চশমাপরা হনুমান

স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি

চশমাপরা হনুমান (ইংরেজি: Phayre's Leaf Monkey) (বৈজ্ঞানিক নাম: Trachypithecus phayrei) হচ্ছে হনুমানের একটি বিশেষ জাত। এর অন্য নাম ফ্যায়র্স ল্যাঙ্গুর (Phayre's Langur)।[৩] কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত।

চশমাপরা হনুমান[১]
Trachypithecus phayrei
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: স্তন্যপায়ী
বর্গ: Primates
পরিবার: Cercopithecidae
গণ: Trachypithecus
প্রজাতি: T. phayrei
দ্বিপদী নাম
Trachypithecus phayrei
(Blyth, 1847)

বাংলাদেশে মহাবিপন্ন চশমাপরা হনুমান। বাংলাদেশের ১৯৭৪ [৪] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৫]

বিবরণ সম্পাদনা

চশমাপরা হনুমান আকারে অনেক ছোট। এদের দেহের তুলনায় লেজ বড় হয়ে থাকে। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে চশমাপরা হনুমান মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ৫৫-৬৫ সেন্টিমিটার; লেজ ৬৫-৮০ সেন্টিমিটার। গায়ের লোমের রং মেটে বাদামি থেকে কালচে বাদামি। পেট আর বুকের রং সাদাটে। চোখের চারপাশের লোম সাদা রঙের হয়ে থাকে বলেই মনে হয় চশমা পরে আছে। মুখের রংও হয় সাদা। প্রাপ্তবয়স্ক চশমাপরা হনুমানের মাথার লোম বেশ বড় হয়, দেখলে পরচুলা পরে আছে বলে মনে হয়। হাত-পায়ের রং কালো হয়ে থাকে। বাচ্চা রং হয় সাদা, গোলাপি আর বাদামির মিশ্রণে।[৩]

অন্য হনুমানের চেয়ে এরা লাজুক প্রকৃতির। দিনের বেলায় ঘন বনের ছায়াযুক্ত স্থানে বিচরণ করতে পছন্দ করে। সহজে এরা মাটিতে নামে না।[৩]

এরা দল বেঁধে চলাফেরা করলেও সহসা এদের চোখে পড়ে না। দলে বাচ্চাসহ সাত-আটটি হনুমান থাকে একটি পুরুষ হনুমানের নেতৃত্বে। তবে দলে কোনো পুরুষ হনুমান দলপতি হবার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে উঠলে বিদ্যমান পুরুষ দলনেতা অনেক সময় নেতৃত্ব বজায় রাখতে মা হনুমানকে দ্রুত ঋতুমতি করার জন্য বাচ্চাদের মেরে ফেলে। এই পরিকল্পনায় আগের দলপতির বংশ নাশের একটি পরিকল্পনাও থাকে এই হত্যাকান্ডে।[৩]

খাদ্যতালিকা সম্পাদনা

চশমাপরা হনুমান গাছের কচি পাতা, ফুল, ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, পাখির ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। পানির চাহিদা মেটাতে এরা শিশির লেগে থাকা পাতা চাটে অথবা পানিবহুল লতাগুল্ম খায়।[৩]

প্রজনন সম্পাদনা

জানুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রজননকাল। স্ত্রী ১৫০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। গড়ে প্রতি দু’বছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ৪-৫ মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পুরুষ ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর। পুরুষ হনুমান প্রজনন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। [৬]

 
চশমাপরা হনুমানের আবাসস্থল

আবাস সম্পাদনা

চশমাপরা হনুমান বৃক্ষবাসী, কখনই মাটিতে নামে না। ঘুম, চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, খেলাধুলা, বিশ্রাম সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। সচরাচর একটি শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে ১০-১৫টি একটি দলে বিচরণ করে।[৭] চশমাপরা হনুমান চিরহরিৎ বনের প্রাণী। সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস প্রভৃতি দেশে দেখা যায় এদের।[২] বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তবর্তী বন, বিশেষ করে লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি, পাবলাখালি, কাপ্তাইয়ের বনে চশমাপরা হনুমান দেখতে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের জঙ্গলগুলো ছোট আর ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চশমাপরা হনুমান আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।[৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Groves, C. (২০০৫)। Wilson, D. E., & Reeder, D. M., সম্পাদক। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 178। আইএসবিএন ০-৮০১-৮৮২২১-৪ 
  2. Bleisch, B., Brockelman, W., Timmins, R. J., Nadler, T., Thun, S., Das, J. & Yongcheng, L. (2008). Trachypithecus phayrei. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 4 January 2009. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "iucn" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  3. খসরু চৌধুরী (মে ৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "চশমাপরা হনুমান" (প্রিন্ট)দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ৬, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: স্তন্যপায়ী, খণ্ড: ২৭ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ২৫-২৭।
  5. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯১
  6. "মহাবিপন্ন প্রজাতি চশমাপরা হনুমান"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০১ 
  7. "মহাবিপন্ন প্রজাতি চশমাপরা হনুমান"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা