ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ
ইসলাম ধর্মে পাঁচটি স্তম্ভ আছে [১][২]। এই পাঁচটি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। একই সাথে প্রথম তিনটির উপর আমল করা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ এবং শেষ দুটি সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কাজ।
ইতিহাসসম্পাদনা
ইসলামি ইতিহাস সম্পর্কে একটি অন্যতম প্রধান অনুমান হলো, পাঁচটি স্তম্ভ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবির মৃত্যুর পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। যদিও, মুসলমানদের মাঝে ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িকতার কারণে স্তম্ভসমূহের মধ্যে সামান্য পার্থক্য তৈরি হয়। নবি মুহাম্মাদের জীবনী ও বিশ্বাসের প্রভাব স্তম্ভসমূহের মধ্যে সর্বদাই বিদ্যমান। পাঁচটি স্তম্ভ কুরআনের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, এমনকি মক্কায় হজ্জ্ব (পঞ্চস্তম্ভের একটি) এর বিষয় কুরআনের মধ্যে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে। যাইহোক, পাঁচ স্তম্ভ বিশ্বাস ও অনুশীলনের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যসমূহ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ, তবে এর মানে এই নয় এই মতৈক্য মুহাম্মাদের জীবদ্দশাতেও বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত প্রমাণ দেখাচ্ছে যে, স্তম্ভসমূহ সর্বদাই বর্তমান কালের মতো সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, বরং ধ্রুপদী রূপ থেকে বর্তমান রূপে আসতে এর দীর্ঘ সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।[৩]
সুন্নি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভসম্পাদনা
সুন্নি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ হাদিস থেকে উল্লেখ্য করা হলো:
উমর ইবনুল খাত্তাব থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসুল (মুহাম্মাদ) বলেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। যথা- আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সলাত আদায় করা, যাকাত আদায় করা, হজব্রত সম্পাদন করা এবং রমজানের সিয়ামব্রত পালন করা (রোজা রাখা)। [৪][৫]
প্রথম স্তম্ভ: সাক্ষ্য ও বিশ্বাসসম্পাদনা
কালেমা শাহাদাত বলতে মূলত: এখানে বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে শাহাদাত মুখে বলা (সাক্ষ্য দেওয়া) ও অন্তরে বিশ্বাস করা (বিশ্বাস)৷ এই বিশ্বাসকে বলা হয় "ঈমান"৷ [৬] কালেমা শাহাদত হলো
اَشْهَدُ اَنْ لاَّ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَه' وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه' وَرَسُوْلُه'
উচ্চারণ: "আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।"
অনুবাদ: "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই । আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসূল।"
দ্বিতীয় স্তম্ভ: সালাতসম্পাদনা
নামায, নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত বা উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ:
তৃৃতীয় স্তম্ভ: সাওমসম্পাদনা
রোযা বা রোজা (ফার্সি روزہ রুজ়ে), সাওম (আরবি صوم স্বাউম্), বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ, (فرض ফ়ার্দ্ব্) যার অর্থ অবশ্য পালনীয়।
উৎপত্তিসম্পাদনা
রোজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'বিরত থাকা'। আর আরবিতে এর নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা।
প্রকারভেদসম্পাদনা
রোজা পাঁচ প্রকার।
- ফরজ রোজা: যা আবার চার প্রকার-
- রমজান মাসের রোজা।
- কোন কারণ বশত রমজানের রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাযা আদায়ে রোজা।
- শরিয়তে স্বীকৃত কারণ ব্যতীত রমজানের রোজা ছেড়ে দিলে কাফ্ফারা হিসেবে ৬০টি রোজা রাখা।
- রোজার মান্নত করলে তা আদায় করা।
- ওয়াজিব রোজা: নফল রোজা রেখে ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।
- সুন্নত রোজা: মহরম মাসের নয় এবং দশ তারিখে রোজা রাখা।
- মোস্তাহাব রোজা: প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, এবং ১৫ তারিখে, প্রতি সাপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে, কোন কোন ইমামের মতে শাওয়াল মাসে পৃথক পৃথক প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে এক সাথে হোক কিংবা পৃথক পৃথক হোক শাওয়ালের ছয়টি রোজা মুস্তাহাব।
- নফল রোজা: মোস্তাহাব আর নফল খুব কাছাকাছির ইবাদত। সহজ অর্থে নফল হলো যা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত নয় এমন ইবাদত পূণ্যের নিয়তে করা। রোজার ক্ষেত্রেও তাই।
চতুর্থ স্তম্ভ: যাকাতসম্পাদনা
যাকাত (আরবি: زكاة zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে", আরও আরবি: زكاة ألمال, "সম্পদের যাকাত") হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন এ "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।
পঞ্চম স্তম্ভ: হজ্জ্বসম্পাদনা
হজ্ব বা হজ্জ বা হজ (আরবি: حج) ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্জ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ্জ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজ্জ্বের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক।
ষষ্ঠ স্তম্ভসম্পাদনা
জিহাদকে অনেক সময় ইসলামের ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা হয়। ২০১৫ সালে বিতর্কিত ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদো একটি খবর প্রকাশ করে যে, সুইজারল্যান্ডের এক মুসলিম গবেষক তারিক রামাদান "জিহাদ"কে ইসলামের ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও ইসলামের কোনো শাখাতেই ষষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে এর কোনো স্বীকৃৃতি নেই। জিহাদকে শুধুমাত্র ইসলামের একটি আবশ্যিক (ফরজ) ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হয়।
শিয়া ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভসম্পাদনা
দ্বাদশী শিয়া সম্প্রদায়ের পাঁচ স্তম্ভসম্পাদনা
সপ্তমী শিয়া সম্প্রদায়ের সাত স্তম্ভসম্পাদনা
অন্যান্যসম্পাদনা
দ্রুজদের সাত স্তম্ভসম্পাদনা
আরো দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Pillars of Islam"। Oxford Centre for Islamic Studies (ইংরেজি ভাষায়)। United Kingdom: Oxford University। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-১৭।
- ↑ "Pillars of Islam" (ইংরেজি ভাষায়)। Encyclopædia Britannica Online। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০২।
- ↑ Hawting, Gerald. The Development of Islamic Ritual. Routledge, 2017. review."
- ↑ সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮, হাদিসের মান: সহিহ (সঠিক)
- ↑ "সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | হাদিস নংঃ ৭ [ ৮]"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৭।
- ↑ Matthew S. Gordon and Martin Palmer, ''Islam'', Info base Publishing, 2009 (ইংরেজি ভাষায়)। Books.Google.fr। পৃষ্ঠা 87। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-২৬।