চুনারুঘাট উপজেলা

হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা

চুনারুঘাট উপজেলা বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। চুনারুঘাটের প্রাচীন নাম ছিল 'তরফ'। তরফ রাজ্য নামেই বহুকাল আগে ডাকা হতো চুনারুঘাটকে। ধীরে ধীরে নাম পরিবর্তন হয়ে এখন চুনারুঘাট নামেই পরিচিত। ব্যবসায়িক কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের বণিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। প্রথমে লোকে বলত চুনের-আট বা চুনাহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীণ জনগণ চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট। চুনারুঘাট আয়তনে হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। চা বাগান, রাবার বাগান, লিচু, লেবু, টক কমলার জন্য চুনারুঘাট বিখ্যাত।

চুনারুঘাট
উপজেলা
চুনারুঘাট উপজেলা
চুনারুঘাট সিলেট বিভাগ-এ অবস্থিত
চুনারুঘাট
চুনারুঘাট
চুনারুঘাট বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
চুনারুঘাট
চুনারুঘাট
বাংলাদেশে চুনারুঘাট উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°১২′৩৪″ উত্তর ৯১°৩১′১১″ পূর্ব / ২৪.২০৯৪৪° উত্তর ৯১.৫১৯৭২° পূর্ব / 24.20944; 91.51972 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাহবিগঞ্জ জেলা
আয়তন
 • মোট৪২৭ বর্গকিমি (১৬৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট২,৬৭,০২০
 • জনঘনত্ব৬৩০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৮.৮০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৩৬ ২৬
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তনসম্পাদনা

এই উপজেলার উত্তরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলাবাহুবল উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে মাধবপুর উপজেলা

ইতিহাসসম্পাদনা

নামকরণসম্পাদনা

তুঙ্গাচল থেকে তরফ, তরফ থেকে চুনারুঘাট। চুনারুঘাটের প্রচীন নাম ছিল তুঙ্গাচল পরবর্তীতে সিপাসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন। তুঙ্গাচল বিজয় করে নাম রাখেন তরফ রাজ্য৷ এই তরফ রাজ্য নামেই বহুকাল আগে ডাকা হতো চুনারুঘাটকে । ধীরে ধীরে নাম পরিবর্তন হয়ে এখন চুনারুঘাট নামেই পরিচিত। ব্যাবসায়িক কারনে ত্রিপুরা রাজ্যের বনিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। প্রথমে লোকে বলত চুনের-আট বা চুনাহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীন জনগন চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট। চুনারুঘাটের একটি পত্রিকা তরফ বার্তা ও একটি ইটের ভাটা তরফ বিক্সস চুনারুঘাটের প্রাচীন নামকে এখনো ধারন করে৷

মুক্তিযুদ্ধে চুনারুঘাটসম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে চুনারুঘাট উপজেলা ৪নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এই অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর কমান্ডার (অবঃ) সি আর দত্ত (বীরউত্তম)। এছাড়াও আর অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা চুনারুঘাটের হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন৷

প্রাচীন ইতিহাসসম্পাদনা

চুনারুঘাটের রাজাপুর (টেকরঘাট) ছিল হিন্দু রাজ্য তুঙ্গাচলের রাজধানী। রাজা আছক নারায়ণ ছিলেন এর শেষ হিন্দু শাসক৷ যিনি ১৩০৪ সালে তরফ দখলে পরাজিত হন এবং তুঙ্গাচলের নাম পরিবর্তন করে তরফ রাখা হয় তরফের প্রথম মুসলিম শাসক ছিলেন সৈয়দ নাসিরুদ্দিন, যিনি বিখ্যাত মুরারবন্দ দরগাহ শরীফে সমাহিত হন।

