স্বর্ণপদক
স্বর্ণপদক সাধারণতঃ বেসামরিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রদানে কোন ব্যক্তি, দল কিংবা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পদকে স্বল্প পরিমাণে স্বর্ণ পাত আকারে কিংবা খাদ মিশিয়ে স্বর্ণপদক তৈরী করা হয়। সামরিক বাহিনীতে পদক প্রদানের ধারনাটি বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিকভাবে সাধারণ স্বীকৃতির লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর সাধারণ সৈনিকদেরকে প্রদান করা হতো।
অষ্টাদশ শতক থেকে শিল্পকলায় স্বর্ণপদকের ব্যবহার শুরু হয়। রয়েল ড্যানিশ একাডেমী অসাধারণ মেধাবী ছাত্রদেরকে কিছুটা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পুরস্কার হিসেবে এ পদক প্রদান করতো। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো পদকের গুরুত্ব ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকে স্বর্ণপদক প্রদানের জন্য শুধুমাত্র এর ব্যবহার ঘটাতো। বার্ষিক কিংবা বিশেষ দিবসে অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে প্রদান করে থাকে। তন্মধ্যে - ইউনেস্কো এবং অন্যান্য শিক্ষায়তনিক সংস্থা অন্যতম।
অধিকাংশ স্বর্ণপদকই খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী। ব্যতিক্রম হিসেবে সোনার পাত এবং রৌপ্য-স্বর্ণমণ্ডিত পদক রয়েছে যা অলিম্পিক ক্রীড়াসহ, লরেঞ্জ মেডেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল, নোবেল পুরস্কারে প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য ব্যবহৃত পদকে ১৮ ক্যারট সবুজ সোনার পাতে ২৪ ক্যারট সোনার দ্রবণ মিশ্রণ ঘটানো হয়। ১৯৮০ সালের পূর্বে ২৩ ক্যারটের সোনা ছাপাঙ্কিত করে ব্যবহার করতো।
সামরিক ব্যবহার
সম্পাদনামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে পুরস্কার প্রদানের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড প্রবর্তনের পূর্বে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা হিসেবে মেডেল অব অনার প্রদান করা হতো। উল্লেখযোগ্য সামরিক সফলতা অথবা নৌ বিজয় অথবা অর্জিত গুণাবলীকে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে স্বর্ণপদক দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস আইনসভায় এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারী করা হয় যাতে প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট ও মনোনীত সামরিক ব্যক্তিকে স্বর্ণপদক প্রদান করবেন। এতে বলা হয়, কমান্ডিং অফিসারকে স্বর্ণপদক এবং তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তাকে রৌপ্যপদক প্রদান করা হবে।[১] অন্যান্য দেশগুলোও তাদের সামরিক ও নৌ-বিজয়ে একই ধরনের সম্মাননা প্রদানের চর্চা করতে শুরু করে।
প্রতিযোগিতা ক্ষেত্র
সম্পাদনাজয়-পরাজয় নির্ধারণী প্রতিযোগিতায় পদক প্রদান অনেক পূর্ব থেকেই প্রবর্তিত হয়েছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিশেষতঃ এথলেটিক্সে বিভিন্ন ধরনের পদক প্রদান করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে পদকে বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তন্মধ্যে -
ধাতব পদার্থের প্রকারভেদের মাধ্যমে গ্রীক পুরাণে বর্ণিত তিন যুগের মানুষকে নির্দেশ করেছে। স্বর্ণযুগে মানুষ দেবতাদের সংস্পর্শে বসবাস করতো; রৌপ্যযুগে মানুষের যৌবন শত বৎসর এবং ব্রোঞ্জযুগে বীরদের রাজত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জনকারীকে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদকের মাধ্যমে কমপক্ষে ঊনবিংশ শতক থেকে প্রদান করা হচ্ছে।
অলিম্পিক ক্রীড়া
সম্পাদনা১৮৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের আসরে বিজয়ী বা চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগীদেরকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়নি।[২] বিজয়ীকে রূপার পদক ও জলপাই পাতার মুকুট প্রদান করার মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছিল।[৩] দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে তামা বা ব্রোঞ্জের পদক ও লরেল পাতার মুকুট প্রদান করা হয়।[৪] ১৯০০ সালে অধিকাংশ বিজয়ীকে পদকের পরিবর্তে কাপ কিংবা ট্রফি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রথম তিন স্থান অধিকারীকে স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক এবং ব্রোঞ্জপদক প্রদান করা হয়। এ ধারাটি পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুসরণ করা হয়। স্বাগতিক দেশের টাকশাল বা কোষাগার থেকে পদক প্রদানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯২৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের আসর থেকে শুরু করে ১৯৬৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের আসর পর্যন্ত ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত চিত্রকর ও ভাস্কর গিউসেপ্পি ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশার একপার্শ্বে স্বাগতিক শহরের নাম ও অন্যপার্শ্বে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের প্রতিকৃতি সংবলিত পদকের প্রচলন ছিল। লক্ষ্যণীয় যে, ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশায় রোমানদের রঙ্গস্থলের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে যা গ্রীক নাম থেকে উদ্ভূত। ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্স থেকে ২০০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্স পর্যন্ত ক্যাসিওলি'র অঙ্কিত নকশায় অল্প পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু সম্মুখ পার্শ্বের নকশা ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে পরিবর্তিত হয়।
শীতকালীন অলিম্পিকে এ পদক আরো ভিন্নতর হয়েছে। তবে, পাতলা তুষারের আবরণ পদকে তুলে ধরা হতো। পাশাপাশি রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জপদকগুলোকে সর্বদাই একই নকশা অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়।
মনোবিজ্ঞানে প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনা১৯৫৫ সালে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানীত্রয় - ভিক্টোরিয়া মেডভেক, স্কট ম্যাদে এবং থমাস গিলোভিচ আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ায় বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনা সংবলিত প্রতিক্রিয়া গবেষণা আকারে তুলে ধরেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, যে সকল প্রতিযোগী ব্রোঞ্জপদক জয় করে তারা রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদের তুলনায় অধিকতর সুখী। রৌপ্যপদক জয়ী ক্রীড়াবিদ মানসিক অবসাদগ্রস্ততায় ভোগেন, কেননা তারা অল্পের জন্য স্বর্ণপদক প্রাপ্তি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন। সে তুলনায় ব্রোঞ্জপদক জয়ী খেলোয়াড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে কমপক্ষে একটি পদক জয়ে সক্ষমতা ও পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। চতুর্থ স্থান অধিকারী প্রতিযোগীকে সাধারণতঃ কোন পদক দেয়া হয় না।[৫] নক-আউটভিত্তিক প্রতিযোগিতা হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলে পুনরায় ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করতে হয়। চূড়ান্ত খেলায় পরাজিত হবার প্রেক্ষাপটে পরাজিত দলকে রৌপ্যপদক প্রদান করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Polk County History site "Gold Medals All Around""। ৬ নভেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১২।
- ↑ London 2012: Olympic medals timeline, BBC News. Accessed 27 July 2011.
- ↑ De Coubertin, Pierre (১৮৯৭)। The Olympic Games: BC 776–AD 1896 (পিডিএফ)। The Olympic Games in 1896 - Second Part। Athens: Charles Beck। পৃষ্ঠা 232–4। ২৭ মে ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১২। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ “After this followed the distribution of the second prizes. The King presented each winner with a bronze medal and a laurel branch.” (English version) But: “Darauf treten die zweiten Sieger einzeln heran und empfangen aus den Händen des Königs einen Lorbeerzweig und eine kupferne Medaille” (German version) Pierre de Coubertin and others, The Olympic Games In 1 8 9 6, ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০০৮ তারিখে Athens , London, Leipzig 1897, p.114 and p. 115. In: The Olympic Games B.C. 776. — A. D. 1896. Part II
- ↑ "social_studies:psychology"। ২৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২।