এনাটমি জাদুঘর, সিভাসু

চট্টগ্রাম জেলার একটি জাদুঘর
(শারীরবৃত্তির জাদুঘর, সিভাসু থেকে পুনর্নির্দেশিত)

এনাটমি জাদুঘর, সিভাসু (অঙ্গসংস্থানবিদ্যা জাদুঘর) বাংলাদেশের প্রথম এনাটমি জাদুঘর। এটি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হেকেপ উপপ্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে। এই জাদুঘরটিতে মূলত গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীদের কঙ্কাল, স্টাফসহ বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষিত আছে।[১] বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অ্যানাটমি ও হিস্টলজি বিভাগ এই জাদুঘরটি দেখাশোনা করছে।

এনাটমি জাদুঘর, সিভাসু
Anatomy Museum
জাদুঘরটির ফটক
মানচিত্র
স্থাপিত৩১ মার্চ ১৯৯৭ (1997-03-31)
অবস্থানইউসুফ চৌধুরী ভবন (নিচতলা), সিভাসু, চট্টগ্রাম
স্থানাঙ্ক২২°২১′৪৭″ উত্তর ৯১°৪৮′১৬″ পশ্চিম / ২২.৩৬২৯৯৩৬০৯৭৩৭১৭° উত্তর ৯১.৮০৪৩৩৪৬১৫৬৭৩৭° পশ্চিম / 22.36299360973717; -91.8043346156737
ধরনবিজ্ঞান জাদুঘর
সংগ্রহস্টাফ করা প্রাণী, কঙ্গাল, অঙ্গ
তত্ত্বাবধায়কএনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগ
মালিকসিভাসু
নিকটবর্তী পার্কিংআছে

দেশে অনেক এনাটমি গবেষনাগার থাকলেও এনাটোমি মিউজিয়াম নেই। সেই হিসেবে এটি দেশের প্রথম এনাটমি মিউজিয়াম বা অঙ্গসংস্থান-বিদ্যা জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইউসুফ চৌধুরী ভবনের নিচতলায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে এই জাদুঘরটি অবস্থিত।[২][৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হেকেপ প্রকল্পের আওতায় এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে। হেকেপ প্রকল্পের কয়েকটি উপপ্রকল্প ছিল। এর মধ্যে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার উপপ্রকল্পটি ছিল "Establishment of an Anatomy Museum for Enhancing Quality Education and Research in the Department of Anatomy and Histology"। এই প্রজেক্টের ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন এনাটমি ও হিস্টোলজি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান। এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে অধ্যায়রত শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখানো। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারী তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এটি উদ্বোধন করেন।[৪]

সংগ্রহ সম্পাদনা

 
বর্তমানে জাদুঘরটি দেখাশুনা করছে এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগ

এই জাদুঘরে প্রধাণত রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রাণির কঙ্কালতন্ত্র এবং স্টাফ করা দেহ। স্টাফ করা দেহ বলতে বোঝায় কোন প্রাণীর চামড়া ছাড়িয়ে সেটাকে রাসায়নিকভাবে পরিষ্কার করে ভেতরে তুলা বা প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি দিয়ে সেই প্রাণীটির অবয়ব তৈরি করে রাখা। প্রাচীন মিশরিয়রা এভাবে বিভিন্ন প্রাণী এমনকি মানুষের দেহকেও স্টাফ করে রাখতো, অনেকটা মমি তৈরি করার মতো। এই জাদুঘরে স্টাফ করা প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে রাজহংসী, হনুমান, ছাগল, বিড়াল, গুইসাপ, বানর, মোরগ, কবুতর, কাঠঠোকরা, দোয়েল, মাছরাঙা, খরগোশ, গিনিপিগ, টিকটিকি। এছাড়াও আছে কিছু মডেল। যেমন মানুষ, গরু, ছাগল, শূকরখরগোশের ডিএনএ, ক্রোমোজোম, মস্তিষ্ক, চোখ, হৃৎপিণ্ড, জরায়ু, ফুসফুস, কিডনি, বক্ষসহ ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মডেল। এইসব উপাদান ছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রাণীদের তন্ত্রচিত্রের ছবি টানানো আছে। প্রাণীবিজ্ঞানে অবদান রাখা বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের ছবিও এখানে আছে।[১] জাদুঘরটির অন্যতম আকর্ষণ সংরক্ষিত কঙ্গাল। এখানে আছে মানুষ, হাতি, উট, কুমির, অজগর, গরু, ছাগল, হরিণ, ঘোড়া, ভেড়া, বানর, শূকর, বিড়াল, কুকুর, বাদুর, গিনিপিগ, খরগোশ, হাঁস, কচ্ছপ, মুরগি, কবুতর ও কোয়েলসহ বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্গাল। এখানে রাখা অজগরের কঙ্গালটি দৈর্ঘ্যে ১৩ ফুট লম্বা। আর হাতির কঙ্গালটি আনা হয়েছে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক থেকে।[৫] কঙ্গালগুলোর মধ্যে বিশেষ বা অনন্য কিছু কঙ্গাল রয়েছে। যেমন এশিয়ার হাতি, উঠ, নারী হরিণ, ভারতীয় রক পাইথন ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের কঙ্গাল এবং হাড় সংগ্রহের ক্ষেত্রে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রফেসর সুব্রত কুমার শীল। সিভাসুর ক্যাম্পাসেই অবস্থিত এস.এ. কাদেরী হাসপাতাল থেকেও অনেক হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রাণী মারা যাওয়ার পরে সেখান থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।[৩] ২০২১ সালে এই জাদুঘরে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে জিরাফের কঙ্কাল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় জিরাফটি মারা যায়। ছয় মাস পর কবর থেকে তুলে জিরাফটির কঙ্কালগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়। পুরো জিরাফটির অবয়ব তৈরি করতে প্রায় দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। এবং লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পৃথিবীর কোথাও জিরাফের কঙ্কাল নেই। সিভাসুতে তৃতীয় কঙ্কাল হিসেবে জিরাফের কঙ্কালটি সংযোজিত হল।[৬]

একনজরে সিভাসু এনাটমি জাদুঘরের সংগ্রহ
সংগ্রহের নাম সংগ্রহ সংখ্যা
প্রাণী কঙ্গাল ৬০টি
স্টাফ করা প্রাণী ৩০টি
ফরমালিনে সংগ্রহৃত অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ ৫০০টি
প্রাণীর বিভিন্ন হাড় ২০০০টি
প্রাণীর মডেল ৭৫টি
বিভিন্ন প্রকারের স্লাইড ৩০০০টি

দর্শন সম্পাদনা

জাদুঘরটিতে প্রবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন মূল্য নির্ধারণ করেনি। তবে শুক্র, শনিসহ বন্ধের দিনগুলোতে এটি বন্ধ থাকে। অনুমতি নিয়ে যে কেউ জাদুঘরটি দর্শন করতে পারে।[১][২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দেশের প্রথম অ্যানাটমি জাদুঘর"মেডি ভয়েস। ১৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  2. "মৎস্য ও অ্যানাটমি জাদুঘর"। প্রথম আলো। ৯ জানুয়ারী ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  3. "সিভাসুতে স্থাপিত হল দেশের প্রথম এনাটমি জাদুঘর"। দ্যা নিউ নেশন। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "দেশের প্রথম এনাটমি জাদুঘরের যাত্রা শুরু চট্টগ্রামে"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৩ জানুয়ারী ২০১৭। ১৪ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  5. "প্রাণিসেবায় গবেষণার আলো"। প্রথম আলো। ৩০ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  6. "হাঁ করে আছে সাপ, মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে জিরাফ"। বিডিনিউজ ২৪। ৫ মার্চ ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা