মায়া হরিণ
মায়া হরিণ বা কাকর হরিণ (ইংরেজি: Indian Muntjac or Barking Deer) হরিণ প্রজাতির অন্যতম খর্বকায় ও লাজুক সদস্য। ছোট আকারে লালচে বাদামী পিংগল রং এর ফোঁটা বিহীন এ হরিণের চলাফেরা ও জীবনধারণ খুবই চমৎকার। মায়া হরিণ ভয় পেলে বা শিকারী প্রাণী দেখতে পেলে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করে বলে এদের বার্কিং ডিয়ার বলে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বিশাল অংশ জুড়ে মায়া হরিণ দেখা যায়। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতিটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রাণী। এরা ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন,১৯৭২ দ্বারা এখানে সুরক্ষিত।[২]
মায়া হরিণ | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Mammalia |
বর্গ: | Artiodactyla |
উপবর্গ: | Ruminantia |
পরিবার: | Cervidae |
উপপরিবার: | muntiacinae |
গণ: | Muntiacus |
প্রজাতি: | M. muntjak |
দ্বিপদী নাম | |
Muntiacus muntjak Zimmermann, 1780 | |
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
ক্রমবিবর্তন
সম্পাদনাজীবাশ্মবিজ্ঞানীদের মতে, বার হাজার বছর পূর্বে প্লেইস্টোসিন যুগের শেষের দিক থেকে মায়া হরিণের অস্তিত্ব ছিল। তখন থেকেই মাংস ও চামড়ার জন্য পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া জুড়ে এরা শিকার হয়ে আসছে।
বিবরণ
সম্পাদনাএকটা পরিপক্ব মায়া হরিণের গড় ওজন ১৭ কেজি ও উচ্চতা ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। খাটো লালচে বাদামী লোম দ্বারা এরা আবৃত। স্থান ও ঋতুভেদে লোমের রং পরিবর্তিত হয়। পুরুষ হরিণের উপরের চোয়ালের ছেদন দন্ত খুব বড় (প্রায় ১ ইঞ্চি) এবং দূর থেকে তা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। আত্মরক্ষার্থ এরা এ শ্বদন্ত ব্যবহার করে। পুরুষ হরিণের এক জোড়া এক থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা শিং থাকে। শিংএ দুই থেকে তিনটি শাখা থাকে। এরা মূলতঃ একলা চলাফেরা করে ও খাদ্যাভ্যাসে সর্বভূক। ঘাস- লতাপতা ছাড়াও পাখির ডিম এমনকি ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীও মায়া হরিণের খাদ্য।
বাসস্থান
সম্পাদনাউত্তর- পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, চীনের দক্ষিণাঞ্চল, ইন্দোনেশিয়া ও এর দ্বীপসমূহ মায়া হরিণের আবাসস্থল। এরা সাধারণত জলের আশেপাশে বসবাস করে। পুরুষ মায়া হরিণ তার নিজস্ব এলাকায় বসবাস করে যা একাধিক স্ত্রী- মায়া হরিণের এলাকাকে স্পর্শ করে।
শ্ৰেণীবিভাজন
সম্পাদনামায়া হরিণের ১৫টি উপ-প্ৰজাতি বিশ্বজুড়ে দেখা যায়-
- M. m. annamensis, ইন্দোচীন
- M. m. aureus, ভারত
- M. m. bancanus, বিলিটন (Belitung) আর বাংকা দ্বীপ (Bangka Island)
- M. m. curvostylis, থাইল্যান্ড
- M. m. grandicornis, মিয়ানমার
- M. m. malabaricus, দক্ষিণ ভারত আর শ্রীলঙ্কা
- M. m. montanus, পার্বত্য মায়া হরিণ (Mountain Muntjac), সুমাত্ৰা
- M. m. muntjak, জাভা আর দক্ষিণ সুমাত্ৰা
- M. m. nainggolani, বালি আর লম্বক দ্বীপপুঞ্জ
- M. m. nigripes, ভিয়েতনাম আর হাইনান দ্বীপ
- M. m. peninsulae, মালয়েশিয়া
- M. m. pleicharicus, দক্ষিণ বোর্নিও
- M. m. robinsoni, বিনটান (Bintan)দ্বীপ আর লিংগা (Linga) দ্বীপপুঞ্জ
- M. m. rubidus, উত্তর বোর্নিও
- M. m. vaginalis, মিয়ানমার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন
চিত্রশালা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Timmins, R.J., Duckworth, J.W., Hedges, S., Pattanavibool, A., Steinmetz, R., Semiadi, G., Tyson, M. & Boeadi (2008). Muntiacus muntjak. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 5 April 2009. এখানে কেন মায়া হরিণ একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
- ↑ "List of mammals of Kaziranga National Park - Wikipedia" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০২।
- ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯৭