লেন হপউড

ইংরেজ ক্রিকেটার

জন লিওনার্ড হপউড (ইংরেজি: Len Hopwood; জন্ম: ৩০ অক্টোবর, ১৯০৩ - মৃত্যু: ১৫ জুন, ১৯৮৫) বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের নিউটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

লেন হপউড
আনুমানিক ১৯৩৯ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে লেন হপউড
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জন লিওনার্ড হপউড
জন্ম৩০ অক্টোবর, ১৯০৩
নিউটন, বৃহত্তর ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৫ জুন, ১৯৮৫
ডেন্টন, বৃহত্তর ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনবামহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৮৩)
৬ জুলাই ১৯৩৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২০ জুলাই ১৯৩৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০০
রানের সংখ্যা ১২ ১৫,৫৪৮
ব্যাটিং গড় ৬.০০ ২৯.৮৯
১০০/৫০ -/- ২৭/৭০
সর্বোচ্চ রান ২২০
বল করেছে ৪৬২ ৪৩,৪৪৯
উইকেট ৬৭৩
বোলিং গড় ২২.৪৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩৫
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৯/৩৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ১৯৮/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ আগস্ট ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন লেন হপউড

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

৩০ অক্টোবর, ১৯০৩ তারিখে চেশায়ারের হাইড এলাকার নিউটনে লেন হপউডের জন্ম। ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত লেন হপউডের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। কাউন্টি দলের চমৎকার ধীরগতিসম্পন্ন বামহাতি বোলার ও কার্যকরী ব্যাটসম্যান হিসেবে লেন হপউডের সুনাম ছিল। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৪টি প্রথম-শ্রেণীর শতরানের সন্ধান পেয়েছেন।

১৯২৩ সালে শক্তিশালী ল্যাঙ্কাশায়ার দলে তার প্রতিষ্ঠালাভ বেশ দুষ্কর ছিল। তাসত্ত্বেও পরবর্তীকালে নিজেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মর্যাদার আসনে নিয়ে যান। ১৯২০-এর দশকে খাঁটিমানের ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। ১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে প্রথম একাদশে নিয়মিতভাবে খেলার পর ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দল থেকে বাদ পড়েন। ঐ বছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় বেশ কয়েকবার নিখুঁতমানের বামহাতি স্পিনার হিসেবে আবির্ভূত হন। মিডলসেক্সের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৯/৭৪ লাভ করেন। ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৫/৭১ ও ওয়ালসের বিপক্ষে ৬/২০ পান। এছাড়াও, ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে একটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

স্বর্ণালী সময়

সম্পাদনা

১৯২৯ সালে লেন হপউড দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখেন। চার্লস হলোসের খেলার অবনমন ও নিয়ম পরিবর্তনের ফলে পূর্বের তুলনায় বেশ রান তুলতে সক্ষম হন। বেশ ধীরলয়ে ও পিছনের পায়ে ভর রেখে দর্শনীয় ভঙ্গীমায় না খেলেও বিল উডফুলের সাথে তুলনান্তে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের দাবীদার হন। ১৯৩০ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার দল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আরোহণ করে। দলের এ অগ্রযাত্রায় তিনি ৯৪৯ রান ও ৬৩ উইকেট লাভ করেছিলেন। লেটনে এসেক্সের বিপক্ষে ৫/১৮ ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ৫/৪০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।

পরবর্তী দুই বছর সাধারণমানের খেলা উপহার দেন। কিন্তু, ১৯৩৩ সালে ব্যাট হাতে সেরা সময় অতিবাহিত করেন। প্রায় দুই হাজার রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। গ্রীষ্মের শুকনো আবহাওয়ায় আকস্মিকভাবে নিজেকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যান। ১,৯০০-এর অধিক রান সংগ্রহ করেন ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সংযত ও বিজ্ঞতার পরিচয় দেন। ঐ মৌসুমের শেষ দিকে বোলার হিসেবেও নিজের পরিচিতি ঘটান। ব্যাটিং উপযোগী পিচে মিডলসেক্সের বিপক্ষে খেলায় এগারো উইকেট পান। এরপর, লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ইনিংসে ৯/৩৩ পেয়েছিলেন ও পূর্বেকার সেরা বোলিং ৭/৯১ ছাপিয়ে যান। রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় বোলিংয়ে অগ্রসর হন ও লেগ সাইডে ছয়জন ফিল্ডার মজুত রাখতেন। এ খেলায় পোতানো পিচেও হেডলি ভেরিটি’র তুলনায় আক্রমণাত্মক বোলিং করেন।