১৫৮১ সালে চুনারুঘাটে তরফ ও (টুইপ্রা) ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে জিলকুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খোয়াই নদী ছিল অন্যান্য স্থানের সাথে যাতায়াত ও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। বোড়াইল বা বড়াইল মৌজায় নদীর পশ্চিম তীরে একটি ঘাট ছিল। ব্যাবসায়িক কারনে ত্রিপুরা রাজ্যের বনিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। প্রথমে লোকে বলত চুনের-আট বা চুনাহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীন জনগন চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট।  ১৯১৪ সালে চুনারুঘাট থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা চুনারুঘাটের মুছিকান্দি গ্রামের নালমুখ  বাজারে। পরবর্তীতে নদী ভাঙনের শংকায় থানা বিলীন হতে পারে ভেবে বর্তমান বড়াইল মৌজায় চুনারুঘাট থানা স্থানান্তর করা করা হয়।

ভৌগোলিক উপাত্তসম্পাদনা

ভূপ্রকৃতিসম্পাদনা

নদী- পাহাড়- বন - চা বাগান ঘেরা একটি উপজেলা চুনারুঘাট৷ ছোট বড় অসংখ্য বিল ও হাওর ঘেরা অঞ্চল ছিল চুনারুঘাট। ১০ টি বিশাল হাওর নিয়ে এই তরফ অঞ্চল ছিল। যদিও চুনারুঘাট উপজেলাতে বড় কোন হাওর নেই। নদী নালা মারা যাওয়ার ফলে তেমন পানি আর কোথাও দেখা মিলেনা। এই অঞ্চলের ছোট বড় অসংখ্য টিলা রয়েছে।

মৃত্তিকাসম্পাদনা

নদ-নদী- খাল- বিলসম্পাদনা

খোয়াই নদীর প্রাচীন নাম৷ প্রচীন নাম খোয়াই নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি প্রবাদ আছে : খোয়াই নদীর প্রাচীন নাম ক্ষমা বা ক্ষেমা । ক্ষেমা নাম করণের পেছনে একটি জনপ্রবাদ রয়েছে। একবার এক ভিনদেশী বণিক তার পানসী নৌকা নিয়ে এই নদীর তীরে নোঙ্গর করে ফেলে খাসিয়াদের একটি পূজা উৎসব উপভোগ করছিল। যুবকের রূপে মুগ্ধ হয়ে অভিজাত এক খাসিয়া কন্যা তাকে ভালবেসে বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে । কিন্তু খাসিয়া সম্প্রদায় তাকে নিজেদের সম্প্রদায়ের একজন যুবকের সাথে ঐ কন্যার বিবাহ দিলে ক্ষেমা বা ক্ষাম নামের ঐ খাসিয়া কন্যা নদীতে আত্মাহুতি দেন । সেই থেকে এই নদীর নাম ক্ষেমা বা ক্ষমা৷

করাঙ্গী ও সুতাং নদী এখনো প্রবাহমান। তাছাড়াও চন্দনা নামের একটি খাল যা দূত নগরায়নের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে। চন্নার ডর নামে কিছু অংশ এখনো দৃশ্যমান তবে সেখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।

রেলপথসম্পাদনা

হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ

উপনবেশিক বৃটিশ শাসন আমলে তৎকালীন (অবিভক্ত বৃটিশ-ভারতের) আসাম প্রভেন্সির সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহুকুমায় রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বৃটিশ সরকার ১৯২৮ সালে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ নির্মাণ করে গড়ে তুলে অবকাঠামো।[২] ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।[২]

শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ রেলপথ সেকশনে চারটি রেলওয়ে স্টেশন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে।

শায়েস্তাগঞ্জ জংশন

বি.দ্র.: শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ১৯০৩ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮-২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ সংযোগ ফাঁড়ি যোগাযোগ চালু হলে এটি জংশন রেলওয়ে স্টেশনে পরিণত হয়।

শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট রেলপথ সেকশনে সাতটি রেলওয়ে স্টেশন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৯ সালে।

প্রশাসনিক এলাকাসম্পাদনা

চুনারুঘাট উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম চুনারুঘাট থানার আওতাধীন।[৩]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা

এই উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৬৭,০২০ জন (প্রায়), এর মধ্যে পুরুষ ১,৩৫,১২০ জন এবং মহিলা ১,৩১,৯০০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৪৭২ জন/বর্গকিমি।

শিক্ষাসম্পাদনা

শিক্ষার হার ৪৮%

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসম্পাদনা

প্রাথমিক বিদ্যালয়সম্পাদনা

প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থান স্থাপিত তারিখ
পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাইকপাড়া, পাইকপাড়া ইউনিয়ন
সতং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সতংবাজার, পাইকপাড়া ইউনিয়ন
মাঝিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঝিশাল, পাইকপাড়া ইউনিয়ন
পীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
হাজী ইছাদউল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দক্ষিণ নরপতি, চুনারুঘাট ইউনিয়ন রানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীগাঁও, চুনারুঘাট}

মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়সম্পাদনা

উচ্চ বিদ্যালয় স্থান স্থাপিত তারিখ
আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় পাইকপাড়া,পাইকপাড়া ইউনিয়ন ১৯৮৪
শানখলা উচ্চ বিদ্যালয় শানখলা, শানখলা ইউনিয়ন ১৯৮৯
তাহের শামসুন্নহার জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় চান্দপুর চা বাগান,
দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চুনারুঘাট, চুনারুঘাট উপজেলা ১৯২৮
অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় চান্দপুর,পাইকপাড়া ইউনিয়ন ১৯৭০
আলোর পথে উচ্চ বিদ্যালয় চুনারুঘাট, চুনারুঘাট উপজেলা
আমুরোড হাই স্কুল এন্ড কলেজ গোছাপারা ১৯৬৬
রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রাজারবাজার, চুনারুঘাট উপজেলা
একডালা উচ্চ বিদ্যালয় (চুনারুঘাট) সোনাচং বাজার, চুনারুঘাট ১৯৭৩
চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
শাকির মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়
সাটিয়াজুরী উচ্চ বিদ্যালয়
শ্রীকুটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় শ্রীকুটা বাজার,চুনারুঘাট ইউনিয়ন
আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ উত্তর বাজার,চুনারুঘাট ২০০৯

ছুবহে ছাদেক উচ্চ বিদ্যালয় ডেউয়াতলি,চুনারুঘাট

দাখিল মাদ্রাসাসম্পাদনা

দাখিল মাদ্রাসা স্থান স্থাপিত তারিখ
আজগর আহম্মদ দাখিল মাদ্রাসা , পাইকপাড়া ইউনিয়ন
সায়্যেদ কুতুবুল আউলিয়া দাখিল মাদ্রাসা নরপতি

সরকারি কলেজসম্পাদনা

কলেজের নাম স্থান স্থাপিত তারিখ
চুনারুঘাট সরকারি কলেজ চুনারুঘাট উপজেলা ১৯৭৩

সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা

ভাষাসম্পাদনা

উৎসবসম্পাদনা

  • চুনারুঘাটের ঐতিহ্যবাহী বান্নী ও চুনারুঘাট সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের 'সাহিত্য-সংস্কৃতি উৎসব'।

অর্থনীতিসম্পাদনা

খেলাধুলাসম্পাদনা

চুনারুঘাট উপজেলায় সব ধরনের খেলাধুলা প্রচলিত থাকলেও এই অঞ্চলে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে ফুটবল খেলাটি ছোট বড় সকল মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে ।পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাও বেশ জনপ্রিয়।

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ত্বসম্পাদনা

 
সৈয়দ নাসির উদ্দীনের মাজার

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে চুনারুঘাট"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫ 
  2. "হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুট"mzamin.com। ৩১ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫ 
  3. "ইউনিয়নসমূহ - চুনারুঘাট উপজেলা"chunarughat.habiganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২০ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা