হারুন বাবুনগরী
হারুন বাবুনগরী (১৯০২ - ১৯৮৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামি পণ্ডিত, সুফি সাধক এবং বাংলাদেশে দেওবন্দ আন্দোলনের অন্যতম প্রচারক। তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১ম মহাপরিচালক। তিনি “বুযুর্গ সাহেব” নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন।[১][২][৩][৪][৫]
ওলিয়ে কামেল, আল্লামা হারুন বাবুনগরী | |
---|---|
আচার্য, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর | |
অফিসে ১৯২৪ – ১৯৮৬ | |
উত্তরসূরী | মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৯০২ |
মৃত্যু | ১৮ আগস্ট ১৯৮৬ |
সমাধিস্থল | মাকবারায়ে হারুনী, জামিয়া বাবুনগর |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
সন্তান | মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | বিংশ শতাব্দী |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | তাফসীর, তাসাউফ, ওয়াজ-নসীহত |
যেখানের শিক্ষার্থী | |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যার দ্বারা প্রভাবিত
| |
যাদের প্রভাবিত করেন
|
জন্ম ও বংশ
সম্পাদনাহারুন বাবুনগরী ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুফি আজিজুল রহমানের সন্তান। তাঁর পূর্বপুরুষরা আরব দেশ থেকে এদেশে এসেছিল। তার বড় ভাই মাওলানা আমিন দীর্ঘদিন যাবত জামিয়া বাবুনগরে শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতৎকালীন সময়ে বাবুনগরের আব্দুল বারী চৌধুরীর বাড়ির পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। এখানে তিনি অন্যান্য বিষয়ের সাথে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক শেখ সাদির “গুলিস্তা”ও অধ্যায়ন করেছেন। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই আপন পিতার কাছে কুরআন মাজিদের শিক্ষা অর্জন করেন। তারপর ফটিকছড়ি নছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় পড়ালেখা শুরু করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে তাঁর পিতা সুফি আজিজুর রহমান শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেখানে তিনি কাফিয়া পর্যন্ত শিক্ষালাভ করেন।[৬]
১৩৪১ হিজরি সনের মুহাররম মাসে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পর্যন্ত পড়ালেখা করতে সক্ষম হননি। তিনি এখানে জামাতে উলা তথা মিশকাত শরিফ পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করেন। অতঃপর আপন বড় ভাই মাওলানা আমিনের কাছে সিহাহ সিত্তাহর শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ইলমে লাদুনির অধিকারী ছিলেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাতিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২২ বছর বয়সে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এর আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৭]
তাসাউফ
সম্পাদনাতিনি শায়খুল মাশায়েখ জমির উদ্দিন আহমদের শিষ্য ছিলেন এবং মুফতি আজিজুল হকের খলিফাদের একজন। হারুন বাবুনগরী তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু জমির উদ্দিনের খলিফা হওয়া এবং নিজের আত্মচাহিদার বৈপরীত্যতা তাঁকে সে যুগে ‘বুজুর্গ সাহেব’ নামেই পরিচিত করে। তিনি জমির উদ্দিন আহমদের সান্নিধ্যে প্রায় ১৮ বছর ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষালাভ করতে মুফতি আজিজুল হকের দিকে মনোনিবেশ করেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ঈদগাহে একটি ইসলামি সম্মেলনে বাবুনগরী আলোচনা করছিলেন। সেখানে কতিপয় পণ্ডিতদের সাথে মুফতি আজিজুল হক’ও উপস্থিত ছিলেন। একসময় বাবুনগরীর আলোচনা শুনে মুফতি আজিজুল হক দাঁড়িয়ে যান। সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে বাবুনগরীকে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে একটা চাপ দেন এবং উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘আপনাকে তাসাউফের চার তরিকার অনুমতি দিলাম।’[৮]
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ১৮ আগস্ট ১৯৮৬, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম মেডিকেয়ার ক্লিনিকে মারা যান। পরদিন মঙ্গলবার সাড়ে ১১টায় তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজের ইমামতি করেন তার বড় পুত্র জামিয়া বাবুনগরের বর্তমান আচার্য আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। জামেয়ার দক্ষিণ পার্শ্বে মাকবারায়ে হারুনীতে তাকে দাফন করা হয়।[৭][৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ওলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা হারুন বাবুনগরী রহ."। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৩।
- ↑ বাবুনগরী, জুনায়েদ (২০০৩)। (মাওলানা শাহ আব্দুল ওহাব রহ.) । দারুল উলুম হাটহাজারীর কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: বুখারী একাডেমি। পৃষ্ঠা ৩০–৩৩।
- ↑ হাফেজ আহমদুল্লাহ, মুফতি; রিদওয়ানুল কাদির, মুফতি (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। (কুতুবুল আলম হাকীমুন নফস, খলীফায়ে থানভী আল্লামা শাহ আবদুল ওয়াহহাব রহ. (১৮৯৪—১৯৮২) - এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত) । মাশায়েখে চাটগাম — ২য় খণ্ড (১ম সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১২১–১৪৩। আইএসবিএন 978-984-92106-4-1।
- ↑ এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। (মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব রহ.) । বাংলার শত আলেমের জীবনকথা। বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ৫২৪। আইএসবিএন 984-70168-0048-1।
- ↑ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। (মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব রহ.) । দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৬১–১৬৫। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ Ahmadullah, Hafez; Qadir, Ridwanul (২০১৮)। মাশায়েখে চাটগাম [Mashayekh-e Chatgam]। Dhaka: Ahmad Publication। পৃষ্ঠা 121–143। আইএসবিএন 978-984-92106-4-1।
- ↑ ক খ Nijampuri, Ashraf Ali (২০১৩)। The Hundred (100 Great Scholars from Bangladesh) (1st সংস্করণ)। Hathazari, Chittagong: Salman Publication। পৃষ্ঠা 161–165। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ ক খ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ওলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা হারুন বাবুনগরী রহ."। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৩।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ১০৩–১০৬। আইএসবিএন 9789849591405।
- হাসনাবাদী, মুহাম্মদ জাকারিয়া (২০২৩)। মাশায়েখে বাবুনগর। বাংলাদেশ: ইত্তিহাদ পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৩০–৫০।