জেমস কার্টলি

ইংরেজ ক্রিকেটার
(James Kirtley থেকে পুনর্নির্দেশিত)

রবার্ট জেমস কার্টলি (ইংরেজি: James Kirtley; জন্ম: ১০ জানুয়ারি, ১৯৭৫) সাসেক্সের ইস্টবোর্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৪ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

জেমস কার্টলি
২০১০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জেমস কার্টলি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামরবার্ট জেমস কার্টলি
জন্ম (1975-01-10) ১০ জানুয়ারি ১৯৭৫ (বয়স ৪৯)
ইস্টবোর্ন, সাসেক্স, ইংল্যান্ড
ডাকনামঅ্যাম্বি
উচ্চতা৬ ফুট ০ ইঞ্চি (১.৮৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
সম্পর্কডেভিড কার্টলি (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৬১৬)
১৪ আগস্ট ২০০৩ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২১ ডিসেম্বর ২০০৩ বনাম শ্রীলঙ্কা
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৬৬)
৩ অক্টোবর ২০০১ বনাম জিম্বাবুয়ে
শেষ ওডিআই১৮ এপ্রিল ২০০৪ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই শার্ট নং১৬
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯৫ - ২০১০সাসেক্স
১৯৯৬ - ১৯৯৭ম্যাশোনাল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১১ ১৭০ ২৫৩
রানের সংখ্যা ৩২ ২০৪০ ৪৪৫
ব্যাটিং গড় ৫.৩৩ ১.০০ ১৩.১৬ ১০.১১
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ০/৪ ০/০
সর্বোচ্চ রান ১২ ৫৯ ৩০*
বল করেছে ১০৭৯ ৫৪৯ ৩১৯১৬ ১১০৯৮
উইকেট ১৯ ৬১৪ ৩৮১
বোলিং গড় ২৯.৫২ ৫৩.৪৪ ২৭.০৪ ২৩.১৪
ইনিংসে ৫ উইকেট ২৯
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ৬/৩৪ ২/৩৩ ৭/২১ ৬/৫০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ৫/– ৬০/– ৬৯/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২২মার্চ ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্স ও জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন জেমস কার্টলি

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

ইস্টবোর্নের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ স্কুলের অধ্যয়নের পর ব্রিস্টলের ক্লিফটন কলেজে পড়াশুনো সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জেমস কার্টলি’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। নিজের স্বর্ণালী সময়ে নিখুঁত নিশানা বজায় রেখে বোলিং করতেন। এক পর্যায়ে বোলিং ত্রুটির কারণে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়।

২০০৬ সালে সিএন্ডজি ট্রফি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেন। ৫/২৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে সাসেক্সকে বিজয়ী হতে সহায়তা করেন। রোজ বোলে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি২০ খেলায় বোলিং করেন।

৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০ তারিখে হোভে নিজস্ব সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন। প্রো ৪০ একদিনের খেলায় সারের বিপক্ষে খেলার পর সাসেক্স থেকে ষোল বছরের পেশাদারী ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনে ইতি টানেন। কেভিন পিটারসনকে সর্বশেষ আউট করেন। খেলায় তিনি ৩/৬১ পান ও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্ট ও এগারোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন জেমস কার্টলি। ১৪ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে নটিংহামে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৩ তারিখে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেমস কার্টলি’র টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নটিংহামে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্বাগতিক দল ৭০ রানে জয় পেয়েছিল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪ রান তুলেন ও এ রান সংগ্রহের জন্যে ৫৪ বল মোকাবেলা করেছিলেন। তবে, বল হাতে নিয়ে অধিক সফল হয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৩১ ওভার বোলিং করে ২/৮০ পান। ইকোনোমি রেট দাঁড়ায় ২.৫৮। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬.২ ওভার বোলিং করে ৬/৩৪ পান।[১] প্রথমে তিনি গ্রেইম স্মিথকে ৫ রানে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন, এরপর জ্যাকুয়েস রুডল্ফকে শূন্য রানে এলবিডব্লিউ করলে প্রোটিয়াসদের সংগ্রহের ২৮/২ হয়। পরবর্তীতে নিল ম্যাকেঞ্জিকে ১১ রানে বোল্ড, অ্যান্ড্রু হলকে ০ রানে মার্কাস ট্রেসকোথিকের কটে এবং পল অ্যাডামসকে ১৫ রানে কট এন্ড বোল্ড করেন। সবশেষে মার্ক বাউচারকে অ্যালেক স্টুয়ার্টের কটে ৫২ রানে বিদেয় করেন। খেলায় তিনি ১১৪ রান খরচায় আট উইকেট দখল করেন। ঐ টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আরও তিনবার জেমস কার্টলি অংশগ্রহণ করেন। দূর্দান্ত সূচনা করার পর আগস্ট, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মুখোমুখি হবার জন্যে তাকে দলে নেয়া হয়। দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে বারো ওভার মোকাবেলা করলেও খুব কম রান তুলেছিলেন। বল হাতে নিয়ে ৫/১৪৫ পান। তবে, প্রোটিয়াসরা ১৯১ রানে জয় পেয়েছিল।

ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের তৃতীয় ও চতুর্থ খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে জেমস কার্টলিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। প্রথম ইনিংসে ২/১০৯ ও ২/৬২ পান। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। দ্বিতীয়টিতে শ্রীলঙ্কা দল বেশ সহজে জয় পায়। ইনিংস ও ২১৫ রানে সফরকারীদের জয়ে ইংল্যান্ড দল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায়। কার্টলি ১ রান করেন। এর জবাবে শ্রীলঙ্কা দল পর্বতসম ৬২৮ রান তুলে। সকল বোলারই নাস্তানুবাদের শিকার হয়। অ্যাশলে জাইলস ২/১৯০ ও গ্যারেথ ব্যাটি ০/১৩৭ পান। তবে, কার্টলি ২/১৩১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা ১৪৮ রানে অল আউট হয়। কার্টলি ১২ রান করেন। এটিই তার টেস্টে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। ২৫ বল মোকাবেলা করে এ রান তোলাকালীন ছক্কা হাঁকান। পরবর্তীতে মুত্তিয়া মুরালিধরন তাকে বোল্ড করেন।

একদিনের আন্তর্জাতিক সম্পাদনা

২০০১ সালে প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেন জেমস কার্টলি। ঐ খেলায় ইংল্যান্ড দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয়লাভ করে। ব্যাট হাতে মাঠে নামার সুযোগ না পেলেও বল হাতে নিয়ে ৯.১ ওভারে ২/৩৩ পান। এটিই তার প্রথম আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ হলেও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করে ম্যাশোনাল্যান্ড দলের বিপক্ষে জয়লাভে ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০০১ সালের শেষদিকে এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কার লাভ করেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে এগারোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন জেমস কার্টলি। তন্মধ্যে, মাত্র দুইবার ব্যাট হাতে মাঠে নেমেছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই মাত্র ১ রান তুলেছিলেন। সব মিলিয়ে নয় উইকেট লাভ করেন। ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেওয়াগ ও অস্ট্রেলীয় তারকা খেলোয়াড় ম্যাথু হেইডেনকে আউট করেছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ২/৩৩ গড়েন। ওডিআইয়ে তার বোলিং গড় ৫৩.৪৪।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় বিস্ময়করভাবে ইংল্যান্ড দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ড্যারেন ম্যাডি, লেগ স্পিনার ক্রিস সোফিল্ডজেরেমি স্নেপের সাথে তাকেও দলের সদস্য করা হয়।[২] ঐ প্রতিযোগিতায় জেমস কার্টলি মাত্র একটি খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ছাড়তে হয়।

মূল্যায়ন সম্পাদনা

খুব কম সময়ই ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার পূর্বে বায়োমেকানিক্স বিশেষজ্ঞের চোখে তার বোলিং সন্দেহের চোখে পড়ে। পরবর্তীতে আট সদস্যের ইসিবি কমিটি কর্তৃক নিষ্কৃতি পান। তবে, খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের সুযোগ লাভ করেন। অক্টোবর, ২০০১ সালে হারারেতে একদিনের খেলায় অংশ নেন। কিন্তু, ম্যাচ রেফারি কর্নেল নওশাদ আলী তার বোলিংয়ে রহস্যের গন্ধ পান। সাসেক্স ও ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তার বোলিং উত্তরণে সহায়তার হাত প্রশস্ত করে। পরবর্তী গ্রীষ্মে পুনরায় দলে ফিরে আসেন। ২০০৫ সালে দুইবার তার বিপক্ষে প্রতিবেদন রচিত হয়। ফলে, ঐ গ্রীষ্মের শেষে আবারও বোলিং সংশোধনে তাকে যেতে হয়।

লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে দর্শনীয় ক্যাচ তালুবন্দী করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সাইমন হিউজ ক্যাচটিকে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ৫ম স্থানে রেখেছেন।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "3rd Test: England v South Africa at Nottingham, Aug 14-18, 2003"espncricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৩ 
  2. England go for Twenty20 specialists, Cricinfo, Retrieved on 16 April 2009
  3. The Analyst (২০১৪-০৬-২৬), Cricket's Greatest Catches: No. 5 - James Kirtley | The Analyst, সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২৩ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা