বিদুর

হস্তিনাপুরের মহামন্ত্রী, পাণ্ডব ও কৌরবদের কাকা

বিদুর (Sanskrit: विदुर) মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র। তিনি হস্তিনাপুরের প্রধানমন্ত্রী এবং পাণ্ডবকৌরবদের খুল্লতাত বা কাকা।

বিদুর
অন্তর্ভুক্তিকুরু বংশজ
অস্ত্রতলোয়ার
পরিবার
দাম্পত্য সঙ্গীসুলভা/পরস্বী/পরাশরী
সন্তান((পুত্র))

নৃসিংহ, বামন,বিষ্ণু,অক্রুর, যদু, শঙ্কর, মুরারী, মর্দন,আনন্দ,যামন,বিশ্ব,রাঘব,অনুকেতু,অনাস্ব ((কন্যা))

অম্বাবতী/বৃন্দা
আত্মীয়

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

সংস্কৃত ভাষায় বিদুর শব্দ মানে 'দক্ষ', 'বুদ্ধিমান' বা 'জ্ঞানী'।

জীবন এবং কিংবদন্তি

সম্পাদনা

অণীমাণ্ডব্য ঋষিকে অযৌক্তিক কারণে শূলে চড়ানোর শাস্তি দেওয়ার কারণে, তিনি অভিশাপ দেন যে, যম মানবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন। তাই, যম, বিদুর রূপে, ব্যাসদেবের নিয়োগে এবং বিচিত্রবীর্যের প্রথম স্ত্রীর দাসী পরিশ্রামী বা মর্যাদার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। বিদুর অত্যন্ত ধর্মশীল, ধীমান, দূরদর্শী, ভূয়োদর্শী ছিলেন।

অম্বিকার গর্ভে অন্ধপুত্র ও অম্বালিকার গর্ভে পাণ্ডুবর্ণ পুত্রের জন্ম হলে বেদব্যাস মাতা সত্যবতী বিচলিত হলেন। পুত্রের জন্মের পর রাণী অম্বিকা পুনরায় ঋতুমতী হলে সত্যবতী তাঁর গর্ভে আরেক পুত্র উৎপন্ন করতে অম্বিকাকে ব্যাসদেবের আশ্রমে যেতে বললেন। আশ্রমে যাওয়ার পূর্বে ব্যাসের বীভৎস কদর্য চেহারা মনে করে অম্বিকা আর যেতে রাজি হলেন না, পরিবর্তে তিনি তাঁর এক দাসী পরিশ্রামীকে ব্যাসদেবের আশ্রমে পাঠালে ব্যাসদেব নিয়োগের মাধ্যমে সেই দাসীকে এক পুত্র সন্তান দেন যার নাম বিদুর রাখা হয়।

ভীষ্ম বিদুরকে সন্তানের মতো করে প্রতিপালিত করেন। ভীষ্মের তত্ত্বাবধানে তিনি ধনুর্বেদ, গজশিক্ষা, নীতিশাস্ত্র, ইতিহাস, পুরাণ প্রভৃতিতে শিক্ষিত হয়ে উঠেছিলেন। ব্রাহ্মণের ঔরসে শূদ্রা জননীর গর্ভে জন্মেছিলেন বলে- রাজ্যে তাঁর কোন অধিকার ছিল না। তিনি ধৃতরাষ্ট্রের মহামন্ত্রী ছিলেন। তারপরেও তিনি ধৃতরাষ্ট্রের অধর্মকে কখনও প্রশ্রয় দেননি। দুর্যোধনের জন্মের সময় দুর্লক্ষণ দেখে ইনি ধৃতরাষ্ট্রকে এই সন্তান পরিত্যাগ করতে বলেছিলেন। এই উপদেশে ধৃতরাষ্ট্র কান দেন নি। তাঁর সহায়তাতেই জতুগৃহ-ষড়যন্ত্র থেকে পাণ্ডবেরা রক্ষা পেয়েছিলেন। ধৃতরাষ্ট্র দ্রুপদপুরী থেকে কুন্তী ও দ্রৌপদীসহ পঞ্চপাণ্ডবকে হস্তিনাপুরে আনার জন্য বিদুরকে প্রেরণ করেছিলেন।

যুধিষ্ঠিরের সাথে শকুনির পাশা খেলাকে স্থগিত রাখার জন্য দুর্যোধনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু দুর্যোধন সে কথায় কর্ণপাত করেন নি। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণকালে বিদুরকে সর্বাপেক্ষা বিচলিত দেখা যায়। তিনি মৌখিকভাবে এই কাজে বাধা দেওয়ার প্রবল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে বিদুরের পরামর্শেই ধৃতরাষ্ট্র এই বিবাদ মিটিয়েছেন। পাণ্ডবেরা বনে গেলে ধৃতরাষ্ট্র ভয়ে তাঁর কাছে পরামর্শ প্রার্থনা করলে তিনি পাণ্ডবদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। অবশ্য বিদুরের সে পরামর্শ ধৃতরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করেন নি। বরং বিদুরকে রাজ্য ছেড়ে পাণ্ডবদের কাছে চলে যেতে বলেন। বিদুর তখন মনের দুঃখে রাজ্য ছেড়ে পাণ্ডবদের কাছে চলে যান। পরে ভীষ্মের কথায় ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে পাঠিয়ে বিদুরকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে ধৃতরাষ্ট্রকে বিভিন্নভাবে যুদ্ধ করার সংকল্প থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর তিনি পনের বছর ধৃতরাষ্ট্রের সাথে পাণ্ডবদের আশ্রয়ে বসবাস করেছেন। যুধিষ্ঠির তাঁকে কনিষ্ঠ পিতা, আবার কখনোও বা ক্ষত্তা (দাসীপুত্র) বলে সম্বোধন করেছেন। যেহেতু বিদুর স্বয়ং শাপভ্রষ্ট ধর্ম, আবার যুধিষ্ঠির নিজেও ধর্মপুত্র, অনেক মহাভারত বিশেষজ্ঞ বিদুরকে যুধিষ্ঠিরের পিতা বলেছেন। কয়েকজন মহাভারত বিশেষজ্ঞের মতে স্বয়ং বিদুর বনবাসী ভ্রাতা পাণ্ডুর পুত্র উৎপন্ন করতে দেবী কুন্তীর সাথে সঙ্গম করেন, যার ফলে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়। ইনি ধৃতরাষ্ট্র ও অন্যান্যদের সাথে বানপ্রস্থ অবলম্বন করে কঠোর তপস্যায় প্রবৃত্ত হন। সেখানেই তিনি যোগাবলম্বনে দেহত্যাগ করেন।

বিদুর মিথিলার রাজা সুদেবের শূদ্রা স্ত্রীর গর্ভজাত কন্যা সুলভাকে বিয়ে করেন। সুলভা পরস্বী বা পরাশরী নামেও পরিচিত।এনাদের প্রথম ১২ জন পুত্র নৃসিংহ,বামন,বিষ্ণু,অক্রুর,যদু,শঙ্কর,মুরারী,মর্দন, আনন্দ,যামন,বিশ্ব ও রাঘব যমুনা তীরবর্তী কৃষক কন্যাদের বিবাহ করেন।এদের প্রত্যেকের ২ টি করে পুত্র ছিল। এনারা সবাই আশ্রমে দেহত্যাগ করেন।বিদুরের অপর দুই পুত্র অনাস্ব ও অনুকেতু পরীক্ষিতের সভাসদ হয়েছিলেন।তার কন্যা অম্বাবতী বা বৃন্দা বানাসুরের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন।তাদের কন্যা ঊষা শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধকে বিবাহ করেন।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা