মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী
মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (জন্ম: ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ।[৩] তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের তৃতীয় ও বর্তমান আমীর[৪][৫] এবং আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরের মহাপরিচালক। এছাড়াও তিনি ইসলামী ঐক্যজোট, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ও আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশে দেওবন্দ আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হন।[৬]
মুজাহিদে মিল্লাত, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী | |
---|---|
আমীর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৯ আগস্ট ২০২১ | |
পূর্বসূরী | জুনায়েদ বাবুনগরী |
মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৯৮৬ | |
পূর্বসূরী | হারুন বাবুনগরী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [১][২] বাবুনগর, দৌলতপুর ইউনিয়ন, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মরিয়ম বেগম (বি. ১৯৬০) |
সন্তান | ৩ ছেলে, ৮ মেয়ে |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | ইসলামি আন্দোলন |
শিক্ষক | |
আত্মীয় |
|
জন্ম ও বংশ
সম্পাদনামুহিব্বুল্লাহ ১৯৩৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির দৌলতপুর ইউনিয়নের বাবুনগর গ্রামের এক আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা হারুন বাবুনগরী বাবুনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এবং মাতা উম্মে ছালমা। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।[১]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতার পিতার প্রতিষ্ঠিত আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। এই মাদ্রাসায় ৮ বছর লেখাপড়া করার পর ১৯৪৯ সালে তিনি আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন।[১] হাটহাজারী মাদ্রাসায় ২ বছর লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ চলে যান।[১] ১৯৫৯ সালে দেওবন্দ মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস (স্নাতক) সম্পন্ন করে আরও এক বছর উচ্চতর হাদিস শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।[১][৬]
তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে হুসাইন আহমদ মাদানি অন্যতম। তিনি দেওবন্দ গমনের ৩ বছর পর মাদানি মৃত্যুবরণ করেন।[১] মাদানির নিকট তিনি হেদায়ার ২য় খণ্ডটি পড়েছেন।[৬] এছাড়া তিনি সৈয়দ ফখরুদ্দিন আহমদের কাছে সহীহ বুখারী, ইব্রাহিম বলিয়াভির কাছে সহীহ মুসলিম ও সুনান আত-তিরমিজী, ফখরুল হাসান মুরাদাবাদীর কাছে সুনানে আবু দাউদ, জহির আহমদের কাছে তহাবী শরীফ এবং বশির আহমদের নিকট মুয়াত্তা মুহাম্মদ পড়েছেন।[৬]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৬০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দেশে ফিরে তিনি পিতার পরিচালিত আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। ১৯৮৬ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি অত্র মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।[১]
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি নায়েবে আমীর ছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।[৩] ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর তিনি সংগঠনটির আমীর নির্বাচিত হন।[৭]
রাজনীতি
সম্পাদনাতিনি সৈয়দ ফজলুল করিমের জীবদ্দশায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের (বর্তমান নাম ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’) প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।[২] ফজলুল হক আমিনীর জীবদ্দশায় তিনি ইসলামী ঐক্যজোট এবং ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।[২] পরবর্তীতে তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতার অভিযোগ এনে ২০১৮ সালে তিনি ঘোষণা দিয়ে এই সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন।[৮]
একইসাথে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে মতবিরোধের কারণে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ সহ সব সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তিনি হেফাজতে ফেরেন এবং সংগঠনটির আমীর হবার সম্ভাবনা থাকলেও ভাগিনা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মত্যাগের মূল্যায়ন দিতে তিনি তা হতে রাজী হননি।[১]
পরিবার
সম্পাদনাতিনি ১৯৬০ সালে ফটিকছড়ি থানার ধর্মপুরস্থ মরিয়ম বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০২১ সালের ৪ আগস্ট তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ঔরসে ৩ ছেলে ও ৮ মেয়ে জন্মলাভ করেছে।[৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাটাই হচ্ছে হেফাজত নেতা-কর্মীদের মূল দায়িত্ব"। ইনকিলাব। ২০ আগস্ট ২০২১। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ গ "হেফাজতের নতুন আমির কে এই মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী"। দৈনিক ভোরের কাগজ। ২২ আগস্ট ২০২১। ২২ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ "হেফাজতের নতুন আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ আগস্ট ২০২১। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "৯০ বছর বয়সী আমিরের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে হেফাজত?"। কালের কণ্ঠ। ২১ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "হেফাজতে ইসলাম: মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে নতুন আমীর ঘোষণা করা হয়েছে"। বিবিসি বাংলা। ২০ অগাস্ট ২০২১। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ "মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আসলে কে?"। চট্টগ্রাম প্রতিদিন। ২০ আগস্ট ২০২১। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "হেফাজতের নতুন আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী"। প্রথম আলো। ১৯ আগস্ট ২০২১। ২১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "আওয়ামী লীগের এজেন্টদের সাথে নেই - বাবুনগরী"। দৈনিক সংগ্রাম। ৫ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর স্ত্রীর ইন্তেকাল"। নয়া দিগন্ত। ৪ আগস্ট ২০২১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- হাসনাবাদী, মুহাম্মদ জাকারিয়া (২০২৩)। মাশায়েখে বাবুনগর। বাংলাদেশ: ইত্তিহাদ পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৬১–১৬৫।
- শ্বেতপত্র: বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন। মহাখালী, ঢাকা-১২১২: মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। ফেব্রুয়ারি ২০২২। পৃষ্ঠা ৯৮–১০০।