পানিশ্বর ইউনিয়ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত সরাইল উপজেলার একটি ইউনিয়ন

পানিশ্বর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত সরাইল উপজেলার একটি ইউনিয়ন

পানিশ্বর
ইউনিয়ন
৫নং পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ
পানিশ্বর
পানিশ্বর
ডাকনাম: শাখাইতি
পানিশ্বর চট্টগ্রাম বিভাগ-এ অবস্থিত
পানিশ্বর
পানিশ্বর
পানিশ্বর বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
পানিশ্বর
পানিশ্বর
বাংলাদেশে পানিশ্বর ইউনিয়নের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫′১৫″ উত্তর ৯১°৩′৫৮″ পূর্ব / ২৪.০৮৭৫০° উত্তর ৯১.০৬৬১১° পূর্ব / 24.08750; 91.06611 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
উপজেলাসরাইল উপজেলা উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
সরকার
 • চেয়ারম্যানমোস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন
 • মোট১৫.৪২ বর্গকিমি (৫.৯৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৩৬,১৮১
 • জনঘনত্ব২,৩০০/বর্গকিমি (৬,১০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৩৬.৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৪৩০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
মানচিত্র
মানচিত্র

আয়তন সম্পাদনা

পানিশ্বর ইউনিয়নের আয়তন ৩,৮১০ একর (১৫.৪২ বর্গ কিলোমিটার)।[১]

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে পানিশ্বর ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৩৬,১৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭,০৮৭ জন এবং মহিলা ১৯,০৯৪ জন। মোট পরিবার ৬,৫৭৯টি।[১] জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ২,৩৪৭ জন।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

পানিশ্বর ইউনিয়ন পূর্বে পানিশ্বর উত্তর ইউনিয়ন নামে পরিচিত ছিল। পানিশ্বরের তেমন কোন লিখিত ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়না। যতটুকু জানা যায়, মুঘল শাসনামলে বারো ভূঁইয়াদেরকে প্রতিরোধের জন্য সরাইলের পশ্চিমে মেঘনা নদীতে বিশাল মুঘল বাহিনী নৌবহর নিয়ে অবস্থান নেয়। রাতে মুঘলবাহিনীর রণতরীগুলোতে জ্বলে উঠত অসংখ্য বাতি। আশপাশের এলাকার লোকজন দেখতেন রাতের আঁধারে পানির উপর ভেসে আছে জ্বলমলে এক ভাসমান শহর। এ প্রেক্ষিতেই পানির শহর তথা পানিশ্বর নামকরণ হয়েছে। তাছাড়া পানিশ্বর নামকরণের বিষয়ে লোকমুখে শোনা যায়, এ এলাকাটি নিচুভূমি। এক সময় বছরের প্রায় সাত মাসই এ এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকত। জলের সাথেই ছিল মানুষের বসবাস। এ কারণেই এ এলাকার পানিশ্বর নামকরণ হয়েছে। অন্য আরেকটি কথাও লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের অর্ন্তভুক্ত এ সমস্ত এলাকা ছিল হিন্দু জমিদারদের অধীন। তখন পানিশ্বর এলাকায়ও প্রচুর হিন্দু লোক ছিল। হিন্দুদের দ্বারা এ এলাকার পানিশ্বর নামকরণটি হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। পানি এবং ঈশ্বর শব্দ দু’টির সমন্বয়ে পানিশ্বর নামের উৎপত্তি বলে মনে করেন তারা। আবার হিন্দুরা যেহেতু পানিকে জল বলে সেহেতু পানিশ্বর নামকরণটি হিন্দুদের দ্বারা হয়েছে বলে অনেকেই মানতে নারাজ।

মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ের জলকন্যা পানিশ্বর এক সময় এ এলাকার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ছিল। সমস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল পানিশ্বর বাজারের সাথে। ধান, পাট এবং সরিষার পাইকারী বাজার ছিল পানিশ্বরে। মেঘনা নদীর বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এখানে। পানিশ্বরের পশ্চিম পাশে মেঘনার পাড় ঘেঁষে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। যাদের প্রধান পেশা ছিল মাছ ধরা।[৩]

অবস্থান ও সীমানা সম্পাদনা

সরাইল উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে পানিশ্বর ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের উত্তরে চুণ্টা ইউনিয়নকালিকচ্ছ ইউনিয়ন, পূর্বে সরাইল সদর ইউনিয়নব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ন, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পশ্চিমে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে মেঘনা নদীকিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন অবস্থিত।

প্রশাসনিক কাঠামো সম্পাদনা

পানিশ্বর ইউনিয়ন সরাইল উপজেলার আওতাধীন ৫নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম সরাইল থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৪৪নং নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এর অংশ। ওয়ার্ডভিত্তিক এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হলো:

ওয়ার্ড নং গ্রামের নাম
১নং ওয়ার্ড টিঘর
২নং ওয়ার্ড নাইলা
৩নং ওয়ার্ড শাখাইতি
৪নং ওয়ার্ড শোলাবাড়ি
৫নং ওয়ার্ড বিটঘর
৬নং ওয়ার্ড বিটঘর
৭নং ওয়ার্ড বড়ইবাড়ি
৮নং ওয়ার্ড বেড়তলা
৯নং ওয়ার্ড সিতাহরণ

শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে পানিশ্বর ইউনিয়নের সাক্ষরতার হার ৩৬.৫%।[১]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • পানিশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
  • পানিশ্বর মাদিনিয়া গাউছিয়া দাখিল মাদরাসা
  • সামছুল আলম উচ্চ বিদ্যালয়
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  • বেড়তলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ

  • শোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • বড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • বিটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • বেড়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • শাখাইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • নাইলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
কিন্ডারগার্টেন সমূহ
  • আব্দুস সাত্তার কিন্ডারগার্টেন

অর্থনীতি সম্পাদনা

কিশোরগঞ্জের ধান সমৃদ্ধ মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের উত্তরাংশ, নাসিরনগর সহ হবিগঞ্জসিলেট জেলার সাথে নদী পথে পানিশ্বরের যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ। ফলে প্রায় সারা বছরই ঐ সমস্ত এলাকা থেকে প্রচুর ধান আসে পানিশ্বর বাজারে। যার ফলে এখানে গড়ে উঠেছে প্রচুর ধানের চাতাল তথা ব্রয়লার রাইস মিল। বর্তমানে এ সকল চাতালের মালিকেরা জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও এ ব্যবসাকে প্রসারিত করেছে। এক সময় এখানে প্রচুর মিষ্টি আলু উৎপন্ন হতো। তাছাড়া পাট, সরিষা এবং রবি শস্যও উৎপন্ন হতো। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নৌপথ। শুকনো মৌসুমে মানুষের পায়ে হেঁটে চলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। বলতে গেলে তখন পায়ে হেঁটে চলার তেমন কোন রাস্তাও ছিলনা। অনেকেই এসকল কারণে শহরমুখো হয়েছে। তবে বর্তমানে কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি পানিশ্বর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত পাঁকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নাগরিক জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।[৩]

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

পানিশ্বর ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বর্ষা মৌসুম ছাড়া সারা বছর পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সা বা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে ভেঙে ভেঙে যাতায়াত করতে হয়। বর্তমান সময়ে ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের খড়িয়ালা হইতে পানিশ্বর বাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে এ ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সহজতর হয়েছে।

খাল ও নদী সম্পাদনা

পানিশ্বর মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়াও এই পানিশ্বর বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে মেঘনার শাখা নদী জাফন নদী, যা গ্রামের বাজারটিকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দুই পাড়ে বিভক্ত করেছ। এছাড়া এ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কালাসুতা খাল এবং নাজিওর খাল।

হাট-বাজার সম্পাদনা

পানিশ্বর ইউনিয়ন এর সকল হাট-বাজার এর তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

  • পানিশ্বর বাজার
  • দেওবাড়িয়া চক বাজার
  • টিঘর চক বাজার
  • পানিশ্বর দক্ষিণ বাজার
  • বিটঘর বাজার
  • বড়ইবাড়ি চক বাজার
  • সিতাহরণ চক বাজার
  • বেড়তলা বাজার
  • শান্তিনগর চক বাজার

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

  • হযরত আয়াৎ উল্লাহ শাহ এর মাজার বিটঘর।
  • শ্রী শ্রী কালাচাঁদ বাবাজীর মন্দির
  • টিঘর জামাল সাগর দীঘি
  • মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭১ জন শহীদের নামে নির্মিত স্মৃতিসৌধ
  • মেঘনা নদী।

জনপ্রতিনিধি সম্পাদনা

বর্তমান চেয়ারম্যান: মোস্তাফিজুর রহমান

  • সাবেক চেয়ারম্যান: দ্বীন ইসলাম
  • সাবেক চেয়ারম্যান: নুরুল হক

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৯ 
  2. "ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তথ্য উপাত্ত" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ১৩ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৯ 
  3. জাতীয় তথ্য বাতায়ন