ১৮৮৭ সালের আন্তর্জাতিক রশিবিজ্ঞান সম্মেলন জনসংখ্যা অনুযায়ী জার্মানির শহরের বিভিন্ন প্রকারভেদ নির্ধারণ করেছিল:

  • Landstadt (প্রতিবর্ণী: লান্ট্‌শ্‌টাট্, আক্ষ.'দেশীয় শহর'), যার জনসংখ্যা ৫,০০০ জনের কম।
  • Kleinstadt (প্রতিবর্ণী: ক্লাইন্‌শ্‌টাট্, আক্ষ.'ছোট শহর'), যার জনসংখ্যা ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ জনের মধ্যে।
  • Mittelstadt (প্রতিবর্ণী: মিট্যল্‌শ্‌টাট্, আক্ষ.'মাঝারি শহর'), যার জনসংখ্যা ২০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ জনের মধ্যে।
  • Großstadt (প্রতিবর্ণী: গ্রোস্‌শ্‌টাট্, আক্ষ.'বড় শহর'), যার জনসংখ্যা ১,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ জনের মধ্যে।[]

এছাড়া রয়েছে Millionenstadt (প্রতিবর্ণী: মিলিওন্যন্‌শ্‌টাট্, আক্ষ.'মিলিয়ন শহর'), যার জনসংখ্যা ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখের মধ্যে (যেমন: কোলন, মিউনিখ, বার্লিনহামবুর্গ)। ৫০ লাখের বেশি জনসংখ্যার শহরকে Megastadt (প্রতিবর্ণী: মেগাশ্‌টাট্) বলা হয়, যার আক্ষরিক অর্থ "মহানগর"।[]

যুক্তরাজ্য

সম্পাদনা
 
ইংল্যান্ডের রচেস্টার শহর, যা ১৯৯৮ সালে "সিটি" মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যে শহর বোঝাতে প্রায়ই "টাউন" (town) শব্দটি ব্যবহার করা হয়[] এবং সেখানে "সিটি" (city) হচ্ছে রাজশাসক দ্বারা প্রাপ্ত কোনো বসতির উপাধিমাত্র।[]

এশিয়া

সম্পাদনা

বাংলাদেশ

সম্পাদনা

বাংলাদেশের জনগণনাতে কোনও পৌরকেন্দ্রের জনসংখ্যা যদি ১ লক্ষের কম হয়, তাহলে তাকে "শহর" বলা হয়।[] ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশে এরূপ প্রায় ৪৯০টি শহর ছিল।

 
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ডায়মন্ড হারবার শহরের রাস্তাঘাট।

২০১১ সালের জনগণনায় শহরকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছিল: বিধিবদ্ধ শহর ও জনগণনা শহর। বিধিবদ্ধ শহর বলতে পৌরসভা, পৌর নিগম, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা নগর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বসতিকে বোঝায়। অন্যদিকে জনগণনা শহর হচ্ছে এমন এক জনবসতি যা শহর হিসাবে বিধিবদ্ধভাবে চিহ্নিত বা শাসিত নয় কিন্তু এর জনসংখ্যা পৌর বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।[] এর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

  • জনসংখ্যা ৫,০০০ জনের বেশি
  • অন্তত ৭৫% পুরুষ কর্মক্ষম অধিবাসী কৃষি ব্যতীত অন্যান্য খাতে নিয়োজিত
  • সর্বনিম্ন জনঘনত্ব ৪০০ জন প্রতি বর্গকিমি[][১০]

সমস্ত বিধিবদ্ধ শহর, জনগণনা শহর ও আউট গ্রোথকে একত্রে পৌর বসতি বলা যায়, যা গ্রামীণ বসতির বিপরীত।[]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

সম্পাদনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শহরের কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি সংজ্ঞা নেই। বরং ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিটির নিজস্ব সংজ্ঞা আছে। আবার কোনও কোনও অঙ্গরাজ্যে "শহর" কথাটি ব্যবহারই করা হয় না। আবার কোনও কোনও অঙ্গরাজ্যে ন্যূনতম জনসংখ্যার ভিত্তিতে, আবার কোনও কোনওটিতে প্রশাসনিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোনও বসতিকে শহর বলা হয়। আবার কদাচিৎ শহর (অনেকসময় বরো) বলতে কোনও নগরের প্রশাসনিক বিভাগকেও বোঝায়।[১১]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "A recommendation on the method to delineate cities, urban and rural areas for international statistical comparisons"Eurostat। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. "Territorial typologies manual - degree of urbanisation"Eurostat। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২৩ 
  3. Universität Dortmund: Kleine und mittlere Städte – Blaupausen der Großstadt? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে, Dokumentation des Expertenkolloquiums am 29. April 2004 in Dortmund
  4. "Megastadt"www.spektrum.de (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২২ 
  5. "Accessible Dictionary"accessibledictionary.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২২ 
  6. McClatchey, Caroline (২২ জুন ২০১১)। "Why do towns want to become cities?"বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০২০ 
  7. Population and Housing Census 2011 - Volume 3: Urban Area Report (পিডিএফ), Bangladesh Bureau of Statistics, আগস্ট ২০১৪, পৃষ্ঠা ix, xi, 24–26, 167, ১১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০২৩ 
  8. Ramachhandran, M. (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Rescuing cities from chaos"The Hindu Business Line। ১৮ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১২ 
  9. "Some terms and definitions" (পিডিএফ)। Census of India। ২১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১২ 
  10. Jenkins, Cordelia; Anuja (২ অক্টো ২০১২)। "New 'census' towns showcase new India"Mint। অক্টো ৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. "Places", Geographic Areas Reference Manual (পিডিএফ), USA: U.S. Department of Commerce, Bureau of the Census and Economics and Statistics Administration, সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা