শকুনি
এই নিবন্ধটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত।(আগস্ট ২০১৫) |
শকুনি (সংস্কৃত: शकुनि, আক্ষরিক অর্থে-পাখি) হলেন মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। প্রথমদিকে, তিনি ছিলেন গান্ধার রাজ্যের যুবরাজ। পরবর্তীতে, শকুনি, তাঁর পিতা রাজা সুবলের মৃত্যুতে গান্ধার রাজ্যের রাজা হন। তিনি হলেন হস্তিনাপুরের রাজা ধৃতরাষ্ট্রের রাজমহিষী গান্ধারীর বড়ভাই এবং কৌরবদের মামা। বুদ্ধিমান, ধূর্ত এবং বিপথগামী, কপট ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিত্রিত, শকুনি তার ভাগ্নেদের সবসময় সমর্থন করতেন, বিশেষ করে জ্যেষ্ঠভাগ্নে দুর্যোধনকে। মামা শকুনির সাথে মিলে দুর্যোধন তার কাকাত ভাই পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রচনা করতো। শকুনির পরামর্শেই দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলায় আমন্ত্রণ জানায় এবং শকুনিই যুধিষ্ঠিরের বিরুদ্ধে কপট পাশা খেলা খেলেন, যা মহাকাব্যের অন্যতম প্রধান ঘটনা। তিনি ভারী পাশা ব্যবহার করে পাশা খেলায় কারসাজি করতে পারদর্শী ছিলেন। ফলে, পাশা খেলায় পরাজিত হয়ে যুধিষ্ঠির সহ অন্য পাণ্ডবগণ কুরু রাজসভায় চরমভাবে অপমানিত, দ্রৌপদীর লাঞ্ছনা ও বস্ত্রহরণ, পাণ্ডবদের ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাস প্রভৃতি ঘটনা ঘটে এবং কৌরবদের ১৩ বছরের জন্য হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থের রাজত্ব এনে দেয়।[২] কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়, সপ্তদশ দিনে সর্বকনিষ্ঠ পাণ্ডব সহদেবের সাথে তলোয়ার যুদ্ধে শকুনি নিহত হন।
শকুনি | |
---|---|
লিঙ্গ | পুরুষ |
পরিবার | পিতামাতা
|
দাম্পত্য সঙ্গী | অর্ষি |
সন্তান | উলুক (পুত্র) |
আত্মীয় | |
উদ্ভব |
পরিচয়
সম্পাদনাগান্ধাররাজ সুবলের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও গান্ধারীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। তিনি মহাভারতের প্রধান খলনায়ক। সুবলের কোনো এক পাপের কারণে দেবতাদের অভিশাপে তাঁর বংশে শকুনির জন্ম হয়। শকুনির জন্ম দ্বাপর যুগের অংশে; তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধূর্ত ও কপট। গান্ধারীর বিবাহের পর থেকে শকুনি ধৃতরাষ্ট্রের সংসারেই থাকতেন এবং ভাগিনেয় দুর্যোধনের সঙ্গে ওঁর বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। তাঁর কারণেই মহাভারতের বিচিত্র ঘটনাগুলো আবর্তিত হয়েছে। তিনি অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী নন; তথাপি তাঁর কপট বুদ্ধিতেই সমগ্র কুরুবংশ ধ্বংস হয়েছিল।
পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে শকুনির কোনো বিদ্বেষ ছিল না, শকুনির প্রধান শত্রুতা ছিল ভীষ্ম পিতামহের বিরুদ্ধে । ভীষ্ম শকুনির পরিবারকে ভোজনের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের ন্যূনতম খাবার দিয়ে তালাবদ্ধ বা বন্দী করেন । গান্ধারী ধৃতরাষ্ট্রকে বিশ্বাসঘাতক বলে বিয়ে করার সময় রাজা সুবল মিথ্যা রাশিফল দিয়েছেন জেনে তিনি এটি করেন । জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে গান্ধারীর প্রথম স্বামী মারা যাবে, তাই তাকে একটি ছাগলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সেই ছাগলটি বলি দেওয়া হয়েছিল । তাই ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী!
যখন সমস্ত পরিবারকে ন্যূনতম পরিমাণে খাবারের সাথে একটি ঘরের মধ্যে বন্দী করা হয়েছিল, তখন রাজা সুবল সিদ্ধান্ত নেন যে ভীষ্মের এই আচরণের জন্য ভীষ্ম এবং কুরু পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার পরিবারের একজন সদস্যকে যে কোনও মূল্যে বাঁচতেই হবে । তাই শকুনি, সবচেয়ে ছোট এবং চতুর পুত্র, বেঁচে থাকার জন্য অন্য সকলকে খাবার দিয়ে তাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল । রাজা সুবল শেষ নিঃশ্বাসে শকুনির পায়ে ছুরিকাঘাত করে এবং তাকে ব্যথা মনে রাখতে এবং কুরু পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের কথা স্মরণ করতে বলে । সে শকুনিকে তার উরুর হাড় থেকে পাশা বের করতে বলে ।
শকুনি ছিলেন একজন অত্যন্ত চতুর ব্যক্তিত্ব এবং একজন মায়াবাদী, তার একটি আশ্চর্য প্রতিভা ছিল । তিনি যে কোনো সময় পাশা খেলার সময় পাশাকে তার মন অনুযায়ী চালনা করতে পারতেন । যুধিষ্ঠির শকুনির সাথে পাশা খেলায় দুর্যোধনের কাছে সবকিছু হারিয়েছিলেন । এটাই হয়ে ওঠে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রধান কারণ
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাশকুনির শুধু ১০০ জন ভগ্নিপুত্রই ছিল না, তিনি ছিলেন রাজা সুবলের ১০০ তম পুত্র তাই তাকে শৌবালা নামও দেওয়া হয়েছিল । তিনি তার সমস্ত ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে চতুর ছিলেন এবং তাই পরিবারের সকলেই অনাহারে মারা গেলে, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকেই বেঁচে থাকার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ।
শকুনির পুত্র উলুক শকুনিকে গান্ধারে ফিরে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে অনুরোধ করেন । তবুও, শকুনি তার পিতার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে করেন । আর যে কোনো মূল্যে ভীষ্ম ও কুরু পরিবারকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেন । এইজন্যই সে তার পুত্রের দেওয়া প্রস্তাব অস্বীকার করেন । বেঁচে থাকার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ।
দুর্যোধনকে তিনি নানান কুবুদ্ধি দিতেন। কালকূট বিষ প্রয়োগ করে ভীমকে হত্যা, জতুগৃহে কুন্তী সহ পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারা, ইত্যাদি ষড়যন্ত্রে শকুনির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দ্যূতক্রীড়ায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্থ। যুধিষ্ঠির দ্যূতপ্রিয় হলেও, ক্রীড়া পটু ছিলেন না। তাই তাঁকে পণ-দ্যূতে আমন্ত্রণ করে সর্বস্বান্ত করার পরামর্শটা তিনিই দুর্যোধনকে দিয়েছিলেন। যুধিষ্ঠির খেলতে এলে কৌরবদের পক্ষ হয়ে দুইবার তিনিই খেলেন। যুদ্ধ শুরু হবার আগে শকুনির পুত্র উলুক দুর্যোধনের দূত হিসেবে দুর্যোধনের শিখিয়ে দেওয়া অভদ্র অশ্লীল কথাগুলো পাণ্ডব পক্ষকে গিয়ে শোনালেন। সহদেব সেই শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে শপথ করলেন যে, শকুনির সামনে প্রথমে উলুককে হত্যা করে, তারপর তিনি শকুনিকে বধ করবেন। যুদ্ধের শেষ দিনে সহদেবের হাতেই শকুনি-পুত্র উলুক ও শকুনির মৃত্যু হয়।
মহাভারতের যুদ্ধের ১৮ তম দিনে সহদেব শকুনিকে বধ করেন । সহদেব, যিনি দ্রৌপদীর প্রতি সমস্ত দুর্ব্যবহারের পিছনে সমস্ত কারণ শকুনিকে ভেবেছিলেন তাই তিনি শকুনিকে হত্যা করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেন ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ The Mahabharata: Volume 2 (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। ২০১৫-০৬-০১। আইএসবিএন 978-81-8475-403-2।
- ↑ Mackenzie, Donald Alexander (২০২০-০৮-১৫)। Indian Myth and Legend (ইংরেজি ভাষায়)। BoD – Books on Demand। আইএসবিএন 978-3-7524-4315-8।