তারাকিশোর চৌধুরী
তারাকিশোর চৌধুরী (১৮৫৯ - ৮ নভেম্বর ১৯৩৫) ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বাঙালি বিচারপতি, খ্যাতনামা আইনজীবী ও সমাজসেবী। কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম বাঙালি এটর্ণী জেনারেল[১][২]।
তারাকিশোর চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১৮৫৯ বামৈ গ্রাম, সিলেট জেলা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৯৩৫ |
জাতীয়তা | ![]() |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত |
পরিচিতির কারণ | আইনবিদ, বিচারক, সমাজসেবী |
প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
হবিগঞ্জ জেলার (সাবেক সিলেট জেলা সে সময়ে লঙ্করপুর মহকুমা ছিল, তারপর হবিগঞ্জ মহকুমা হয়, বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা) লাখাই উপজেলা হাওর অঞ্চল বামৈ গ্ৰামে সম্ভান্ত জমিদার ব্রাহ্মণ চৌধুরী পরিবারে জন্ম গ্ৰহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম শ্রীহরকিশোর চৌধুরী মাতার নাম শ্রীগিরিজাসুন্দরী দেবী। সন্তদাসজীর আবির্ভাব ( জন্ম ) ১৮৫৯ সালে ১০ই জুন শুক্রবার। ১২৬৬ বঙ্গাব্দে ২৮ জৈষ্ঠ্য , জৈষ্ঠ্য শুক্লা দশমী দশহরা পূণ্য তিথিতে। তাঁহার পিতা ছিলেন যেমন তেজস্বী পুরুষ, তেমনি পরম শুদ্ধাচারী বৈষ্ণব। পিতার এই দুইটি গুনে সাধক সন্তদাসজী বাবাজী মহারাজের জীবনকে পরিপূর্ণ প্রভাবিত করিয়াছিল। তাঁহার শৈশবের নাম ছিল তারাকিশোর চৌধুরী। বাল্যকাল হইতেই তাঁর ছিল তীব্র বিদ্যানুরাগ। গ্ৰামের স্কুলে বিদ্যা আরম্ভ হয়।
শিক্ষাসম্পাদনা
লস্করপুর মহকুমা ইংরেজি স্কুলে লেখাপড়া করেন। জানা মতে এই স্কুলই পরবর্তীতে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হয়। ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দ ১২৮১ বঙ্গাব্দে ১৪ বছর বয়সে শ্রীহট্ট শহরের গভর্মেন্ট হাইস্কুল হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় আসাম প্রদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়া তিনি১৫ টাকা বৃত্তি পাইয়াছিলেন। মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হইলেন। সেখানে পড়িয়া তিনি এফ এ পরীক্ষায় অতি উচ্চ স্থান অধিকার করিয়া ২০ টাকার একটি বৃত্তি লাভ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন। বিএ পরীক্ষা দিলেন এবং ভগবত কৃপায় উত্তীর্ণ হইয়া গেলেন। ১৮৭৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে বি এ পাশ করেন। তারাকিশোর চৌধুরী হলেন হবিগঞ্জ জেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট অর্থাৎ বি এ পাশ। ১৮৮৩ সনে বি,এল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে এম এ পাশ করেন এবং আইনে ডিগ্রী লাভ করেন।
অর্জনসম্পাদনা
১৮৮৫ সালে সিলেট বারে আইন পেশায় যোগ দেন। চার বছর সিলেট থাকার পর কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। কলকাতা হাইকোর্টে তার যশ খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতা হাইকোর্টের শ্রেষ্ট আইনজীবি স্যার রাসবিহারী ঘোষের পরেই ছিল এডভোকেট তারাকিশোর চৌধুরীর স্থান। ১৯১২ সালে বৃটিশ সরকার কলকাতা হাইকোর্টের এটর্ণী জেনারেল পদে নিয়োগ দেন। তিনি হলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম বাঙালি এটর্নি জেনারেল। ১৯১৫ সালে আগষ্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। বিচারপতির পদ যোগদান করেই পদত্যাগ করেন।
তারাকিশোর চৌধুরী পরবর্তীতে সন্তদাস কাঠিয়াবাবা হনসম্পাদনা
১৯১৫ সালে ত্রিশ বছরের ওকালতি পেশা পরিত্যাগ করে স্ত্রীসহ বৃন্দাবনের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন।কলকাতা শহরের বাসা বাড়ী, ধন সম্পদ সবকিছু মানুষকে দান করে যান।অনেক ঋনী লোকের ঋন পরিশোধ করে যান[৩]। কলকাতা শহর থেকে বৃন্দাবন যাবার সময় রেলের ভাড়া পর্যন্ত ছিল না। কলকাতার আইনজীবি, ব্যবসায়ী,ছাত্রযুবক, বৃদ্ধ,নারী মিছিল সহকারে তারাকিশোর চৌধুরীকে বিদায় জানান। বৃন্দাবনে সন্নাসী হবার পর নাম হয় মহারাজ সন্তদাস কাঠিয়াবাবা। মহারাজ বৃন্দাবনে আসার পর দিনরাত কেউ ঘুমাতে দেখেন নাই,সব সময় ধ্যান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।তিনি সামান্য আহার করতেন। ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় মেলা হল কুম্ভ মেলা। এই মেলায় সারা ভারত থেকে কোটি লোকের আগমন ঘটে। কুম্ভ মেলার পরিচালকের দায়িত্ব পান। এই পদেও তিনি প্রথম বাঙালি। ১৯৩১ সালে হাওড়ার শিবপুরে একটি আশ্রম প্রতিষ্টা করেন। ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে সিলেট শহরে নিম্বাক আশ্রম প্রতিষ্টা করেন তারাকিশোর চৌধুরী।
মৃত্যুসম্পাদনা
১৯৩৫ সালের ৮ নভেম্বর সন্তদাসজী মহারাজ বৃন্দাবনে দেহত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Tara Kishore Chowdhury"। www.wikidata.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১।
- ↑ "তারাকিশোর চৌধুরী - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১।
- ↑ "Tarakishor Sharma Chowdhury - তারাকিশোর শর্ম্মা চৌধুরী Archives - Granthagara"। granthagara.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২১।