সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

বাংলাদেশের একটি জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল

হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক উদ্যান।[][] ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর[] এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে "সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান" প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া আছে, সেই থেকে এর নামকরণ সাতছড়ি (অর্থ: সাতটি ছড়াবিশিষ্ট)।[] সাতছড়ির আগের নাম ছিলো "রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট"[]

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
মানচিত্র সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশের মানচিত্র
অবস্থানহবিগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৪°০৭′১২″ উত্তর ৯১°২৭′০৩″ পূর্ব / ২৪.১২০০০° উত্তর ৯১.৪৫০৮৩° পূর্ব / 24.12000; 91.45083[]
আয়তন২৪৩ হেক্টর (৬০০ একর)
স্থাপিত২০০৫

অবস্থান

সম্পাদনা

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয়[] ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

সম্পাদনা

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০'রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়।[]

জীববৈচিত্র্য

সম্পাদনা

এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে।[] এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর[] আরও আছে প্রায় ১৫০[]-২০০[] প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর[], উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, পাতিশিয়াল, উল্টোলেজি বানর, লাল বান্দর, মেছোবাঘ, চিতা বিড়াল, বন বিড়াল, মায়া হরিণ, এশীয় কালো ভাল্লুক, রামকুত্তা, বুনো শূকর, হলুদগলা মার্টিন, কাঁকড়াভুক বেজী. এশীয় বুরুশ-লেজি সজারু ইত্যাদি; সরীসৃপের মধ্যে সাপ[]; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, লাল বনমোরগ, লালমাথা কুচকুচি, কাঠঠোকরা, পাতি ময়না, ভীমরাজ, ধলাকোমর শ্যামা[], ঝুটিপাঙ্গা[], শালিক[], হলদে পাখি[], টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়, ঝিঁঝিঁ পোকা তাদের অন্যতম।[]

শকুনের নিরাপদ এলাকা

সম্পাদনা

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।[]

নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প

সম্পাদনা

"নিসর্গ" নামের একটি এনজিও, বন বিভাগের পাশাপাশি, তাদের 'নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প'-এর অধীনে এই জাতীয় উদ্যানের দায়িত্ব পালন করে। নিসর্গের তত্ত্বাবধানে বন সংরক্ষণ ছাড়াও, বনে ইকো-ট্যুর পরিচালিত হয়। এছাড়া নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন শৌখিন দ্রব্যাদির বিক্রয় হয়ে থাকে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এনজিও প্রকল্পের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের জন্য "স্টুডেন্ট ডরমিটরি" আছে। যেখানে মাত্র ১২৫ টাকায় রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। []

চিত্রশালা

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Satchari National Park"protectedplanet.net 
  2. "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-১৯" (পিডিএফ)বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  3. "বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮" (পিডিএফ)বন অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  4. রিদওয়ান আক্রাম (জানুয়ারি ২৫, ২০১০)। "বনে জঙ্গলে"। দৈনিক কালের কণ্ঠ (প্রিন্ট)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৯। 
  5. ফখরুল আলম (১৬ আগস্ট ২০১০)। "হাতছানি দিয়ে ডাকছে সাতছড়ি উদ্যান"। আমার জীবন, দৈনিক আমার দেশ (মুদ্রণ)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৬। 
  6. "মাধবপুরে আটক দুটি লজ্জাবতী বানর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত" (web)দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা। মার্চ ২৭, ২০১০। হবিগঞ্জের মাধবপুরে আটক বিরল প্রজাতির দুটি লজ্জাবতী বানরকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। 
  7. "শকুনের নিরাপদ এলাকা"রক্ষিত এলাকা। ২০১৭-০৯-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৮ 

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা