বার্লিন প্রাচীর (জার্মান: Berliner Mauer, উচ্চারণ [bɛʁˈliːnɐ ˈmaʊ̯ɐ] (শুনুন)) ছিলো একটি সুরক্ষিত কংক্রিটের অন্তরায়, যা ১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আক্ষরিক ও মতাদর্শগতভাবে বার্লিন শহরকে বিভক্ত করেছিল।[] জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (জিডিআর, পূর্ব জার্মানি) কর্তৃক এই প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়।

বার্লিন প্রাচীর
জার্মান: Berliner Mauer
১৯৮৬ সালে পশ্চিম বার্লিনের পাশ থেকে দেয়ালের গ্রাফিতি শিল্পকর্মের দৃশ্য। পূর্ব দিক থেকে প্রাচীরের "মৃত্যুর স্ট্রিপ" দৃশ্যমান, যা লুইসেনস্টাড খালের বক্ররেখা (১৯৩২ সালে ভরে ফেলা হয়েছে) অনুসরণ করেছে।
মানচিত্রে বার্লিন প্রাচীরের চেকপয়েন্টের অবস্থান
সাধারণ তথ্যাবলী
অবস্থাপতন
ধরনপ্রাচীর
দেশ
স্থানাঙ্ক৫২°৩০′৫৮″ উত্তর ১৩°২২′৩৭″ পূর্ব / ৫২.৫১৬১১° উত্তর ১৩.৩৭৬৯৪° পূর্ব / 52.51611; 13.37694
নির্মাণ শুরু১৩ আগস্ট ১৯৬১ (1961-08-13)
ভেঙ্গে ফেলা হয়৯ নভেম্বর ১৯৮৯ (1989-11-09)
Dimensions
অন্যান্য মাত্রা
  • পশ্চিম বার্লিনের চারপাশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ১৫৫ কিমি (৯৬ মা)
  • পশ্চিম বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানি মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ১১১.৯ কিমি (৬৯.৫ মা)
  • পশ্চিম এবং পূর্ব বার্লিন মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ৪৩.১ কিমি (২৬.৮ মা)
  • Border length through residential areas in East Berlin: ৩৭ কিমি (২৩ মা)
  • Concrete segment of wall height: ৩.৬ মি (১২ ফু)
  • Concrete segment of wall length: ১০৬ কিমি (৬৬ মা)
  • Wire mesh fencing: ৬৬.৫ কিমি (৪১.৩ মা)
  • Anti-vehicle trenches length: ১০৫.৫ কিমি (৬৫.৬ মা)
  • Contact/signal fence length: ১২৭.৫ কিমি (৭৯.২ মা)
  • Column track width: ৭ মি (৭.৭ গজ)
  • Column track length: ১২৪.৩ কিমি (৭৭.২ মা)
  • Number of watch towers: 302
  • বাঙ্কারের সংখ্যা: ২০
কারিগরী বিবরণ
আকার১৫৫ কিমি (৯৬ মা)
Website
www.berlin.de
বার্লিনের উপগ্রহ চিত্র, প্রাচীরের অবস্থান হলুদ রঙে চিহ্নিত
পশ্চিম এবং পূর্ব বার্লিনের সীমানা একটি বর্তমান রাস্তার মানচিত্রের উপরে বিস্তৃত (interactive map)

১৩ আগস্ট ১৯৬১ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে[] পূর্ব জার্মান কর্মকর্তাদের নির্দেশে এটি ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত, প্রাচীরটি (ভৌগোলিকভাবে) সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পার্শ্ববর্তী পূর্ব জার্মানি থেকে পূর্ব বার্লিন সহ, পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে সীমানা প্রাচীর হিসেবে অবস্থান করছিল।

প্রাচীরটির পতন আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩ জুন ১৯৯০ থেকে শুরু করে ১৯৯২ সালের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছিল।[][] সরকারি হিসেব অনুযায়ী এ সময়কালে প্রাচীর টপকে পশ্চিম বার্লিন যাবার চেষ্টাকালে ১২৫ জন প্রাণ হারান।[] বেসরকারী হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ২০০।[] সদ্য প্রকাশিত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট সরকার পক্ষত্যাগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিল। যদিও পূর্ব জার্মান সরকার সবসময় এটা অস্বীকার করে আসছিল।[]

