বিকর্ণ (সংস্কৃত: विकर्ण) হলেন মহাকাব্য মহাভারতে বর্ণিত তৃতীয় কৌরব, ধৃতরাষ্ট্রগান্ধারীর পুত্র এবং যুবরাজ দুর্যোধনের ভাই৷ বিকর্ণ কৌরবদের মধ্যে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।[১] দুর্যোধনের কাছে পাশা খেলায় যুধিষ্ঠির তাঁর রাজ্য সহ সব কিছু হারিয়ে ফেলেন৷ বিকর্ণই একমাত্র কৌরব যিনি রাজসভায় দুর্যোধন যখন যুধিষ্ঠির তথা পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদীর অপমান করছিল তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন৷[২]

বিকর্ণ
(বামে) বিকর্ণ, দুর্যোধন(মাঝে) সাথে এবং দুঃশাসনের (ডানে) সাথে।
অন্তর্ভুক্তিকৌরব
অস্ত্রতীর-ধনুক
পরিবারধৃতরাষ্ট্র (পিতা)
গান্ধারী (মাতা)
দুর্যোধন, দুঃশাসন, চিত্রসেন, আরো ৯৬ জন (ভাই), দুঃশলা (বোন) এবং যুযুৎসু (সৎ-ভাই) (ভাইবোন)
দাম্পত্য সঙ্গীইন্দুমতী (ত্রিলোকাপুর রাজকন্যা), সুদেষ্ণাবতী (ত্রিলোকাপুর রাজকুমারী)
সন্তানজ্যোৎস্যানা (সুদেশনাবতী থেকে), দুর্গা এবং 10টি নামহীন কন্যা (ইন্দুমতী থেকে)
আত্মীয়পাণ্ডবগণ (কাকাতো ভাই)
শকুনি (মামা)

যৌবনে সম্পাদনা

বিকর্ণ হলেন দ্রোণের একজন শিষ্য যিনি তীর-ধনুক চালনায় অর্জুনের মতো পারদর্শী ছিলেন। অস্ত্রশিক্ষা শেষে দ্রোণ কৌরবদের বললেন- গুরুদক্ষিণা হিসেবে পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে বন্দী করে নিয়ে আসতে হবে৷ দুর্যোধন, দুঃশাসন, যুযুৎসু, বিকর্ণ এবং অন্য কৌরবগণ হস্তিনাপুরের সৈন্যসহ পাঞ্চাল রাজ্য আক্রমণ করে৷ বিকর্ণ ও তাঁর ভাইয়েরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে এবং যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ বিকর্ণ তিলকপুরের রাজকন্যা সুদেষ্ণাবতীকে বিবাহ করেন৷ বিকর্ণ এবং সুদেষ্ণাবতী দম্পতির দুই মেয়ে - রাধা এবং কৃষ্ণা৷[৩][৪]

চরিত্রচিত্রণ সম্পাদনা

ব্যাসদেবের আশীর্বাদে ধৃতরাষ্ট্রগান্ধারীর যে শতপুত্র জন্মগ্রহণ করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ধার্মিক ছিলেন বিকর্ণ৷ দুর্যোধনের ভাই হলেও তিনি, তাঁর বাকি ভাইদের মত বদমেজাজি ও অহংকারী ছিলেন না৷ পান্ডবদের পাশাখেলায় পরাজয় হেতু সভামধ্যে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময়ে ধৃতরাষ্ট্র আর এক বৈশ্য দাশীর পুত্র যুযুৎসু ব্যতীত একমাত্র প্রতিবাদ করেছিলেন তিনিই৷ এর প্রতিবাদে এমনকি তিনি সেই সভাস্থল ত্যাগ করেন৷ পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও তিনি কৌরব পক্ষের হয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন৷ ভীম কৌরবদের একশ ভাইকে বধ করবার পণ নিয়ে যখন কুরুক্ষেত্রকে প্রায় শ্মশানে পরিণত করেছেন তখন বিকর্ণ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দ্বন্দ্বের আহ্বান জানান, ভীম কিছুকাল ভাবেন তার সভার কথা মনে হতে তিনি বিকর্ণকে বলেন তুমি একমাত্র কৌরব যে জানে ধর্ম কি? তুমি সরে দাঁড়াও আমি তোমাকে বধ করতে চাই না৷ তুমিই একমাত্র যে সেই সভায় দুর্যোধনের প্রতিবাদ করেছিলে৷ কিন্তু বিকর্ণ বলেন আজ আমার সরে যাওয়াটাও অধর্ম হবে, আমি জানি কৌরবদের এই যুদ্ধে জয়লাভ কোনোদিনই হবে না যেহেতু বাসুদেব কৃষ্ণ পান্ডব পক্ষে আছে, কিন্তু আমি আমার ভাই এবং জ্যেষ্ঠ ভাই দুর্যোধনকে পরিত্যাগ করতে পারব না৷ আমি ধার্মিক কিন্তু বিভীষণ নই৷ আমাকে যুদ্ধ করতেই হবে৷ তিনি বলেন “সেই সভাস্থলে আমার যা কর্তব্য ছিল করেছি, কিন্তু এখন আমার কর্তব্য আমার ভাইদের রক্ষা করা৷ তাই এসো আমার সাথে দ্বন্দ্ব কর বৃকোদর ভীম৷”

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Shankar, Uday (২০২১-০৪-১৮)। Untold Tales from the Mahabharata: The Epic Beyond the Obvious (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Publishing। আইএসবিএন 978-93-90358-44-1 
  2. Krishnan, S. A. (২০১৭-০৭-০১)। Karna, the son of Kunti: Stories from the Mahabharatha (ইংরেজি ভাষায়)। SA Krishnan। 
  3. The Mahabharata of Krishna-Dwaipayana Vyasa, trl. into English by P.C. Roy, New Delhi 1972, pp. 291-92
  4. "পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২২ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-৩০