নিয়োগ (সংস্কৃত: नियोग) হলো প্রাচীন ভারতীয় রীতি যার অর্থ মিলনহীন। নিয়োগের "নি" অর্থ হীন বা ছাড়া ও "যোগ" অর্থ মিলন। এই রীতিতে, একজন স্ত্রী (যার স্বামী সন্তান প্রদানে ব্যর্থ বা সন্তান প্রদান না করেই মারা গেছেন) এক ধার্মিক মানুষের কাছে সন্তান লাভের জন্য কামনা করবেন।

নিয়োগের নিয়ম[টিকা ১] সম্পাদনা

নিয়োগ অনুশীলনের নিয়মগুলো হলো:

১. একজন স্ত্রী শুধুমাত্র সন্তান লাভের জন্যই এতে সম্মত হবেন, যৌনসুখের জন্য নয়।

২. এভাবে জন্ম নেয়া সন্তান শুধু স্বামী-স্ত্রীর সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবে, নিযুক্ত পুরুষের নয়।

৩. অপব্যবহার এড়াতে, একজন মানুষকে তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ তিনবার নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

৪. কাজটিকে ধর্ম হিসাবে দেখা হবে এবং তা করার সময়, পুরুষ এবং স্ত্রীর মনে কেবল ধর্ম থাকবে এবং আবেগ বা লালসা থাকবে না। পুরুষটি ঈশ্বরের নামে মহিলার সাহায্য হিসাবে এটি করবে, যেখানে মহিলাটি কেবল নিজের এবং তার স্বামীর জন্য সন্তান লাভের জন্য এটি করবে।

৫. স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের দেহই ঘি দিয়ে মাখানো হবে। পুরুষ এবং স্ত্রীর মধ্যে একটি পর্দা থাকবে যাতে কেউ একে অপরের মুখ দেখতে না পারে ও আবেগ তাদের মনে যাতে জাগ্রত না হয়।[১]

মহাভারতে নিয়োগ সম্পাদনা

মহাভারতে, সত্যবতী তাঁর পুত্র বেদব্যাসকে বিচিত্রবীর্যের দুই বিধবার সাথে নিয়োগ করতে অনুরোধ করেন। এতে করে অম্বিকা, অম্বালিকা ও তাদের এক দাসীর যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডুবিদুর নামে তিন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।[২]

মনুসংহিতায় নিয়োগ সম্পাদনা

মনুসংহিতার ৯ম অধ্যায়ের ৫৯-৬৩ নং শ্লোকে নিয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবে ৬৪-৬৮ নং শ্লোকে এই রীতি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৬৭ নং শ্লোক অনুযায়ী নিয়োগের মাধ্যমে যে সন্তানের জন্ম হয় তাকে "ক্ষেত্রগা" বলে।[৩]

সমালোচনা সম্পাদনা

সংস্কৃত "নিয়োগ" ধারণাটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থেভারতীয় মহাকাব্যে অস্পষ্ট। অনেকের মতে এই রীতিতে একজন নিযুক্ত ব্যক্তির সাথে স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক ঘটে, আবার অনেকে এই রীতিকে শারীরিক সম্পর্কহীন বীর্য দান বা বিধবা বিবাহের সাথে তুলনা করেছেন।[৪]

মহাভারতে, কুন্তি ঋষি দুর্বাসার বরের মাধ্যমে দেবতাদের আহ্বান করে তাঁদের কাছ থেকে আশীর্বাদ স্বরূপ কর্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীমঅর্জুন নামে ৪ সন্তান লাভ করেন এবং মাদ্রীকে নকুলসহদেব লাভ করিয়ে দেন যা নিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। উল্লেখ্য, এই নিয়োগে আধ্যাত্মিক ও অলৌকিকতার পরিচয় পাওয়া যেখানে কোনো শারীরিক মিলন বা সঙ্গমের কথা বর্ণিত হয়নি।[৫]

এছাড়া, মুনি-ঋষিরা সর্বদাই বিভিন্ন জিনিস প্রচ্ছন্নভাবে বলতে পছন্দ করতেন ও তাঁরা চেয়েছিলেন যে আমরা তাঁদের দেওয়া জিনিসগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চিন্তাগুলিকে আত্মস্থ করি এবং মন্থন করি যাতে করে "নিয়োগ" ধারণাটির মূল ব্যাখ্যা এখনও প্রত্যয়যোগ্য নয়।[৬]

টীকা সম্পাদনা

  1. নিয়োগের এই নিয়ম প্রত্যয়যোগ্য নয়। ক্ষেত্র বিশেষে ও মত পার্থক্যের কারণে এর নিয়ম পরিবর্তিত হতে পারে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Laws of Manu IX"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১২ 
  2. "The Mahabharata, Book 1: Adi Parva: Sambhava Parva: Section CVI"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১২ 
  3. "The Laws of Manu IX"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১০ 
  4. Tripāṭhī, Candrabalī; Mani, Chandra Mauli (২০০৫)। The Evolution of Ideals of Womenhood in Indian Society (ইংরেজি ভাষায়)। Gyan Books। আইএসবিএন 978-81-7835-425-5 
  5. Roy, Pratap Chandra; Kisari Mohan Ganguli (১৮৮৪–১৮৯৪)। The Mahabharata of Krishna-Dwaipayana Vyasa। Princeton Theological Seminary Library। Calcutta : Bharata press। পৃষ্ঠা 330 & 359–366। 
  6. Saranathan, Jayasree। "Yuga classification - how Yuga must be understood."