কয়েক সপ্তাহের জনঅসন্তোষের পর ৯ নভেম্বর, ১৯৮৯ পূর্ব জার্মান সরকার পশ্চিম বার্লিনে যাবার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। হাজার হাজার উৎসুক জনতা প্রাচীর টপকে পশ্চিম পাশে যেতে থাকে। পশ্চিম প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানানো হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্যুভেনির সংগ্রাহকরা প্রাচীরটির কিছু অংশ ভেঙে ফেলে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো প্রাচীর সরিয়ে নেয়া হয়। বার্লিন প্রাচীর খুলে দেয়ার ঘটনা দুই জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের পথ প্রশস্ত করে দেয়, যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর।

পটভূমি

সম্পাদনা
 
ফ্রিএড্রিকশাইনের কাছে ওসফানহোফের দেয়ালের সংরক্ষিত অংশ, আগস্ট ২০০৬
 
১৯৪৫ সালে অধিকৃত জার্মানি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি কার্যত চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। চারটি অংশের শাসনভার ন্যস্ত ছিল মিত্রশক্তির চার পরাশক্তি: যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর। বার্লিন শহরটি সোভিয়েত অংশের অন্তর্গত হলেও এটিও চার অংশে বিভক্ত করা হয়। দখলদার রাষ্ট্রগুলো উদ্দেশ্য জার্মানি শাসন হলেও শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত অংশ নিয়ে গঠন করা হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি। এর বিপরীতে সোভিয়েত অধিকৃত অংশে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব জার্মানি।

দুই জার্মানির ভিন্নতা

সম্পাদনা

সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি পরিণত হয় একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে। ৫০ এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছর দেশটি বিপুল প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। অন্যদিকে পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত অনুকরণে সাজানো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। এর ফলে দেশটি সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশের তুলনায় সম্পদশালী হয়ে উঠলেও, পশ্চিম জার্মানির চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল। পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিনের পশ্চিমাংশ ও পূর্বাংশের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেয়া হবে।[]

প্রস্তাবিত প্রাচীর

সম্পাদনা

১লা এপ্রিল, ১৯৫২ পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ স্ট্যালিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভয়েসলাভ মতোলোভ এর সাথে আলোচনায় বসেন। এর ফলে সিদ্ধান্ত হয় পশ্চিমাংশের নাগরিকরা বিশেষ পাশ সংগ্রহ করে পূর্বাংশে আসতে পারবেন। স্ট্যালিন দুই জার্মানির সীমান্তকে বিপদজনক উল্লেখ করে এর দুই স্তরের পাহাড়ার প্রস্তাব করেন, যার প্রথম স্তরে থাকবে পূর্ব জার্মান সীমান্তপ্রহরী এবং দ্বিতীয়াংশে থাকবে সোভিয়েত সেনা।[] পূর্ব জার্মান প্রধানমন্ত্রী ওয়াল্টার উলবিকট এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেন। প্রস্তাবটি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চেভ অনুমোদন করেন। প্রথমে প্রস্তাব করা হয় দুই অংশের মাঝে পৃথককারী তারকাঁটার বেড়া দেয়া হবে।

নির্মাণ কাজের সূচনা , ১৯৬১

সম্পাদনা

প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার দু'মাস পূর্বে ১৫ জুন, ১৯৬১ ওয়াল্টার উলবিকট এক সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেন Niemand hat die Absicht, eine Mauer zu errichten! (কারও একটি প্রাচীর খাড়া করার উদ্দেশ্য নেই)। প্রথমবারের মত 'প্রাচীর' শব্দটির ব্যবহার প্রাচীর ধারণার জন্ম দেয়। ১২ই আগস্ট, ১৯৬১ পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ ডলসি উদ্যান আলোচনায় মিলিত হন। ১৩ই আগস্ট, রবিবার প্রথম প্রহরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। পশ্চিম বার্লিনের চারপাশে ১৫৬ কিমি দীর্ঘ এ দেয়ালের ৪৩ কিমি সরাসরি দু'অংশকে পৃথক করে। নির্মানকাজের সময় কেউ পশ্চিমাংশে চলে যেতে এই আশঙ্কায় পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী দেয়ালের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। নির্মাণকাজে কোন সোভিয়েত সৈন্যের অংশগ্রহণ ছিল না। পশ্চিম বার্লিনের কোন অংশ যেন পূর্বাংশের মধ্যে চলে না আসে, সেজন্য পূর্ব বার্লিনের খানিকটা ভেতরে প্রাচীর নির্মিত হয়।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা
 
২০ নভেম্বর,১৯৬১: পূর্ব জার্মান নির্মাণ শ্রমিকরা বার্লিন প্রাচীর গড়ে তুলছে

পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মাঝে প্রকৃত সীমারেখাও কাটাতারের বেড়া, দেয়াল , মাইনক্ষেত্র এবং অন্যান্য স্থাপনা দিয়ে পৃথক করে দেয়া হয় প্রাচীরের কারণে বহু পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, পশ্চিম বার্লিন পরিণত হয় পূর্ব জার্মানীর একটি ছিটমহলে। মেয়র উইলি ব্রান্টের নেতৃত্বে পশ্চিম বার্লিনবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নীরব ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

 
বার্লিন দেয়াল পরিদর্শনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২৬ জুন ১৯৬৩

২৫শে জুলাই, ১৯৬১ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি জানান, যুক্তরাষ্ট্র কেবল পশ্চিম জার্মানি এবং পশ্চিম বার্লিনের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে। পূর্ব বার্লিনের ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল কূটনৈতিক পর্যায়ে মৃদু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর কয়েকমাস পর যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে প্রাচীর নির্মাণের অধিকারকে আন্তর্জাতিক অধিকারের আওতাভুক্ত বলে স্বীকার করে নেয়।

পূর্ব জার্মান সরকার একে পশ্চিমা আক্রমণ এবং অ্যান্টি-ফ্যাসিবাদী প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর ("antifaschistischer Schutzwall") হিসেবে উল্লেখ করে।[] কিন্তু এ ধারণার সত্যতা নিয়ে পূর্ব জার্মানিতেও বিপুল সন্দেহ ছিল। প্রাচীর নির্মাণের ফলে পূর্ব বার্লিনবাসীদের অবর্ননীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

এ প্রাচীরের মূল উদ্দেশ্য পূর্ব জার্মানি থেকে শরণার্থীদের স্রোতে বাধা প্রদান, পাশাপাশি আরও কয়েকটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সোভিয়েত দাবী অনুযায়ী এই প্রাচীরের মাধ্যমে পূর্ব জার্মানি এবং ওয়ারশ ব্লক ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা গুপ্তচরদের অনুপ্রবেশ রোধ করা হয়। শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে এই প্রাচীর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পূর্ব জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে একটি পুতুল রাষ্ট্র হিসেবেই গণ্য করতো। পুঁজিবাদী বিশ্ব, ইউরো ডলার, এবং পশ্চিম জার্মানিতে মেধাপাচার রোধের বিরুদ্ধে এই প্রাচীরের ছিল শক্তিশালী ভূমিকা।

প্রাচীরের কাঠামো এবং পরিবর্তনসমূহ

সম্পাদনা

১৫৫ কিমি প্রাচীরটি গড়ে তোলা হয় পূর্ব জার্মানীর ১০০ গজ ভেতরে। এই ১০০ গজের মধ্যে থাকা বাড়িঘর এবং স্থাপনা ধ্বংস করে একটি নোম্যান্সল্যান্ড তৈরি করা হয়। এখানকার অধিবাসীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ১০০ গজের এই নিরপেক্ষ এলাকাটি পরিচিত ছিল মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে। পায়ের চিহ্ন সহজে চিহ্নিত করার জন্য এ অংশটি নুড়ি এবং বালু দিয়ে ভরে দেয়া হয়। স্থাপন করা হয় স্বয়ংক্রিয় ফাঁদ, যেগুলো কারও পায়ের স্পর্শে সচল হয়ে উঠবে। স্পষ্ট দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকায় প্রহরীদের গুলি চালানোর জন্য সুবিধাজনক এলাকা হিসেবে এ অংশটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

