চার্লি পার্কার

ইংরেজ ক্রিকেটার

চার্লস ওয়ারিংটন লিওনার্ড চার্লি পার্কার (ইংরেজি: Charlie Parker; জন্ম: ১৪ অক্টোবর, ১৮৮২ - মৃত্যু: ১১ জুলাই, ১৯৫৯) গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রেস্টবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা, আম্পায়ার ও কোচ ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২১ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

চার্লি পার্কার
১৯৮১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে চার্লি পার্কার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
চার্লস ওয়ারিংটন লিওনার্ড পার্কার
জন্ম(১৮৮২-১০-১৪)১৪ অক্টোবর ১৮৮২
প্রেস্টবারি, গ্লুচেস্টারশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১১ জুলাই ১৯৫৯(1959-07-11) (বয়স ৭৬)
ক্রানলেই, সারে, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো বামহাতি অর্থোডক্স
ভূমিকাবোলার, আম্পায়ার, কোচ
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ২০৪)
২৩ জুলাই ১৯২১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০৩-১৯৩৫গ্লুচেস্টারশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৬৩৫
রানের সংখ্যা ৭৯৫১
ব্যাটিং গড় - ১০.৪৭
১০০/৫০ -/- -/১০
সর্বোচ্চ রান ৩* ৮২
বল করেছে ১৬৮ ১৫৭০৫৯
উইকেট ৩২৭৮
বোলিং গড় ১৬.০০ ১৯.৪৬
ইনিংসে ৫ উইকেট - ২৭৭
ম্যাচে ১০ উইকেট - ৯১
সেরা বোলিং ২/৩২ ১০/৭৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ২৪৭/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ স্লো বামহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন চার্লি পার্কার। তবে, ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব কমই সফলতা পেয়েছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

শৈশবকালে ক্রিকেটের দিকে তেমন আগ্রহ ছিল না চার্লি পার্কারের। ঐ সময়ে তিনি গল্ফের দিকে মনোনিবেশ ঘটিয়েছিলেন। ১৯০০ সালের দিকে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন।

১৯০৩ সালে ডব্লিউ. জি. গ্রেসের সুপারিশক্রমে গ্লুচেস্টারশায়ারের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তবে, ১৯০৭ সালের পূর্ব-পর্যন্ত মাত্র দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। কাউন্টি ক্রিকেটে বেশকিছু খেলায় দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত জর্জ ডেনেটের ক্রীড়ানৈপুণ্যে ম্লান হয়ে যায়।

১৯১৪ সালের পূর্ব-পর্যন্ত কোন মৌসুমেই শতাধিক উইকেট লাভ করতে পারেননি। তন্মধ্যে শেষ দুই বছর ব্যাপকভাবে রান খরচ করে ফেলেন। ঐ সময়ে তার খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ

সম্পাদনা

১৯১৯ সালে সেনাবাহিনীতে ডেনেট কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে থাকলে পার্কার দলের প্রধান বোলার হিসেবে নিজ কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন। পূর্ববর্তী যে-কোন মৌসুমের তুলনায় অধিকসংখ্যক উইকেট লাভ করেন। তবে শুষ্ক আবহাওয়ায় উইকেট লাভের জন্য তখনও তাকে বেশ রান খরচ করতে হয়েছিল। কিন্তু, ১৯২০ সাল থেকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বামহাতি স্পিন বোলারের মর্যাদা লাভে সক্ষমতা দেখাতে থাকেন। কিছুটা দ্রুতগতিসম্পন্ন হওয়ায় এ বল মোকাবেলায় ব্যাটসম্যানদেরকে বেগ পেতে হয়েছিল। বৃষ্টি আক্রান্ত কিংবা বোলিং সহায়ক পিচে তাকে মোকাবেলা করা বেশ দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। তার বলগুলো লেগের বাইরে থেকে অফ স্ট্যাম্পের দিকে বাঁক খেতো। এমনকি ব্যাটিংনির্ভর দলগুলোও তার বাঁধার মুখোমুখি হয়। ১৯২০ সালে ১২৫, ১৯২১ সালে ১৬৭, ১৯২২ সালে ২০৬, ১৯২৪ সালে ২০৪ উইকেট লাভের পাশাপাশি ১৯২৫ সালে ২২২ উইকেট নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন।

তার এই সক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বিপুলসংখ্যক ওভার বোলিং করা ছিল। ১৯২৭ সালে এক প্রান্ত থেকে গ্লুচেস্টারশায়ারের ওভারগুলোর ৮৫ শতাংশ একাকী করেছেন।

১৯২২ সালে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৯/৩৯ ও ১৯২১ সালে সমারসেটের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা ১০/৭৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। ১৯২৪ সালে নিজ দল গ্লুচেস্টারশায়ার ৩১ রানে অল-আউট হলেও ব্রিস্টলে মিডলসেক্সের বিপক্ষে উভয় ইনিংসে হ্যাট্রিক করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন চার্লি পার্কার। ১৯২৫ সালে এসেক্সের বিপক্ষে খেলায় ১৭/৫৬ পান। ১৯৩০ সালে মিডলসেক্সের বিপক্ষে খেলায় ১৬/১০৯ লাভ করেন। ঐ বছরই সফরকারী অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে স্মরণীয় টাই খেলায় ৭/৫৪ পেয়েছিলেন।

১৯২৯ থেকে ১৯৩১ সময়কালে টম গডার্ডের সাথে কাউন্টি ক্রিকেটে সর্বাপেক্ষা কার্যকর বোলিং জুটি গড়েন। পাশাপাশি ওয়ালি হ্যামন্ডের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিল। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট নেয়ার অনবদ্য কীর্তিগাঁথায় নিজেকে প্রায় শামিল করতে যাচ্ছিলেন। ১৯২২ সালে ব্রিস্টলে তহবিল গঠনের খেলায় গ্লুচেস্টারশায়ার বনাম ইয়র্কশায়ারের মধ্যকার খেলাটিতে ধারাবাহিকভাবে পাঁচবার স্ট্যাম্প ভেঙ্গে ফেলেন। কিন্তু, দ্বিতীয় বলটিকে আম্পায়ার নো-বল হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।[]

টেস্ট ক্রিকেট

সম্পাদনা

১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে তার বোলিং অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় পার্কারকে আর কখনো সফরের জন্য মনোনীত করা হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে দল নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান ও ১৯২৪-২৫ মৌসুমে লর্ড টেনিসনের নেতৃত্বাধীন দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। দলটি দ্বিতীয়সারির ছিল। তবে, ম্যাটিং উইকেটে তার বোলিং বেশ কার্যকর হলেও পাঁচটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় খুব কমই বোলিং করেছেন। ১৯৮ রান দিয়ে ১১ উইকেট পান তিনি।

সর্বোপরি তিনি মাত্র এক টেস্টে অংশ নিতে পেরেছেন। ২৩ জুলাই, ১৯২১ তারিখে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট অভিষেক ঘটে চার্লি পার্কারের। বোলিং অনুপযোগী পিচে তিনি ২/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। তবে, ১৯২৬ ও ১৯৩০ সালে শেষ মুহুর্তে দল থেকে বাদ পড়েন।

অর্জনসমূহ

সম্পাদনা

১৯০৩ থেকে ১৯৩৫ সময়কালে গ্লুচেস্টারশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। এ সময়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ইতিহাসে উইলফ্রেড রোডসটিচ ফ্রিম্যানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন।[]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১৯২৪ সালে এক মৌসুমে তিনবার হ্যাট্রিক করার বিরল কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে জে. এস. রাও এবং ১৯৯৬ সালে ডিন হ্যাডলি তার এ কীর্তিগাঁথায় ভাগ বসান।[]

১৯৩১ সালে আটচল্লিশ বছর বয়সে ১২ জুনের মধ্যে জ্যাক হার্নের রেকর্ডসংখ্যক ১০০ উইকেট লাভের কীর্তিগাঁথার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। তার এ অর্জনটি খেলোয়াড়ী জীবনের দ্বিতীয় সর্বাধিক হিসেবে থেকে যায়। তবে, ১৯৩২ সালের পর তার খেলায় ছন্দপতন ঘটতে শুরু করে।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এক ইনিংসে দশ উইকেট লাভকারী বোলারদের অন্যতম তিনি। এ তালিকায় উইলফ্রেড রোডসটিচ ফ্রিম্যানের পরই তিনি অবস্থান করছেন। এছাড়াও এ তালিকায় জে. টি. হার্ন, টম গডার্ড, ডব্লিউ. জি. গ্রেসঅ্যালেক কেনেডি অবস্থান করছেন।

১৯৩৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনা করতে থাকেন। যুদ্ধের পর ক্রানলেই এলাকায় ক্রিকেট কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১১ জুলাই, ১৯৫৯ তারিখে ৭৭ বছর বয়সে সারের ক্রানলেই এলাকায় চার্লি পার্কারের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 123আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 
  2. "The man of 2009"। ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  3. "3 Hat-tricks in a season by Charlie Parker"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা