জন্ম হচ্ছে কার্য-সম্পাদনকারী, প্রাকৃতিক ও আচরণগত প্রক্রিয়া যা মাতৃগর্ভ থেকে সন্তান প্রসব করতে সাহায্য করে বা ভূমিষ্ঠ হয়। গবাদি পশু এবং কিছু অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বাছুর ও মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে শাবক প্রসব করাকে বুঝায়।[১] প্রাকৃতিকগতভাবে মা বা স্ত্রীলিঙ্গজাতীয় প্রাণীই সন্তান প্রসবের অধিকারী হয়। মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হয় যখন মায়ের গর্ভে রক্ষিত ভ্রুণ জরায়ুর মাধ্যমে বিশ্বে নির্গত হয়। ওভিপারিটি বা ডিম প্রসব, ভিভিপারি বা ডিমের বদলে শাবক প্রসব এবং ওভোভিভিপারি - ইত্যাদি ধরনের জন্ম হয়ে থাকে।

জন্মের পরক্ষণেই মা ও নবজাতকের একীকরণ আবশ্যক

আইনগত দিক সম্পাদনা

বিশ্বের অনেক দেশেই শিশুর জন্মের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জন্মসনদ বা বার্থ সার্টিফিকেট উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গ্রহণ করতে হয়। এতে শিশুর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে ও বৈধ দলিল হিসেবে স্বীকৃত হয় যা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর নির্দিষ্ট তারিখ থেকে প্রতিবছর ঐ দিনে পালনীয় অনুষ্ঠান জন্মদিনরূপে উদ্‌যাপন করা হয়। জন্ম তারিখ অথবা জ্যোতিষশাস্ত্রের হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে পালনীয় এটি শিশু বা ব্যক্তির বার্ষিকভিত্তিক অনুষ্ঠান। একক পরিবারে বাবা, মা, ভাই অথবা বোন রয়েছে - যারা শিশুর জন্মকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট থাকেন। কিছু দেশে বৈধভাবে বিবাহ-পর্ব সম্পন্ন না হয়ে বাবা-মায়ের মিলনে শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ওই শিশু জারজ সন্তান বা অবৈধ শিশু নামে পরিচিতি পায় বা বিবেচনা করা হয়।

আধ্যাত্মিক প্রভাব সম্পাদনা

জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয় যে, জন্মকালীন সময়ে প্রতিটি ব্যক্তির জীবনই আকাশের সূর্য, চন্দ্র এবং গ্রহাদির ভূ-কেন্দ্রিক অবস্থান কিংবা দিগন্ত রেখার উপর তার ভাগ্যরেখাআয়ু নির্ভরশীল। জন্মগত তালিকায় হিসাব-নিকাশের সাহায্যে সময়, তারিখ এবং জন্মস্থানের অবস্থান ব্যবহার করা হয়। এরফলে জ্যোতিষী কর্তৃক প্রয়োজনীয় পাথর, মণি-মুক্তা ইত্যাদি ব্যবহার করে ভাগ্যরেখা পরিবর্তন কিংবা আয়ু বৃদ্ধিকল্পে চক্রাকারে আবর্তিত রাহুকে দূর করার জন্য চেষ্টা চালানো হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীষ্টান সম্প্রদায় আবারো জন্মগ্রহণের কথা বিশ্বাস করেন। এরফলে ঈশ্বরকে পাবার লক্ষ্যে সকল দুঃখ-দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ ও ঐশ্বরিক শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসীকে রক্ষা করার কথা তুলে ধরা হয়েছে। কর্ম মতবাদ অনুযায়ী পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ব্যক্তিগণ বিশ্বাস করেন যে মৃ্ত্যু পরবর্তীকালে তার আবারো পুনর্জন্ম ঘটবে। খ্রিস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী প্রভু যীশু পবিত্র দেহ নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে তিনি কোন পুরুষের সঙ্গম ছাড়াই কুমারী মাতা মেরীর গর্ভে জন্মেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।[২]

জটিল অবস্থা সম্পাদনা

জন্মকালীন সময়ে শারীরিক কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনতাজনিত জন্মের ত্রুটি হতে পারে। জন্মগত প্রক্রিয়ায় ব্যথা অনুভূত হলে পরবর্তীকালে শিশুর জীবনে ঐ ব্যথা প্রবাহিত হতে পারে। গর্ভকালীন জটিলতা গর্ভস্রাব কিংবা অনৈচ্ছিক গর্ভপাতের কারণেও সৃষ্টি হয়।[৩] বন্ধ্যাত্বতা ঘোঁচাত আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার, ঔষধ প্রয়োগ, মানসিক উদ্দীপনা অথবা আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা হয়। অনেক সময় অপরিপক্ক জন্মগ্রহণ গর্ভধারণের পূর্ণকালীন সময়ের পূর্বে ঘটে থাকে। মৃত অবস্থায় ভ্রুণ বা শিশু জন্ম নিলে তা স্টিলবার্থ নামে পরিচিত। সিজারিয়ান শিশুর জন্মের পর ভিব্যাক পদ্ধতির মাধ্যমে যোনীনালী দিয়ে সন্তানের জন্ম হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Birth, dictionary.com, Retrieved on June 10, 2010.
  2. Grudem, Wayne (১৯৯৪)। Systematic Theology: An Introduction to Biblical Doctrine। Grand Rapids: Zondervanআইএসবিএন 0-310-28670-0  :৫৬৮-৬০৩
  3. Hurwitz, J. and J. Leis (১৯৭২)। "Directing influence of DNA in the reaction"। RNA-dependent DNA polymerase activity of RNA tumor viruses। পৃষ্ঠা 116–129।