গর্ভপাত
গর্ভপাত হলো কোনো ফিটাস বা ভ্রূণ নিজে নিজে বেঁচে থাকতে সক্ষম হওয়ার আগেই এটিকে অপসারণ করে অথবা মাতৃগর্ভ থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে গর্ভধারণের অবসান ঘটানো৷ গর্ভপাত ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হতে পারে, যেক্ষেত্রে এটিকে প্রায়ই মিসক্যারিজ বলা হয়। এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবেও ঘটানো হতে পারে যেক্ষেত্রে এটিকে বলা হয় প্ররোচিত গর্ভপাত। গর্ভপাত পরিভাষাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো মানবীয় গর্ভধারণের প্ররোচিত গর্ভপাতকে বুঝায়। ভ্রূণ নিজে নিজে বেঁচে থাকতে সক্ষম হওয়ার পর এই একই প্রক্রিয়া ঘটানো হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেটিকে বলা হয় "গর্ভাবস্থার বিলম্বিত অবসান"৷[২]
গর্ভপাত | |
---|---|
বিশেষত্ব | ধাত্রীবিদ্যা |
প্ররোচিত গর্ভপাতের জন্য আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় ঔষধ অথবা অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। মিফেপ্রিস্টন ও প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামের ঔষধ দু’টি প্রথম তিন মাসে অস্ত্রোপচার পদ্ধতির মতই কার্যকর।[৩][৪] দ্বিতীয় তিন মাসে ঔষধের ব্যবহার কার্যকর হলেও [৫] অস্ত্রোপচার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কম ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে হয়।[৪] জন্মনিয়ন্ত্রণ-এর মধ্যে রয়েছে পিল ও যোনিপথে ব্যবহার্য ডিভাইসসমূহ যা গর্ভপাতের ঠিক পরপরেই ব্যবহার শুরু করা যায়।[৪] গর্ভপাত উন্নত বিশ্বে স্থানীয় আইন দ্বারা সমর্থিত হয়ে থাকলে, এর চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম হয়ে ওঠার ইতিহাস রয়েছে ৷ [৬][৭] জটিলতাহীন গর্ভপাত কোনো দীর্ঘস্থায়ী মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা ঘটায় না।[৮] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে যে, এই একই স্তরের নিরাপদ ও বৈধ গর্ভপাতের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে সকল নারীর জন্য লভ্য থাকা উচিত।[৯] তবে,অনিরাপদ গর্ভপাতসমূহ বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ৪৭০০০ মাতৃত্বজনিত মৃত্যু [৮] ও ৫ মিলিয়ন নারীর হাসপাতালে ভর্তির হওয়ার কারণ ঘটায়।[১০]
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৪৪ মিলিয়ন গর্ভপাত সম্পন্ন হয়, যার মধ্যে অর্ধেকের সামান্য কমসংখ্যক অনিরাপদভাবে সম্পন্ন করা হয়।[১১] গর্ভপাতের হার ২০০৩ ও ২০০৮ সালের মধ্যে সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে,[১১] যদিও পূর্ববর্তী দশকগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক শিক্ষার প্রসারের কারণে গর্ভপাতের হার কমে এসেছিল৷[১২] ২০০৮-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বিশ্বের শতকরা চল্লিশ ভাগ নারীর "কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই" বৈধ প্ররোচিত গর্ভপাত ঘটানোর অধিকার ছিল।[১৩] তবে, এক্ষেত্রে গর্ভধারণের পর ঠিক কতটা সময় পর্যন্ত তা করা যাবে সে ব্যাপারে সীমা নির্ধারিত ছিল।[১৩]
প্ররোচিত গর্ভপাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে তা করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা ভেষজ ঔষধসমূহ, ধারালো সরঞ্জাম ব্যবহার, শারীরিক আঘাত ও অন্যান্য গতানুগতিক পদ্ধতি।[১৪] বিশ্বজুড়ে গর্ভপাত বিষয়ক আইনকানুন, সেগুলো কত ঘনঘন সম্পন্ন করা হবে, এবং সেগুলোর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্ট্যাটাসের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ পরিস্থিতির নিরিখে গর্ভপাত বৈধ, যেমন: আত্মীয় কর্তৃক যৌননিগ্রহ, ধর্ষণ, ভ্রূণে সমস্যা থাকা, আর্থ-সামাজিক নিয়ামকসমূহ অথবা মায়ের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকলে।[১৫] বিশ্বের অনেক স্থানে গর্ভপাতের নৈতিক, নীতিগত, ও আইনগত বিষয়সমূহ নিয়ে গণ মতদ্বৈততা রয়েছে৷ যারা গর্ভপাতের বিরুদ্ধে তারা সাধারণত বলে থাকেন যে, একটি ভ্রূণ বা ফিটাস হলো জীবনে বেঁচে থাকার অধিকারসম্পন্ন একজন মানুষ এবং গর্ভপাতকে হত্যাকাণ্ডের সাথে তুলনা করা যায়৷[১৬][১৭] যারা গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেন তারা একজন নারীর নিজের শরীরের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারের উপর জোর দিয়ে থাকেন [১৮] এবং একইসাথে সাধারণভাবে মানবাধিকারের উপর জোর দিয়ে থাকেন।[৯]
মানসিক স্বাস্থ্য
সম্পাদনাঅবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা ছাড়া ইন্ডিউসড গর্ভপাত ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে কোন সম্পুরক বর্তমান তথ্যে নেই। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রথম ত্রৈমাসিক মাসে কোনও মহিলার প্রথম গর্ভপাত মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ নয়, যেমন মহিলাদের অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা বহনকারীর তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সম্ভাবনা বেশি নয়; একটি মহিলার দ্বিতীয় বা বড় গর্ভপাত মানসিক স্বাস্থ্য ফলাফল কম নিশ্চিত।কিছু পুরনো রিভিউ শেষ হয়েছে যে গর্ভপাত মানসিক সমস্যার ঝুঁকি নিয়ে যুক্ত ছিল; তবে, তারা একটি উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ ব্যবহার করে না।
যদিও কিছু গবেষণায় ভ্রূণ অস্বাভাবিকতার কারণে প্রথম ত্রৈমাসিকের পর গর্ভপাত বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের নেতিবাচক মানসিক-স্বাস্থ্যের ফলাফল দেখায়, এই কঠোর পরিশ্রমের জন্য আরো কঠোর গবেষণা প্রয়োজন হবে। গর্ভপাতের প্রস্তাবিত নেতিবাচক মানসিক প্রভাবগুলি "গর্ভপাতের পরে পোস্ট" নামক একটি পৃথক অবস্থা হিসাবে গর্ভপাত বিরোধী অ্যাডভোকেটদের দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিক্যাল বা মানসিক পেশাদারদের দ্বারা স্বীকৃত নয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "World Abortion Policies 2013" (পিডিএফ)। United Nations Department of Economic and Social Affairs, Population Division। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Grimes, DA; Stuart, G (২০১০)। "Abortion jabberwocky: the need for better terminology"। Contraception। 81 (2): 93–6। ডিওআই:10.1016/j.contraception.2009.09.005। পিএমআইডি 20103443।
- ↑ Kulier, R; Kapp, N; Gülmezoglu, AM; Hofmeyr, GJ; Cheng, L; Campana, A (নভে ৯, ২০১১)। "Medical methods for first trimester abortion."। The Cochrane database of systematic reviews (11): CD002855। ডিওআই:10.1002/14651858.CD002855.pub4। পিএমআইডি 22071804।
- ↑ ক খ গ Kapp, N; Whyte, P; Tang, J; Jackson, E; Brahmi, D (সেপ্টে ২০১৩)। "A review of evidence for safe abortion care."। Contraception। 88 (3): 350–63। ডিওআই:10.1016/j.contraception.2012.10.027। পিএমআইডি 23261233।
- ↑ Wildschut, H; Both, MI; Medema, S; Thomee, E; Wildhagen, MF; Kapp, N (জানু ১৯, ২০১১)। "Medical methods for mid-trimester termination of pregnancy."। The Cochrane database of systematic reviews (1): CD005216। ডিওআই:10.1002/14651858.CD005216.pub2। পিএমআইডি 21249669।
