বাংলাদেশের বিপন্ন ভাষাসমূহের তালিকা
বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত বেশকিছু ভাষা রয়েছে। এ ভাষাগুলো ব্যবহার করা লোকের সংখ্যা খুবই কম। এসব স্থানীয় ভাষাভাষী লোকেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে ভাষাটি বিলুপ্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইউনেস্কো "নিরাপদ" (বিপন্ন নয়) ও বিলুপ্ত ভাষার মধ্যে চারটি ধাপ নির্দিষ্ট করেছে:[১]
- সুরক্ষিত নয়
- স্পষ্টত বিপন্ন
- গুরুতরভাবে বিপন্ন
- সঙ্কটাপন্ন
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের তথ্যানুসারে বাংলাদেশে ২৭টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৭,৮৪,০০০ জন বাস করে।[২] বাংলাদেশের নৃতত্ত্ববিজ্ঞানী ও আদিবাসী নেতাদের দেওয়া তথ্যানুসারে বাংলাদেশে মোট ৪৮টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪টি ভাষাগোষ্ঠীর প্রায় ৩০টি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে ১২-১৮টি ভাষা বিভিন্ন মাত্রায় বিপন্ন। ঢাকায় অবস্থিত সরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আইএমএলআই) বাংলাসহ ৩৭টি ভাষা সংরক্ষণ ও সুসংবদ্ধ করার প্রকল্প হাতে নেয়। এদের মধ্যে আবার মাত্র ৪টি ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে- চাকমা, মারমা, ম্রো ও মৈতৈ মণিপুরী ভাষা।[৩] রাজশাহীতে বসবাসকারী কিছু জনগোষ্ঠী হিন্দি, বাংলা, উর্দু ও অন্যান্য ভাষার কিছু বর্ণ নিয়ে "সাদরি" ভাষা ব্যবহার করেন।[৪] সিলেটের চা-বাগানে তেলুগু, সাঁওতালি, নেপালি ও রাই সম্প্রদায় এটি লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে ব্যবহার করে।[৩]
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রামের বনভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদিবাসীদের বসবাস। এদের অর্ধেকের জন্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৮% আদিবাসী শিশু প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাত্র ২% মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। অধিকাংশ শিশু পাঠ্যপুস্তকের বাংলা লেখা ভালোভাবে পড়তে ও বুঝতে পারে না। যথোপযুক্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বীকৃতির অভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাড়ি, বনাই, ডলুই, রাজবংশী প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষার বদলে বাংলার ব্যবহার শুরু করেছে।[৩]
তালিকা
সম্পাদনাভাষা | দেশ | ভাষিক লোকের সংখ্যা | অবস্থা | মন্তব্য | সূত্র |
---|---|---|---|---|---|
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী | বাংলাদেশ, ভারত | ১,১৫,০০০ | সুরক্ষিত নয় | [১][৫] | |
বম | বাংলাদেশ | ১৪,০০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [১] | |
চাক | বাংলাদেশ | ৫,৫০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] | |
শো | বাংলাদেশ, মিয়ানমার | ২,৩৪০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] | |
ফালাম চিন | বাংলাদেশ, মিয়ানমার | ১,২০,০০০ | সুরক্ষিত নয় | [৫] | |
হাকা চিন | বাংলাদেশ, মিয়ানমার | ৪,৪৬,২৬৪ | সুরক্ষিত নয় | [৫] | |
হাজং | বাংলাদেশ, ভারত | ৬৮,০০০ | সুরক্ষিত নয় | [৫] | |
খাসি | বাংলাদেশ, ভারত | ৮,৬৫,০০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] | |
কোড়া | বাংলাদেশ, ভারত | ১,৬০০ | গুরুতরভাবে বিপন্ন | [৫] | |
ককবরক | বাংলাদেশ, ভারত | ৬,৯৫,০০০ | সুরক্ষিত নয় | [১][৫] | |
কুরুখ | বাংলাদেশ | ১৪,০০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [১] | |
মারমা | বাংলাদেশ | ১,৬৬,৫০০ | সুরক্ষিত নয় | [৫] | |
মেগাম | বাংলাদেশ | ৬,৮৭০ | গুরুতরভাবে বিপন্ন | [৫] | |
ম্রো | বাংলাদেশ | ৫১,২৩০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] | |
পাংখুয়া | বাংলাদেশ | ২,৭৩০ | গুরুতরভাবে বিপন্ন | [৫] | |
জয়ন্তিয়া | বাংলাদেশ, ভারত | ৮৮,০০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] | |
সাদরি | বাংলাদেশ | ১,৬৬,০০০ | সুরক্ষিত নয় | [৫] | |
সূর্যপাহাড়ি | বাংলাদেশ, ভারত | ১,১৭,০০০ | স্পষ্টত বিপন্ন | [৫] |
এছাড়াও ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আরও কয়েকটি ভাষাকে বিপন্ন বলে চিহ্নিত করেছে- লুসাই (৯৫৯ জন), খুমি (৩৩৬৯ জন), খিয়াঙ (৩৮৯৯ জন), রেঙমাটিয়া (৪০ জন) এবং পাত্র (২০৩ জন)।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Atlas of the World’s Languages in Danger। Memory of Peoples (ইংরেজি ভাষায়) (৩য় সংস্করণ)। ইউনেস্কো। ২০১০। আইএসবিএন 978-92-3-104096-2। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ মুক্তশ্রী চাকমা সাথী (৩০ মে ২০১৪)। "Disappearing Mother Tongues" (পিডিএফ)। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা ৮। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ Special Correspondent, "Disappearing indigenous languages ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে", BD Chronicles, 21 February 2015
- ↑ Emran Hossain (১৮ অক্টোবর ২০০৯)। "30 Adivasi languages on verge of extinction"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত Endangered Language Alliance। "Bangladesh: Some endangered languages" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। এনডেঞ্জারড ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যালায়েন্স। ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১২।