কার্বন

একটি মৌলিক পদার্থ
(Carbon থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কার্বন বা অঙ্গারক (ল্যাটিন ভাষায়ঃ কার্বো "কয়লা")(রাসায়নিক সংকেত C, পারমাণবিক সংখ্যা ৬) একটি মৌলিক পদার্থ। এটি একটি অধাতু এবং যদি চারটি মুক্ত ইলেক্ট্রন পায় তবে যা টেট্রাভেলেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে চারটি সমযোজী রাসায়নিক বন্ধন গঠন করতে সক্ষম। পর্যায় সারণীতে এর অবস্থান গ্রুপ ১৪তে ও এটি একটি পি-ব্লক মৌল এবং ১২C১৩C প্রকৃতিতে এটি দুইটি আইসোটোপ স্থায়ী রুপে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু অস্থায়ী ১৪C শুধুমাত্র রেডিওনিক্লিড রুপে পাওয়া যায়। এটি ক্ষয়িষ্ণু হওয়ায়, যার অর্ধআয়ু (হাফ-লাইফ) প্রায় ৫,৭৩০ বছর। এটি পৃথিবীর জীবজগতের প্রধান গাঠনিক ও প্রাচীনতম মৌল উপাদানগুলির অন্যতম।

কার্বন   C
Spectral lines of Carbon
উপস্থিতিকালো (গ্রাফাইট) স্বচ্ছ (হীরক)
আদর্শ পারমাণবিক ভরAr°(C)
পর্যায় সারণিতে কার্বন
হাইড্রোজেন হিলিয়াম
লিথিয়াম বেরিলিয়াম বোরন কার্বন নাইট্রোজেন অক্সিজেন ফ্লোরিন নিয়ন
সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সিলিকন ফসফরাস সালফার ক্লোরিন আর্গন
পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম স্ক্যান্ডিয়াম টাইটেনিয়াম ভ্যানাডিয়াম ক্রোমিয়াম ম্যাঙ্গানিজ আয়রন Cobalt Nickel Copper Zinc Gallium Germanium Arsenic Selenium Bromine Krypton
Rubidium Strontium Yttrium Zirconium Niobium Molybdenum Technetium Ruthenium Rhodium Palladium Silver Cadmium Indium Tin Antimony Tellurium Iodine Xenon
Caesium Barium Lanthanum Cerium Praseodymium Neodymium Promethium Samarium Europium Gadolinium Terbium Dysprosium Holmium Erbium Thulium Ytterbium Lutetium Hafnium Tantalum Tungsten Rhenium Osmium Iridium Platinum Gold Mercury (element) Thallium Lead Bismuth Polonium Astatine Radon
Francium Radium Actinium Thorium Protactinium Uranium Neptunium Plutonium Americium Curium Berkelium Californium Einsteinium Fermium Mendelevium Nobelium Lawrencium Rutherfordium Dubnium Seaborgium Bohrium Hassium Meitnerium Darmstadtium Roentgenium Copernicium Nihonium Flerovium Moscovium Livermorium Tennessine Oganesson
-

C

Si
বোরনকার্বননাইট্রোজেন
পারমাণবিক সংখ্যা
মৌলের শ্রেণীঅধাতু
গ্রুপগ্রুপ  ১৪; (কার্বন গ্রুপ)
পর্যায়পর্যায় ২
ব্লক  পি-ব্লক
ইলেকট্রন বিন্যাস[He] ২s ২p
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা2,4
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাকঠিন
ঊর্ধ্বপাতন বিন্দু3915 কে ​(3642 °সে, ​6588 °ফা)
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে)amorphous:[] 1.8–2.1 g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
graphite: 2.267 g·cm−৩
diamond: 3.515 g·cm−৩
ত্রৈধ বিন্দু4600 কে, ​10800[][] kPa
ফিউশনের এনথালপি117 (graphite) kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব8.517(graphite),
6.155(diamond) J·mol−১·K−১
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা4, 3 [], 2, 1 [], 0, -1, -2, -3, -4[]
তড়িৎ-চুম্বকত্ব2.55 (পলিং স্কেল)
আয়নীকরণ বিভব
(আরও)
সমযোজী ব্যাসার্ধ77(sp³), 73(sp²), 69(sp) pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ170 pm
বিবিধ
কেলাসের গঠনhexagonal
Hexagonal জন্য কেলাসের গঠন{{{name}}}
শব্দের দ্রুতিপাতলা রডে: 18350 (diamond) m·s−১ (at 20 °সে)
তাপীয় প্রসারাঙ্ক0.8 (diamond) [] µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ)
তাপীয় পরিবাহিতা119-165 (graphite)
900-2300 (diamond) W·m−১·K−১
চুম্বকত্বdiamagnetic[১০]
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক1050 (diamond) [] GPa
কৃন্তন গুণাঙ্ক478 (diamond) [] GPa
আয়তন গুণাঙ্ক442 (diamond) [] GPa
পোয়াসোঁর অনুপাত0.1 (diamond) []
(মোজ) কাঠিন্য1-2 (Graphite)
10 (Diamond)
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা7440-44-0
কার্বনের আইসোটোপ
প্রধান আইসোটোপ ক্ষয়
প্রাচুর্যতা অর্ধায়ু (t১/২) মোড পণ্য
১১C সিন্থ ২০.৩৪ min β+ ১১B
১২C ৯৮.৯৪% স্থিতিশীল
১৩C ১.০৬% স্থিতিশীল
১৪C ppt (১০১২) ৫.৭০×১০ y β ১৪N
বিষয়শ্রেণী বিষয়শ্রেণী: কার্বন
| তথ্যসূত্র

ভূত্বকের প্রাচুর্যতার দিক দিয়ে এটি ১৫তম অবস্থানে রয়েছে, কিন্তু ভরের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, এবং অক্সিজেন-এর পরে চতুর্থতম এর স্থান।

আবিষ্কারের ইতিহাস

সম্পাদনা

কার্বন কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ আগুন আবিষ্কারের আগে থেকেই মানুষ কার্বনের সাথে পরিচিত ছিল। বজ্রাঘাতের ফলে পুড়ে যাওয়া কাঠের মাধ্যমেই মানুষ প্রথম কার্বনের সাথে পরিচিত হয়। আগুন আবিষ্কারের পর কার্বন হয় মানুষের নিত্যসঙ্গী। কারণ এটি অতিমাত্রায় দাহ্য একটি বস্তু। কার্বন পদার্থটির সাথে পরিচিত থাকলেও এটি যে একটি মৌলিক পদার্থ তা মানুষ বেশিদিন আগে জানতে পারেনি। এমনকি কার্বন নামটির ইতিহাস বেশি প্রাচীন নয়। ১৭৮৯ সালে এন্টনি ল্যাভয়সিয়ে কর্তৃক সংকলিত মৌলিক পদার্থের তালিকায় কার্বন উপস্থিত ছিল। মূলত ল্যাভয়সিয়েই প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রমাণ করেছিলেন কার্বন একটি মৌলিক পদার্থ। কয়লা ও অন্যান্য যৌগের দহন পরীক্ষা করে তিনি এই প্রমাণ পেয়েছিলেন।

প্রকৃতিতে কার্বনের দুইটি বহুরুপ রয়েছে। একটি হীরক এবং অন্যটি গ্রাফাইট। অনেক আগে থেকেই মানুষ এ পদার্থ দুটিকে চিনতো। এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় হীরাকে দহন করালে যে অবশেষ হিসেবে কিছু পাওয়া যায়না তাও মানুষের জানা ছিল। কিন্তু এই পদার্থ দুটিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থ হিসেবে মনে করা হতো। কার্বন ডাই অক্সাইড আবিষ্কারের পর এই সমস্যার সমাধান হয়। ল্যাভয়সিয়ে দেখেন যে, হীরক এবং কাঠকয়লা দুটির দহনেই কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া গিয়েছিল যে এরা অভিন্ন পদার্থ। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে Methods of Chemical Nomenclature নামক গ্রন্থে (ল্যাভয়সিয়ে, এল. গুইটন ডি. মারভিউ, সি. বারথোলেট এবং এ. ফোউরক্রই কর্তৃক লিখিত) প্রথম কার্বনেয়াম (কার্বন) নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ল্যাটিন নাম তথা কার্বনেয়াম আবার সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত ভাষায় ক্রা শব্দের অর্থ ফোটা। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে মৌলটির নাম কার্বন দেয়া হয়েছিল।

 
কার্বনের দৃশ্যমান বর্ণালী
কার্বন দিয়ে তৈরী কার্বন ফাইবার-পলিমার

১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এস. টেন্যান্ট আবিষ্কার করেন, সম পরিমাণ হীরক ও গ্রাফাইটের দহনে সমআয়তন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। অবশেষে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এল. গুইটন ডি. মারভিউ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেন যে হীরক, গ্রাফাইট এবং কোকের একমাত্র উপাদান হচ্ছে কার্বন। এর বিশ বছর পর তিনি সতর্কতার সাথে উত্তপ্ত করে হীরককে গ্রাফাইট এবং গ্রাফাইটকে কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত করতে সমর্থ হন। কিন্তু গ্রাফাইট থেকে হীরক তৈরির মত প্রযুক্তি তখনও ছিলনা। অবশেষে ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের একটি দল ৩০০০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং ১০ প্যাসকেল চাপে গ্রাফাইট থেকে হীরক সংশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। এর কিছুদিন পর সোভিয়েত ইউনিয়নে কার্বন নামে আরেকটি পদার্থ তৈরি করা হয় যাকে কার্বনের তৃতীয় বহুরুপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পদার্থের ক্ষেত্রে কার্বনের পরমাণুগুলো একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত হয়ে লম্বা শিকল তৈরি করে। এটি দেখতে অনেকটা ভূসিকালির মত।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Standard Atomic Weights: কার্বন"CIAAW। ২০০৯। 
  2. Prohaska, Thomas; Irrgeher, Johanna; Benefield, Jacqueline; Böhlke, John K.; Chesson, Lesley A.; Coplen, Tyler B.; Ding, Tiping; Dunn, Philip J. H.; Gröning, Manfred; Holden, Norman E.; Meijer, Harro A. J. (২০২২-০৫-০৪)। "Standard atomic weights of the elements 2021 (IUPAC Technical Report)"Pure and Applied Chemistry (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 1365-3075ডিওআই:10.1515/pac-2019-0603 
  3. Lide, D. R., সম্পাদক (২০০৫)। CRC Handbook of Chemistry and Physics (86th সংস্করণ)। Boca Raton (FL): CRC Press। আইএসবিএন 0-8493-0486-5 
  4. Haaland, D (১৯৭৬)। "Graphite-liquid-vapor triple point pressure and the density of liquid carbon"। Carbon14: 357। ডিওআই:10.1016/0008-6223(76)90010-5 
  5. Savvatimskiy, A (২০০৫)। "Measurements of the melting point of graphite and the properties of liquid carbon (a review for 1963–2003)"। Carbon43: 1115। ডিওআই:10.1016/j.carbon.2004.12.027 
  6. "Fourier Transform Spectroscopy of the System of CP" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০৬ 
  7. "Fourier Transform Spectroscopy of the Electronic Transition of the Jet-Cooled CCI Free Radical" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০৬ 
  8. "Carbon: Binary compounds"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-০৬ 
  9. Properties of diamond, Ioffe Institute Database
  10. Magnetic susceptibility of the elements and inorganic compounds, in Handbook of Chemistry and Physics 81st edition, CRC press.

বহিঃসংযোগ

আরও দেখুন

সম্পাদনা

ব্যক্তি

সম্পাদনা

অন্যান্য

সম্পাদনা