প্রাচীরটিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয় সেগুলোকে মোটামুটি ৪ টি ভাগে ভাগ করা যায় :

  1. কাঁটাতারের প্রাথমিক বেড়া (১৯৬১-৬২)
  2. কাঁটাতারের উন্নত বেড়া (১৯৬২-৬৫)
  3. কনক্রিটের দেয়াল (১৯৬৫-৭৫)
  4. গ্রেন্সমাওয়া ৭৫ (সীমানা প্রাচীর ৭৫) (১৯৭৫-৮৯)

চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালটি ছিল সবচেয়ে আধুনিক। এর নামকরণ করা হয় "ইস্টুটসোয়ান্ডঅ্যালিমেন্ট উল ১২.১১" (সাপোর্ট প্যানেল ইউএল ১২:১১)। ১৯৭৫ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়, এবং ১৯৮০ সালে শেষ হয়।[][১০] এতে ৪৫০০০ পৃথক কনক্রিট স্ল্যাব ছিল। প্রতিটি স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য ১২ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। এতে খরচ হয় ১৬১৫৫০০০ পূর্ব জার্মান মার্ক।[১১] এটির পাশে স্থাপন করা হয় ১১৬টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, এবং ২০টি বাংকার।[১২] বর্তমানে অবশিষ্ট থাকা দেয়ালের অংশবিশেষ চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালের স্মারক।

প্রাচীর দু'প্রান্তের মধ্যে পাড়াপাড়ের অফিসিয়াল চেকপয়েন্টসমূহ

সম্পাদনা
 
বিখ্যাত আপনি বিদায় নিচ্ছেন লেখা সংবলিত ফলক

পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মাঝে যাতায়াতের জন্য আটটি আনুষ্ঠানিক পথ রাখা হয়। পশ্চিম বার্লিনবাসী,পশ্চিম জার্মান নাগরিক, পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিক, অন্যান্য দেশের নাগরিক, অনুমতিপ্রাপ্ত পূর্ব বার্লিনবাসীরা এ পথগুলো ব্যবহার করতেন পশ্চিম বার্লিন এবং একে ঘিরে থাকা পূর্ব জার্মানির অন্য অংশগুলোর মাঝেও কয়েকটি যাতায়াতের পথ ছিল। পশ্চিম বার্লিনবাসীরা পূর্ব জার্মানি, পশ্চিম জার্মানি এবং অন্যান্য দেশসমূহে (ডেনমার্ক, চেকোস্লোভাকিয়া) যাওয়ার জন্য, এবং পূর্ব জার্মানদের পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হতো। ১৯৭২ সালের চুক্তি অনুযায়ী এ পথগুলো দিয়ে পশ্চিম বার্লিনের বর্জ্ পূর্ব জার্মানির ভাগাড়গুলোতে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়।

পূর্ব জার্মানির অভ্যন্তরে স্টানস্টোইন ছিটমহলের সাথে পশ্চিম বার্লিনের যোগাযোগের জন্যও এ পথগুলো ব্যবহার করা হত। ৪টি প্রধান শক্তির চুক্তির অংশ হিসেবে প্রাচীরের ইতিহাসে অধিকাংশ সময় জুড়ে মিত্রপক্ষের এবং সেনা, কর্মকর্তা এবং কূটনীতিবিদগণ বার্লিনের উভয় অংশের মধ্যে বেশ সহজে চলাচল করতে পারতেন। পশ্চিম বার্লিনবাসীদের ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। ২৬শে আগস্ট, ১৯৬১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ পর্যন্ত পশ্চিম বার্লিনবাসীদের জন্য সবগুলো পথ বন্ধ ছিল। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তির মাধ্যমে এটি শিথিল করা হয়। পশ্চিম জার্মানির সাথে পশ্চিম জার্মানির সড়ক যোগাযোগের চারটি পথ ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বার্লিনের দক্ষিণ পশ্চিমের বার্লিন-হেমস্টেড আটোবান। এটি বার্লিনের চেকপয়েন্ট ব্রাভোর মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানির হেমস্টেড শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল। পশ্চিম বার্লিন প্রবেশের জন্য ৪টি রেলপথ ছিল। নৌকায় করে খাল অতিক্রম করেও প্রবেশ করা যেত।

বিদেশী নাগরিকগণ বেশ সহজে দুই বার্লিনের মধ্যে যাতায়াত করতে পারতেন। পূর্ব বার্লিনবাসীদের জন্য প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক কঠিন। অবশ্য পেনশনভোগীরা তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতেন না। মোটরযানের নিচের অংশ আঁকড়ে ধরে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য পূর্ব বার্লিন ত্যাগকারী মোটরযানগুলো নিচে আয়না দিয়ে পরীক্ষা করা হত। প্রাচীরের পোস্টডাম অংশে মার্কিন পাইলট গ্যারি পাওয়ারসের সাথে সোভিয়েত গুপ্তচর রুডলফ আবেলের বিনিময় হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল। পশ্চিম বার্লিনবাসি ফ্রেডরিখস্ট্রস স্টেশন এবং চেকপয়েন্ট চার্লি দিয়ে পূর্বাংশে যাতায়াত করতে পারতো। প্রাচীর নির্মাণের ফলে বার্লিনের পরিবহন ব্যবস্থা (এস-বান এবং ইউ-বান) দু'টি অংশে ভাগ হয়ে পড়ে।[১০] অনেকগুলো স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমাংশের তিনটি রেলপথ পূর্বাংশের স্টেশনের মধ্য দিয়া না থেমে অতিক্রম করতো। এগুলোকে ভূতুড়ে স্টেশন(গেস্টারবানহোফ) বলা হতো।

পলায়ন প্রচেষ্টা

সম্পাদনা
 
এ প্রাচীর ছিন্ন করে ফেলুন! বার্লিন প্রাচীরের সামনে দাঁড়িয়ে মিখাইল গর্বাচেভকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের বিখ্যাত ভাষণ

বার্লিন প্রাচীরের ২৮ বছর ইতিহাসে প্রাচীর অতিক্রম করে পশ্চিম বার্লিনে যাবার প্রায় ৫০০০টি ঘটনা ঘটে। প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনায় ঠিক কতজন মৃত্যুবরণ করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। চেকপয়েন্ট চার্লি মিউজিয়ামের ডিরেক্টর আলেকজান্ড্রা হিলডেব্রান্ডের মতে মৃতের সংখ্যা ২০০টি। তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কনটেম্পরারি হিস্টরিকাল রিসার্চ (জেটজেটএফ) এর মতে মৃতের সংখ্যা ১৩৩টি। পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টাকারী যে কাউকে দেখামাত্র গুলি করার জন্য সীমান্ত প্রহরীদের নির্দেশ প্রদান করে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রেও এ আদেশ পালনে কোন ধরনের শৈথিল্যের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ হুশিয়ার করে দেয়।

প্রথম দিকে কাটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পড়ে বা দেয়ালের পাশের কোন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাফিয়ে পড়ে সীমান্ত পাড়ি দেবার ঘটনা ঘটে। তবে সময়ের সাথে সাথে উন্নততর প্রাচীর নির্মিত হলে এভাবে পক্ষত্যাগ করা সম্ভবপর হয়নি।

১৫ই আগস্ট, ১৯৬১ কোনার্ড শুম্যান নামে এক পূর্ব জার্মান সীমান্ত প্রহরী সর্বপ্রথম কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পশ্চিমাংশে চলে আসেন। পরবর্তীতে মাটির নিচে টানেল খুঁড়ে, ঝোড়ো বাতাসের সাহায্য নিয়ে লাফিয়ে পড়ে, তার বেয়ে, বেলুনে চেপে, স্পোর্টসকার চালিয়ে চেকপোস্টের দরজা ভেঙ্গে প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা এড়াতে চেকপোস্ট ধাতব বার স্থাপন করা হয়, যাতে মোটরগাড়ি এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরপরও চেষ্টা থেমে থাকেনি। ৪ জন আরোহী বিশেষভাবে তৈরি স্পোর্টকার চালিয়ে বারের নিচ দিয়ে প্রাচীরের দ্বার ভেঙ্গে পশ্চিম পাশে যাবার ঘটনা ঘটে। এটি প্রতিরোধের জন্য পরবর্তীকালে সীমান্তচৌকিগুলোর কাছাকাছি রাস্তা আঁকাবাকা করে দেয়া হয়।

অন্য এক ঘটনায় থমাস ক্রুগার নামে একজন পক্ষত্যাগকারী হালকা প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়ে পশ্চিম পাশে অবতরণ করেন। খালি বিমানটির গায়ে নানা বিদ্রুপাত্মক কথা লিখে, সড়কপথে পূর্বাংশে ফেরত পাঠানো হয়।

প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টায় গুলিতে আহত হয়ে কেউ দুই বার্লিনের মাঝে নিরপেক্ষ অংশে পড়ে থাকলেও পশ্চিম জার্মানদের পক্ষে তাকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হতো না। নিরপেক্ষ অংশের সাথে পশ্চিম বার্লিনের কেবল কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও নিরপেক্ষ অংশটি পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল। ফলে উদ্ধার প্রচেষ্টা চললে পূর্ব জার্মান সীমানা প্রহরীদের কাছ থেকে গুলিবর্ষণের আশঙ্কা থাকতো। এরকম ঘটনাগুলোর প্রথমটি ঘটে ১৯৬২ সালের ১৭ই আগস্ট। পিটার ফ্লেচার নামে ১৮ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘ সময় পশ্চিমাংশে পড়ে থাকেন। পশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই রক্তক্ষরণের কারণে ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি

পতন, ১৯৮৯

সম্পাদনা
 
প্রাচীরের পূর্বাংশের দেয়ালচিত্রে লেখা একটি জনপ্রিয় স্লোগান নয় কোন প্রাচীর, আর নয় যুদ্ধ , একতাবদ্ধ পৃথিবী( No more wars. No more walls. A united world])

২৩শে আগস্ট, ১৯৮৯ হাঙ্গেরি সরকার অস্ট্রিয়ার সাথে সীমান্তে কড়াকড়ি প্রত্যাহার করে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১৩০০০ জন পূর্ব জার্মান পর্যটক পশ্চিম জার্মানি যাবার জন্য হাঙ্গেরি হয়ে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করে। অক্টোবর মাসে পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৮ই অক্টোবর দীর্ঘদিন পূর্ব জার্মানি শাসনকারী এরিক হোনেকার পদত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন এগোন ক্রেনজ। এর আগে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে হোনেকার আরও এক শতাব্দী প্রাচীর টিকে থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া বিক্ষোভের প্রথমদিকে স্লোগান ছিল আমরা বাইরে (পশ্চিম জার্মানি) যেতে চাই (Wir wollen raus!)। এটির বদলে নতুন স্লোগান শুরু হয় আমরা এখানেই থাকবো (Wir bleiben hier), যেটি জার্মান ঐক্যের পক্ষে আন্দোলনের ইংঙ্গিত দেয। ৪ঠা নভেম্বরের পূর্ব বার্লিনের অ্যালেক্সসান্ড্রাপ্লাটসে ১০ লাখ বিক্ষোভকারী সমবেত হয়।

ক্রেনজ সরকারের সহনশীল নীতি এবং কমিউনিস্ট চেকোস্লাভ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব জার্মান শরনার্থীরা চেকোস্লাভাকিয়া হয়ে পশ্চিম জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পায়। ক্রমবর্ধমান শরনার্থীর চাপ ঠেকাতে ৯ই নভেম্বর, ১৯৮৯ ক্রেনজের নেতৃত্বে পার্টি পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানীর মধ্যে সীমান্ত চৌকি দিয়ে সরাসরি শরনার্থীদের যাবার অনুমতি প্রদান করা হবে। পূর্ব জার্মান সীমান্ত রক্ষীদেরকে সিদ্ধান্তটি জানানোর জন্য এক দিন সময় নিয়ে ১০ই নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্ব জার্মান প্রচারমন্ত্রী গুন্টার সাবোয়স্কিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৯ই নভেম্বরের পূর্বে সাবোয়স্কি ছুটিতে থাকায়, এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। একই দিনে একটি সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে তাকে ঘোষণাপত্রটি ধরিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু কবে থেকে এটি কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণাটি দেয়ার পর এটি কবে কার্যকর হবে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যতদূর জানি, এই মুহূর্ত থেকেই কার্যকর হবে

 
ব্লান্ডেনবার্গ গেইটের কাছে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০

পূর্ব জার্মান টেলিভিশনে এ ঘোষণা শোনার সাথে সাথে হাজার হাজার পূর্ব বার্লিন বাসী প্রাচীরের কাছে সমবেত হয়ে পশ্চিম বার্লিনে যেতে দেবার দাবী জানাতে থাকে। আগে থেকে কোন নির্দেশ না থাকায় সীমান্ত রক্ষীরা জনস্রোত দেখে হতোদ্যম হয়ে পড়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিফোনে যোগাযোগ করে করণীয় জানতে চাইলে, শক্তি প্রয়োগের মত সিদ্ধান্ত দিতে সবাই অপারগতা প্রকাশ করে। এ অবস্থায় গণদাবীর মুখে সীমান্তরক্ষীরা দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অপর পাশে হাজার হাজার পশ্চিম বার্লিনবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানায়। এভাবে ৯ই নভেম্বর, ১৯৮৯ অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রাচীরের পতন হয়।

পূর্ব জার্মান সরকার ঘোষণা করে প্রাচীরে আরও নতুন দশটি চলাচলের পথ খুলে দেয়া হবে। ১৯৯০ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত পুরনো বার্লিনের এসব পথ খুলে দেয়া হতে থাকে। বুলডোজার দিয়ে দেয়াল ধ্বংস করে নতুন প্রবেশদ্বার তৈরির এসব ভিডিও চিত্রকে অনেক দেশের মিডিয়ায় এখনও "প্রাচীর ধ্বংস" করা হিসেবে ভুলভাবে অভিহিত করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর খুলে দেয়া হয় বিখ্যাত "ব্রান্ডেনবুর্গ গেইট"।

সে বছর ২৩শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় দুই বার্লিনের মধ্যে ভিসামুক্ত চলাচল। ৯ই নভেম্বরের পর পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ দেয়ালের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্যুভেনির সংগ্রাহকদের উপর্যুপরি ক্ষতিসাধনে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নেয়। ১৩ই জুন, ১৯৯০ থেকে পূর্ব জার্মান সামরিক ইউনিটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে এবং ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। ১লা জুলাই, ১৯৯০ পূর্ব জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির মুদ্রা চালু হয়।

বর্তমানে কয়েকটি জায়গায় প্রাচীরটির কিছু অংশটি স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত আছে। বার্লিন প্রাচীরের পতন ৩রা নভেম্বর, ১৯৯০ এ জার্মান পুনঃএকত্রীকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

 
"Irgendwann fällt jede Mauer"
- "কালের আবর্তে সব প্রাচীরেরই পতন হয়"

২৫শে ডিসেম্বর, ১৯৮৯ লিওনিদ বার্নেস্টাইন বার্লিন দেয়ালের কাছে প্রাচীরের পতন উপলক্ষে কনসার্ট আয়োজন করেন। বেটোফেনের ৯ম সিম্ফনির (ওড টু জয়) কথায় পরিবর্তন এনে "জয়" (Freude) শব্দটির বদলে "স্বাধীনতা" (Freiheit) শব্দটি ব্যবহার করে গাওয়া হয়।

২১শে জুলাই, ১৯৯০ বার্লিনে আরেকটি কনসার্টে রজার ওয়াটার্স পিংক ফ্লয়েড-এর অ্যালবাম দি ওয়াল পরিবেশন করেন। স্করপিয়নস, ব্রায়ান অ্যাডামস, শন ও'কনোর, থমাস ডলবি, জনি মিশেল, মারিয়ান ফেইথফুল, ফন মরিসন এই কনসার্ট অংশগ্রহণ করেন। বার্লিন প্রাচীরের উপরে দাঁড়িয়ে ডেভিড হ্যাসেলহফের "লুকিং ফর ফ্রিডম" গানটি সেসময় জার্মানিতে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

পরবর্তী প্রভাব

সম্পাদনা

প্রাচীরটির সামান্য অংশই বর্তমানে অবশিষ্ট আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটির প্রথমটি "পোটসডামা প্লাটসের" কাছে। এটির দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার। ওবাবামব্রুকার নিকট স্প্রি নদীর তীরবর্তী অংশটি ইস্ট সাইড গ্যালারি নামে ডাকা হয়। তৃতীয় অংশটি আছে উত্তর দিকে বেনায়ার স্ত্রাসের কাছে। ১৯৯৯ সালে এটিকে বার্লিন প্রাচীরের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদের মধ্যে কোনটিই মূল বার্লিন প্রাচীরের অবিকৃত অংশ নয়। স্যুভেনির সংগ্রাহকরা প্রত্যেকটি অংশে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। দেয়ালের পূর্বাংশে বর্তমানে দেয়াল চিত্র আঁকা আছে। প্রাচীরের পতনের পূর্বে কেবল পশ্চিমাংশে দেয়ালচিত্র ছিল পূর্ব জার্মান প্রহরীদের প্রহরায় থাকা পূর্বাংশ কোন দেয়ালচিত্র ছিল না।

জাদুঘর

সম্পাদনা

প্রাচীর পতনের ১৫ বছর পর চেকপয়েন্ট চার্লির কাছে একটি বেসরকারী উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। প্রাচীর অতিক্রম করতে গিয়ে মৃতদের স্মরণে ১০০০ এর বেশি ক্রুশ এবং দেয়ালের অংশবিশেষ দিয়ে গড়া অপর একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয় ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

সাংস্কৃতিক বিভেদ

সম্পাদনা

প্রাচীর পতনের পর দেড়যুগ পেরিয়ে গেলেও বার্লিনের দু'অংশের লোকজনের মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য এখনও ধরা পড়ে। জার্মান ভাষায় একে যথাক্রমে "Ossis" এবং "Wessis" শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আরও বলা হয়ে থাকে, মানসিক প্রাচীর এখনও রয়েগেছে "Mauer im Kopf" ("মাথার মধ্যে প্রাচীর")। ২০০৪ সালের সেপ্টম্বর মাসে এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ২৫ ভাগ পশ্চিম বার্লিনবাসী এবং ১২ ভাগ পূর্ব জার্মানবাসী প্রাচীরের অস্তিত্ব কামনা করেন। এ সংখ্যাটি সত্যি আশঙ্কাজনক।

গ্যালারি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

টিকা

  1. "Untangling 5 myths about the Berlin Wall"Chicago Tribune। ৩১ অক্টোবর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৪ 
  2. Video: Berlin, 1961/08/31 ( 1961 )Universal Newsreel। ১৯৬১। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 
  3. "In Photos: 25 years ago todaythe Berlin Wall Fell"TheJournal.ie। ৯ নভেম্বর ২০১৪। 
  4. [১]
  5. http://www.goethe.de/ges/ztg/thm/ddg/en1748571.htm
  6. "E German 'licence to kill' found"BBC। ২০০৭-০৮-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১২সদ্য প্রকাশিত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট সরকার পক্ষত্যাগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিল 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ 
  8. Hope Millard Harrison, Driving the Soviets Up the Wall: Soviet-East German Relations, 1953–1961, footnote p. 240. Princeton University Press, 2003
  9. http://www.dailysoft.com/berlinwall/history/facts.htm
  10. http://www.wall-berlin.org/gb/mur.htm
  11. http://www.dailysoft.com/berlinwall/history/facts_02.htm
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ 

গ্রন্থতালিকা

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা