পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘ
পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘ (ইংরেজি: Congregation of Holy Cross বা লাতিন: Congregatio a Sancta Cruce) হল প্রয়াত বাসিল মরো কর্তৃক ১৮৩৭ সালে ফ্রান্সের ল্য মঁসে প্রতিষ্ঠিত রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত যাজক ও অযাজক মিশনারিদের একটি ধর্মসভা।[১]
Congregation a Sancta Cruce | |
সংক্ষেপে | সি.এস.সি. |
---|---|
নীতিবাক্য | |
গঠিত | ১ মার্চ ১৮৩৭ |
প্রতিষ্ঠাতা | বাসিল মরো |
ধরন | পোপের আওতাধীন খ্রিস্টীয় ধর্মসভা (পুরুষদের জন্য) |
উদ্দেশ্য | ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান, তাঁর জন্য ভালোবাসা ও সেবার ব্রত প্রতিষ্ঠা এবং ফলশ্রুতিতে আত্মার মুক্তি |
সদরদপ্তর | ভিয়া ফ্রামুরা ৮৫, ০০১৬৮ রোম, ইতালি |
সদস্যপদ (২০১৭) | ১৪৫৪ জন সদস্য (৭৯৩ জন যাজক) |
সুপিরিয়র জেনারেল | ফাদার রবার্ট লুইস এপিং, সিএসসি |
ওয়েবসাইট | holycrosscongregation |
ফাদার মরো বর্তমানে তিনটি স্বতন্ত্র ধর্মসভায় বিভক্ত সিস্টারদের ম্যারিয়ানাইটও প্রতিষ্ঠা করেন - ম্যারিয়ানাইটস অব হলি ক্রস (ল্য মঁস, ফ্রান্স), সিস্টার্স অব হলি ক্রস (নটর ডেম, ইন্ডিয়ানা) এবং সিস্টার্স অব হলিক্রস (মন্ট্রিয়ল, কুইবেক, কানাডা)। [১]
সুপেরিয়র জেনারেল
সম্পাদনা- ফা. বেসিল মরো, সিএসসি (১৮৩৭–১৮৬৬)
- রেভ. পিয়েরে দুফাল, সিএসসি (১৮৬৬–১৮৬৮)
- ফা. এডওয়ার্ড সোরিন, সিএসসি (১৮৬৮–১৮৯৩)
- ফা. গিলবার্ট ফ্রাঙ্কাইস, সিএসসি (১৮৯৩-১৯২৬)[কখন?]
- ফা. জেমস ওয়েসলি ডোনাহু, সিএসসি (১৯৩৬–১৯৩৮)
- ফা. অ্যালবার্ট কাজিনো, সিএসসি (১৯৩৮–১৯৫০)
- ফা. ক্রিস্টোফার ও'টুল, সিএসসি (১৯৫০–১৯৬২)
- ফা. জার্মেইন-মেরি লালান্দে, সিএসসি (১৯৬২–১৯৭৪)
- ফা. টম ব্যারোস, সিএসসি (১৯৭৪–১৯৮৬)
- ফা. ক্লড গ্রু, সিএসসি (১৯৮৬–১৯৯৮)
- ফা. হিউ ক্লিয়ারি, সিএসসি (১৯৯৮-২০১০)
- ফা. রিচার্ড ওয়ার্নার, সিএসসি (২০১০-২০১৬)
- ফা. রবার্ট এপিং, সিএসসি (২০১৬– বর্তমান)
ধর্মপ্রদেশ, ধর্মজেলা ও ভিকারিয়েত
সম্পাদনা- যুক্তরাষ্ট্র যাজক ও অযাজকীয় প্রদেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
- চিলি-পেরু জেলা
- পূর্ব আফ্রিকা জেলা
- মধ্যপশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র অযাজকীয় প্রদেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
- পশ্চিম আফ্রিকা জেলা
- "কানাডিয়ান ডে লা কংগ্রেগেশন ডে সান্তা-ক্রস" প্রদেশ (কানাডা)
- আকাডিয়া জেলা
- মরো অযাজকীয় ও যাজকীয় প্রদেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
- ব্রাজিল জেলা
- দক্ষিণ ভারত প্রদেশ
- পবিত্র যিশু-হৃদয় প্রদেশ (বাংলাদেশ)
- সেন্ট যোসেফ প্রদেশ (বাংলাদেশ)
- নটর ডেম ডু পারপেচুয়াল সেক্যুরস প্রদেশ (হাইতি)
- উত্তর-পূর্ব ভারত প্রদেশ
- ফ্রান্স ভিকারিয়েত
- ইংলিশ কানাডা ভিকারিয়েত
- ভারত ভিকারিয়েত
- তামিলনাড়ু ভিকারিয়েত
অবস্থান
সম্পাদনাপবিত্র ক্রুশের যাজক অর্থাৎ ফাদার এবং ব্রাদাররা সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে রয়েছেন। নিম্নোক্ত দেশগুলোতে তাদের ব্যাপক সক্রিয়তা রয়েছে (প্রথম বন্ধনীর মধ্যে দেশসমূহে সংঘ প্রথম যে সালে আত্মপ্রকাশ করেছিল):
- ফ্রান্স (১৮২০)
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৮৪১)
- চিলি (১৯৪৩)
- হাইতি (১৯৪৪)
- কানাডা (১৮৪৭)
- ইতালি (১৮৫০)
- বাংলাদেশ (১৮৫৩)
- ভারত (১৮৫৩)
- ঘানা (১৯৫৭)
- ব্রাজিল (১৯৫৮)
- উগান্ডা (১৯৫৮)
- পেরু (১৯৬১)
- কেনিয়া (১৯৫০ এর দশক)
- লাইবেরিয়া (১৯৫০ এর দশক)
- তাঞ্জানিয়া (২০০৩)
বাংলাদেশে পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের মিশন
সম্পাদনাভারতের উদ্দেশ্যে হলি ক্রসের প্রথম মিশনারি দলটি ইংল্যান্ড হতে সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে ১৮৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি। সেই দলে ছিলেন তিনজন ব্রাদার, তিনজন সিস্টার, একজন যাজক ও একজন সেমিনারিয়ান।[টীকা ১] দলটি কলকাতা পৌঁছায় ১৮৫৩ সালের মে মাসে। তারপর ফাদার ভেরিট সিস্টারদের নিয়ে ঢাকায় যান এবং সেমিনারিয়ান ও ব্রাদাররা চলে যান নোয়াখালীতে। শীঘ্রই ফাদার ভেরিট নোয়াখালীর যাজক হিসেবে যোগদান করেন, যে পদের দায়িত্বাধীনে সিলেট ও আগরতলা এলাকায় মিশনের কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিসেম্বর ১৮৫৩ তে চট্টগ্রাম মিশনের সদরদপ্তরে পরিণত হয়।
পূর্ব বাংলার মিশনকে সেইসময় বলা হতো প্রশ্নাতীতভাবেই দক্ষিণ এশিয়ার এবং সম্ভবত পুরো বিশ্বের সবচেয়ে নিরবলম্বন মিশন। কারণ এই ভূখণ্ডে বসবাস ও মিশনারি কার্যক্রম পরিচালনা এতটাই কঠিন ও ভয়ংকর ছিল যে, অন্য কোন খ্রিস্টান মিশনারি সংঘ এখানে কাজ করার আগ্রহ পেতো না। যদিও এটাকে পূর্ব বাংলা মিশন বলা হতো, গির্জার আওতাধীন এলাকা এবং পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক পরিসীমা পরস্পর থেকে যথেষ্ট পৃথক ছিল। পূর্ব বাংলা রাজনৈতিকভাবে সর্বপ্রথম পৃথক হয় ১৯০৫ সালে, পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অংশ হিসেবে।
এই ভূখন্ডে রোমান ক্যাথলিক গির্জার আওতাধীন এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হতো ভিকারিয়েত অব ইস্ট বেঙ্গল, যেটি ১৮৪৫ সালে ভ্যাটিকান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সুপিরিয়র ছিলেন বিশপ থমাস ওলিফ, একজন আইরিশ জেসুইট। এই ভিকারিয়েতের অধীনে ছিল বর্তমানের ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ, ময়মনসিংহের ধর্মপ্রদেশ ও চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের আওতাধীন এলাকা; একইসাথে ভারতের আসাম রাজ্যের বিশাল অংশ ও আগরতলার বিশপের এলাকা এবং আরাকান (বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য)। এটি ছিল বিশাল ভূখণ্ড; কিন্তু পবিত্র ক্রুশ সংঘ যখন ১৮৫৩ সালে আগমন করে, তখন মাত্র তিনজন ক্যাথলিক যাজক সেখানে কাজ করতেন- একজন পর্তুগীজ অগাস্টিনিয়ান এবং দুজন তরুণ আইরিশ যাজক। দুই আইরিশই ১৮৫৪ সালে রোগে ভুগে মারা যান। পূর্ব বাংলায় তখন প্রায় ১৩০০০ রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিল। তবে ঢাকায় রোমের অধীনে কোন গির্জা বা চ্যাপেল ছিল না।[২]
প্রতিষ্ঠানসমূহ
সম্পাদনাউচ্চশিক্ষা
সম্পাদনা- নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম, ইন্ডিয়ানা (১৮৪২)
- সেন্ট এডওয়ার্ড'স বিশ্ববিদ্যালয়, অস্টিন, টেক্সাস (১৮৭৮)
- পোর্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পোর্টল্যান্ড, অরেগন (১৯০১)
- কিংস কলেজ, পেন্সিলভেনিয়া (১৯৪৬)
- স্টোনহিল কলেজ, ম্যাসাচুসেটস (১৯৪৮)
- নটর ডেম কলেজ, ঢাকা (১৯৪৯)
- হলি ক্রস কলেজ, নটর ডেম, ইন্ডিয়ানা (১৯৬৬) (ব্রাদার্স অফ হলি ক্রস)
- সেন্ট মেরি'স কলেজ, নটর ডেম, ইন্ডিয়ানা (১৮৪৪) (সিস্টার্স অফ দ্য হলি ক্রস)
- আওয়ার লেডি অব হলি ক্রস কলেজ, লুইজিয়ানা (১৯১৬)
- হলি ক্রস কলেজ, আগরতলা, ভারত (২০০৯)
- নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ঢাকা, বাংলাদেশ (২০১৩)
- নটর ডেম কলেজ ময়মনসিংহ (২০১৪)
মাধ্যমিক শিক্ষা
সম্পাদনাবাংলাদেশ
সম্পাদনা- সেন্ট প্লাসিডস হাই স্কুল, চট্টগ্রাম (১৮৫৩)
- সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা (১৮৮১)
- বান্দুরা হলিক্রশ হাই স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা (১৯১২)
- সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়, নাগরি (১৯২০)
- বিড়ই ডাকুনী উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ (১৯৪১)
- ব্রাদার আন্দ্রে হাই স্কুল, নোয়াখালী (১৯৪০)
- মরিয়ম আশ্রম উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (১৯৪৬)
- নটর ডেম কলেজ, ঢাকা (১৯৪৯)
- হলি ক্রস কলেজ, ঢাকা (১৯৫০) (সিস্টার্স অফ দ্য হলি ক্রস)
- হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা (১৯৫০) (সিস্টার্স অফ দ্য হলি ক্রস)
- উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল (১৯৫২)
- সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা (১৯৫৪)
- নটর ডেম কলেজ, ময়মনসিংহ (২০১৩)
- নটর ডেম স্কুল এন্ড কলেজ,শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার (২০০৮)
ব্রাজিল
সম্পাদনা- কলেজিও সান্তা মারিয়া, সাও পাওলো (১৯৪৭) (সিস্টার্স অফ হলি ক্রস)
- কলেজিও ডোম অ্যামান্ডো, সান্টারেম (১৯৬৬)
- কলেজিও নটর ডেম, ক্যাম্পিনাস (১৯৬১)
- কলেজিও সান্তা ক্রুজ, সাও পাওলো
কানাডা
সম্পাদনা- কলেজ নটর-ডেম ডু স্যাক্রে-সিউর, মন্ট্রিল (১৮৬৯)
- নটর ডেম কলেজ স্কুল, ওয়েল্যান্ড
- হলি ক্রস ক্যাথলিক সেকেন্ডারি স্কুল সেন্ট ক্যাথারিন্স
চিলি
সম্পাদনা- সেন্ট জর্জ'স কলেজ, সান্তিয়াগো, চিলি (১৯৪৩)
- কলেজিও নুয়েস্ত্রা সেনোরা দে অ্যান্ডাকোলো, সান্তিয়াগো, চিলি (১৯৭৬)
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ এর পূর্বে ১৮৫২ সালের নভেম্বরে সমুদ্রযাত্রা শুরুর প্রথম চেষ্টা করা হয়, কিন্তু প্রবল জ্বরে দুজন যাজকের মৃত্যু এবং ঝড়ের কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "History", Congregation of Holy Cross
- ↑ "Archived copy"। ২০১১-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-০৪।