- ↑ Grimes, D. A.; Benson, J.; Singh, S.; Romero, M.; Ganatra, B.; Okonofua, F. E.; Shah, I. H. (২০০৬)। "Unsafe abortion: The preventable pandemic" (PDF)। The Lancet। 368 (9550): 1908–1919। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(06)69481-6। পিএমআইডি 17126724।
- ↑ Raymond, EG; Grossman, D; Weaver, MA; Toti, S; Winikoff, B (নভে ২০১৪)। "Mortality of induced abortion, other outpatient surgical procedures and common activities in the United States."। Contraception। 90 (5): 476–479। ডিওআই:10.1016/j.contraception.2014.07.012। পিএমআইডি 25152259।
- ↑ ক খ Lohr, P. A.; Fjerstad, M.; Desilva, U.; Lyus, R. (২০১৪)। "Abortion"। BMJ। 348: f7553। ডিওআই:10.1136/bmj.f7553।
- ↑ ক খ Organization, World Health (২০১২)। Safe abortion: technical and policy guidance for health systems (পিডিএফ) (2nd ed. সংস্করণ)। Geneva: World Health Organization। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 9789241548434।
- ↑ Shah, I.; Ahman, E. (ডিসেম্বর ২০০৯)। "Unsafe abortion: global and regional incidence, trends, consequences, and challenges" (পিডিএফ)। Journal of Obstetrics and Gynaecology Canada। 31 (12): 1149–58। পিএমআইডি 20085681। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ Sedgh, G.; Singh, S.; Shah, I. H.; Åhman, E.; Henshaw, S. K.; Bankole, A. (২০১২)। "Induced abortion: Incidence and trends worldwide from 1995 to 2008" (PDF)। The Lancet। 379 (9816): 625–632। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(11)61786-8। পিএমআইডি 22264435।
- ↑ Sedgh G, Henshaw SK, Singh S, Bankole A, Drescher J (সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "Legal abortion worldwide: incidence and recent trends"। Int Fam Plan Perspect। 33 (3): 106–116। ডিওআই:10.1363/ifpp.33.106.07। পিএমআইডি 17938093।
- ↑ ক খ Culwell KR, Vekemans M, de Silva U, Hurwitz M (জুলাই ২০১০)। "Critical gaps in universal access to reproductive health: Contraception and prevention of unsafe abortion"। International Journal of Gynecology & Obstetrics। 110: S13–16। ডিওআই:10.1016/j.ijgo.2010.04.003। পিএমআইডি 20451196।
- ↑ Joffe, Carole (২০০৯)। "1. Abortion and medicine: A sociopolitical history"। MPaul, ES Lichtenberg, L Borgatta, DA Grimes, PG Stubblefield, MD Creinin। Management of Unintended and Abnormal Pregnancy (পিডিএফ) (1st সংস্করণ)। Oxford, United Kingdom: John Wiley & Sons, Ltd.। আইএসবিএন 978-1-4443-1293-5। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৭।
- ↑ Boland, R.; Katzive, L. (২০০৮)। "Developments in Laws on Induced Abortion: 1998–2007"। International Family Planning Perspectives। 34 (3): 110–120। ডিওআই:10.1363/ifpp.34.110.08। পিএমআইডি 18957353।
- ↑ Pastor Mark Driscoll (১৮ অক্টোবর ২০১৩)। "What do 55 million people have in common?"। Fox News। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Dale Hansen (১৮ মার্চ ২০১৪)। "Abortion: Murder, or Medical Procedure?"। Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Sifris, Ronli Noa (২০১৩)। Reproductive Freedom, Torture and International Human Rights Challenging the Masculinisation of Torture.। Hoboken: Taylor and Francis। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 9781135115227।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Abortion Policies: A Global Review, published by the United Nations