মুখাতাসারুত তহাবী বা তহাবী শরীফ একটি হাদীস গ্রন্থ।রচনা করেছেন ইমাম তহাবী(রহ.)। হাদীস শাস্ত্রের এক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ।

কিতাবের নাম সম্পাদনা

মুখতাসারুত তহাবী এর আসল নাম হলো- ‘শরহু মাআনিল আসার’। কখনও কখনও সংক্ষিপ্ত ও ছোট করে ‘মাআনিল আসার’ও বলা হয়। আসার বলতে রাসূল(সা.) এর হাদীস এবং সাহাবাদের বক্তব্যকে বুঝানো হয়।

লেখক সম্পাদনা

কিতাবটির লেখক হলেন- আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনে আবদুল মালিক ইবনে সালমা আল-আজদী আল-হিজরী আল-মিসরী। তিনি আবু জাফর তহাবী নামে পরিচিত। ইমাম তহাবী ফিকহী মাসআলা বা বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম জাফর এবং ইমাম হাসান বিন যিয়াদের উক্তিগুলো উদ্ধৃত করেছেন এবং তারপরে এটিকে বিশ্লেষণ করে একটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কখনও তাদের বিপরীতে ব্যক্তিগত মতামত প্রদান করেছেন।। [১]

হাদীস ও ফিকহের মিলন সম্পাদনা

মুখতাসারুত তহাবী হাদিসের একটি দুর্দান্ত গ্রন্থ। এই গ্রন্থে হাদীস, ফিকাহ বা আইনশাস্ত্র , আসমায়ে রিজালের অনেক তত্ত্ব সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এমন মিলন অন্য কোন গ্রন্থে সচারাচর খুব কমই দেখা যায়।

গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য সম্পাদনা

ইমাম তহাবীর এই গ্রন্থ সংকলনের উদ্দেশ্য শুধু হাদীস সংকলনই ছিল না বরং ইমাম আবু হানীফার মাযহাব ও চিন্তাধারা যে কোন ক্ষেত্রেই হাদীস বিরুদ্ধ ছিল না তা প্রমাণ করা। এই গ্রন্থ হাদীস ও ফিকাহের বিবরণ সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যা অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না।

সংকলনের কারণ সম্পাদনা

ইমাম তহাবী বলেছেন যে, “আলেমগণ আমাকে এমন একটি গ্রন্থ লেখার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে হুুকুম-আহকাম বর্ণনা করার পাশাপাশি এ সম্পর্কিত হাদীস লিপিবদ্ধ করা হয়। যে মতানৈক্যগুলো রয়েছে তা দূর করা হয়। ঐ ব্যাখ্যাগুলো সংকলন করার কথা বলেছেন যা কুরআন, হাদীস, ইজমা এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। এবং রহিত হুকুমগুলো রহিতকরণের কারণ দলিলসহ প্রমাণ করতে বলেছেন যাতে বিরোধিতাকারীদের জবাব দেওয়া হয়ে যায়।”

গ্রন্থের ধরন সম্পাদনা

সমস্ত ইমামদের গ্রন্থের তুলনায় ইমাম তহাবীর রীতি ও ধরন ভিন্ন ছিল। তিনি প্রথমে হাদীস উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি এই হাদীস থেকে নিসৃত হুকুম বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি এতদসংক্রান্ত মতানৈক্যগুলো উপস্থাপন করে হানাফীদের দলীল দিয়েছেন যা ঐ হাদীসের বিপরীত। এর জন্য অনেকগুলো হাদীস উপস্থাপন করেছেন। তারপর হানাফীদের রায়কে শক্তিশালী করার স্বার্থে উভয় হাদীসের মধ্যে সামাঞ্জস্য ও বৈপরীত্য দূর করে দিয়েছেন। হাদিসটির দূর্বলতা বা রহিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করার পর সাধারণত প্রকৃতগত যুক্তি উপস্থাপন করতেন। [২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. قاموس الفقہ جلد اول،صفحہ 380،خالد سیف اللہ رحمانی،زمزم پبلشر کراچی2007ء
  2. طحاوی شریف ،جلد 1،صفحہ 12،امام ابو جعفر الطحاوی،حامد اینڈ کمپنی لاہور