আর্থার মিচেল

ইংরেজ ক্রিকেটার

আর্থার মিচেল (ইংরেজি: Arthur Mitchell; জন্ম: ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০২ - মৃত্যু: ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৬) ইয়র্কশায়ারের বেইলডন গ্রীন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন ‘টিকার’ ডাকনামে পরিচিত আর্থার মিচেল।

আর্থার মিচেল
আনুমানিক ১৯৩৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আর্থার মিচেল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার মিচেল
জন্ম(১৯০২-০৯-১৩)১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০২
বেইলডন, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৬(1976-12-25) (বয়স ৭৪)
ব্র্যাডফোর্ড, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ডাকনামটিকার
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরন-
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৭১)
১৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২৭ জুন ১৯৩৬ বনাম ভারত
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪২৬
রানের সংখ্যা ২৯৮ ১৯,৫২৩
ব্যাটিং গড় ২৯.৮০ ৩৭.৪৭
১০০/৫০ -/২ ৪৪/৯৮
সর্বোচ্চ রান ৭২ ১৮৯
বল করেছে ৫২৩
উইকেট -
বোলিং গড় - ৪৬.৭১
ইনিংসে ৫ উইকেট - -
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং - ৩/৪৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৯/- ৪৩৯/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ জুন ২০১৯

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

ব্যাটিং চলাকালীন অনবরত বিড়বিড় করে কথা বলার অভ্যাসের কারণে ‘টিকার’ ডাকনামে আখ্যায়িত হন। খাঁটিমানের ও দৃঢ়প্রত্যয়ী মনোভাবের অধিকারী ছিলেন আর্থার মিচেল। কিছু সময় মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে পার্সি হোমস অবসর গ্রহণ করলে তিনি ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করেন। স্ট্রোক মারার চেয়ে দৌঁড়িয়ে রান নেয়ার অভ্যাস ছিল তার। খুব কম সময়ই ব্যাট হাতে খুলে মারার অভ্যাস ছিল। এক পর্যায়ে লক্ষ্য করেন যে, ফাইন কাটার মারের দিকেই তিনি অধিক ঝুঁকে পড়েছেন।

১৯২২ থেকে ১৯৪৭ সময়কালীন আর্থার মিচেলের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল।[১] ১৯২৬ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ১৮৯ রানের ইনিংস খেলেন। এরফলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়। তাসত্ত্বেও পরবর্তী দুই বছর আবারও অপেক্ষা করতে হয়। এরপরই কেবল দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করতে পেরেছিলেন। ইয়র্কশায়ার দলের ব্যাটিংয়ের মান এতোটাই উন্নততর ছিল যে, ১৯৩০ সালে দলের পাঁচজন খেলোয়াড়ের ব্যাটিং গড় ৫০-এর অধিক ছিল। ঐ সময়ে আর্থার মিচেলকে তিন, চার কিংবা পাঁচ নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতে হতো। কিন্তু, ১৯৩৩ সালে পার্সি হোমসের অবসর গ্রহণের ফলে তাকে প্রায়শঃই ব্যাটিং উদ্বোধন করার সুযোগ দেয়া হয়।

১৯৩৩ সালে উপর্যুপরী চারটি ইনিংসে শতরান করেছিলেন তিনি। ১৯৩৪ সালে প্লেয়ার্সের সদস্যরূপে জেন্টলম্যানের বিপক্ষে লর্ডসের খেলায় অংশ নেন। দুই ঘণ্টা পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করে পঞ্চাশ রান তুলেন ও এক ঘণ্টা পর ১২০ রানে আউট হন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৭.৪৭ গড়ে ১৯,৫২৩ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ৪৪টি সেঞ্চুরি ছিল। ১৯২২ সালের শুরুতে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলতে থাকেন। কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড়দের কারণে পরবর্তী তিন বছর খুব কমই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলার সুযোগ পেতেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন আর্থার মিচেল। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে মুম্বইয়ে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৭ জুন, ১৯৩৬ তারিখে লর্ডসে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ভারত সফরে আসে। এ পর্যায়ে এমসিসি দলের সদস্যরূপে তিনি তিন টেস্টে অংশ নেন। মূলতঃ দ্বিতীয় একাদশে অবস্থান করছিলেন তিনি। ১৯৩৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ইংল্যান্ড গমন করে। হেডিংলি টেস্টের পূর্বক্ষণে মরিস লেল্যান্ড আঘাতগ্রস্ত হলে আর্থা মিচেল এ সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। লিডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিন ঘণ্টার অধিক সময় ক্রিজে অবস্থান করে মূল্যবান ৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে ডি. স্মিথের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে দুই ঘণ্টারও কম সময়ে ৭২ রান তুলেন। এ পর্যায়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১২৮ রান ওঠে। ফলশ্রুতিতে, সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। একই সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে আবারও প্রথম ইনিংসে তিন ঘণ্টায় মাত্র ৪০ রান তুলেন।

এরপর ১৯৩৬ সালে লর্ডসে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে নিজ দেশে তৃতীয় ও ব্যক্তিগত সর্বশেষ টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ করেন।

খেলার ধরন সম্পাদনা

ইয়র্কশায়ার কাউন্টি দলের স্বর্ণালী সময়ে আর্থার মিচেলের অংশগ্রহণ ছিল। তার ব্যাটিং তেমন দর্শনীয় না হলেও সর্বদাই দলের প্রয়োজনে বিশেষতঃ দলের বিপর্যয়কালীন নিজেকে যথাসাধ্য উজাড় করে দেয়ার মানসিকতা ছিল তার। তাকে আউট না করে কোন দল জয়ের সন্ধান পায়নি। সম্ভবতঃ দ্বৈত ভূমিকার কারণে উপস্থিত দর্শকেরা তাকে মনে রেখেছিলেন। অন-সাইডে তার খেলার প্রবণতা লক্ষ্যণীয় ছিল। কিন্তু, রানের দরকার পড়লে দ্রুত দৌঁড়ে তা সম্পন্ন করতেন। কখনোবা অফ-সাইডে স্ট্রোক খেলতেন যা প্রতিপক্ষীয় দল ঘুনাক্ষরেও টের পেতো না। কাটারের দিকেই তার সবিশেষ নজর ছিল।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সুদক্ষ ফিল্ডারের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। সচরাচর উইকেটের কাছাকাছি লেগ কিংবা অফের দিকে অবস্থান করতেন। যুদ্ধ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে দলের পক্ষে খেলে যান। কোচের দায়িত্ব পালনকালীন তিনি শুধুমাত্র শিক্ষাই দিতেন না; বরং খেলা সম্পর্কে আলাপচারিতায়ও মত্ত থাকতেন।

মূল্যায়ন সম্পাদনা

আর্থার মিচেলের খেলোয়াড়ী জীবনে শেষদিকে ইয়র্কশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা ব্রায়ান সেলার্স মন্তব্য করেন যে, তার মৃত্যুতে ক্রিকেট জগৎ একজন সেরা ব্যক্তিত্বকে হারালো এবং আমিও অত্যন্ত কাছের বন্ধু ও পুরনো দলীয়সঙ্গীকে হারালাম। আর্থার ইয়র্কশায়ারের বিশ্বস্ত সমর্থক ও কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। কোচ হিসেবে তিনি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাকে ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিরাটভাবে শূন্যতা অনুধাবন করবে। তিনি এ খেলায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ খেলোয়াড় ছিলেন। শুরুরদিকে লীগ ক্রিকেটে দূর্বলমানের ফিল্ডার হিসেবে খেলতে নামেন। পরবর্তীকালে দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশ্বের সেরা ফিল্ডারের ভূমিকায় আসীন হন।

অবসর সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ইয়র্কশায়ারের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।

২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে বড়দিনে ৭৪ বছর বয়সে ইয়র্কশায়ারের ব্র্যাডফোর্ড এলাকার হাসপাতালে আর্থার মিচেলের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Warner, David (২০১১)। The Yorkshire County Cricket Club: 2011 Yearbook (113th সংস্করণ)। Ilkley, Yorkshire: Great Northern Books। পৃষ্ঠা 374। আইএসবিএন 978-1-905080-85-4 
  2. [১] ESPNcricinfo, ESPN, সংগ্রহের তারিখ: ১১ জুন ২০১৯

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা