বোলান গান বা বোলান হল প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের লোকগান তথা বাংলার এক প্রাচীন লোকগান। বোলান গান বাংলার লোকস্কৃতির একট অনন্য অবদান। এক সময় বীরভূম, নদিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকায় বোলান গান প্রচলিত ছিল। বিশিষ্ট লোক সংস্কৃতি গবেষক ওয়াকিল আহমেদ তার ‘বাংলার লোকস্কৃতি’ বইতে লিখেছেন, বোলান গান বাঁধা হয় পালার আকারে। এতে লঘু, গুরু উভয় বিষয়েরই স্থান আছে। গুরু বিষয় খণ্ডগীতি, আর লঘু বিষয় রঙপাঁচালি নামে পরিচিত।[১] এখানে একটি দল যখন গায়, অন্য দল ধুয়া দেয়। এ ভাবেই এগিয়ে চলে বোলান।বোলান গানের জনক : স্বর্গীয় শ্রী প্রাণ বল্লভ দে পণ্ডিত সাটুই নিবাসী ।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত
Baul Song Performance - Saturday Haat - Sonajhuri - Birbhum 2014-06-28 5286.JPG
বীরভূমে বাউল গানের একটি অনুষ্ঠান
ধারা
নির্দিষ্ট ফর্ম
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত
গণমাধ্যম ও অনুষ্ঠান
সঙ্গীত মাধ্যমবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট

অঞ্চলিক সঙ্গীত
সম্পর্কিত এলাকা
অন্যান্য অঞ্চল

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার বেশির ভাগ লোকোগান, যেমন- ভাদু, আলকাপ প্রভৃতি লোকশিল্পের মতোই বোলানের ঐতিহ্যও ফিকে হয়ে এসেছে।

নামের উৎপত্তিসম্পাদনা

বঙ্গীয় শব্দকোষ থেকে জান যায় ‘বোলান’ শব্দের অর্থ সম্ভাষণ বা প্রবচন। মতান্তরে ‘বুলা’ বা ভ্রমণ থেকেও বোলান গানের উৎপত্তি হতে পারে বলে মনে করেন একদল লোক গবেষক।

ইতিহাসসম্পাদনা

বাংলায় তুর্কি আক্রমণের পর থেকে শিবের গাজন উপলক্ষে বোলান গান গাওয়া শুরু হয়। বোলান গানের মূলত ৪টি প্রকার— দাঁড় বোলান, পালা বোলান, সখী বোলান ও শ্মশান বোলান।

প্রকৃতিসম্পাদনা

বোলান গান একটি দল হিসাবে গাওয়া হয়। এই গান ঢোল এর বাজনার তালে গাওয়া হয়। ঢোল বাদকরা ঢোল বাজায় আর দলপতি গান করে। অনেক সময় এই গানের সঙ্গে নৃত্য শিল্পী থাকে যারা গানের তালে তালে নৃত্য করে। দলপতির সঙ্গে সহযোগিরাও গান করে। সহযোগিদের গান গাওয়াকে বলা হয় ধৌয়া তোলা। বোলানগান সামাজিন ও পৌরানিক বা দেবদেবীদের নিয়ে পালা আকারে উপস্থাপন করা হয়। পালা বাদার জন্য একজন থাকেন প্রতিটি দলে। দুর্গা ও শিবের বোলান পালা বেশ জনপ্রীয়। গাজনের অনুষ্ঠানে বোলান গান হিসাবে বোলান গান গাওয়া হয়।[২]

আসরের শুরুতে গুরু বন্দনা করে বোলান গাইতে পছন্দ করেন নদিয়ার বোলান শিল্পীরা। এরই একটি নিচে দেখুন-

গুরুর নাম প্রহ্লাদ পাটনি, কৃষ্ণপুরে বাড়ি

তাঁর চরণ স্মরণ করে দেশবিদেশে ঘুরি নদিয়া জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণগঞ্জ থানা ডাকঘর হয় শিবনিবাস, এই তাঁর ঠিকানা।’’ [৩]

—-গুরু বন্দনা মূলক গান

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "লুপ্তপ্রায় বোলান গানের ভবিষ্যৎ কী, প্রশ্ন মঞ্চে"। আনন্দবাজার প্রত্রিকা। ৩০ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. "হারিয়েছে পৌরাণিক পালা, চলছে 'বউ কেমন আছো'"। আনন্দবাজার প্রত্রিকা। ২৩ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭  line feed character in |শিরোনাম= at position 24 (সাহায্য)
  3. "গানে গানে প্রতিবাদ নদিয়ার বোলান-শিল্পীদের"। আনন্দবাজার প্রত্রিকা। ১৫ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা