ডেনিস স্মিথ (ইংরেজ ক্রিকেটার)

ইংরেজ ক্রিকেটার

ডেনিস স্মিথ (ইংরেজি: Denis Smith; জন্ম: ২৪ জানুয়ারি, ১৯০৭ - মৃত্যু: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯) ডার্বিশায়ারের সমারকটস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

ডেনিস স্মিথ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডেনিস স্মিথ
জন্ম(১৯০৭-০১-২৪)২৪ জানুয়ারি ১৯০৭
সমারকটস, ডার্বিশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯(1979-09-12) (বয়স ৭২)
ডার্বি, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, উইকেট-রক্ষক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৮৭)
১৩ জুলাই ১৯৩৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২৭ জুলাই ১৯৩৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৭–১৯৫২ডার্বিশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৪৩
রানের সংখ্যা ১২৮ ২১৮৪৩
ব্যাটিং গড় ৩২.০০ ৩১.৬৫
১০০/৫০ -/১ ৩২/১১৬
সর্বোচ্চ রান ৫৭ ২২৫
বল করেছে - ১৫১৬
উইকেট - ২০
বোলিং গড় - ৩৬.৭০
ইনিংসে ৫ উইকেট -
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং - ৫/৩৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/- ৩৮২/৫
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৭ জুন ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকেরও দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯২৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ডেনিস স্মিথের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। এ সময়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২১,০০০-এর অধিক রান তুলেছিলেন তিনি। ৮ জুন, ১৯২৭ তারিখে সমারসেটের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও, বল হাতে মাত্র ১০ বল বোলিং করেছিলেন।

১৯৩০ সালে নির্ভরযোগ্য বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের উত্তরণ ঘটান। ট্রেন্ট ব্রিজে পেটনের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলাটিতে ৮৩ ও ১০৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডেনিস স্মিথ। পরের খেলায় ওভালে ১০৭ রান তুলেন। এরফলে ডার্বিশায়ার দলকে সারের বিপক্ষে ২৬ বছরের মধ্যে প্রথম জয় এনে দেন। এ সময়ে তিনি ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামতেন। কয়েক বছর অবশ্য ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করেন। তবে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেন। এ অবস্থানে থেকে ডার্বিশায়ারকে সফলতার কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত করতে সচেষ্ট হন। উপর্যুপরী চার মৌসুমের মধ্যে দুইবার তৃতীয়, ১৯৩৫ সালে রানার্স-আপ ও ১৯৩৬ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়শীপের শিরোপা লাভ করে। তবে, খেলার ধরন অনুযায়ী ১৯৩৬ সালের তুলনায় ১৯৩৫ সালে দলটি অধিক ভালো খেলা উপহার দিয়েছিল।

১৯৩৫ সালে লর্ডসে প্লেয়ার্সের সদস্যরূপ খেলেন। চ্যাম্পিয়শীপ কাউন্টির বিপক্ষে বহিঃএকাদশের ১১২ রানের মধ্যে তিনি একাই করেন ৭৮ রান। কোন খেলোয়াড়ই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। এ ধরনের খেলার এটিই শেষ সংস্করণ ছিল। ফলে, উভয় দলের পক্ষে খেলায় অংশগ্রহণের সম্মাননা লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন। ১৯৩৫ সালে চেস্টারফিল্ডে মৌসুমের প্রথম খেলায় ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ১৮৯ রান তুলেন। এ ইনিংসকে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ইনিংসরূপে আখ্যায়িত করেছিলেন। একই মাঠে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২২৫ রান তুলেন। এ খেলাতেই তার হাড়ে চিড় ধরে। ফলে, ঐ বছরের প্রথম টেস্ট খেলা থেকে বিরত থাকতে হয় ডেনিস স্মিথকে। ১৯৩৭ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে অপরাজিত ২০২ রান তুলেন। যুদ্ধকালীন ব্র্যাডফোর্ড লীগে খেলতেন ও উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে থাকতেন। জর্জ ডকসের আগমনের পূর্বে ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালেও ডার্বিশায়ারের পক্ষে এ দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৫১ সাল পর্যন্ত ডার্বিশায়ারের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলে গেছেন। এছাড়াও, বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে অন্তর্বর্তীকালীন উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। সংগৃহীত ২০,৫১৬ রান ও ৩০টি সেঞ্চুরি ১৯৯০-এর দশকে কিম বার্নেটের কাছে হস্তগত হবার পূর্ব-পর্যন্ত ডার্বিশায়ার রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল।[২] বারোবার সহস্রাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করে কাউন্টি রেকর্ড গড়েন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন ডেনিস স্মিথ। ১৩ জুলাই, ১৯৩৫ তারিখে লিডসে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। একই দলের বিপক্ষে ২৭ জুলাই, ১৯৩৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বেশ ভালো খেলেছিলেন। তবে, দূর্ভাগ্যবশতঃ আর কোন টেস্টের জন্যে মনোনীত হননি।

১৯৩৫ সালের শুরুরদিকের কয়েক সপ্তাহ ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলার জন্যে তাকে মনোনীত করা হয়। হেডিংলিতে উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ ও ১২৮ রানের মধ্যে তিনি করেছিলেন ৩৬ ও ৫৭। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ৩৫ ও শূন্য রান তুলেছিলেন।

১৯৩৫-৩৬ মৌসুমের শীতকালে এরল হোমসের অধিনায়কত্বে এমসিসি দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমনের জন্যে মনোনীত হন। ঐ সফরে কোন টেস্টের আয়োজন করা হয়নি। তবে, প্রতিনিধিত্বমূলক খেলাগুলোয় নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে ৪৩-এর অধিক গড়ে রান তুলেছিলেন। ওতাগোর বিপক্ষে জিম পার্কসকে সাথে নিয়ে ২৩৯ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে উইল্ফ বারবারকে সাথে নিয়ে ২০৪ রানের জুটি গড়েন।

খেলার ধরন সম্পাদনা

বামহাতি দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ডেনিস স্মিথ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামতেন। মূলতঃ স্ট্রোক খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ১৯৩০-এর দশকে ডার্বিশায়ারের প্রধান ব্যাটিং মেরুদণ্ডের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। এ সময়েই ডার্বিশায়ার দল তাদের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা সফলতম সময় অতিবাহিত করেছিল। ১৯৩৫ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়শীপের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। সুন্দর ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৬ সালে উইজডেনের সংস্করণে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।[৩] এরপর ১৯৩৬ সালে দলটি চ্যাম্পিয়শীপের শিরোপা বিজয়ে সক্ষমতা দেখায়।

দীর্ঘদেহ ও খেলার ধরনে তিনি অনেকাংশে ফ্রাঙ্ক ওলি’র প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তার খেলা বেশ দর্শনীয় ছিল। আক্রমণাত্মক শটগুলো মিডল কিংবা লেগ স্ট্যাম্পের দিক দিয়ে চলে যেতো। ১৯৩০-এর দশকে স্টোরার কিংবা আলবার্ট অল্ডারম্যান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সাথে মাঠে নামতেন। তবে, অল্ডারম্যান স্মিথের আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমার সাথে তাল মিলিয়ে চলতেন। তাদের শুরুর উপর দলের অগ্রযাত্রা অনেকাংশে নির্ভর করতো। প্রথম স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। খেলায় এক কিংবা দুই ওভার ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন।

অবসর সম্পাদনা

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর কাউন্টি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাউন্টি কোচ হিসেবে তাকে সন্তুষ্ট করা বেশ দুঃষ্কর ছিল। হ্যারি এলিয়টের পরিবর্তে কাউন্টি কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৫২ সালে আপদকালীন একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। অবশেষে ডার্বিশায়ার ক্লাবের সাথে ৪৪ বছর সম্পর্ক বজায় রেখে ১৯৭১ সালে অবসর নেন।

১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে ৭২ বছর বয়সে ডার্বিতে আকস্মিকভাবে ডেনিস স্মিথের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [১] ESPNcricinfo, ESPN, সংগ্রহের তারিখ: ৭ জুন, ২০১৯
  2. Denis Smith at Cricket Archive
  3. "Wisden's Five Cricketers of the Year"ESPNcricinfoESPN। ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৫ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা