মুখতার আল সাকাফি
মুখতার ইবনে আবি উবায়েদ আল সাকাফি (আরবি: المختار بن أبي عبيد الثقفي; ৬২২ খ্রি. – ৩রা এপ্রিল ৬৮৭) ছিলেন কুফা কেন্দ্রীক একজন আলীয়পন্থী বিপ্লবী।তিনি একজন সাহাবীও ছিলেন ৷
মুখতার আল সাকাফি ٱلْمُخْتَار ٱبْن ٱلثَّقَفِيّ | |
---|---|
মুখতার ইবনে আবি উবায়েদ আল সাকাফি | |
জন্ম | ৬২২ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ৩রা এপ্রিল ৬৮৭ |
সমাধি | মসজিদ আল-কুফা |
যুগ | খুলাফায়ে রাশেদিন উমাইয়া খিলাফত দ্বিতীয় ইসলামিক গৃহযুদ্ধ |
পরিচিতির কারণ | কুফায় একটি উমাইয়াবিরোধী বিদ্রোহের নেতা |
প্রতিদ্বন্দ্বী | উবায়েদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ আব্দুল্লাহ ইবনে আল জুবায়ের |
দাম্পত্য সঙ্গী | উমরাহ বিনতে নু'মান ইবনে বশির আনসারি উম্মে থাবিত বিনতে সামুরা ইবনে জুনদুব |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | আবদুল্লাহ ইবনে উমর (ভগ্নীপতি) উমর ইবনে সা'আদ (ভগ্নীপতি) |
সামরিক কর্মজীবন | |
আনুগত্য | আলীয় জুবায়েরীয় (৬৮১–৬৮৪) |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | দ্বিতীয় ইসলামি গৃহযুদ্ধ
|
তিনি ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং দ্বিতীয় ইসলামি গৃহযুদ্ধের সময় আঠারো মাসের জন্য ইরাকের অধিকাংশ অঞ্চল শাসন করেছিলেন।
মুখতার তায়েফে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবে ইরাকের কুফায় চলে আসেন এবং সেখানেই বড় হন। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার যুদ্ধে উমাইয়া বাহিনীর হাতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদের নাতি হোসাইন ইবনে আলীর মৃত্যুর পর তিনি মক্কার বিদ্রোহী খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে আল জুবায়েরের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য জোটবদ্ধ হন। এরপর আবার কুফায় ফিরে এসে খলিফা আলীর (শা. ৬৫৬–৬৬১) সন্তান ও হোসাইনের ভাই মুহাম্মদ ইবনে আল হানাফিয়াহকে মাহদী ও ইমাম ঘোষণা করেন এবং আলীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও হোসাইন হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ডাক দেন। জুবায়েরিয় গভর্নরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তিনি কুফা দখল করে নেন এবং হোসাইন হত্যাকান্ডে জড়িতদের হত্যার আদেশ দেন। ইবনে আল জুবায়েরের সাথে বিরূপ সম্পর্কের জেরে চার মাস অবরুদ্ধ থাকার পর তিনি বসরার জুবায়েরীয় গভর্নর মাস'আব ইবনে আল জুবায়েরের হাতে নিহত হন।
পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও মুখতারের আন্দোলনের প্রভাব ছিল সুদুরপ্রসারী। তার মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা প্রাথমিক শিয়া সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল।[ক] পরে কায়সানিয় নামে পরিচিতি পাওয়া এই দলটি বহু ঔপন্যাসিক মতবাদ গড়ে তোলার মাধ্যমে পরবর্তী শিয়া আদর্শকে অনুপ্রাণিত করেছে। মুখতার মাওয়ালিদের (ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া স্থানীয় লোকজন) সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পরে তারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সত্ত্বায় পরিনত হয়েছিল। এর ষাট বছর পর মাওয়ালি ও কায়সানিয়রা আব্বাসীয় বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মুসলমানদের মাঝে মুখতার একজন বিতর্কিত চরিত্র। অনেকের কাছে তিনি মিথ্যা নবী হিসেবে নিন্দিত হলেও আলীয়দের প্রতি তার সমর্থনের জন্য শিয়াদের দৃষ্টিতে তিনি একজন সম্মানীত ব্যক্তি। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সুযোগসন্ধানী একনিষ্ঠ বিপ্লবী।
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনামুখতার ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে (যে বছর মুহাম্মাদ মদিনায় হিজরত করেন) তায়েফের বনু সাকিফ গোত্রের এক মুসলিম সামরিক নেতা আবু উবায়েদ আল সাকাফি ও দওমা বিনতে আমর ইবনে ওয়াহাব ইবনে মুয়াত্তিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মুখতারকে আবু ইসহাক এবং কায়সান নামে ডাকা হতো৷ কায়সান মানে স্মার্ট এবং ছিদ্রকারী৷ আসবাগ ইবনে নুবাতা বর্ণনা করেন যে ; একদিন খলিফা আলী মুখতারকে হাঁটুর উপর বসিয়েছিলেন এবং তাকে এই বলে সম্বোধন করেছিলেন ; হে কায়িস ; হে কায়িস এবং যেহেতু আলী তাকে দুবার কায়িস বলে ডাকলেন ; তাই তিনি হয়ে গেলেন৷ যেমন বিখ্যাত৷ তবুও ; কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে কায়সান শব্দটি তার একজন উপদেষ্টা এবং প্রধানের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল৷ যার নাম ছিল আবু আমরা৷
তার মা সম্পর্কে ইবনে তাইফুর বর্ণনা করেছেন যে তিনি বাকপটু কথা বলতেন এবং স্পষ্টভাষী ছিলেন৷ তার জন্মের আগে তার মা দওমা স্বপ্নে তাকে একটি কবিতা পড়তে দেখেছিলেন: আপনাকে অভিনন্দন এমন একটি শিশুর জন্য যে ; অন্য কিছুর চেয়ে সিংহের মতো৷ যখন মানুষ সমস্যায় পড়ে অকার্যকর জিনিস নিয়ে ঝগড়া করে ; সে সিংহ ভাগ্য পাবে (তিনি সেরাটা পাবেন)৷
তার জন্মের পর ; তার মা আরেকটি স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে কেউ তাকে বলেছিলেন যে তার সন্তানের অনেক অনুসারী হবে৷
তার
বংশতালিকা এইরূপ : মুখতার ইবনে আবু উবায়েদ ইবনে মাসউদ ইবনে উমর ইবনে উমাইর ইবনে আউফ ইবনে কাসী ইবনে হানবা ইবনে বাকর ইবনে হাওয়াযান | [২] ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর আবু বকর খলিফা নির্বাচিত হন। দুই বছর পর তার মৃত্যু হলে উমর খলিফা হন। তিনি আবু বকরের শুরু করা মুসলিম বিজয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান[৩] এবং মুখতারের বাবা আবু উবায়েদকে ইরাকি রণক্ষেত্রে প্রেরণ করেন। আবু উবায়েদ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে সেতু যুদ্ধে নিহত হন। তার ভাই ওয়াহাব ; মালিক এবং জিবর তাদের পিতার সাথে সেতুযুদ্ধে নিহত হন৷ এই অঞ্চলে মুসলিমদের বিজয়ের পর তের বছর বয়সী মুখতার তখন ইরাকেই থেকে যান।[৪] সেখানে তিনি তার চাচা সাদ ইবনে মাসুদ আল সাকাফির নিকট লালিত হতে থাকেন।[৫] ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে পিরুজ নাহাওয়ান্দি নামের এক পারস্যিক দাসের হাতে উমর নিহত হওয়ার পর উসমান ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বারো বছর ধরে সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন।[৩]
উসমানের মৃত্যুর পর মুহাম্মাদের চাচাত ভাই ও মেয়ে-জামাই আলী খলিফা নির্বাচিত হন এবং মদিনা থেকে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেন[৩]। মুখতার সেখানে কিছু ছোটখাটো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন[৪] এবং তার চাচা নিকটবর্তী আল মাদা'ইনের গভর্নর নিযুক্ত হন।[৫] সিরিয়ার শাসক মুয়াবিয়াসহ মুহাম্মাদের স্বল্পসংখ্যক সাহাবী আলীর কর্তৃত্বকে অস্বীকার করলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মুয়াবিয়া সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়ার পর আলীর সৈন্যরা যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে চূড়ান্ত কোন ফলাফল ছাড়াই সিফফিনের যুদ্ধ শেষ হয় (জুলাই ৬৫৭)। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আলী আলোচনায় বসতে রাজী হন। কিন্তু আলীর সৈন্যদের ছোট একটি অংশ সমঝোতা প্রস্তাব গ্রহণের তার এই সিদ্ধান্তকে ধর্মহীনতা আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে ফেটে পড়ে। এরা পরবর্তীতে খারিজি নামে পরিচিতি পায়। আলী মুখতারকে তার ডেপুটি হিসেবে নিযুক্ত করেন যখন তিনি খারিজিদের সাথে যুদ্ধ করতে চলে যান৷ আলোচনায় মুয়াবিয়া ও আলীর বিতন্ডা মিমাংসায় ব্যর্থ হয়। পরে ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আলী এক খারিজির হাতে নিহত হন।[৩]
এরপর আলীর জ্যেষ্ঠ সন্তান হাসান খলিফা হন। কিন্তু মুয়াবিয়া তার শাসনকেও প্রত্যাখ্যান করে ইরাক আক্রমণ করেন।[৩] হাসান নিজের সৈন্য স্থানান্তরের সময় আল-মাদা'ইনের নিকট এক খারিজির হাতে আহত হলে তাকে মুখতারের চাচার বাড়িতে আনা হয়। সেখানে মুখতার রাজনৈতিক আনুকূল্যতার জন্য হাসানকে মুয়াইবিয়ার নিকট সমর্পনের প্রস্তাব করলে তার চাচা তা প্রত্যাখ্যান করেন। [৫][৬] ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে শান্তি চুক্তি অনুযায়ী হাসান মুয়াবিয়ার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং রাজধানী দামেস্কে স্থানান্তর করা হয়। মুয়াবিয়া মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে তার সন্তান ইয়াজিদকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করার মাধ্যমে উমাইয়া খিলাফতের সূচনা করেন। ইয়াজিদের মনোনয়ন আলীয় পক্ষাবলম্বীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।[খ] কারণ এটি ছিল শান্তি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। চুক্তির একটি শর্ত ছিল মুয়াবিয়া নিজের কোন উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবেন না। [৭] মুখতারের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব অল্পই তথ্য পাওয়া যায়। তবে ষাট বছর বয়সের কাছাকাছি সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তার আবির্ভাব ঘটেছিল।[৮]
অভ্যুত্থান
সম্পাদনা৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইয়াজিদ ক্ষমতা গ্রহণের সময় আলীয়পন্থী কুফাবাসীরা সদ্য প্রয়াত হাসানের কনিষ্ঠ ভাই হোসাইন ইবনে আলীকে তার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ পরিচালনার আহ্বান জানায়। এরপর হোসাইন তার চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে রাজনৈতিক অবস্থা বোঝার জন্য কুফায় প্রেরণ করেন।[৭] উবায়েদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কুফায় পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত ইবনে আকিলকে মুখতার নিজের ঘরে আতিথেয়তা প্রদান করেন। ইবনে আকিল ও তার অনুসারীদের প্রতি মুখতারের শ্বশুর নু'মান ইবনে বশিরের সদয় মনোভাবের জন্য গভর্নর হিসেবে ইবনে যিয়াদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। আর এসময় ইবনে যিয়াদের দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ইবনে আকিলের অনুসারীর সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে তিনি যথাসময়ের পূর্বেই বিদ্রোহ ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এই সময় মুখতার শহরে না থাকলেও বিদ্রোহের খবর শোনার পর কুফা শহরের চারপাশ থেকে তিনি তার সমর্থকদের জড়ো করতে শুরু করেন। কিন্তু তারা শহরে প্রবেশ করার পূর্বেই বিদ্রোহ দমন করে ইবনে আকিলকে হত্যা করা হয়। মুখতারকে গ্রেফতার করে গভর্নরের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি বিদ্রোহে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই অক্টোবর ইবনে যিয়াদের বাহিনীর হাতে হোসাইন শহীদ হন।[৯] এর কিছু সময় পর দ্বিতীয় খলিফার একজন প্রভাবশালী পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের হস্তক্ষেপে মুখতার কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং তাকে কুফা ছাড়ার আদেশ দেওয়া হয়।[১০] মুখতারের সাথে আব্দুল্লাহর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল৷ আব্দুল্লাহর স্ত্রী সোফিয়া হলেন মুখতারের ছোট বোন৷
মক্কায় নির্বাসন
সম্পাদনাএই সময় মুহাম্মাদের সাহাবী জুবায়ের ইবনে আওয়ামের সন্তান ইবনে আল জুবায়ের মক্কায় গোপনে বাইয়াত নিতে শুরু করেন এবং সমগ্র হেজাজ (পশ্চিম আরব) তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।[১১][১২] মুখতার কুফা ছাড়ার পর মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং ইবনে আল জুবায়েরকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহণ আর উচ্চ পদ প্রদানের শর্তে তার প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইবনে জুবায়ের তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর মুখতার তায়েফের দিকে যাত্রা করেন। এক বছর পর ইবনে আল জুবায়েরের পরামর্শকেরা তাকে একই শর্তে মুখতারের আনুগত্য গ্রহণ করতে রাজী করায়।[১০][১৩] ৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইয়াজিদ মক্কা পুণঃদখলের জন্য সৈন্য প্রেরণ করলে মুখতার শহরের প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৪] নভেম্বরে ইয়াজিদের মৃত্যুর পর উমাইয়া বাহিনী ফিরে যায় এবং ইবনে আল জুবায়ের খোলাখুলিভাবে তার খিলাফত ঘোষণা করেন। কুফা থেকে আগত লোকদের কাছ থেকে মুখতার জানতে পারেন যে, কুফা শহর ইবনে আল জুবায়েরের নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিন্তু অনেক কুফাবাসী নিজেদের জন্য একজন স্বতন্ত্র নেতা চায়। মুখতার দাবী করেন তাদের জন্য তিনিই সেই উপযুক্ত ব্যক্তি।[১৫] মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে তিনি হুসাইন হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ এবং ইবনে আল হানাফিয়ার জন্য ক্ষমতা সুরক্ষিত করার জন্য আলীর সন্তান মুহাম্মাদ ইবনে আল হানাফিয়ার অনুমতি চান। ইবনে আল হানাফিয়া এই ধরনের পদক্ষেপের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন মত দেননি। তবে তিনি যেকোন প্রকার রক্তপাতের বিরুদ্ধে ছিলেন।[১৩] মুখতার এর আগে হোসাইনের সন্তান আলী ইবনে হোসেন জয়নুল আবিদীনকেও একই প্রস্তাব দিলে তিনি তাতে অসম্মতি জানান।[৪] ইয়াজিদের মৃত্যুর পাঁচ মাস পর ইবনে আল জুবায়েরকে না জানিয়ে তিনি কুফায় ফিরে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন জুবায়ের তাকে করা নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেননি[১০]
কুফায় প্রত্যাবর্তন
সম্পাদনামুখতার হোসাইনের হত্যাকারীদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কুফায় সৌভাগ্য আর বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকবল সংগ্রহ করতে শুরু করেন। একই সময় মুহাম্মাদের সাহাবী এবং আলীয়দের সমর্থক সুলায়মান ইবনে সুরাদ উমাইয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের তাওয়াবিয় বলে পরিচয় দেওয়া কুফাবাসীদের একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই কর্মকাণ্ডকে তারা কারবালার যুদ্ধে হুসাইনকে সহায়তায় নিজেদের ব্যর্থতার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে দেখতো। তাওয়াবিয় আন্দোলন মুখতারের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। কারণ মুহাম্মাদের সাহাবী হওয়ায় অধিকাংশ আলীয়পন্থী ইবনে সুরাদকে সমর্থন করত। ফলে মুখতার প্রচুর পরিমাণে লোক সংগ্রহ করায় সমস্যায় পড়ে যান। তাই তিনি তাওয়াবিয়দের কর্মকাণ্ডকে অপটু, ইবনে সুরাদকে বৃদ্ধ, দূর্বল, সামরিক জ্ঞানহীন এবং তারা ব্যর্থ হবে বলে সমালোচনা করেন৷ এরপর তিনি আল হানাফিয়াকে মাহদী (মুসিহ) বলে অবিহিত করে নিজেকে তার প্রতিনিধি দাবী করেন। তিনি প্রায় পাঁচশ মাওয়ালিসহ (একবচন: মাওলা; ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া স্থানীয় লোকজন) বহু আলীয় সমর্থকদের বোঝাতে সক্ষম হন যে,[গ] তিনি মাহদীর আদেশে কাছ করছেন।[১৭][১৮]
মুখতারের দাবীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করে আলীয় পক্ষালম্বী একটি দল সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কুফা থেকে মক্কায় ইবনে আল হানাফিয়ার নিকট যায়। তিনি দ্ব্যর্থ ভাষায় জবাব দেন যে রাসুলের পরিবারের শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আল্লাহ যাদের ব্যবহার করেন এমন যেকারও প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। তারা একে মুখতারের দাবীর অনুমোদন বিবেচনা করে কুফায় ফিরে এসে তার সাথে যোগ দেয়। এতদিন মুখতারের দাবীকে অবিশ্বাস করা প্রভাবশালী আলীয় পক্ষাবলম্বী এবং নাখাই গোত্রের প্রধান ইব্রাহীম ইবনে আল আশতারকে বিশ্বাস করানোর জন্য মুখতার তাকে একটি পত্র দেন। এটিকে তিনি ইবনে আল হানাফিয়ার লেখা বলে দাবী করেন। এতে ইবনে আল হানাফিয়া আপাতদৃষ্টিতে নিজেকে মাহদী বলে দাবী করেন এবং মুখতারকে সমর্থন করার জন্য আল আশতারকে আহ্বান জানান। কিছু সন্দেহ প্রকাশ করার পর অবশেষে ইবনে আল আশতারও মুখতারের সাথে যোগ দেন। [১৯] চিঠিটা ছিল নকল এবং ইবনে আল হানাফিয়ার যথাসম্ভব বিদ্রোহের সাথে কোন সম্পর্ক ছিলনা। যদিও এতে তিনি নিজ নামের ব্যবহার সহ্য করেছিলেন এবং মুখতারের কর্মকাণ্ডে অস্বীকৃতি জানাননি।[২০][২১] তবুও কুফায় তার অনুসারীদের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি মুখতারের ছড়ানো একটি গুজবে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। গুজবটি ছিল সত্যিকারের মাহদী তলোয়ারের আঘাতে মৃত্যুবরণ করবেন না।[২১][২২]
ইবনে আল জুবায়ের ৬৮৪ খ্রীস্টাব্দে আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেন। মুখতারের প্রতি ভয় থেকে ইবনে ইয়াজিদ তাকে কারাবন্দী করেন। এর কিছুদিন পর মুখতার সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার শর্তে আরও একবার আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মধ্যস্থতায় মুক্ত হন।[২৩]
জুবায়েরিয় শাসককে পরাস্ত
সম্পাদনামুক্তির পর মুখতার আবার তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। ৬৮৫ খ্রীষ্টাব্দে তাওয়াবিয়রা আইনুল ওয়ারদা যুদ্ধে উমাইয়াদের কাছে পরাজিত হয় এবং অধিকাংশ আলীয়পন্থী কুফাবাসী মুখতারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। ইবনে আল জুবায়ের অশান্তি দমনের জন্য ইবনে ইয়াজিদের স্থলে আব্দুল্লাহ ইবনে মুতিকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেন৷ কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ ছিলোনা। মুখতার আর তার অনুসারীরা ৬৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কুফার গভর্নরকে পরাস্ত করে শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। ১৭ই অক্টোবর মুখতারের দল সরকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্রোহ শুরুর জন্য মুখতার আগুন জ্বালিয়ে তার সৈন্যদের সংকেত দেন। ১৮ই অক্টোবরের বিকেলের মধ্যে সরকারী বাহিনী পরাজিত হয়। ইবনে মুতি প্রথমে আত্মগোপন করেন এবং পরে মুখতারের সহযোগীতায় বসরায় পালিয়ে যান। পরের দিন সকালে মুখতার "আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাহ, রাসূলের পরিবারের জন্য প্রতিশোধ, দূর্বলদের রক্ষা ও পাপীদের সাথে যুদ্ধ" এই ভিত্তিতে মসজিদে কুফাবাসীদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন।[১৯][২৪]
ইরাকজুড়ে শাসন
সম্পাদনামুখতারের অভ্যুল্থানে সমর্থন এসেছিল দুইটি বিপরীতধর্মী দল থেকে। অভিজাত আরব উপজাতি এবং মাওয়ালি। সর্বপ্রথম তিনি তাদের বৈপরিত্য দূর করা এবং উভয়পক্ষকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টা চালান।[২৫] মসুল এবং আল-মাদাইনের শাসনভারসহ অধিকাংশ সরকারী পদ আরবদের দেওয়া হয়েছিল। পূর্বে নিচু শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচিত মাওয়ালিদের গণিমত ও সেনা ভাতা প্রধান এবং তাদের ঘোড়ায় চড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি ঘোষণা করেন তার সাথে যেসব মাওয়ালি কৃতদাস যোগ দেবে তাদেরকে মুক্ত করা হবে। এর ফলে এই দলটি থেকে তার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবু আমরা কায়সানের নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত নিরপত্তারক্ষী বাহিনীতেও মাওয়ালি সদস্য ছিল।[২৬] যদিও মাওয়ালিদের প্রতি তার এরুপ দৃষ্টিভঙ্গীর ফলে অভিজাতরা বিরক্ত ছিল।[১৭][২৭] এই পর্যায়ে তিনি ইরাকের বেশ কিছু এলাকা এবং এর অধীন আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জিবাল এবং জাজিরা (উচ্চ মেসোপটেমিয়ার কয়েকটি অংশ) নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন।[২৮][২৯] জুবায়েরিয়দের নিয়ন্ত্রণে থাকা বসরা দখলে তার সমর্থকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।[২৭] ততদিনে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান সিরিয়ায় উমাইয়াদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং হারানো প্রদেশগুলো পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।[১২]
পাল্টা-অভ্যুল্থান
সম্পাদনাআইনুল ওয়ারদা যুদ্ধের এক বছর পর উমাইয়া বাহিনী মসূল দখল করে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। মুখতার ইয়াজিদ ইবনে আনাসের নেতৃত্বে তিন হাজার অশ্বারোহী প্রেরণ করেন। ৬৮৬ সালের ১৭ই জুলাই তারা তাদের থেকে সংখ্যায় দ্বিগুণ উমাইয়া বাহিনীকে মসুলের নিকট পরাজিত করে। ঐদিন বিকালে সিরিয় বন্দীদের হত্যার আদেশ দেওয়ার পর অসুস্থতার কারণে ইবনে আনাস মারা যান। তাদের কমান্ডারকে হারিয়ে অপর একটি উমাইয়া বাহিনীর মোকাবেলায় কূফাবাসীরা পশ্চাৎপদ হয়। কুফায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে মুখতারের বাহিনী পরাজিত হয়েছে এবং ইবনে আনাসকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় মুখতার ইবনে আশতারের নেতৃত্বে আরও সাত হাজার সেনা প্রেরণ করেন। সেনা অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাওয়ালিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কারণে মুখতারের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়া কুফার অভিজাতবর্গরা তার প্রাসাদ অবরোধ করে।[৩০][৩১] তারা তার বিরুদ্ধে তাদের সম্মান লুন্ঠনের অভিযোগ তোলে:[৩২]
সে ও তার দল আমাদের ধার্মিক পূর্বপুরুষদের অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সে আমাদের দাস এবং মাওয়লিদের প্রলোভন দেখিয়েছে এবং তাদের উঁচুতে আসীন করিয়েছে। তাদেরকে আমাদের রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ভাগ দিয়েছে বা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর এভাবে সে আমাদের লুন্ঠন করেছে ...[৩২]
অবরোধ সত্ত্বেও মুখতার ইবনে আল-আশতারের কাছে খবর পাঠাতে সক্ষম হন। ইবনে আল-আশতারের বাহিনী কুফা ছাড়ার তিনদিন পর এসে পৌঁছায় এবং বিদ্রোহ দমন করে।[৩০][৩১]
মুখতার নিজের বিরোধীদের নির্মূল করার পর কারবালার যুদ্ধে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি উমর ইবনে সা'আদ এবং শিমর ইবনে জিলজওশনসহ অধিকাংশকেই হত্যা করেন।[৩১] আরো অনেককে যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষোভাবে জড়িত থাকার অজুহাতে হত্যা করা হয়। দশহাজার কুফাবাসী বসরায় পালিয়ে যায়। আত্মগোপন করা অনেকের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। [২৮] এর ফলে মুখতারের প্রতি আরবদের সমর্থন কমে যায় এবং তিনি ক্রমাগতভাবে মাওয়ালিদের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।[৩১]
খাজির যুদ্ধ
সম্পাদনাকুফায় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার পর মুখতার ইবনে যিয়াদের নেতৃত্বে এগিয়ে আসা উমাইয়া বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য ইবনে আল-আশতারের নেতৃত্বে ৩০ হাজার সৈন্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। মুখতারের কিছু সৈনিক একটি আসনের চারপাশ ঘিরে আসনটি বহন করছিল। তারা এটিকে আলীর বলে দাবী করে এবং তাদের বিশ্বাস ছিল এটি তাদের যুদ্ধে বিজয়ী করবে। বলা হয়ে থাকে মুখতার এই ধারণাটির উদ্ভাবক ছিলেন। ধার্মিক লোকদের মাঝে তার প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য তিনি ধারণাটি উদ্ভাবন করেছিলেন এবং একে আর্ক অব দ্য কভিনান্টের সাথে তুলনা করেছিলেন। [৩৩][৩৪] কিন্তু প্রাচ্যবীদ জুলিয়াস ওয়েলহাউসেন মনে করেন মুখতার এই ধারণার উদ্ভাবক ছিলেন না। শুধুমাত্র তার সৈন্যদের উদ্দিপ্ত করার প্রয়োজনীয়তা ছিল বলেই তিনি তাদের আসনটি বহন করতে দিয়েছিলেন।[৩৫] ৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টের প্রথমভাগে উভয়পক্ষ খাজির নদীর তীরে মুখোমুখি হয়। উমাইয়া বাহিনী পরাজিত হয় এবং ইবনে যিয়াদ ও হুসাইন ইবনে নুমাইর আল শাকুনিসহ বহু বয়োজ্যেষ্ঠ উমাইয়া সামরিক নেতাকে হত্যা করা হয়।[৩১][৩৬] এই যুদ্ধের নির্দিষ্ট তারিখ অজানা তবে কিছু উৎস অনুযায়ী সময়টি ছিল ৬ আগস্ট বা হিজরী ১০ই মুহররম, যা কাকতালীয়ভাবে হুসাইনের মৃত্যু দিবসের সাথে মিলে যায়।[৩৭] ইবনে যিয়াদের মৃত্যুকে হোসাইনের খুনীদের বিরুদ্ধে মুখতারের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন হিসাবে দেখা হয়েছিল।[৩৭][৩৮]
ইবনে আল জুবায়েরের সাথে সম্পর্ক
সম্পাদনাইবনে মুতিকে বহিষ্কারের কয়েকদিন পর মুখতার ইবনে আল জুবায়েরের কাছে অভিযোগ করেন যে, তিনি তার হয়ে যথাযথভাবে কাজ করার পরও ইবনে আল জুবায়ের তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও মুখতার প্রয়োজন হলে তাকে সহযোগিতা করার কথা বলেন। ইবনে আল জুবায়ের মুখতারকে অনুগত হিসাবে বিবেচনা করলেও খলিফার নিযুক্ত শাসক উমর ইবনে আব্দুল রহমানের কাছে কুফার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান। মুখতার আব্দুল রহমানকে হুমকি ও ঘুষ প্রদান করলে তিনি শহর ছেড়ে চলে যান।[৩৯]
৬৮৬ সালে মুখতার ইবনে আল জুবায়েরকে উৎখাতের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে মদিনায় আসন্ন উমাইয়া আক্রমণ প্রতিরোধে তাকে সামরিক সহায়তা প্রদানের এক ছলনাপূর্ণ প্রস্তাব দেন। ইবনে আল জুবায়ের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে মদিনার উত্তরের একটি উপত্যকা ওয়াদি আল-কুরায় তাকে সেনা পাঠানোর অনুরোধ করে। কিন্তু এর পরিবর্তে মুখতার শুহরাবিল ইবনে ওয়ারসের নেতৃত্বে তিন হাজার সৈনিককে পরবর্তী কোন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত মদীনায় প্রবেশের আদেশ দেন। এদিকে ইবনে আল জুবায়ের সিরিয় সৈন্যদের আগমন পূর্বানুমান করতে পেরে ইবনে ওয়ারস ও তার লোকদের সাথে নিয়ে ওয়াদি আল-কুরায় সিরিয়দের প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়ে তার বিশ্বস্ত আব্বাস ইবনে সাহলকে দুই হাজার সৈন্যের এক শক্তিশালী বাহিনীসহ প্রেরণ করেন। মুখতারের অনুগত সৈন্যরা যদি ইবনে সাহলের সাথে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তিনি তাদের হত্যার নির্দেশও দেন। ইবনে ওয়ারস বাস্তবিকই তাদের সাথে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে তার অধিকাংশ লোকের সাথে হত্যা করা হয়। মুখতার পরবর্তী সময়ে ইবনে আল-হানাফিয়াকে আলীয়পন্থীদের জন্য অঞ্চলটি দখল করার বিষয়ে তার ব্যর্থ হওয়া পরিকল্পনার কথা জানান এবং বলেন ইবনে আল হানাফিয়া যদি শহরের বাসিন্দাদের বলেন মুখতার তার হয়ে কাজ করছিলেন তাহলে তিনি মদিনায় আরও একটি সেনাদল পাঠাবেন। ইবনে আল হানিফিয়া রক্তপাতের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। ইবনে আল জুবায়ের মুখতারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার পর এবং হেজাজে আলীয়পন্থীদের অভ্যুত্থান আশঙ্কা করে জোরপূর্বক ইবনে আল হানাফিয়ার আনুগত্য আদায়ের জন্য তাকে আটক করেন। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যে মুখতারও ইবনে আল হানাফিয়ার দেখাদেখি তার আনুগত্য করবেন। ইবনে আল হানাফিয়া মুখতারের কাছে সাহায্য চাইলে তিনি তাকে মুক্ত করার জন্য চার হাজার সৈন্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। এই ঘটনার পর মক্কা ও কুফার মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়।[৪০][৪১][৪২]
মৃত্যু
সম্পাদনা৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বসরার গভর্নর এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আল জুবায়েরের ছোট ভাই মাস'আব ইবনে আল জুবায়ের কুফায় সামরিক অভিযান শুরু করেন। তার সৈন্যের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিল মুখতারের শাস্তিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে পালানো কুফার অভিজাত শ্রেণী।[২৫] মুখতারের সৈন্য সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন উৎস অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল তিন থেকে ছয় হাজারের মধ্যে।[৪৩] টাইগ্রিস নদীর পাশে বসরা এবং কুফার মধ্যবর্তী গ্রাম হারুরায় যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর কুফাবাসীরা পিছু হটে।[৪৪] এরপর মাস'আব চার মাস যাবৎ মুখতারের প্রাসাদ অবরোধ করে রাখেন। এসময় মসুলের তৎকালীন গভর্নর ইবনে আল-আশতার মুখতারকে মুক্ত করার জন্য কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি। এর কারণগুলো হতে পারে হয় তাকে সাহায্য চেয়ে ডেকে পাঠানো হয়নি[৪৫] অথবা তিনি মুখতারের পাঠানো সাহায্যের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[৪৬][৪৭] কারণ যা-ই হোক না কেন, আল-আশতার পরবর্তীতে মাস'আবের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।[৪৫] ৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা এপ্রিল মুখতার তার ১৯ জন সমর্থককে সাথে নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসেন (বাকিরা যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল) এবং লড়াইয়ে নিহত হন। [৪৮] এর অল্প সময় পর মুখতারের অবশিষ্ট সর্বমোট ছয় হাজার সমর্থক আত্মসমর্পণ করলে মাস'আব তাদেরও হত্যা করেন। সিদ্ধান্তটি এতই ভয়াবহ ছিল যে যখন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর মাসয়াবকে দেখে বললেন : যদিও তারা তোমার পিতার ৬০০০টি ভেড়াও হতো তবুও তোমার এটা করা উচিত ছিল না৷ মুখতারের এক স্ত্রী উমরাহ বিনতে নু'মান ইবনে বশির আল-আনসারি তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকেও শিরচ্ছেদ করা হয়। মাসয়াব উমরাহকে জিগ্যেস করলেন মুখতার সম্পর্কে আপনার মতামত কী? তিনি উত্তর দিলেন ; তিনি ধার্মিক ছিলেন এবং প্রতিদিন রোজা রাখতেন৷ মাসয়াব তার শিরচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন৷ ইসলামের প্রথম নারী হিসেবে তিনি শিরচ্ছেদ করেন৷ অন্যদিকে মুখতারের নিন্দা করায় তার অপর স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুখতারের হাত কেটে মসজিদের দেওয়ালে পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। যখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুফার ক্ষমতা লাভ করেন ; তিনি হাতগুলোকে কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ অনেকের মতে তার সমাধি মসজিদ আল-কুফার পেছনে মুসলিম ইবনে আকিলের মাজারের ভেতর অবস্থিত।[৪৯] যদিও কিছু উৎসে মাস'আব তার দেহ পুড়িয়ে ফেলেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫০]
প্রভাব
সম্পাদনাযদিও মুখতার দুই বছরেরও কম সময়ের জন্য শাসন করেছিলেন কিন্তু তার আদর্শ তার মৃত্যুর পরেও টিকে ছিল। তার শাসনামলে মাওয়ালিরা গুরুত্বপূর্ণ সত্ত্বায় পরিণত হয়, যা কূফার অভিজাত আরবদের মধ্য অসন্তোষ তৈরী করেছিল।[২৫][৫১] তিনি মোহাম্মাদ ইবনে আল হানাফিয়াকে মাহদী ও ইমাম ঘোষণা করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে কাউকে মাহদী দাবী করার ঘটনা এটাই প্রথম। এই ধারাণাটি পরবর্তীকালে বিশেষ করে শিয়া ইসলামে একটি প্রভাব বিস্তারকারী কেন্দ্রীয় মতবাদগুলোর একটিতে পরিণত হয়। [৫২][৫১] মাধার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরে তিনিই প্রথম বাদা' (ঐশ্বরিক ইচ্ছায় পরিবর্তন) ধারণাটি প্রবর্তন করেন। মাধার যুদ্ধের আগে তিনি দাবী করেছিলেন তাকে এই যুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধে পরাজয়ের পর তিনি বলেছিলেন আল্লাহ তার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দিয়েছেন।[৫৩][৫৪]
তার অনুসারীরা পরবর্তীতে কায়সানিয় নামে একটি স্বতন্ত্র শিয়া সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল।[৫৫] তারা মাহদীর অন্তর্ধান (ঘায়বা) এবং পুনরাগমন মতবাদের প্রবর্তন করে। ইবনে আল হানাফিয়ার মৃত্যুর পর কিছু কায়সানিয় মনে করতো তিনি মারা যাননি। বরং রাদওয়া পর্বতে লুকিয়ে আছেন এবং একদিন ফিরে এসে পৃথিবীকে অন্যায় ও অবিচার থেকে মুক্ত করবেন।[৫৬][৫৭][৪৮] যদিও অধিকাংশ কায়সানিয় তার পুত্র আবু হাসিমকে তাদের ইমাম হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এরপর মৃত্যুর আগে আবু হাসিম তার ইমামত্ব মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নিকট হস্তান্তর করেন। আব্বাসীয়রা বিপ্লবের সময় এটাকে তাদের কর্মকাণ্ডের বৈধতা প্রাপ্তি ও আলীয়পন্থীদের আকৃষ্ট করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। মোহাম্মাদ ইবনে আলীর দুই সন্তান আশ সাফ্ফাহ এবং আল মনসুর অবশেষে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।[৫৮][৫৯][৬০] মুখতার ও আব্বাসীয়দের বিপ্লবের মধ্যে সাদৃশ্যের কথা বলে আবু মুসলিম খোরাসান আরব ও মাওয়ালিদের তার দলে টানেন এবং তাদেরকে সমান অধিকার প্রদান করেন। [৬১] ওয়েলহাউসেন লিখেছেন: "যদি রাজ'আ মতবাদটি সঠিক হয়, তাহলে খুটারনিয়ার[ঘ] আরব [মুখতার] খুটারনিয়ার মউলার [আবু মুসলিম] মাঝে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন।[৬৩]
অনেক মুসলিম মুখতারকে নবুওয়তের দাবী করা মিথ্যাবাদী এবং আলীয়দের শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। তারা মনে করেন তিনি ক্ষমতা অর্জনের জন্য আলীয়দের নাম ব্যবহার করেছিলেন এবং আলীয়পন্থীদের থেকে সমর্থন পাওয়ার জন্য হোসাইনের হত্যাকারীদের হত্যা করেছিলেন।[৬৪] ওয়েলহাউসেনের মতে, যদিও তিনি নিজেকে স্পষ্টভাবে নবী বলে দাবী করেননি, তবুও অভিযোগটির মূলে রয়েছে আরব গণকদের মিলযুক্ত গদ্যের অনুকরণে তার নিজের অর্জন ও সামর্থের মাত্রাতিরিক্ত বর্ণনা।[১][৬৫] মুহম্মদ বলেছিলেন: "সাকিফ গোত্র থেকে এক মহামিথ্যাবাদী ও ধ্বংসকারী আসবে"[৬৬] তাদের মতে মুখতার হলো সেই মিথ্যাবাদী এবং হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ধ্বংসকারী।[৬৬] অন্যদিকে শিয়ারা তাকে আলী ও তার পরিবারের একজন অনুগত সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করে, যে হুসাইন এবং তার সাথীদের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিল। তারা মনে করে তার নবুওয়তের মিথ্যা দাবী, কায়সানিয় সম্প্রদায়ে তার ভূমিকা এবং ক্ষমতার প্রতি তার লালসার বিষয়গুলো হচ্ছে উমাইয়া ও জুবায়েরীয়দের উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রচারণা।[৬৪] যদিও হাসানের প্রতি তার মনোভাব ও ইবনে আকিলের বিদ্রোহের সময় তার কথিত অকর্মণ্যতার জন্য শুরুর দিকের শিয়া সম্প্রদায় তার প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষণ করতো। অ-ফাতিমিয় ইবনে আল হানাফিয়াকে তার মাহদি ঘোষণাও এর একটি কারণ হতে পারে।[৬৭] তবে পরবর্তী সময়ের শিয়া সম্প্রদায় ফাতিমিয় ও আলীয় বংশধারাকে এক বলে মেনে নেয়।[৬৮]
আলীয় পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গী
সম্পাদনামুখতারের প্রতি আলীর পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এক মতবাদ অনুযায়ী ইবনে যিয়াদ এবং উমর ইবনে সা'আদের কাটা মাথা দেখে হুসাইনের পুত্র এবং চতুর্থ শিয়া ইমাম আলী জয়নুল আবিদীন মুখতারের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। [৬৯] অন্য এক মতবাদ অনুযায়ী তিনি মুখতারের যোগ্যতাকে অস্বীকার করে তাকে মিথ্যাবাদী বলেছিলেন।[৭০] হোসাইনের দৌহিত্র মুহাম্মদ আল-বাকির এই বলে তার প্রসংশা করেছিলেন যে: "মুখতারকে নিয়ে খারাপ কিছু বলো না। সে আমাদের হত্যাকারীদের হত্যা করেছে, আমাদের রক্তের প্রতিশোধ নিয়েছে এবং আমাদের বিধবাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে।"[৭১] এছাড়াও মুখতারের পুত্র তার বাবা সম্পর্কে মতামত চাইলে আল-বাকির মুখতারের প্রশংসা করেছিলেন।[৭২] বলা হয়ে থাকে হোসাইনের প্রপৌত্র জাফর আল-সাদিক বলেছিলেন:"মুখতার আমাদের কাছে [যারা] হুসাইনকে হত্যা করেছিল তাদের কাটা মাথা নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত বনু হাশিমের নারীরা তাদের চুল আঁচড়ায়নি এবং [চুলে] রং করেনি।[৭৩] অন্য একটি মতবাদ রয়েছে যে, জাফর আল-সাদিক বলেছিলেন মুখতার আলী জাইন আল-আবেদীন সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিলেন।[৭২]
আধুনিক পণ্ডিতদের দৃষ্টিভঙ্গি
সম্পাদনাপ্রথমদিকের ঐতিহাসিক বর্ণনার সবগুলোতে মুখতারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হলেও[৭৪] তার প্রতি আধুনিক ঐতিহাসিকরা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করেন। ওয়েলহাউসেন লিখেছেন যে, যদিও মুখতার নিজেকে নবী বলে দাবী করেননি কিন্তু তিনি নিজেকে একজন নবী হিসেবে উপস্থাপনের জন্য সকল প্রকার চেষ্টা করেছেন এবং তিনি এমনভাবে কথা বলতেন যেন তিনি ইশ্বরের নির্দেশে এসব করছেন। তারপরেও তার সময়ের সামাজিক বৈষম্যগুলো নির্মূলে মুখতার আন্তরিক ছিলেন বলে তিনি মত দেন। তিনি আরও বলেন যেহেতু নিজের নাম ব্যবহার করে অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা মুখতারের পক্ষে সম্ভব ছিলোনা, তাই তিনি বিভিন্ন অসংযত দাবী এবং ইবনে আল হানাফিয়ার নাম প্রয়োজনের থেকেও বেশি ব্যবহার করেছিলেন। [৬৫] তিনি তার সম্পর্কে বলেন: "... ইসলামের ইতিহাসে একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব; [যিনি] ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বানুমান করতে পেরেছিলেন"।[৬৩] ঐতিহাসিক হিউ কেনেডি লিখেছেন, মুখতার ছিলেন একজন বিপ্লবী যিনি কুফার একটি ঐক্যবদ্ধ জোট তৈরী করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি অভ্যন্তরীণ বিভাজনের স্বীকার হন এবং আলীর পরিবারও তাকে হতাশ করেছিল।[২৫] বলা হয়ে থাকে মুখতার তার মৃত্যুর পূর্বে বলেছিলেন:
আমি আরবদের একজন। আমি দেখেছি ইবনে জুবায়েরকে হেজাজের শাসন ক্ষমতা দখল করতে এবং [খারিজি নেতা] নাজদাহকে ইয়ামামা আর আব্দুল মালিককে সিরিয়ায় একই কাজ করতে এবং আমি কখনো নিজেকে অন্য আরবদের অধীনস্থ হিসেবে দেখিনি। তাই আমি এই অঞ্চল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি এবং তাদের মত একজন হয়েছি। পার্থক্য শুধু এই, আমি রাসূলের পরিবারের রক্তের প্রতিশোধ নিয়েছি যেখানে অন্য আরবরা বিষয়টিকে অবহেলা করেছিল। যারা তাদের রক্ত ঝরিয়েছে আমি তাদের প্রত্যেককে হত্যা করেছি এবং আজকের দিনের আগ পর্যন্ত তাই করছিলাম ...[৭৫]
মধ্যপ্রাচ্যের পণ্ডিত মোশে শ্যারন বক্তব্যটিকে মুখতারের কর্মকাণ্ডের নিখুঁত বর্ণনা বলে উল্লেখ করেছেন।[৭৫] অন্যদিকে অধ্যাপক আব্দুলাজিজ সাচেদিনা তাকে নিজের ভালোর জন্য সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানো একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করেছেন।[৭৬]
জনপ্রিয় উদ্ধৃতি
সম্পাদনাসাফাভি যুগে কারবালার কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত মাকতাল নামার পাশাপাশি মুখতারের জীবন ও কর্মকাণ্ডের ওপর বিভিন্ন মুখতার-নামা লেখা হয়েছে।[৭৭] ২০০৯ সালে মুখতারের জীবন এবং অভ্যুল্থান নিয়ে শিয়া দৃষ্টকোণ থেকে ইরানি ধারাবাহিক নাটক মুখতার নামেহ নির্মাণ করা হয়েছে।[৭৮]
টীকা
সম্পাদনা- ↑ একটি সম্প্রদায় যারা সুন্নি মুসলিমদের থেকে আলাদাভাবে মনে করে ইসলামী রাসূল মুহাম্মাদের চাচাত ভাই ও এবং মেয়ে-জামাই আলী এবং তাঁর বংশধরেরা মুসলিম সম্প্রদায়ের ন্যায়সঙ্গত ও আল্লাহ মনোনীত নেতা (ইমাম), [১]
- ↑ আলীয়পন্থী বা আলীয় পক্ষাবলম্বীরা ছিলেন আলী ও তার পরিবারের রাজনৈতিক সমর্থক।
- ↑ প্রারম্ভিক খিলাফতের গোত্রীয় সমাজে প্রত্যেক মুসলিম কোন না কোন আরব গোত্রের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। যদিও ইসলামে ধর্মান্তরিত অনারবরা আরবগোত্রগুলোয় যোগ দেন কিন্তু তারা তাদের সমকক্ষ ছিলেন না, এজন্যই তাদের ক্ষেত্রে মাওলা(আশ্রিত) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।[১৬]
- ↑ কূফার নিকটবর্তী একটি ছোট গ্রাম, যেখানে মুখতারের কিছু সম্পত্তি ছিল। আবু মুসলিম তার প্রথমদিককার অভিযানগুলো কূফা থেকে শুরু করেছিলেন।[৬২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Madelung 1997, পৃ. 420–424।
- ↑ Fishbein 1990, পৃ. 102।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Madelung, Wilferd 1997, পৃ. xv–xvi।
- ↑ ক খ গ Kennedy 2016, পৃ. 82।
- ↑ ক খ গ Dixon 1971, পৃ. 27–28।
- ↑ Hawting 1989, পৃ. 105।
- ↑ ক খ Wellhausen 2000, পৃ. 146–147।
- ↑ Wellhausen 1975, পৃ. 125।
- ↑ Howard 1990, পৃ. 65।
- ↑ ক খ গ Al-Abdul Jader 2010, পৃ. 6।
- ↑ Wellhausen 2000, পৃ. 148।
- ↑ ক খ Kennedy 2016, পৃ. 81।
- ↑ ক খ Dixon 1971, পৃ. 32–33।
- ↑ Hawting 1989, পৃ. 114–115।
- ↑ Wellhausen 1975, পৃ. 126।
- ↑ Watt 1960, পৃ. 163।
- ↑ ক খ Daftary 1992, পৃ. 52।
- ↑ Hawting 1989, পৃ. 93।
- ↑ ক খ Wellhausen 1975, পৃ. 128–130।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 42−43।
- ↑ ক খ Anthony 2011, পৃ. 259।
- ↑ Al-Abdul Jader 2010, পৃ. 8।
- ↑ Al-Abdul Jader 2010, পৃ. 6–7।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 37–45।
- ↑ ক খ গ ঘ Kennedy 2016, পৃ. 83।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 283।
- ↑ ক খ Wellhausen 1975, পৃ. 131–132।
- ↑ ক খ Donner 2010, পৃ. 185।
- ↑ Zakeri 1995, পৃ. 207।
- ↑ ক খ Dixon 1971, পৃ. 59–63।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Daftary 1992, পৃ. 53।
- ↑ ক খ Wellhausen 1975, পৃ. 132।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 68–69।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 265–273।
- ↑ Wellhausen 1975, পৃ. 137।
- ↑ Wellhausen 2000, পৃ. 186।
- ↑ ক খ Hawting 2002, পৃ. 53।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 260।
- ↑ Fishbein 1990, পৃ. 53–54।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 56–58।
- ↑ Wellhausen 1975, পৃ. 132–133।
- ↑ Fishbein 1990, পৃ. 55–59।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 70।
- ↑ Donner 2010, পৃ. 186।
- ↑ ক খ Wellhausen 1975, পৃ. 138।
- ↑ Dixon 1971, পৃ. 73–74।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 290।
- ↑ ক খ Sachedina 1981, পৃ. 10।
- ↑ Nawbakhtī 2007, পৃ. 69 n।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 177।
- ↑ ক খ Hawting 2000, পৃ. 51–52।
- ↑ Daftary 1990, পৃ. 52।
- ↑ Sachedina 1981, পৃ. 153।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 288।
- ↑ Daftary 1990, পৃ. 59।
- ↑ Fitzpatrick ও Walker 2014, পৃ. 31।
- ↑ Egger 2016, পৃ. 70।
- ↑ Daftary 1990, পৃ. 62।
- ↑ Hawting 2000, পৃ. 52।
- ↑ Sharon 1983, পৃ. 107।
- ↑ Sharon 1983, পৃ. 109।
- ↑ Wellhausen 1927, পৃ. 505।
- ↑ ক খ Wellhausen 1927, পৃ. 506।
- ↑ ক খ Inloes 2009, পৃ. 181–193।
- ↑ ক খ Wellhausen 1975, পৃ. 147–148।
- ↑ ক খ Al-Tirmidhi 2007, পৃ. 270।
- ↑ Hawting 1993, পৃ. 521।
- ↑ Hawting 2000, পৃ. 53।
- ↑ Majlesi 1983, পৃ. 344।
- ↑ Majlesi 1983, পৃ. 332।
- ↑ Majlesi 1983, পৃ. 350।
- ↑ ক খ Majlesi 1983, পৃ. 351।
- ↑ Al-Kashshi 2009, পৃ. 98।
- ↑ Hawting 2000, পৃ. 51।
- ↑ ক খ Sharon 1983, পৃ. 110।
- ↑ Sachedina 1981, পৃ. 9।
- ↑ Calmard 1998, পৃ. 213।
- ↑ Anthony 2011, পৃ. 261 n।
উৎস
সম্পাদনা- Al-Abdul Jader, Adel S. (২০১০)। "The Origin of Key Shi'ite Thought Patterns in Islamic History"। Suleiman, Yasir। Living Islamic History: Studies in Honour of Professor Carole Hillenbrand। Edinburgh: Edinburgh University Press। আইএসবিএন 978-0-7486-4219-9।
- Al-Kashshi, Abu Amr Muhammad ibn Umar (২০০৯)। Ikhtiyar Ma'rifat al-Rijal (Arabic ভাষায়)। Beirut: Mu’assasah al-`Amalī lil-Matbū`āt।
- Al-Tirmidhi, Abū ʿĪsā Muḥammad (২০০৭)। Jami' at-Tirmidhi। Abu Khaliyl কর্তৃক অনূদিত। Riyadh: Darussalam। আইএসবিএন 978-9960-9967-7-6।
- Anthony, Sean (২০১১)। The Caliph and the Heretic: Ibn Sabaʾ and the Origins of Shīʿism। Leiden: Brill। আইএসবিএন 978-90-04-21606-8।
- Calmard, Jean (১৯৯৮)। "Mohammad b. al-Hanafiyya dans la religion populaire, le folklore, les légendes dans le monde turco-persan et indo-persan"। Cahiers d'Asie Centrale (French ভাষায়)। 5/6: 201–220।
- টেমপ্লেট:Daftary-The Ismailis
- Dixon, Abd al-Ameer A. (১৯৭১)। The Umayyad Caliphate, 65–86/684–705: (a Political Study)। London: Luzac। আইএসবিএন 978-0718901493।
- Donner, Fred M. (২০১০)। Muhammad and the Believers, at the Origins of Islam। Cambridge, MA: Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-05097-6।
- Egger, Vernon O. (২০১৬)। A History of the Muslim World to 1405: The Making of a Civilization। New York: Routledge। আইএসবিএন 978-1-315-50768-2।
- Fishbein, Michael, সম্পাদক (১৯৯০)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXI: The Victory of the Marwānids, A.D. 685–693/A.H. 66–73। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0221-4।
- Fitzpatrick, Coeli; Walker, Adam H. (২০১৪)। Muhammad in History, Thought, and Culture: An Encyclopedia of the Prophet of God [2 volumes]। Santa Barbara, CA: ABC-CLIO। আইএসবিএন 978-1-61069-178-9।
- Haider, Najam (২০১৯)। The Rebel and the Imam in Early Islam: Explorations in Muslim Historiography। Cambridge, England: Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781139199223।
- Hawting, G.R., সম্পাদক (১৯৮৯)। The History of al-Ṭabarī, Volume XX: The Collapse of Sufyānid Authority and the Coming of the Marwānids: The Caliphates of Muʿāwiyah II and Marwān I and the Beginning of the Caliphate of ʿAbd al-Malik, A.D. 683–685/A.H. 64–66। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-88706-855-3।
- Hawting, Gerald R. (১৯৯৩)। "al-Mukhtār b. Abī ʿUbayd"। Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P. & Pellat, Ch.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume VII: Mif–Naz। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 521–524। আইএসবিএন 90-04-09419-9।
- Hawting, Gerald R. (২০০০)। The First Dynasty of Islam: The Umayyad Caliphate AD 661–750 (Second সংস্করণ)। London and New York: Routledge। আইএসবিএন 0-415-24072-7।
- Howard, I. K. A., সম্পাদক (১৯৯০)। The History of al-Ṭabarī, Volume XIX: The Caliphate of Yazīd ibn Muʿāwiyah, A.D. 680–683/A.H. 60–64। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0040-1।
- Inloes, Amina (২০০৯)। "Mukhtar al-Thaqafi: Character versus Controversy"। Journal of Shi'a Islamic Studies। 2 (2): 181–193।
- Kennedy, Hugh (২০১৬)। The Prophet and the Age of the Caliphates: The Islamic Near East from the 6th to the 11th Century (Third সংস্করণ)। Oxford and New York: Routledge। আইএসবিএন 978-1-138-78761-2।
- Madelung, Wilferd (১৯৮৬)। "Al–Mahdi"। Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Lewis, B. & Pellat, Ch.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume V: Khe–Mahi। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 1230–1238। আইএসবিএন 90-04-07819-3।
- Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। "Shi'a"। Bosworth, C. E.; van Donzel, E.; Heinrichs, W. P. & Lecomte, G.। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume IX: San–Sze। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 420–424। আইএসবিএন 90-04-10422-4।
- Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate। Cambridge, England: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-64696-3।
- Majlesi, Mohammad-Baqer (১৯৮৩)। Biḥār al-Anwār (Arabic ভাষায়)। 45। Beirut: Muʾassasat al-Wafāʾ।
- Nawbakhtī, al-Ḥasan ibn Mūsá (২০০৭)। Shi'a Sects: (Kitab Firaq Al-Shi'a)। Kadhim, Abbas কর্তৃক অনূদিত। London: ICAS Press। আইএসবিএন 978-1-904063-26-1।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Sachedina, Abdulaziz A. (১৯৮১)। Islamic Messianism: The Idea of Mahdi in Twelver Shi'ism। Albany, NY: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-87395-442-6।
- Sharon, Moshe (১৯৮৩)। Black Banners from the East: The Establishment of the ʻAbbāsid State : Incubation of a Revolt। Jerusalem: JSAI। আইএসবিএন 978-965-223-501-5।
- Watt, Montgomery (১৯৬০)। "Shi'ism under the Umayyads"। Journal of the Royal Asiatic Society। 92 (3–4): 158–172। ডিওআই:10.1017/S0035869X00163142।
- Wellhausen, Julius (১৯৭৫)। The Religio-political Factions in Early Islam। Ostle, Robin; Walzer, Sofie কর্তৃক অনূদিত। Amsterdam: North-Holland Publishing Company। আইএসবিএন 978-0720490053।
- Wellhausen, Julius (১৯২৭)। The Arab Kingdom and its Fall। Margaret Graham Weir কর্তৃক অনূদিত। Calcutta: University of Calcutta। ওসিএলসি 752790641।
- Zakeri, Mohsen (১৯৯৫)। Sasanid Soldiers in Early Muslim Society: The Origins of 'Ayyārān and Futuwwa। Wiesbaden: Otto Harrassowitz। আইএসবিএন 978-3-447-03652-8।