১৯৩৪ ও ১৯৩৫ সালে ডাবল লাভ করেন। দ্রুততার সাথে ধীরগতিসম্পন্ন বামহাতি বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। তার বোলিং অনেকাংশেই হেডলি ভেরিটি’র ন্যায় নিখুঁত ও মিতব্যয়ীসম্পন্ন ছিল। ১৯৩৪ সালে লেন হপউড তার স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহিত করেন। ১৯৩৩ সালের তুলনায় তার ব্যাটিংয়ের মান দূর্বলতর ছিল। তবে, গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ২২০ রানে ইনিংস খেলার সুবাদে ও বল হাতে দক্ষতা থাকায় টেস্ট দলে তাকে ঠাঁই দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন লেন হপউড। সবগুলো টেস্টই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। ৬ জুলাই, ১৯৩৪ তারিখে ম্যানচেস্টারে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ২০ জুলাই, ১৯৩৪ তারিখে লিডসে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

৪৭ ওভারে ৬২ রান খরচ করেও কোন উইকেট পাননি। চতুর্থ টেস্টে তাকে পুনরায় খেলানো হয়। ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের মুখোমুখি হন ও অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ব্র্যাডম্যান ৩০৪ রান তুলেন। ৩০ ওভার বোলিং করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি।

সি. এফ. ওয়াল্টার্স এগিয়ে থাকলেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হার্বার্ট সাটক্লিফের সাথে হপউড তার স্বাভাবিক অবস্থান হিসেবে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। বিদেশী দলের বিপক্ষে তার কাছ থেকে খুব কমই প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তার বোলিংয়ে ব্যাটিং উপযোগী পিচে ডন ব্র্যাডম্যান, অ্যালান কিপাক্স কিংবা বিল পন্সফোর্ডের ন্যায় বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের উইকেট লাভ করাও কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। তবে, লর্ডসের ন্যায় বোলিং উপযোগী পিচে হেডলি ভেরিটি’র সাফল্য পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে হয়েছিল। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র বারো রান তুলতে পেরেছিলেন ও বল হাতে নিয়ে ৪৬২ বলে কোন উইকেট লাভ করার ন্যায় টেস্টে অগৌরবজনক বিশ্বরেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন।[] ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে তিনি বেশ মিতব্যয়ীতার স্বাক্ষর রাখেন।

ভেরিটির চাতুর্যতার সাথে তিনি পরিচিত ছিলেন না। তাসত্ত্বেও, ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে তিনটি খেলায় বেশ ভালোমানের খেলা উপহার দিয়েছিলেন। ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৯/৬৯ ও ৬/৪৩, গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৭/১৩ ও ৫/৫৫ এবং ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত উইকেটে ৫/৩২ ও ৮/৫৮ লাভ করেন।

১৯৩৫ সালে লেন হপউড তার অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনে সচেষ্ট ছিলেন। উপর্যুপরী দ্বিতীয় বছর তিনি ১০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল লাভ করেন। তবে, ১৯৩৬ সালের শুরুতে কয়েকটি খেলায় ভালোমানের বোলিংশৈলী প্রদর্শনের পর বোলিংয়ের ধার অনেকাংশেই কমে যায়। যুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত নিচেরদিকে তাকে খেলানো হলেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। ১৯৩৭ সালের মধ্যে তার স্পিন বোলিং ও বলে নিখুঁতভাবে একেবারেই চলে গেলে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের বিরাট ক্ষতি হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পরও কাউন্টি ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যান। ইডব্লিউ সোয়ানটন তার সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনায় সচেষ্ট হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি ও তার বোলিং হেডলি ভেরিটি’র ছত্রচ্ছায়ায় সফলতা পায়। যুদ্ধের পর তেতাল্লিশ বছর বয়সী লেন হপউড খেলোয়াড়ী চালানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু, গুরুতর অসুস্থতায় তাকে বিরত থাকতে হয়।

১৫ জুন, ১৯৮৫ তারিখে ৮১ বছর বয়সে বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের ডেন্টন এলাকায় লেন হপউডের দেহাবসান ঘটে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Walmsley, Keith (২০০৩)। Mosts Without in Test Cricket। Reading, England: Keith Walmsley Publishing Pty Ltd। পৃষ্ঠা 457। আইএসবিএন 0947540067 .
  2. Len Hopwood. ESPN Cricarchive

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা