ধূসর
এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
ধূসর বা ছাই রং সাদা ও কালোর মধ্যবর্তী একটি রঙ। এটি একটি নিরপেক্ষ বা নিবর্ণী (এক্রোম্যাটিক) রঙ অর্থাৎ "বর্ণহীন রঙ"।[২] ধূসর মেঘ-ঢাকা আকাশ, ছাই ও সীসার রঙ।[৩]
ধূসর | |
---|---|
রঙের স্থানাঙ্ক | |
হেক্স ট্রিপলেট | #808080 |
sRGBB (r, g, b) | (128, 128, 128) |
CMYKH (c, m, y, k) | (0, 0, 0, 50) |
HSV (h, s, v) | (0°, 0%, 50%) |
উৎস | HTML/CSS[১] |
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক |
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে ধূসরকে নিরপেক্ষতা, একঘেয়েমী, অনিশ্চয়তা, বুড়ো বয়স, উদাসীনতা এবং ভদ্রতার রঙ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেখানকার মাত্র এক শতাংশ লোক এটিকে তাদের পছন্দের রং বলে জানিয়েছে।[৪]
ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনাধূসর একটি তৎসম (সংস্কৃত থেকে আগত) শব্দ, যেটি ধূ ধাতুর সাথে সরক্ প্রত্যয়যোগে গঠিত হয়েছে: √ধূ+সর(সরক্)। ছাই শব্দটিও তৎসম উৎস থেকে এসেছে (ক্ষার>ছার্)।
ইংরেজি
সম্পাদনাধূসরের ইংরেজি নাম Grey এসেছে মধ্য ইংরেজি grai বা grei, যার উৎস ইঙ্গ-স্যাক্সন graeg; সম্পর্কিত ভাষা ওলন্দাজে আছে grauw ও grijs এবং জার্মানে grau।[৫] খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে grey শব্দটি ইংরেজিতে লিখিতরূপে প্রথম ব্যবহৃত হয়।[৬] Grey বানানটি ইউরোপীয় ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশে বেশি প্রচলিত, তবে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত gray ব্যবহৃত হয়েছে।[৭] Gray বানানটিকে আমেরিকান বলে ভাবা হচ্ছে সম্ভবত ১৮২৫ সাল হতে,[৮] তবে grey বানানটিও একটি রূপভেদ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।[৯][১০]
প্রকৃতি এবং সংস্কৃতিতে
সম্পাদনা-
তেজস্ক্রিয় পদার্থেয নমুনার ওপর সীসার আবরণ
-
মাউন্ট স্পারের ক্র্যাটার চূড়ার জ্বালামুখ হতে আগ্নেয় ছাইয়ের স্তম্ভ
-
জিবেওন উল্কাপিণ্ড
-
একটি ধূসর নেকড়ে
-
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমীর ক্যাডেটরা ধূসর রঙের পোষাক পরে।
-
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের নৌবাহিনীতে যুদ্ধজাহাজের রং হলো ব্যাটলশিপ গ্রে বা এর রূপভেদ, কারণ রঙটি দূর থেকে কম দেখা যায়। চিত্রস্থ যুদ্ধজাহাজটি ইউএসএস মিসৌরি, ১৯৪৪ সালে নির্মিত।
শিল্প এবং ইতিহাসে
সম্পাদনাপ্রাচীন ও মধ্যযুগে
সম্পাদনাপ্রাচীন ও মধ্যযুগে ধূসর ছিল অরঞ্জিত উলের রঙ, সেকারণে চাষী ও গরিব লোকেরা এ রং বেশি পরতো। এছাড়া ফ্রান্সিসকান, সিস্টারশিয়ান ও কাপুচিনে সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা তাদের নিরহঙ্কার ও দারিদ্র্যে বজায় রাখার ব্রতের প্রতীক হিসেবে ধূসর পোশাক পরিধান করে থাকে। ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে এরকম ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসীরা গ্রে ফ্রেয়ারস (ধূসর ভিক্ষু) নামে পরিচিত ছিলেন; এখনো গ্রেট ব্রিটেনের বহু স্থানের সাথে এই নাম জড়িয়ে আছে।
-
সিস্টারশিৎান সন্ন্যাসী সেইন্ট বার্নার্ড অফ ক্লেয়ারভক্স অরঞ্জিত ধূসর উলের আলখেল্লা পরতেন।
-
ফ্রান্সিস্কান সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সেইন্ট ফ্রান্সিসের প্রতিকৃতি (এল গ্রেকোর আঁকা)। তিনিও নিরহঙ্কারের রং হিসেবে ধূসর বেছে নেন।
রেনেসাঁ এবং বারোক
সম্পাদনারেনেসাঁ এবং বারোকের সময়কালে ফ্যাশন ও শিল্পে ধূসর রং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অভিজাতদের সবচেয়ে পছন্দের রং হয়ে ওঠে কালো, বিশেষত ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে; আর ধূসর ও সাদা ছিল এর সাথে সামঞ্জস্যতাপূর্ণ।
তৈলচিত্র বা অয়েল পেইন্টিং আঁকতে ধূসর রং প্রায়ই ব্যবহৃত হতো, এই কৌশলকে বলা হতো গ্রিসেল। চিত্রকর্মটি প্রথমে শুধু ধূসর ও সাদা দিয়ে আঁকা হতো, এরপর তার ওপর পাতলা স্বচ্ছ চকচকে রং ব্যবহার করা হতো। গ্রিসেলের কারণে রঙের স্তরের মধ্যে শেড সৃষ্টি হতো। কখনোবা গ্রিসেলের ওপর রং দেয়া হতো না, দেখে খোদাই-করা পাথরের মতো লাগতো।
সোনা ও ত্বকের রঙের পটভূমি হিসেবে ধূসর রং বেশ ভালো কাজ করে। রেমব্র্যান্টের আঁকা প্রতিকৃতি বা এল গ্রেকোর ছবিগুলোতে ধূসর পটভূমি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, ছবিতে ব্যক্তির চেহারা বা পোশাক হাইলাইট করার জন্য। রেমব্র্যান্টের প্যালেটে বেশিরভাগ রঙই ছিলো গাঢ় ম্লান ধরনের। তিনি ধূসর রঙে উষ্ণতা আনার জন্য কালো পিগমেন্টের (চারকোল বা পশুর হাড়ের ছাই হতে তৈরি) সাথে সীসা বা চুনের সাদা রং এবং সামান্য রেড লেক রং (কচিনিয়েল রঞ্জক বা ম্যাডার লতা হতে) মেশাতেন। মার্গারেতা ডি গীয়ারের প্রতিকৃতি (১৬৬১) আঁকার ক্ষেত্রে পটভূমির ধূসর দেয়ালের একাংশের রং করতে গিয়ে আইভরি ব্ল্যাক ও সীসা-সাদার সাথে কমলা, লাল ও হলুদ মেটে রঙের স্তরের ওপর গাঢ় বাদামির প্রলেপ দেন। এর ওপরে আবার নীল স্মল্ট, লাল ওকার ও ইয়োলো লেক রঙের চকচকে আস্তর দেন। ইতিহাসবিদ ফিলিপ বলের মতে, রেমব্র্যান্ট এরকম সব উপাদান মিশিয়ে যে ধূসর রং তৈরি করেছিলেন তাতে "অবিশ্বাস্য রকমের রঙময়তা প্রচ্ছন্নভাবে" বিদ্যমান।"[১১] উষ্ণ, গাঢ় এবং সমৃদ্ধ ধূসর ও বাদামি রঙগুলো ছবিতে মুখমণ্ডলে সোনালি আলো স্পষ্ট করেছে।
-
এল গ্রেকোর আঁকা Burial of the Count of Orgaz (1588) ছবিটি যেন ধূসর রঙের ঘূর্ণায়মান মেরি-গো-রাউন্ড।
-
রেমব্র্যান্টের আত্ম-প্রতিকৃতি (১৬২৯)। রেমব্র্যান্ট ছবিতে চেহারাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য তার অবয়বের পেছনে অনেক টোন-মিশ্রিত জটিল ধূসর রং সৃষ্টি করেছেন।
আঠারো ও উনিশ শতাব্দী
সম্পাদনা১৮শ শতকে নারীদের পোশাক ও পুরুষদের কোট ও ওয়েস্টকোটে কেতাদুরস্ত রং হিসেবে ধূসর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অভিজাত ও ধনী ব্যক্তিদের পরিহিত রেশম ও সাটিনের তন্তুগুলি বাস্তবেই ধূসর রঙে উজ্জ্বল দেখাতো।
১৯শ শতকে নারীদের বেশভূষাশৈলীর আদর্শ ছিলো প্যারিস, পক্ষান্তরে পুরুষরা অনুসরণ করতো লন্ডনকে। উনিশ শতকের প্রথমভাগে পুরুষদের পোশাক হতো বর্ণিল কিন্তু এ মধ্যভাগে লন্ডনে ধূসর রঙের বিজনেস স্যুট প্রচলিত হয় এবং বাজার দখল করে নেয়; গ্রীষ্মে হালকা ধূসর, শীতে গাঢ়।
১৯শ শতকে প্যারিসে কারখানা ও কর্মশালায় কর্মরত নারীদের পোশাক হতো সাধারণত ধূসর, যেকারণে তাদের grisettes ডাকা হতো। "Gris" বা গ্রে বলতে মাতালও বোঝানো হয়, আর প্যারিসের নিচু মানের পতিতাদেরকেও grisettes বলা হয়।
সামরিক উর্দির রং হিসেবে ধূসর বেশ সাধারণ। লম্বা রেঞ্জের রাইফেলের যুগে ধূসর পোশাকের সৈন্যরা লাল/নীল পরিহিতদের থেকে কম দৃষ্টিগোচর হতো। আমেরিকান গৃহযুদ্ধে কনফেডারেট আর্মির ইউনিফর্ম ছিল ধূসর; ১৮৭০ সালের ফ্র্যাঙ্কো-জার্মান যুদ্ধে প্রুশীয় সৈন্যদের পোশাকও ছিল ধূসর।
মধ্য-19শ শতকের অনেক শিল্পী ধূসরের বিভিন্ন টোন ব্যবহার করে স্মরণীয় কিছু ছবি এঁকেছেন। জাঁ ব্যাপ্তিস ক্যামিল করোট তার আঁকা ল্যান্ডস্কেপে সমন্বয় আনার জন্য সবুজ-ধূসর ও নীল-ধূসর ব্যবহার করেছেন। ম্যাকনেইল হুইসলার তার মায়ের প্রতিকৃতি এবং আরেকটি আত্ম-প্রতিকৃতি আঁকার জন্য একটা বিশেষ রকমের ধূসর রং তৈরি করেন।
হুইসলারের ধূসর রঙের বিভিন্ন টোনের সজ্জা সঙ্গীতজগতে প্রভাব ফেলে, ফরাসী সুরকার ক্লদ ডেবুসির ওপরও। ১৮৯৪ সালে ডেবুসি ভায়োলিনিস্ট ইউজিন ইয়াসাকে চিঠি লেখেন যে তার নকচার্নস ছবিটি "একটা রং থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষা - যা হবে চিত্রশিল্পে ধূসর নিয়ে গবেষণা।"[১২]
-
স্যার জোশুয়া রেনল্ডসের আঁকা ক্যাপ্টেন অগাস্টাস কেপেলের প্রতিকৃতি (১৭৫২)।
-
জন হপনারের আঁকা Portrait of Charlotte Walsingham, Lady Fitzgerald (১৮শ শতক)। সেসময় ধূসর রং ছিল উঁচুদরের ফ্যাশন।
-
আমেরিকার গৃহযুদ্ধে কনফেডারেট আর্মির সৈনিক প্রাইভেট এডউইন ফ্রান্সিস জেমিসন ধূসর ইউনিফর্ম পরিহিত (১৮৬০ এবং ১৮৬২-র মধ্যে)। এই যুদ্ধকে অনেকসময় নীল বনাম ধূসরের যুদ্ধও বলা হতো।
-
জাঁ ব্যাপ্টিস্টে ক্যামিলে করোটের আঁকা An oak in the Forest of Fontainbleau (সম্ভাব্য ১৮৩০).
-
জেমস ম্যাকনেইল হুইসলারের আঁকা Arrangement in grey and black no.1 (১৮৭১), 'হুইসলারস মাদার' নামে ছবিটি পরিচিত।
-
জেমস ম্যাকনেইল হুইসলারের আত্ম-প্রতিকৃতি, আরেক নাম "Arrangement in grey" (১৮৭২) ধূসরের বিভিন্ন মাত্রার দক্ষ সমন্বয়।
-
ব্রাজিলের রাজা দ্বিতীয় পেড্রোর কন্যা লেপল্ডিনা ও ইসাবেল (বসা) ধূসর গাউন পরিহিতা (১৮৫৫)।
বিশ ও পরবর্তী শতাব্দী
সম্পাদনা১৯৩০ দশকের শেষাংশে ধূসর রং শিল্পায়ন ও যুদ্ধের প্রতীক হয়ে পড়ে। স্পেনের গৃহযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে পাবলো পিকাসোর আঁকা গের্নিকায় প্রধান রং ছিলো ধূসর।.[১৩]
যুদ্ধের পর ধূসর ব্যবসায়ীর কোট হয়ে ওঠে চিন্তাভাবনার অভিন্নতার প্রতীক, যেমনটি দ্য ম্যান ইন দ্য গ্রে ফ্লানেল স্যুট (১৯৫৫) জাতীয় জনপ্রিয় বইগুলিতে দেখা যায়।[১৪]
-
আধুনিক স্থাপত্যে ধূসর রঙের কংক্রিট একটি জনপ্রিয় নির্মাণ-উপাদান। চিত্রস্থ স্থাপনাটি লুই কানের নকশাকৃত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন।
-
ব্রাজিলের রিউ দি জানেইরু শহরে ত্রাণকর্তা যিশুখ্রিস্ট (মূর্তি) (১৯৩১)। আর দেকো শৈলীর এই মূর্তিটি শক্ত কংক্রিট দিয়ে নির্মিত এবং সাবান-পাথর দ্বারা আবৃত।
প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে
সম্পাদনাঝোড়ো মেঘ
সম্পাদনামেঘ সাদা বা কালো হয় তাদের গভীরতার ওপর নির্ভর করে। গ্রীষ্মের ছোট তুলতুলে মেঘগুলো সাদা রঙের হয় কারণ মেঘের ভেতরের পানির কণাসমূহ সূর্যালোক বিচ্ছুরিত করে যা আমাদের চোখে সাদা দেখায়। তবে মেঘ যত বড় ও ঘন হয়, সাদা আলো তত কম গভীরে প্রবেশ করতে পারে, ফলে তা মেঘের ওপরের স্তর থেকেই প্রতিফলিত হয়। বজ্রঝড়ের সময় মেঘ সবচেয়ে গাঢ় ধূসর রং ধারণ করে, তখন তারা ভূপৃষ্ঠ হতে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ফুট উপরে থাকে।
স্ট্র্যাটিফর্ম মেঘ হলো মেঘের এমন স্তর যা পুরো আকাশ ঢেকে রাখে; এর পুরুত্ব কয়েক হাজার ফুট পর্যন্ত হতে পারে। মেঘ যত ঘন হয়, নিচ থেকে তাদের তত কালো দেখায়, কারণ খুব অল্প আলোই তার মধ্য দিয়ে আসতে পারে। উপর থেকে, বিমানে বসে সেই একই মেঘকে দেখা যায়ধবধবে সাদা, যদিও ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখায় অন্ধকার ও ধূসর।[১৫]
চুল পেকে যাওয়া
সম্পাদনামানুষের চুলের রং তৈরি হয় মেলানিন নামক একটি পিগমেন্টের কারণে যা অরতিটি চুলের গোড়ায় থাকে। ত্বক ও চোখের রঙের জন্যও মেলানিন দায়ী। এই পিগমেন্ট দু'রকমের: গাঢ় ইউমেলানিন বা হালকা ফাইয়োমেলানিন। বিভিন্ন বিন্যাসে মিশে এই পিগমেন্টগুলো চুলের সব প্রাকৃতিক রং তৈরি করে।
মেলানিন উৎপাদিত হয় এক বিশেষ ধরনের কোষ থেকে: মেলানোসাইট যা প্রতিটি চুলের গ্রন্থিতে থাকে; সেখান থেকে চুল গজায়। চুল বড় হবার সময় মেলানোসাইট চুলের প্রতিটি কোষে মেলানিন প্রবিষ্ট করে দেয়; এতে থাকে কেরাটিন প্রোটিন যা আমাদের চুল, ত্বক ও নখ তৈরি করে। যতদিন মেলানোসাইট কোষো কোষে মেলানিন দেয়া অব্যাহত রাখে, ততদিন চুলের আসল রং বজায় থাকে।একটা নির্দিষ্ট বয়সে, ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন, মেলানোসাইট মেলানিন দেয়া কমিয়ে দেয় এবং ক্রমে ক্রমে বন্ধ করে দেয়। পিগমেন্ট না থাকায় চুল ধূসর ও ক্রমান্বয়ে সাদা হয়ে যায়। মেলানোসাইটের এই উৎপাদন বন্ধ করার কারণ অনিশ্চিত। সাইন্স পত্রিকার ফ্রেব্রুয়ারি ২০০৫ সংখ্যায় হার্ভার্ডের একদল বিজ্ঞানী অভিমত দেন যে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে বয়স বা জিনগত কারণে কোষটি মেলানিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোনো কোনো লোকের ২০-৩০ বছর বয়সেই এটা হয়, অন্যদের হয় অনেক পরে।[১৬] সায়েন্টিফিক আমেরিকান সাময়িকীর ওয়েবসাইটের ভাষায়, "সাধারণত, ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই শতকরা ৫০ ভাগ ককেশীয়র ৫০ শতাংশ চুল পেকে যায়।"[১৭] পূর্ণবয়স্ক পুরুষ গরিলাদেরও চুল ধূসর হয়, তবে শুধু তাদের পিঠে।
-
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের প্রধান ক্রিস্টিনা ল্যাগ্রেড
-
অভিনেতা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড
আলোকবিজ্ঞানে
সম্পাদনাবহু শতাব্দী ধরে, শিল্পীরা প্রথাগতভাবে বিভিন্ন অনুপাতে সাদা ও কালো রং মিশিয়ে ধূসর তৈরি করেছেন। একটু উষ্ণ করার জন্য তাতে সামান্য লাল বা কুল করার জন্য অল্প একটু নীল রং মিশিয়েছেন। ছাউড়া দুটো পরিপূরক রঙ মিশ্রিত করেও শিল্পীরা ধূসর তৈরি করতেন, যেমন কমলা ও নীল।
এখন টেলিভিশন, কম্পিউটার ডিসপ্লে এবং টেলিফোনে দেখা ধূসর রং তৈরি করা হয় আরজিবি রং মডেল ব্যবহার করে। কালো পর্দার ওপর লাল, সবুজ ও নীল আলোর পূর্ণ তীব্রতার মিশ্রণ সাদা বর্ণ ধারণ করে। তীব্রতা একটু কমিয়ে তাতে বিভিন্ন শেডের ধূসর রং সৃষ্টি করা সম্ভব।
মুদ্রণকাজে ধূসর রং তৈরি করা হয় সিএমওয়াইকে রং মডেল অনুসারে, সায়ান, ম্যাজেন্টা, হলুদ ও কালো রং ব্যবহার করে। ধূসর বানানো হয় সাদা ও কালো ব্যবহার করে অথবা সমপরিমাণ সায়ান, ম্যাজেন্টা ও হলুদ রং মিশিয়ে। এ পদ্ধতিতে অধিকাংশ ধূসরই হয় খানিকটা উষ্ণ বা শীতল আবহের, আর মানুষের চোখ রঙের খুব সামান্য স্যাচুরেশনও ধরতে পারে। হলুদ, কমলা এবং লাল রং মিলে তৈরি করে উষ্ণ ধূসর; সবুজ, নীল ও বেগুনি মিলে হয় শীতল ধূসর।[১৮] কোনো রং যোগ না করা হলে রঙটিকে বলে "নিরপেক্ষ ধূসর", "অ্যাক্রোম্যাটিক ধূসর" বা সহজভাবে শুধু "ধূসর"। যে চিত্রে কেবল কালো, সাদা ও ধূসর রং থাকে তাকে বলে মনোক্রোম (একবর্ণী), সাদা-কালো বা গ্রেস্কেল।
উষ্ণ ধূসর | শীতল ধূসর |
6% হলুদ রঙের সাথে মিশ্রিত। | 6% নীল রঙের সাথে মিশ্রিত। |
- আরজিবি মডেল
- রঙের মান r = g = b হলে ধূসর রং পাওয়া যায়।
- সিএমওয়াইকে মডেল
- c = m = y = 0 হলে ধূসর রং হয়। k-এর মান বদলিয়ে আলোকীয়তা পরিবর্তন করা যায়। তত্ত্বানুসারে, c = m = y হলে মিশ্রণটি হবে নিরপেক্ষ, কিন্তু বাস্তবে এমন মিশ্রণ মেটে বাদামি রং ধারণ করে।
- এইচএসএল ও এইচএসভি মডেল
- অ্যাক্রোম্যাটিক ধূসরের কোনো হিউ নেই, তাই h কোডটিতে ড্যাশচিহ্ন -- ব্যবহার করে বোঝাতে হয় "অসংজ্ঞায়িত" (undefined)। s-এর মান 0 বা অসংজ্ঞায়িত হলে তখনও ধূসর হয়; v সমান 0 অথবা l সমান 0 বা 1 হলেও একই।
|
ওয়েব রঙ
সম্পাদনাএইচটিএমএল ও ক্যাসকেডিং স্টাইল শিট (CSS)-এ ধূসরের অনেকগুলো টোন নাম লিখে ব্যবহার করা যায়, আর ২৫৪টি প্রকৃত ধূসর রঙের জন্য আরজিবি মানের পৃথক পৃথক হেক্স ট্রিপলেট ব্যবহার করতে হবে। কোডিং ইংরেজিতে হওয়ায় ধূসরের ইংরেজি gray ব্যবহার করতে হবে। grey বানান ব্যবহার করা যাবে না কারণ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ট্রিডেন্ট ব্রাউজার ইঞ্জিন grey শব্দটা শনাক্ত করতে পারে না, একে green ভেবে নেয়। আরেকটি অসঙ্গতি হলো কম্পিউটারে gray রঙটি darkgray-র চেয়ে বেশি গাঢ়। সমস্যাটি হয়েছে এইচটিএমএল gray ও এক্স11 gray সাংঘর্ষিক হবার কারণে। এক্স11 gray এইচটিএমএলের silver (রুপালি) রঙের কাছাকাছি। slategray রঙতিনটি গ্রস্কেলে না থাকলেও সায়ান (নীলাভ সবুজ) রঙের দিকে স্যাচুরেটেড। যেহেতু ধূসরের স্যাচুরেটেড-না-হওয়া টোনসমূহের একটি সংখ্যা জোড় (256, কালো ও সাদা সহ), 8-বিট গ্রেস্কেলের মধ্যবিন্দুতে দুটি ধূসর টোন বিদ্যমান। gray রঙনামটি তাই হালকা শেডের জন্য প্রযোজ্য (128, অন্য নাম #808080)।
পিগমেন্ট
সম্পাদনা১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত চিত্রশিল্পীরা প্রথাগতভাবে কালো ও সাদা মিশিয়ে ধূসর তৈরি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, রেমব্র্যান্ট সীসা সাদা এবং কার্বন কালো বা আইভরি কালো ব্যবহার করতেন, সাথে উষ্ণ/শীতল আবহের জন্য নীল/লালের পরশ।
১৯ শতকের প্রথমাংশে একটি নতুন ধূসর রং বাজারে আসে: পেইনস গ্রে (Payne's grey)। রঙটি আসলে গাঢ় নীলাভ-ধূসর, আল্ট্রামেরিন এবং কালো বা সিয়েনার মিশ্রণ। ১৮ শতকের শেষাংশের ব্রিটিশ জলরঙশিল্পী উইলিয়াম পেইনের নামে এর নামকরণ করা হয়। পেইনস গ্রে রঙনাম হিসেবে প্রথম ব্যবার হয় ১৮৩৫ সালে।[১৯]
প্রাণী রঙ
সম্পাদনাপ্রাণী, পাখি ও মাছের মধ্যে ধূসর অনেক কমন একটা রঙ, তিমি থেকে ইঁদুর পর্যন্ত। এটা অনেকটা প্রাকৃতিক ক্যামোফ্লেজ যা তাদেরকে উপস্থিত পরিবেশের মধ্যে মিশে যেতে সহায়তা করে।
-
একটি ধূসর তিমি বছরে প্রায় 11,000 কিলোমিটার ভ্রমণ করে, প্রজনন স্থান ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগর থেকে খাদ্যবহুল স্থান বেরিং সাগর পর্যন্ত।
-
ধূসর নেকড়ে (Canis lupus) হলো Canidae গোত্রের সবচেয়ে বড় বন্য সদস্য।
-
আফ্রিকান হাতি স্থলচর প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
-
ধূসর বক একটি বড় আকারের পাখি, ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় পাওয়া যায়। আমস্টারডামের কেন্দ্রে ধূসর বকের একটি বড় কলোনি আছে।
মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ
সম্পাদনামস্তিষ্ক গঠনকারী পদার্থকে কখনো কখনো ধূসর পদার্থ বা গ্রে ম্যাটার অথবা "ছোট ছোট ধূসর কোষ" বলা হয়, একারণে ইন্টেলেকচুয়াল কোনোকিছুর সাথে ধূসর রঙটি সম্পৃক্ত। তবে জীবিত মানুষের মস্তিষ্ক আসলে পিঙ্ক রঙের; মৃত্যুর পর এটা ধূসর রং ধারণ করে।
ন্যানোটেকনোলজি এবং গ্রে গূ
সম্পাদনাগ্রে গূ হলো পৃথিবী ধ্বংসের একটি হাইপোথেটিক্যাল দৃশ্যকল্প। একে ইকোফ্যাগিও বলা হয়। এই অনুসিদ্ধান্ত অনুসারে, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আত্মপ্রতিরূপ-সৃষ্টিকারী (self-replicating) ন্যানোবটরা একসময় পৃথিবীর সব জীবকে মেরে ফেলবে এবং ক্রমাগত নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকবে।[২০]
গ্রে নয়েজ
সম্পাদনাশব্দপ্রকৌশলে গ্রে নয়েজ হলো এলোমেলো শব্দ যা সাইকোঅ্যাকোস্টিক ইকুয়াল লাউডনেস কার্ভ, যেমন "ইনভার্টেড" A-weighting কার্ভ, এর সাথে সম্পৃক্ত, যেটি প্রদত্ত রেঞ্জের কম্পাঙ্কে শ্রোতাকে এ ধারণা দেয় যে এটি সব কম্পাঙ্কেই সমভাবে জোরালো।
সংস্কৃতিতে
সম্পাদনাধর্ম
সম্পাদনাখ্রিস্টান ধর্মে ধূসর হলো ছাইয়ের রঙ, তাই বাইবেলে সকাল ও অনুশোচনার প্রতীক, স্যাকক্লথ অ্যান্ড অ্যাশেজ বলে বর্ণিত। এটি লেন্টের সময় বা উপবাস ও প্রার্থনাকালে ব্যবহার করা যাবে। নিরহঙ্কার ও বিনয়ের রং হিশেবে অনেক সন্ন্যাসীরা ধূসর রঙের কাপড় পরেন, যেমন কাপুচিনে, ফ্রান্সিসকান ও ও সিস্টারশিয়ান।[২১] ব্রাজিলিয়ান ক্যাথলিক অ্যাপোস্টলিক চার্চের পাদ্রীরা ধূসর রঙের আলখেল্লা পরেন।
জাপান ও কোরিয়ায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও যাজকেরা পোশাকের ওপর প্রায়ই ধূসর, বাদামি বা কালো রঙের হাতাঅলা আঙরাখা পরে।
চীনে তাও যাজকেরাও প্রায়ই ধূসর রঙের কাপড় পরে।
-
ইসরাইলে একজন ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসী
-
কোরিয়ায় তরুণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী
-
চীনের উডাংয়ে তাও সন্ন্যাসী
রাজনীতি
সম্পাদনাফ্রথাবদ্ধতা, একঘেয়েমী ও সিদ্ধান্তহীনতা বোঝানোর কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ধূসর রং খুব কমই ব্যবহার করে। জার্মান গ্রে প্যান্থার দলের রং হিসেবে ধূসর ব্যবহার করা হয়।
কখনো কখনো "গ্রে পাওয়ার" (ধূসর ক্ষমতা) বা "গ্রে ভোট" বলতে নির্বাচনে ভোটিং ব্লক হিসেবে বৃদ্ধ ভোটারদের প্রভাবকে বোঝানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধরা ভোট দিতে বেশি আগ্রহী থাকে এবং সাধারণত সামাজিক লাভ, যেমন সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করতেই তারা ভোট দেয়।[২২][২৩]
গ্রে শব্দটি সবুজ আন্দোলনের পরিবেশবাদীরা সেসব লোকের নিন্দার্থে ব্যবহার করেন যারা পরিবেশবাদী দাবিসমূহের বিরোধিতা করে এবং সম্ভবত কংক্রিট ও সিমেন্টের ধূসরতা পছন্দ করে।
সামরিক
সম্পাদনাআমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময়, কনফেডারেট আর্মির সৈন্যরা ধূসর রঙের ইউনিফর্ম পরতো। যুদ্ধের শুরুর দিকে উত্তরের সেনাবাহিনী ও দক্ষিণের সেনাবাহিনী কাছাকাছি রঙের পোশাক পরতো; অনেক কনফেডারেট দল পযরতো নীল, আবার ইউনিয়নের অনেক ইউনিট পরতো ধূসর। স্বাভাবিকভাবেই এতে দ্বিধা সৃষ্টি হতো এবং কখনোবা সৈন্যরা তাদের নিজ সেনাবাহিনীর দিকেই গুলি ছুঁড়তো। ১৮৬১ সালের ৬ জুন কনফেডারেট সরকার রেগুলেশন জারি করে তাদের সৈন্যদের ক্যাডেট গ্রে রঙের ইউনিফর্ম পরার নির্দেশ দেয়। এই রঙটি ছিল (এবং এখনো আছে) ওয়েস্ট পয়েন্টের ইউনাইটেড স্টেটস মিলিটারি একাডেমীর ক্যাডেটদের ইউনিফর্মের রঙ। ভার্জিনিয়া মিলিটারি ইন্সটিটিউটের ক্যাডেটদের পোশাক রঙও একই, আর এখান থেকে বহু সেনা কর্মকর্তা কনফেডারেট দলে যোগদান করে।
ইউনিফর্মের নকশা করেছিলেন জার্মান-আমেরিকান শিল্পী নিকোলা মার্শাল, মূল কনফেডারেট পতাকার নকশাও তারই করা। তিনি সমকালীন ফরাসী ও অস্ট্রেলীয় সামরিক উর্দির নকশার অনেকটা অনুসরণ করেছিলেন।[২৪] ধূসর রঙটি তার ক্যামোফ্লেজ গুরুত্বের জন্য নির্বাচন করা হয়নি; বরং একারণে যে দক্ষিণাঞ্চলে বড়সড় রঞ্জক কারখানা ছিল না এবং ধূসর রং ছিল সস্তা ও সহজে প্রস্তুতযোগ্য। কোনো কোনো দলের পোশাক হতো ভালো মানের রঞ্জক দিয়ে, যেটা আসলে নিরেট নীলাভ-ধূসর; অন্যদের পোশাক হতো সুমাক বা লগউড-জাতীয় লতাগুল্ম-উদ্ভূত রঞ্জক হতে যা সূর্যালোকে মলিন হয়ে বাটারনাট স্কোয়াশ রং ধারণ করতো।
যুদ্ধের শেষ বারো মাসে দক্ষিণীরা আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক ফার্ম থেকে বিশেষভাবে তাদের জন্য তৈরি করা উন্নতমানের নীলাভ-ধূসর রঞ্জকে রঞ্জিত ইউনাফর্ম আমদানি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু ততদিনে তারা যুদ্ধ হারতে বসেছে।
১৯০৭ হতে ১৯৪৫ হাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনী ধূসর ইউনিফর্ম পরতো, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তা পরেছে। রঙটি ছিল মূলত ধূসর-সবুজ বা ফিল্ড গ্রে। জার্মান ইউনিফর্মের আগের রং প্রুশিয়ান ব্লুর চেয়ে এটা কম দৃশ্যমান হয়। এটি প্রথমদিকের সেসব ইউনিফর্ম রঙের একটি যেগুলো ক্যামোফ্লেজ বৈশিষ্ট্যের জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানরা বিশেষ সুবিধা পেত; পক্ষান্তরে ফরাসী সৈনিকদের পোশাক ছিল নীল জ্যাকেট এবং লাল পাজামা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, অধিকাংশ জার্মান সৈন্য ঐতিহ্যবাহী ফিল্ড গ্রে ইউনিফর্ম পরতো। তবে জেনারেল আরউইন রোমেলের আফ্রিকা কর্পসের সৈনিকরা পরতো মরুভূমির উপযোগী ও তুলনামূলক হালকা ধূসর রঙের ইউনিফর্ম।
জার্মান সেনাবাহিনী ও পূর্ব-জার্মান সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক ছু ইউনিফর্ম ছিল ফিল্ড গ্রে, যেম ছিল সুইডিশ সেনাবাহিনীতে। চিলির সৈন্যরা এখনো ফিল্ড গ্রে পরে।
-
চ্যান্সেলরসভিল যুদ্ধে (১৮৬৩) কপফেডারেট জেনারেল স্টোনওয়াল জ্যাকসন। ছবিটি তোলার সাত দিন পর যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
-
কনফেডারেট সৈন্য অ্যান্ড্রু জে উইন (১৮৩৮-১৮৬৪), স্পটসিলভানিয়ার যুদ্ধে (১৮৬৪) আহত হয়ে পরে মারা যান।
-
মার্নের প্রথম যুদ্ধে (১৯১৪) জার্মান সৈন্যরা ফিল্ড গ্রে রং পরিহিত
-
জার্মান সেনাদের ইউনিফর্ম (১৯৩৯–৪৫), (ইউএস ন্যাশনাল আর্কাইভস)
-
"ডেজার্ট ফক্স" নামে খ্যাত জেনারেল আরউইন রোমেলের আফ্রিকা কর্পস ইউনিফর্ম
-
পূর্ব জার্মান আর্মির সৈনিকরা বার্লিন প্রাচীর পতনের আগে পর্যন্ত ধূসর ইউনিফর্ম পরতো।
ধূসররঙা স্যুট
সম্পাদনা১৯ শতকে নারীদের ফ্যাশনের নির্দেশক ছিল প্যারিস, আর পুরুষদের আদর্শ লন্ডন। বিজনেস স্যুটের মূল উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়াসনেস দেখানো, পাশাপাশি সমাজে ও ব্যবসায় নিজের অবস্থান জানানো। সময়ের সাথে সাথে পুরুষদের ফ্যাশন থেকে উজ্জ্বল রং উঠে যায়, জায়গা করে নেয় কালো বা গাঢ় চারকোল ধূসর রঙের শীতের ফ্রককোট, গ্রীষ্মে হালকা ধূসর। ২০ শতকের শুরুতে ফ্রককোটের পরিবর্তে চালু হতে থাকে লাউঞ্জ স্যুট, সান্ধ্য পোশাকের খানিকটা অনানুষ্ঠানিক রূপ, সেটাও কালো বা চারকোল ধূসর। ১৯৩০ দশকে ইংরেজদের স্যুট স্টাইলকে বলা হতো ড্রেপ স্যুট, চওড়া কাঁধ এবং কোমরের কাছে চাপা, সাধারণত কালো বা হালকা ধূসর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্টাইলটা বদলে খানিকটা পাতলা হয়, যেটাকে বলে কন্টিনেন্টাল কাট, তবে রং ধূসরই থাকে।[২৫]
২০ শতকের শেষার্ধে লন্ডনের দর্জিদের পাশাপাশি হলিউডের ফ্যাশনও পুরুষদের প্রভাবিত করতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশক ছিলো ধূসর স্যুটের সোনালী যুগ, পরতেন সিনেমা তারকা ক্যারি গ্র্যান্ট ও হামফ্রে বোগার্ট এবং প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি (দুই বোতামঅলা ধূসর স্যুট)। ১৯৬৫ সালে লিন্ডন বি. জনসন প্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অক্সফোর্ড গ্রে বিজনেস স্যুট পরে অভিষিক্ত হন; তার পূর্বসুরীরা অভিষেকের সময় পরতেন আনুষ্ঠানিক কাটওয়ে কোট ও ডোরাকাটা পাজামা।[২৬] নিউইয়র্কের বিজ্ঞাপনশিল্পের কেন্দ্র ম্যাডিসন এভিনিউয়ের অলিখিত ইউনিফর্ম হলো ধূসর স্যুট।
২১ শতাব্দীর প্রথমদিকে, স্টাইল বদলাতে শুরু করলো, ধূসরকে মনে হলো একঘেয়ে এবংব্যক্তিত্বহীন রঙ। ধীরে ধীরে গাঢ় নীল স্যুট প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। G-20 ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক সন্মেলনগুলোয় বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রপ্রধানরা নীল বিজনেস স্যুট পরেছেন।
-
সাবরিনা (1954) চলচ্চিত্রে ধূসর বিজনেস স্যুটে উইলিয়াম হোল্ডেন এবং হামফ্রে বোগার্ট। চলচ্চিত্রে সিরিয়াস বড় ভাই চরিত্রে বোগার্ট গাঢ় ধূসর স্যুট পরেছেন।
-
ধূসর স্যুটে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির অফিশিয়াল প্রতিকৃতি (১৯৬৩)।
-
ধূসর কোট পরেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ (২০০৯)।
নীতিশাস্ত্র
সম্পাদনানীতিশাস্ত্রে, নেতিবাচক অর্থে ধূসর বলতে বোঝানো হয় এমন অবস্থা যেখানে নৈতিক মূল্যবোধ স্পষ্ট নয়, "ধূসর অঞ্চল" (the grey area; ইতিবাচক অর্থে পুরো-সাদা বা পুরো-কালো দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে ভারসাম্য আনা, ধূসরের বিভিন্ন মাত্রাভেদ দিয়ে ভালো ও খারাপের পরিমাপ দেখানো হয়
লোককথা
সম্পাদনালোককথায় গবলিন, এল্ফ ও অন্যান্য দুষ্ট কিংবদন্তি চরিত্রের সাথে ধূসর রঙকে সম্পৃক্ত করা হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার লোককথায় প্রায়ই নোম (gnome) ও নিসার (nisser) চরিত্রগুলোকে ধূসর পোশাকে দেখানো হয়। সন্ধ্যার সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে এটা হতে পারে, অথবা একারণে যে, তারা চিরাচরিত সাদা-কালো মূল্যবোধের বাইরে।
ফ্যান্টাসি-লেখক জে. আর. আর. টলকিন তার লেখায় ধূসর রঙের লোককথা-বর্ণিত প্রতীকিয়তা ব্যবহার করেছেন, যা স্ক্যান্ডিনেভীয় লোককথিত নাম ও থীমকেও টেনে এনেছে। গ্যানডলফকে বলা হয়েছে ধূসর তীর্থযাত্রী; আরো আছে ধূসর স্বর্গ (Grey Havens), এরেড মিথরিন (Ered Mithrin), ধূসর পর্বতমালা এবং ধূসর এল্ফ।
-
ফ্রান্সিসকো গোয়ার আঁকা গবলিনদের চিত্র
খেলাধুলা
সম্পাদনা- বেসবল খেলায় ধূসর রং সাধারণত ব্যবহার করা হয় রোড ইউনিফর্মে। এর কারণ ১৯ ও ২০ শতকে সফরকারী দল রোডে লন্ড্রি সুবিধা পেতোনা, তাই কাপড়ের দাগ ঢাকতে গাঢ় ধূসর ইউনিফর্ম পরা হতো। পক্ষান্তরে স্বাগতিক দল পরতো সাদা পোশাক।
-
নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কির অ্যালেক্স রদ্রিগেজ সাধারণত ধূসর রোড বেসবল ইউনিফর্ম পরে (২০০৭)।
প্যারাসাইকোলজি
সম্পাদনাপ্যারাসাইকোলজিতে বিশ্বাসীরা বলে যে যারা হতাশার কারণে মানসিক অসুস্থতায় ভোগে তাদের ধূসর রঙের বলয় থাকে।[২৭]
সমকামী সংস্কৃতি
সম্পাদনা- পুরুষ সমকামীদের স্ল্যাং ভাষায় গ্রে কুইন (grey queen) হলো একজন সমকামী যে কিনা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাজ করে (কথাটার উৎস ঘটনা হলো- ১৯৫০ দশকে অর্থনৈতিক পেশায় কর্মরতরা প্রায়ই ধূসর ফ্লানেল স্যুট পরতেন)।[২৮]
ভাবপ্রকাশ ও প্রতীক
সম্পাদনাআমেরিকা ও ইউরোপে ধূসর সবচেয়ে কম জনপ্রিয় রঙগুলোর একটি। এক ইউরোপীয় জরিপে কেবল ১ শতাংশ লোক ধূসরকে তাদের পছন্দের রং বলে এবং ১৩ শতাংশ সর্বনিম্ন পছন্দের রং মত দিয়েছিল; নারীদের ক্ষেত্রেও ফলাফল অনুরূপ। রঙবিষয়ক ঐতিহাসিক ইভা হেলারের মতে, "ধূসর রঙটা এতো দুর্বল যে পুরুষালি নয়, আবার মেয়েলি হবার পক্ষেও ভীতিকর। এটা উষ্ণও না, শীতলও না, পদার্থও না অ-পদার্থও না। ধূসর দিয়ে কোনোকিছুই নিশ্চিতভাবে বোঝায় না।"[২৯]
অনেক সংস্কৃতিতেই ধূসর রঙটিকে প্রবীণ ও বয়স্কদের রং ধরা হয়, কারণ বয়সের সাথে সাথে চুল পাকে। পাশাপাশি এটি বৃদ্ধবয়সের প্রজ্ঞা, মর্যাদা ও অভিজ্ঞতারও প্রতীক। আমেরিকান সাংবাদিকতায় দীর্ঘ ইতিহাস এবং অর্জিত অবস্থানের কারণে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে মাঝেমধ্যে বলা হয় দ্য গ্রে লেডি।[৩০]
ইউরোপ ও আমেরিকায় ধূসরকে বিনয়ের রং ভাবা হয়।[২৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনা- Shades of grey
- কালো
- Black-and-white
- Eigengrau
- রঙের তালিকা
- Vin gris (grey wine in French)
- সাদা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "W3C TR CSS3 Color Module, HTML4 color keywords"। ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ Webster's New World Dictionary of the American Language, Third College Edition.
- ↑ Shorter Oxford English Dictionary, 5th edition, 2002.
- ↑ Heller, Eva, Psychologie de la Couleur, p. 224-242
- ↑ Webster's New World Dictionary of the American Language, 1964.
- ↑ Maerz and Paul A Dictionary of Color New York:1930 McGraw-Hill Page 196
- ↑ Marianne Celce-Murcia; Donna Brinton; Janet M. Goodwin (১৯৯৬)। Teaching pronunciation: a reference for teachers of English to speakers of other languages। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 282। আইএসবিএন 978-0-521-40694-9।
- ↑ "Gray vs. grey"। Grammarist। ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ মে ৩, ২০১২।
- ↑ "Grey - Definition and More"। Merriam-Webster Online Dictionary। Merriam-Webster। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ "Gray - Definition and More"। Merriam-Webster Online Dictionary। Merriam-Webster। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ Philip Ball (2001), Bright Earth, Art and the Invention of Coulour, pp. 214–215 (French translation).
- ↑ Weintraub, Stanley. 2001. Whistler: a biography (New York: Da Capo Press). আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩০৬-৮০৯৭১-২. p. 351
- ↑ Stefano Zuffi, (2012), Color in Art, pg. 310
- ↑ Eva Heller, Psychologie de la couleur- effets et symboliques, pg. 236-237
- ↑ Research Frontiers Site of the University of Arkansas ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে (retrieved December 17, 2012)
- ↑ Library of Congress Science Reference Services
- ↑ Scientific American, "Why does hair turn gray?"
- ↑ "Color Palette"। ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ Maerz and Paul A Dictionary of Color New York:1930 McGraw-Hill Page 201; Colour Sample of Payne’s Grey: Page 117 Plate 47 Color Sample A9
- ↑ "Leading nanotech experts put 'grey goo' in perspective" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Center for Responsible Nanotechnology। জুন ৯, ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৭।
- ↑ Eva Heller, Psychologie de la couleur- effets et symboliques, pg. 235
- ↑ "The Bonus Years: The 'grey vote' may take the cake on Tuesday"। ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ Grey vote
- ↑ "Nicola Marschall: Artist of the Deep South"। Alabama Department of Archives and History। ২৩ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯।
- ↑ Eva Heller, Psychologie de la couleur - effets et symboliques, pg. 236
- ↑ http://www.lbjlib.utexas.edu/johnson/inauguration/index.shtm#interesting ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে |Johnson Library, University of Texas
- ↑ Arthur E. Powell The Astral Body and Other Astral Phenomenon Wheaton, Illinois:1927—Theosophical Publishing House Page 12
- ↑ Rodgers, Bruce Gay Talk (The Queen’s Vernacular): A Dictionary of Gay Slang New York:1972 Parragon Books, an imprint of G.P. Putnam’s Sons Page 99
- ↑ ক খ Eva Heller, Psychologie de la couleur, effets et symboliques. (Pg. 226)
- ↑ Eva Heller, Psychologie de la couleur- effets et symboliques, pg. 234.
গ্রন্থপঞ্জী
সম্পাদনা- Heller, Eva (২০০৯)। Psychologie de la couleur - Effets et symboliques। Pyramyd (French translation)। আইএসবিএন 978-2-35017-156-2।
- Zuffi, Stefano (২০১২)। Color in Art। Abrams। আইএসবিএন 978-1-4197-0111-5।
- Gage, John (২০০৯)। La Couleur dans l'art। Thames & Hudson। আইএসবিএন 978-2-87811-325-9।
- Gottsegen, Mark (২০০৬)। The Painter's Handbook: A Complete Reference। New York: Watson-Guptill Publications। আইএসবিএন 0-8230-3496-8।
- Varichon, Anne (২০০০)। Couleurs - pigments et teintures dans les mains des peuples। Paris: Editions du Seuil। আইএসবিএন 978-2-02-084697-4।