তড়িৎ ঋণাত্মকতা
তড়িৎ ঋণাত্মকতা (ইংরেজি: Electronegativity) প্রতীক χ , হল এমন এক ধরনের রাসায়নিক ধর্ম যা কোনো পরমাণু বা অন্য কোন রাসায়নিক সত্ত্বার (অনু,পরমাণু, আয়ন)ইলেকট্রন বা ইলেকট্রন ঘনত্বকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাকে প্রকাশ করে।তড়িৎ ঋণাত্মকতা পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা, কেন্দ্র থেকে যোজ্যতা ইলেকট্রনের দুরত্ব ইত্যাদীর উপর নির্ভর করে।তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান যত বেশি হয় কোন রাসায়নিক সত্ত্বার (পরমাণু, অণু বা মূলক,আয়ন) নিজের দিকে ইলেকট্রন ঘনত্বকে টেনে নেয়ার প্রবণতা তত বেশি হয় । ফ্লোরিন সবচেয়ে বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল। ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা ৪.০।তড়িৎ ঋণাত্মকতার ক্রম F>O>N, Cl>Br>I, C>H
সমযোজী যৌগ নির্ধারণে ভূমিকা
সম্পাদনাতড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের মাধ্যমে সমযোজী যৌগের প্রকৃতি নির্ণয় করা যায় : যেমন :
- নন-পোলার বা বিশুদ্ধ সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য < 0.5 হয় ,
- তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য 0.5 - 1.7 এর মধ্যে থাকলে সমযোজী যৌগটি পোলার বা আয়নিক প্রকৃতির সমযোজী যৌগ হয়,
- আর যদি পার্থক্য 1.7 এর বেশি হয় (>1.7) তাহলে সমযোজী যৌগটি যথেষ্ট আয়নিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সমযোজী যৌগ হয় ।
পর্যায় সারণীতে
সম্পাদনা- পর্যায় বরাবর বাঁদিক থেকে ডান দিকে গেলে সাধারণত তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়।
- যেমন: N<O<F (২য় পর্যায়)
- শ্রেণী বরাবর উপর থেকে নিচে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা হ্রাস পায়।
- যেমন: Cl>Br>I (১৭শ শ্রেণী)
গণনা পদ্ধতি
সম্পাদনামুলিকান স্কেল
সম্পাদনাব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট মুলিকান এই স্কেলের জনক।[১][২][৩] এই স্কেল অনুযায়ী: যেখানে,
- = তড়িৎ ঋণাত্মকতা
- = আয়নন বিভব
- = ইলেকট্রন আসক্তি
পাউলিং স্কেল
সম্পাদনাবিজ্ঞানী পাউলিং এই স্কেলের জনক। এটি সর্বাধিক প্রচলিত স্কেল।
যেখানে,
আয়নীয় রেজোনেন্স শক্তি = δ = EA−B − (EA−A × EB−B)½ (কিলোক্যালোরি/মোল এককে)
- EA−B = A মৌল ও B মৌলের মধ্যে বন্ধন শক্তি
- EA−A = দুটি A মৌলের মধ্যে বন্ধন শক্তি
- EB−B = দুটি B মৌলের মধ্যে বন্ধন শক্তি
- = A এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা
- = B এর তড়িৎ ঋণাত্মকতা
আলরেড-রচো স্কেল
সম্পাদনাবিজ্ঞানী আলরেড ও রচো এই স্কেলের জনক।
- Zeff = প্রভাবকারী নিউক্লীয় আধান
- rcov = সমযোজী ব্যাসার্ধ
দ্বিমেরু ভ্রামক
সম্পাদনারাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাব
সম্পাদনাএই ধর্মটির উপর পদার্থের অন্যান্য অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের আন্তঃসম্পর্ক দেখা যায়। যেমন, কোন যৌগে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ দুটি পরমাণুর মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য যত বেশি হয়, ঐ যৌগের সমযোজী বৈশিষ্ট্যসমূহের আদর্শ আচরণ থেকে তত বেশি বিচ্যুত হতে দেখা যায় অর্থাৎ আয়নীয় যুগের ন্যায় আচরণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
s অরবিটালের ইলেকট্রন গুলি যেহেতু নিউক্লিয়াসের বেশি কাছে থাকে, তাই তারা নিউক্লিয়াস দ্বারা বেশি আকৃষ্ট হয়, তুলনামূলকভাবে p অরবিটালের ইলেকট্রন গুলি নিউক্লিয়াসের থেকে বেশি দূরে থাকায় কম আকৃষ্ট হয়। বিভিন্ন সংকরায়িত অরবিটাল গুলিতে যত s চরিত্রের শতাংশ বৃদ্ধি পায়, সেটি তত বেশি নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবস্থান করে এবং প্রায় গোলাকার আকার ধারণ করে (যেহেতু s অরবিটালের আকৃতি গোলাকার) ফলে আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায় এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতা ও বৃদ্ধি পায়।
সংকরায়ণ | χ (পাউলিং স্কেল)[৪] |
---|---|
C(sp3) | ২.৩ |
C(sp2) | ২.৬ |
C(sp) | ৩.১ |
অসংকরায়িত C | ২.৫ |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Mulliken, R. S. (১৯৩৪)। "A New Electroaffinity Scale; Together with Data on Valence States and on Valence Ionization Potentials and Electron Affinities"। Journal of Chemical Physics। 2 (11): 782–793। ডিওআই:10.1063/1.1749394। বিবকোড:1934JChPh...2..782M।
- ↑ Mulliken, R. S. (১৯৩৫)। "Electronic Structures of Molecules XI. Electroaffinity, Molecular Orbitals and Dipole Moments"। J. Chem. Phys.। 3 (9): 573–585। ডিওআই:10.1063/1.1749731। বিবকোড:1935JChPh...3..573M।
- ↑ Pearson, R. G. (১৯৮৫)। "Absolute electronegativity and absolute hardness of Lewis acids and bases"। J. Am. Chem. Soc.। 107 (24): 6801–6806। ডিওআই:10.1021/ja00310a009।
- ↑ Fleming, Ian (২০০৯)। Molecular orbitals and organic chemical reactions (Student সংস্করণ)। Chichester, West Sussex, U.K.: Wiley। আইএসবিএন 978-0-4707-4660-8। ওসিএলসি 424555669।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Jolly, William L. (১৯৯১)। Modern Inorganic Chemistry (2nd সংস্করণ)। New York: McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 71–76। আইএসবিএন 978-0-07-112651-9।
- Mullay, J. (১৯৮৭)। "Estimation of atomic and group electronegativities"। Electronegativity। Structure and Bonding। 66। পৃষ্ঠা 1–25। আইএসবিএন 978-3-540-17740-1। ডিওআই:10.1007/BFb0029834।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- উইকিমিডিয়া কমন্সে তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
- ওয়েব এলিমেন্টস
- ভিডিও বর্ণনা
- তড়িৎ ঋণাত্মকতা চার্ট